ঢাকা, শুক্রবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
logo

প্রকাশিত; ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:১৯ পিএম

সিরিয়া সম্পর্কে রাসুল (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট

সিরিয়া সম্পর্কে রাসুল (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিরিয়ার ভূমি (যা শাম নামে পরিচিত) সম্পর্কে বেশ কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এই ভূমি ইসলামি ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হাদিস:

বরকতময় ভূমি:

রাসুল (সাঃ) বলেন:

"আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শামিনা।"

অর্থাৎ, "হে আল্লাহ! আমাদের শামের জন্য বরকত দাও।" (তিরমিজি: ৩৯৫৪)

এই হাদিসে শামকে বরকতময় ভূমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

শেষ যুগের সংঘাত:

রাসুল (সাঃ) বলেন,

"তোমরা শামে থাক, কারণ এটি আল্লাহর নির্বাচিত ভূমি। এই ভূমিতে শেষ ফিতনার সময় ঈমানদারদের একত্রিত করা হবে।" (আবু দাউদ: ২৪৮৩)

মালহামা কুবরা (বৃহৎ যুদ্ধ):

রাসুল (সাঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, শামের ভূমিতে "মালহামা কুবরা" নামক এক বৃহৎ যুদ্ধ সংঘটিত হবে। এই যুদ্ধ পৃথিবীর অন্যতম বড় যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত হবে। (সহীহ মুসলিম: ২৮৯৭)

ইমাম মাহদির আগমন ও ঈসা (আঃ)-এর নেমে আসা:

হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, ইমাম মাহদি শামে অবস্থান করবেন, এবং ঈসা (আঃ) শামের দিমাশক (দামেস্ক) শহরের সাদা মিনারে নেমে আসবেন। (সহীহ মুসলিম: ২৯৩৭)

বর্তমান প্রেক্ষাপট

বর্তমানে সিরিয়া এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এখানে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সংঘর্ষ, এবং সামরিক দখলদারিত্ব চলছে।

গৃহযুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ সংঘাত:

সিরিয়ায় ২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ এখনও চলছে। হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং মিলিয়নেরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপ:

সিরিয়ার পরিস্থিতি শুধু অভ্যন্তরীণ সংঘাতেই সীমাবদ্ধ নয়; এখানে ইসরায়েল, রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক, এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপও রয়েছে।

ইসরায়েল নিয়মিত সিরিয়ার সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

তুরস্ক সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ভূমি দখলের চেষ্টা করছে।

গোলান মালভূমির দখল:

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে, যা এখনো আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত। জাতিসংঘ এটিকে সিরিয়ার ভূখণ্ড হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়।

ধর্মীয় প্রেক্ষাপট:

বর্তমান পরিস্থিতি রাসুল (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী শেষ যুগের সংঘাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়।

সিরিয়ার ভূমি আজও মুসলমানদের জন্য কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে।

মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের অভাব এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সিরিয়ার সংকটকে আরও গভীরতর করছে।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে করণীয়

দোয়া ও সাহায্য:

সিরিয়ার মানুষদের জন্য নিয়মিত দোয়া করা এবং তাদের জন্য মানবিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা জরুরি।

ঐক্যের প্রয়োজন:

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ফিতনা থেকে সাবধান:

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের শেষ যুগের ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তাই আমাদের উচিত ঈমান মজবুত রাখা এবং ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলা।

উপসংহার

সিরিয়া একটি বরকতময় ভূমি, যা অতীত এবং ভবিষ্যৎ উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সংঘাত এবং ধ্বংসযজ্ঞ রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণীকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। মুসলমানদের উচিত এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করা।