ঢাকা, বুধবার, এপ্রিল ৯, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
logo

প্রকাশিত; ০৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:২৩ এএম

এক হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব, ভয়ংকর বিপদে যুক্তরাষ্ট্র!

এক হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব, ভয়ংকর বিপদে যুক্তরাষ্ট্র!

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বজুড়ে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের মতানৈক্যই তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিভক্তির সুযোগ নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইরানে হামলার হুমকি দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে উপসাগরীয় মুসলিম দেশগুলো। তারা মার্কিন যুদ্ধবিমানকে তাদের আকাশসীমা বা সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইরান উচ্চমাত্রার বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে গোপনে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনা করছে, যা অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। তবে ইরান এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে এবং দাবি করেছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক খাতে এবং গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরোধিতা করে আসছে, এবং সম্প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, যদি তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে ইরানের উপর বোমা হামলা চালানো হবে।

ট্রাম্পের এই হুমকির প্রতিক্রিয়ায় উপসাগরীয় দেশগুলো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং কুয়েত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানকে তাদের আকাশসীমা বা সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেবে না। ইতোমধ্যেই তারা এ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে মিডেল ইস্ট আই জানিয়েছে যে উপসাগরীয় দেশগুলো ইরানের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় ধাক্কা, কারণ এটি ইরানের আলোচনার অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে।

ইরানকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের হুতিদের উপর ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে উপসাগরীয় দেশগুলোর অনড় অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় দেশগুলোর ঘাঁটি ব্যবহার করলেও এখন তারা আর এতে সম্মতি দিচ্ছে না। এমনকি মার্কিন যুদ্ধবিমান ভূপতিত হলে অন্য কোনো ঘাঁটি থেকে তাৎক্ষণিক বিমান উড্ডয়নের ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা দিতে পারে।

মুসলিম বিশ্বক্রমে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর এই কঠোর সিদ্ধান্ত মুসলিম বিশ্বের মধ্যে নতুন সংহতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের কৌশল এখন যেন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের নেতৃত্বে হামলার পর থেকে জর্ডান ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে যুদ্ধবিমান ও সামরিক সরঞ্জাম মজুদ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওপেন সোর্স বিশ্লেষকদের মতে, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় মার্কিন সামরিক পণ্যবাহী বিমানের সংখ্যা এই অঞ্চলে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ভারত মহাসাগরে ডিয়াগো গার্সিয়া ঘাঁটিতে বিটু বোমার বিমান মোতায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। তবে উপসাগরীয় দেশগুলোর কৌশলগত নিষেধাজ্ঞা আমেরিকার জন্য ভয়ঙ্কর বিপদের সংকেত দিচ্ছে।