সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ফের একবার তীব্র সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সংঘাতের মধ্যেই পাকিস্তানের চীনা-নির্মিত J-10 যুদ্ধবিমান অন্তত দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা। রয়টার্সকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। যদিও এখন পর্যন্ত ভারত সরকার বা দেশটির বিমান বাহিনী এই ঘটনার কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
মার্কিন কর্মকর্তাদের একজন জানান, পাকিস্তানের J-10 যুদ্ধবিমানগুলো এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল ব্যবহার করে ভারতের যুদ্ধবিমানগুলোকে টার্গেট করে এবং সাফল্যের সঙ্গে ভূপাতিত করে। আরও উল্লেখ করা হয় যে, ভূপাতিত যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে অন্তত একটি ছিল ফ্রান্স থেকে সদ্য কেনা ভারতের উন্নতমানের রাফাল জেট, যা ভারত তার আকাশ প্রতিরক্ষার আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে সংগ্রহ করেছিল।
এই প্রথমবারের মতো পশ্চিমা কোনো সূত্র থেকে নিশ্চিত করা হলো যে পাকিস্তান তাদের চীনা J-10 যুদ্ধবিমান দিয়ে সরাসরি আকাশযুদ্ধে ভারতের যুদ্ধবিমান নামিয়েছে। এর আগে স্থানীয় সূত্র ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ফুটেজ ও রিপোর্টে দাবি করা হয়, তিনটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানো হয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী তাদের চীনা জেট ব্যবহার করে তিনটি রাফালসহ মোট পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে। তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন যে, মার্কিন নির্মিত F-16 যুদ্ধবিমানগুলো এই অভিযানে ব্যবহার করা হয়নি।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়া—তিনটি বিশ্বশক্তি—দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পরমাণু শক্তিধর দেশ, এবং তাদের মধ্যে আগে থেকেই দীর্ঘদিনের কাশ্মীর সংঘাত রয়েছে, যা এই অঞ্চলের একটি সবচেয়ে স্পর্শকাতর ফ্ল্যাশপয়েন্ট হিসেবে পরিচিত।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংঘর্ষ শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও আধুনিক যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে। চীনের PL-15 মিসাইল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের Meteor ক্ষেপণাস্ত্র—এই দুটি উন্নত এয়ার-টু-এয়ার অস্ত্র প্রথমবারের মতো সরাসরি যুদ্ধে ব্যবহারের কথা উঠে এসেছে। তবে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি ভারতীয় রাফাল বিমানগুলোতে ওই মুহূর্তে Meteor ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করা ছিল কিনা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাশ্মীরের জম্মু অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, যা ভারতীয় সামরিক সূত্রগুলো পাকিস্তানি ড্রোন হামলা বলে সন্দেহ করছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা রাতারাতি ভারতের ২৫টি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে। অন্যদিকে ভারত বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা প্রতিহত করতে সফল হয়েছে। এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণ দুই দেশের মধ্যে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।
বর্তমান সংঘাত কেবল আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং আধুনিক যুদ্ধবিমান প্রযুক্তির পরীক্ষাও হয়ে উঠেছে। চীনের তৈরি J-10 এবং ইউরোপীয় রাফাল—উভয়ই ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এসব যন্ত্রের কার্যকারিতা, কৌশল ও প্রযুক্তি নিয়ে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপের সামরিক মহলে গভীর পর্যবেক্ষণ চলছে।
এই ঘটনায় সামরিক বিশ্লেষকরা একমত যে, এখনো অনেক তথ্য প্রকাশ পায়নি এবং নির্ভুল মূল্যায়নের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে এটি নিশ্চিত যে দক্ষিণ এশিয়ার এই সংঘর্ষ এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব এখন উত্তেজনা প্রশমন করা।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন