ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বর্তমানে পশ্চিম তীরে যেসব সৈন্য মোতায়েন করেছে, তাদের এক-তৃতীয়াংশই যুদ্ধ-প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয় বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকটি অ্যাকটিভিস্ট সংগঠন। এর ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
এই অভিযোগ একটি চিঠির মাধ্যমে কনেসেটের (ইসরায়েলি পার্লামেন্ট) পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির কাছে উপস্থাপন করেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। তারা জানিয়েছে, আইডিএফ-এর ছয়টি ডিভিশনের প্রতিটিতে তিনটি ব্যাটালিয়ন রয়েছে, যার মধ্যে একটি ব্যাটালিয়ন যুদ্ধ-প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। এতে রয়েছে রিজার্ভ সৈনিক ও নারী সদস্য, যারা মূল ফ্রন্টলাইনে কাজ করলেও যুদ্ধ-প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন।
হুত্রা নিয়োগ ইস্যুতে উত্তেজনা
এই সংকটের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে হুত্রা (Ultra-Orthodox হারোদি) যুবকদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ নিয়ে চলমান আইনি ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা। হুত্রা সম্প্রদায়ের নেতারা দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়োগের বিরোধিতা করে আসছেন, কারণ তারা মনে করেন সেনাবাহিনীতে গেলে যুবকেরা ধর্মচ্যুত হতে পারে।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত হুত্রা সম্প্রদায়ের ১০ হাজার যুবককে সেনাবাহিনীতে যোগদানের নোটিশ পাঠানো হলেও মাত্র ২০৫ জন যোগ দিয়েছেন। অথচ এই বছরের জন্য প্রায় ৭০ হাজার হুত্রা যুবক সামরিক সেবার উপযুক্ত বলে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
জনবল সংকটে বন্ধ রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অভিযান
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সৈন্য সংকটের কারণে পশ্চিম তীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি গ্রামে টহল, সন্ত্রাসী সন্দেহে গ্রেফতার অভিযান, অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসবাদের অর্থ জোগান রোধের জন্য অভিযান।
একটি সূত্র জানিয়েছে, আইডিএফ বর্তমানে ১২ হাজার নতুন সৈন্যের প্রয়োজন অনুভব করছে, যার মধ্যে ৭৫ শতাংশই হবে যুদ্ধ সৈন্য। তবে হুত্রা সৈন্যদের জন্য আলাদা ব্যবস্থার প্রয়োজন হওয়ায় আইডিএফ বছরে সর্বোচ্চ ৩ হাজার হুত্রা সৈন্য গ্রহণ করতে পারে।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও চাপ
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জোটের অংশ শাস ও ইউনাইটেড তোরা জুডাইয়াম পার্টি চাইছে, যেসব হুত্রা যুবক যেশিভায় পড়াশোনা করছে, তাদের সেনা সেবা থেকে আইনি ভাবে ছাড় দেওয়া হোক। তবে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত আগেই এমন একটি বিল বাতিল করেছে।
হুত্রা নিয়োগ আইন নিয়ে কনেসেটে ২৯টি বৈঠক হয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এপ্রিলের শুরুতে লিকুদ পার্টির মুখপাত্র গাই লেভি বলেন, “আমরা বাস্তবিক একটি নিয়োগ আইন পাশ করাতে চাই, যাতে হুত্রা যুবকেরা ব্যাপক হারে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।”
সমালোচনার মুখে সেনাবাহিনী
তবে সেনাবাহিনী এই অভিযোগের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবুও সংশ্লিষ্ট কমিটির গোপনীয় বৈঠকে উচ্চ পর্যায়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে, জনবল সংকটের কারণে বহু সামরিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
এই সংকটের প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী সমালোচনা এবং উচ্চ আদালতের চাপের মুখে পড়েছে সরকার ও সেনাবাহিনী—বিশেষ করে ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর হামাস হামলার পর শুরু হওয়া দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ অনেকটাই বেড়েছে।
টাইমস অফ ইসরায়েল
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন