মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একাধিক রাজ্যে ভয়াবহ টর্নেডোর আঘাতে অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে শুধু মিসৌরিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন। টর্নেডোর ফলে বহু গাড়ি উল্টে গেছে এবং ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।
কানসাসে এক ধূলিঝড়ের কারণে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় ৫৫টিরও বেশি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ট্র্যাকার পাওয়ারআউটেজের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত মিশিগান, মিসৌরি, ইলিনয়িসসহ সাতটি রাজ্যে আড়াই লক্ষাধিক বাড়িঘর বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুসারে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আরও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যে পূর্ব লুইজিয়ানা, পশ্চিম জর্জিয়া, মধ্য টেনেসি ও পশ্চিম ফ্লোরিডা প্যানহ্যান্ডেল এলাকায় টর্নেডো সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
মিসিসিপিতে ছয়জনের মৃত্যু মিসিসিপির গভর্নর টেট রিভস জানিয়েছেন, রাজ্যজুড়ে একাধিক টর্নেডোর তাণ্ডবে সেখানে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় মিসিসিপি, পূর্ব লুইজিয়ানা এবং পশ্চিম টেনেসিতে আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের (NWS) মতে, এই আকস্মিক বন্যা প্রাণঘাতী হতে পারে।
শনিবার রাতে আলাবামার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক টর্নেডোর সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।
আবহাওয়া দপ্তর সতর্কবার্তায় বলেছে, “একাধিক তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী টর্নেডোর সৃষ্টি হতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।” সংস্থাটি সবাইকে দৃঢ়তম আশ্রয়স্থলে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
টেনেসির শেলবি এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের সময় সর্বোচ্চ ৯৭ কিলোমিটার (৬০ মাইল) প্রতি ঘণ্টার বেগে বাতাস বয়ে গেছে।
মিসৌরিতে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি মিসৌরির গভর্নর মাইক কিহো বলেন, “টর্নেডো ও প্রবল ঝড়ে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বহু প্রাণহানি ঘটেছে।”
রাজ্যের জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানায়, এখন পর্যন্ত ২৫টি কাউন্টিতে ১৯টি টর্নেডোর খবর পাওয়া গেছে।
মিসৌরির বাটলার কাউন্টির করোনার জিম অ্যাকার্স জানান, “একটি টর্নেডোর আঘাতে একজন নিহতের ঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি একটি বসতবাড়ি ছিল বলে বোঝার উপায় নেই, পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মেঝে উল্টে গেছে, আমরা দেয়ালের উপর দিয়ে হাঁটছিলাম।”
মিসৌরির বাসিন্দা আলিসিয়া উইলসন বলেন, “এটি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ছিল। ঝড়টি এত দ্রুত এসেছিল যে আমাদের কানে প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হচ্ছিল।”
আর্কানসাস, জর্জিয়া ও ওকলাহোমায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা
আর্কানসাসে তিনজনের মৃত্যু এবং ২৯ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গভর্নর সারাহ হাকাবি স্যান্ডার্স রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান ক্যাম্প এবং ওকলাহোমার গভর্নর কেভিন স্টিটও তাঁদের নিজ নিজ রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। ওকলাহোমায় একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
টেক্সাসে ধূলিঝড়ে প্রাণহানি শুক্রবার রাতে টেক্সাসে এক ধূলিঝড়ের কারণে ৩৮টি গাড়ির সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। রাজ্যের জননিরাপত্তা দপ্তরের সার্জেন্ট সিন্ডি বার্কলে বলেন, “এটি আমার দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য। যখন ধূলিকণা কমে আসে, তখন বুঝতে পারলাম এতগুলো গাড়ি একসঙ্গে বিধ্বস্ত হয়েছে।”
টেক্সাসে আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া, একাধিক রাজ্যে ভয়াবহ ঝড়ের কারণে ১০০টিরও বেশি দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে এবং বহু ট্রাক উল্টে গেছে।
ওকলাহোমায় ‘৮৪০ রোড ফায়ার’ নামের দাবানল ইতোমধ্যে ২৭,৫০০ একর এলাকা জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং এখনও এটি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ওকলাহোমা ফরেস্ট্রি সার্ভিস রাজ্যের প্যানহ্যান্ডেল এলাকায় ‘রেড ফ্ল্যাগ’ সতর্কতা জারি করেছে, যা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি নির্দেশ করে।
টর্নেডোর উৎপত্তি
টর্নেডো সাধারণত আর্দ্র ও উষ্ণ বাতাস উপরের ঠান্ডা বাতাসের সাথে মিশে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করলে সৃষ্টি হয়।
যখন বাতাস বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত হয়, তখন এটি ঘূর্ণনের মাধ্যমে ওপরের দিকে উঠতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে এটি ভয়ংকর টর্নেডোর রূপ নেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে চারটি রাজ্যে গতকাল টর্নেডোর কারণে প্রাণহানি ঘটেছে, সেগুলো এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত, যা প্রায়ই টর্নেডোর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অঞ্চলকে ‘টর্নেডো অ্যালি’ নামে ডাকা হয়। কারণ, এখানকার ভৌগোলিক অবস্থান টর্নেডো সৃষ্টির জন্য আদর্শ।
টর্নেডো অ্যালিতে সাধারণত মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত টর্নেডোর মৌসুম থাকে। তবে আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন যে, বছরের যেকোনো সময়ই টর্নেডো আঘাত হানতে পারে।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন