প্রকাশিত; ০৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রবিবার এক বিবৃতিতে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হাসনাত দাবি করেছিলেন যে, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে "পরিশোধিত" আওয়ামী লীগ গ্রহণের জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
সেনা সদর দপ্তর থেকে নেত্র নিউজকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১১ মার্চ ঢাকার সেনানিবাসে হাসনাত আব্দুল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তবে সেনাবাহিনী হাসনাতের অভিযোগকে "অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব কল্পকাহিনী" বলে আখ্যায়িত করেছে।
সাক্ষাতের প্রকৃতি নিয়ে বিতর্ক
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়, এটি কোনো "তলব করা" বা "চাপ প্রয়োগ" করার বিষয় ছিল না। বরং, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও তার দলের আরেক সমন্বয়কারী সারজিস আলম দীর্ঘদিন ধরেই সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাতের জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন। ১১ মার্চ সারজিস আলম নিজেই সেনাপ্রধানের সামরিক উপদেষ্টার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষাতের অনুরোধ করেন এবং পরবর্তীতে সেনা সদর দপ্তরে উপস্থিত হন।
তবে, হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন যে, তাকে "ভারতীয় পরিকল্পনা" অনুযায়ী এক নতুন আওয়ামী লীগ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তার অভিযোগ, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন এবং শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে এক নতুন আওয়ামী লীগ গঠনের পরিকল্পনা ছিল, যেখানে তারা প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার নীতি থেকে সরে আসবে। এই দলের নেতাদের আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী করা হবে এবং বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হবে।
হাসনাতের এই ফেসবুক পোস্ট দ্রুত ভাইরাল হয়, যেখানে প্রায় নয় লাখের বেশি প্রতিক্রিয়া, মন্তব্য এবং শেয়ার হয়। এতে অনেকে সেনাবাহিনীকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করার জন্য তাকে সাহসী হিসেবে প্রশংসা করেন।
সেনাবাহিনীর ব্যাখ্যা
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান শুধু ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছিলেন যে, "যদি অপরাধমূলক অভিযোগবিহীন আওয়ামী লীগ নেতারা একটি নতুন সংস্কারকৃত আওয়ামী লীগ গঠন করেন এবং নির্বাচনে অংশ নেন, তবে তা রাজনৈতিকভাবে অধিক গ্রহণযোগ্য হবে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।" তবে, এটি কোনো চাপপ্রয়োগ বা পরিকল্পিত পুনর্বাসনের উদ্যোগ নয় বলে জানানো হয়।
হাসনাত তার পোস্টে উল্লেখ করেছিলেন যে, তিনি জানতে চেয়েছিলেন কিভাবে এমন একটি দলকে ক্ষমা করা যায় যারা এখনও ক্ষমা চায়নি। উত্তরে তিনি নাকি শুনেছেন, "তোমরা কিছুই বোঝ না। তোমাদের অভিজ্ঞতা নেই। আমরা এই সার্ভিসে ৪০ বছর ধরে আছি... আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনও 'অন্তর্ভুক্তিমূলক' নির্বাচন সম্ভব নয়।"
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা
শেখ হাসিনার সরকার পতনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও, বাংলাদেশে তার দল আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। ১৫ বছরের শাসনামলে তার সরকারের অধীনে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য তাকে আন্তর্জাতিক মহলে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হতে পারে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঐতিহাসিকভাবে দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে এবং এখনো রাজনৈতিক পরিসরে বড় একটি শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান আগেও বলেছিলেন যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হতে পারে।
তবে, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হয়েছে যে, তাদের কোনো সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ইচ্ছা নেই। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, সেনাবাহিনী এখনও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখছে।