ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বন্দর শহীদ রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে আটজন নিহত এবং ৭৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শনিবার (২৬ এপ্রিল ২০২৫) রাজধানী তেহরান থেকে এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত শহীদ রাজাই বন্দরে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর বহুক্ষণ ধরে আগুন জ্বলতে থাকে এবং হেলিকপ্টার থেকে পানি ঢেলে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইস্কান্দার মোমেনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, “অন্যান্য শহর এবং তেহরান থেকে সমস্ত সংস্থান পাঠানো হয়েছে। আমরা আশাবাদী যে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।”
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ (IRNA) এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরানের কাস্টমস প্রশাসন জানিয়েছে, বন্দরে মজুত বিপজ্জনক পণ্য ও রাসায়নিক দ্রব্য থেকেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
হরমোজগান প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার পরিচালক মেহরদাদ হাসানজাদেহ জানান, আহতদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পূর্বেও পরিদর্শন করেছিলেন এবং সতর্কতা জারি করেছিলেন।”
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আইআরআইবি নিউজ (IRIBNEWS) প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পর ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে উঠছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও বিশাল অগ্নিকাণ্ড ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। কিছু ভিডিওতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও যানবাহনের দৃশ্যও দেখা গেছে এবং আহতদের সাহায্য করতে লোকজন এগিয়ে আসছে।
এদিকে, জাতীয় ইরানি তেল পণ্য শোধন ও বিতরণ সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ফলে তেল সংশ্লিষ্ট কোনো স্থাপনা বা পাইপলাইনে কোনো ক্ষতি হয়নি। সংস্থাটি জানিয়েছে, “শহীদ রাজাই বন্দরের বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের সাথে রিফাইনারি, জ্বালানি ট্যাংক, বিতরণ কমপ্লেক্স কিংবা তেল পাইপলাইনের কোনো সম্পর্ক নেই।”
হরমোজগান বন্দর ও মেরিটাইম প্রশাসনের কর্মকর্তা ইসমাইল মালেকিজাদেহ জানিয়েছেন, বিস্ফোরণটি শহীদ রাজাই বন্দরের ডক এলাকায় ঘটে। বন্দরের সিনা কনটেইনার ইয়ার্ডে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়েছে বলে ইরানের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, শহীদ রাজাই বন্দর ইরানের সবচেয়ে আধুনিক কনটেইনার বন্দর, যেখানে তেলের ট্যাংক ও অন্যান্য পেট্রোকেমিক্যাল স্থাপনাও রয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে, এই বন্দরে একটি বড় ধরনের সাইবার হামলা হয়েছিল, যেখানে ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, এবং বন্দরের কম্পিউটার সিস্টেম অচল হয়ে গিয়েছিল, ফলে কয়েকদিন ধরে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল।
এ ঘটনায় এমন এক সময় বিস্ফোরণ ঘটলো যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য নতুন পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, ফলে ঘটনাটি আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন