দরসে হাদিসের সূচনা: দরসে হাদিসের ইতিহাস আর সুফফা মাদ্রাসার ইতিহাস একই সুতায় গাঁথা। সর্বপ্রথম স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তত্ত্বাবধানে ইসলামী রাষ্ট্র মদীনা শরীফে সর্বপ্রথম মসজিদে নববীতে সুফফা নামক ঐতিহাসিক ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রে দরসে হাদীসের সিলসিলা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম নিজেও মাঝে মধ্যে সাহাবীরা এই মাদ্রাসায় হাদিসের দরস দিতেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর তিরোধানের পর তার সাহাবীগণ এ মহান কাজটি সম্পাদন করার লক্ষ্যে সারা আরব ভূমিতে এমনকি পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েন। যেমন মদিনায় হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা, হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখ। বসরায় হযরত আবু মূসা আশয়ারি রাদিয়াল্লাহু আনহু, সিরিয়ায় হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও মিশরে হযরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবীগণ হাদিস চর্চা ও শিক্ষাদানের কাজিটি সুচারুরূপে আঞ্জাম দেন,আর নির্ধারিত স্থান গুলোতে হাদিস শিক্ষার উদ্দেশ্যে হাদিসে রাসূলের জ্ঞান পিপাসু ব্যক্তিরা শত শত মাইল পায়ে হেঁটে সফর করে আসতেন এমনকি একটি হাদীসের জন্য হলেও হাজার হাজার মাইলের দুর্গম পথ সফর করতে তারা কখনো কোণ্ঠাবোধ করতেন না।
বর্ণিত আছে যে হযরত ফরহাদ ইবনে মালিক রাহিমাহুমুল্লাহু পবিত্র কুরআন ইসলামের ফরজ সমূহ ও শরীয়তের বিধি বিধান শিক্ষার উদ্দেশ্যে সুদূর ইয়ামেন থেকে মদিনায় আগমন করেন। এভাবে মুহাদ্দিস আবু হাতিম রাজির কথা বর্ণিত আছে যে তিনি একসময় মহানবীর হাদিস সংগ্রহের জন্য তার গণনা অনুযায়ী নয় হাজার মাইল পায়ে হেঁটে সফর করেন। মহাদ্দিস ইয়াজিদ ইভনে হারুন এর কথা ইতিহাসে উল্লেখ আছে যে তিনি বাগদাদে প্রায় ৭০ হাজার হাদিস পিপাসু ছাত্রের উপস্থিতিতে হাদীসে নববীর দরস দিতেন, এভাবে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আছেম ইবনে আলী এর হাদিসের ছাত্রদের সংখ্যা অনুমান করার জন্য তৎকালীন খলিফা মোতাসিম বিল্লাহ আপন বিশ্বস্ত এক ব্যক্তিকে পাঠান তিনি বাগদাদের বাহিরে নাখালিশ্তান নামক জায়গায় ইমাম আছেম ইবনে আলীর হাদিসের দরসে এক লক্ষ 24 হাজার ছাত্রের উপস্থিতি অনুমান করে আসেন ইতিহাসে এ ধরনের বহু বিস্ময়কর ঘটনা রয়েছে।