ঢাকা, রবিবার, এপ্রিল ১৩, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
logo

প্রকাশিত; ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম

শবে কদর: কুরআন ও হাদিসের আলোকে এর গুরুত্ব ও করণীয় আমল

শবে কদর: কুরআন ও হাদিসের আলোকে এর গুরুত্ব ও করণীয় আমল

নিজস্ব প্রতিবেদক

শবে কদরের মাহাত্ম্য

শবে কদর বা লাইলাতুল কদর ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত একটি রাত। এটি রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি, বিশেষত ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাতের মধ্যে লুকায়িত। এই রাতকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে, যার অর্থ হলো, এই রাতে করা ইবাদত ও নেক আমল হাজার মাসের (প্রায় ৮৩ বছর ৪ মাস) ইবাদতের চেয়েও বেশি সওয়াবপূর্ণ।

শবে কদর সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন:

"নিশ্চয়ই আমি কদরের রাতে কুরআন অবতীর্ণ করেছি। কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কী জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিব্রাইল আ.) তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে সকল বিষয়ে অবতীর্ণ হন। এটি শান্তিতে ভরা থাকে ফজরের طلوع পর্যন্ত।" (সূরা আল-কদর: ১-৫)

এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, এই রাতে ফেরেশতাগণ পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং এটি শান্তিতে ভরপুর একটি রাত।

শবে কদর সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনা

১. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমান ও সওয়াবের প্রত্যাশায় ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯০১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৬০)

২. আয়েশা (রা.) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম: "হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি শবে কদর পেয়ে যাই, তবে আমি কী দোয়া করব?" তিনি বললেন: তুমি বলবে- "اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني" (উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি) অর্থাৎ, "হে আল্লাহ! আপনি পরম ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করে দিন।"_ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫১৩)

শবে কদরের করণীয় আমল

এই রাতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মুমিনদের জন্য এটি যথাযথভাবে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটানো উচিত। কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো:

১. নফল নামাজ

এ রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। বিশেষত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তাগিদ এসেছে হাদিসে।

২. কুরআন তিলাওয়াত

এ রাতে কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। বিশেষত সূরা আল-কদর, সূরা ইয়াসিন, সূরা রাহমান, সূরা মুলক ইত্যাদি তিলাওয়াত করা যেতে পারে।

৩. তাওবা ও ইস্তেগফার

গুনাহ মাফের জন্য বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করা উচিত। কারণ, আল্লাহ এই রাতে তাঁর বান্দাদের বিশেষভাবে ক্ষমা করেন।

৪. দোয়া করা

এই রাত দোয়া কবুলের রাত। তাই নিজের, পরিবার, জাতি ও সমগ্র উম্মাহর জন্য দোয়া করা উচিত।

৫. দরুদ শরিফ পাঠ

রাসূল (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উচিত, কারণ এতে অশেষ সওয়াব রয়েছে।

৬. সাদকাহ বা দান করা

এই রাতে সাদকাহ বা দান করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। কারণ, এই রাতে করা একটি আমল হাজার মাসের আমলের সমতুল্য।

উপসংহার

শবে কদর আমাদের জন্য এক মহান নিয়ামত। এটি এমন এক রাত, যেখানে আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ হয় এবং আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অসংখ্য রহমত ও বরকত দান করেন। তাই এ রাতটি যথাযথভাবে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবে কদরের ফজিলত অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।