১০ মে, ২০২৫ তারিখে পাকিস্তান দাবি করেছে যে তারা ভারতের তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এর আগে ভারত পাকিস্তানের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে ইসলামাবাদ অভিযোগ তোলে। এই পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্য দিয়ে দুই দেশের দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নতুন করে তীব্র হয়ে উঠেছে, যা এক সর্বাত্মক যুদ্ধের পথে এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মূলত কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের শত্রুতা বহুদিন ধরেই বিদ্যমান। তবে ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৫ জন পর্যটক এবং একজন স্থানীয় গাইড নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যায়। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে।
এই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা, পানি বণ্টন চুক্তি থেকে ভারতের সরে আসা, এবং সীমান্তে বিমান ও ড্রোন হামলা—সবই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। ৭ মে ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ড ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে “সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো” লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করে। তবে পাকিস্তান জানায়, এতে ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এরপর ৮ ও ৯ মে একাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে বলে দুই দেশ একে অপরকে দোষারোপ করে।
পরিস্থিতির এমন উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটে গোটা বিশ্ব এখন একটি দুঃস্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আছে—যদি সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের দিকে দুই দেশ এগিয়ে যায়, তবে এটি হবে ইতিহাসের প্রথম পরমাণু যুদ্ধ।
ভারতের ২০০৩ সালের পারমাণবিক নীতিমালায় চারটি মূল নীতি উল্লেখ করা হয়েছে: (১) নো ফার্স্ট ইউজ (NFU) – অর্থাৎ, ভারত প্রথমে পারমাণবিক হামলা চালাবে না, কেবল যদি তার ওপর প্রথমে হামলা হয়, (২) বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধ (Credible Minimum Deterrence) – ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের উদ্দেশ্য শুধুই প্রতিরোধ নিশ্চিত করা, (৩) ম্যাসিভ রিটালিয়েশন – যদি ভারত পারমাণবিক হামলার শিকার হয়, তবে পাল্টা হামলা হবে ধ্বংসাত্মক মাত্রার, এবং (৪) জৈব বা রাসায়নিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া – এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান কখনোই তার পারমাণবিক নীতিমালা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। বরং এটি ‘কৌশলগত অস্পষ্টতা (Strategic Ambiguity)’ নীতিতে বিশ্বাস করে, অর্থাৎ পরিস্থিতি অনুযায়ী যেকোনো পর্যায়ে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ২০০১ সালে পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল খালিদ কিদওয়াই চারটি সম্ভাব্য “রেড লাইন” বা সীমারেখার কথা বলেন, যেগুলোর যেকোনো একটি অতিক্রম করলে পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। এই চারটি শর্ত হলো: (১) বিশাল ভূখণ্ড হারানো (Spatial Threshold), (২) বড় আকারে সামরিক বাহিনী ধ্বংস (Military Threshold), (৩) অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হওয়া (Economic Threshold), এবং (৪) রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়া (Political Threshold)।
বর্তমানে ভারত প্রায় ১৮০টি এবং পাকিস্তান প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেডের মালিক। যদিও এই অস্ত্রগুলো একে অপরকে প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে তৈরি, বর্তমান সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে এসব অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ বলেন, “এটা খুবই বোকামি হবে যদি কোনো পক্ষ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে… সম্ভাবনা কম হলেও একেবারে অস্বীকার করা যায় না।”
বিশ্ব সম্প্রদায় এখন নজর রাখছে ভারত-পাকিস্তানের দিকে। কারণ এ যুদ্ধ শুধু দুই দেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্যই হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন