ঢাকা, শনিবার, জুলাই ৫, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২০৩০ সালের মধ্যে কি কাবুল হবে বিশ্বের প্রথম পানিরহীন আধুনিক নগরী?

মুক্তধ্বনি নিউজ ডেস্ক

মুক্তধ্বনি নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫ জুলাই, ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম

২০৩০ সালের মধ্যে কি কাবুল হবে বিশ্বের প্রথম পানিরহীন আধুনিক নগরী?
HTML tutorial

কাবুল, একটি ছয় মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যার শহর, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রথম আধুনিক নগরী হতে পারে যেখানে একফোঁটা পানিও থাকবে না — এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে একটি নতুন রিপোর্ট।

অত্যধিক পানি উত্তোলন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শহরটির ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভয়াবহভাবে নিচে নেমে গেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা Mercy Corps


পানির গভীর সংকট

গত এক দশকে কাবুলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৫-৩০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে। প্রতিবছর প্রাকৃতিকভাবে ভূগর্ভস্থ পানির যে পরিমাণ পুনঃভরণ হয়, তার চেয়ে ৪৪ মিলিয়ন কিউবিক মিটার বেশি পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। এই হার অব্যাহত থাকলে, ২০৩০ সালের মধ্যে কাবুলের একমাত্র পানির উৎস — ভূগর্ভস্থ অ্যাকুইফারগুলো সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে যাবে। এতে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন।

UNICEF এর তথ্য অনুযায়ী, কাবুলের প্রায় অর্ধেক বোরওয়েল ইতোমধ্যেই শুকিয়ে গেছে, এবং অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ পানির উৎস দূষিত — এতে রয়েছে মানব বর্জ্য, আর্সেনিক ও অতিরিক্ত লবণাক্ততা।


জলবায়ু, যুদ্ধ ও দুর্নীতি: সংকটের মূলে

বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্নীতিপরায়ণ শাসনব্যবস্থা ও দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধিই এই সংকটের মূল কারণ। ২০০১ সালে কাবুলে এক মিলিয়ন মানুষ বাস করত, এখন তা বেড়ে ছয় মিলিয়নেরও বেশি।

২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের কারণে বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে কাবুলে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে, দেশের অন্যান্য অংশে প্রশাসনিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।

জলসম্পদ বিশেষজ্ঞ ও কাবুল পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রভাষক আসেম মায়ার বলেন, “এই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তব হতে পারে, কারণ প্রতি বছর পানি উত্তোলন এবং পুনঃভরণে যে ফারাক দেখা যাচ্ছে তা ধারাবাহিক। যদি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে এটি ২০৩০ সালের আগেই সত্যি হয়ে যেতে পারে।”


ধনীদের পানি, গরিবদের লাইন

কাবুলে আনুমানিক ৩ লাখ ১০ হাজার নিবন্ধিত ও প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার অননুমোদিত বোরওয়েল রয়েছে। ২০২৩ সালের এক UN রিপোর্টে দেখা গেছে, শহরের ৪৯ শতাংশ বোরওয়েল একেবারে শুকিয়ে গেছে।

ধনী ব্যক্তিরা গভীরতর কূপ খুঁড়ে পানি পাচ্ছেন, কিন্তু দরিদ্ররা প্রতিদিন লাইন ধরছেন, খুঁজছেন অল্প কিছু পানির উৎস। এমনকি শিশুরাও স্কুল না গিয়ে পানি খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে।


ব্যবসায়িক চাপে আরও সমস্যা

কাবুলে ৫০০-এর বেশি বোতলজাত পানির কারখানা রয়েছে। জনপ্রিয় আফগান কোম্পানি Alokozay একাই প্রতিদিন ২৫ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করে — বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন লিটার। এছাড়াও, সবজি চাষের জন্য থাকা ৪০০ হেক্টর গ্রীনহাউস প্রতি বছর ৪ বিলিয়ন লিটার পানি ব্যবহার করে।


জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা

কাবুলের পানি মূলত আসে তিনটি নদী থেকে — কাবুল, লগার এবং পাগমান। এগুলো হিমালয়ের বরফ গলানো পানির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ২০২৩-২৪ সালের শীতকালে বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় মাত্র ৪৫ থেকে ৬০ শতাংশ।

“বারবার খরা, অকাল বরফ গলা ও কম তুষারপাত ভূগর্ভস্থ পানির পুনঃভরণে বাধা দিচ্ছে,” বলেন মায়ার।


যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও অসমাপ্ত প্রকল্প

২০ বছরের যুদ্ধে, উন্নয়ন নয় বরং অর্থের বেশিরভাগই খরচ হয়েছে নিরাপত্তায়। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিদেশি সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পাইপলাইন, ড্যাম ও জলাধারের মতো বুনিয়াদি অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাহত হয়েছে।

একটি উদাহরণ — জার্মান উন্নয়ন ব্যাংক KfW এর অর্থায়নে একটি প্রকল্প কাবুলকে লগার থেকে বছরে ৪৪ বিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ করতে পারত। কিন্তু এটি তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বন্ধ হয়ে গেছে। একইভাবে, ভারতের সহায়তায় শাহ-তুত বাঁধ নির্মাণের প্রকল্পও অনিশ্চিত।


সমাধান কী হতে পারে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমেই কাবুলের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

  • ভূগর্ভস্থ পানির পুনঃভরণে কৃত্রিম জলাধার, চেকড্যাম ও রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং গঠন করতে হবে

  • নতুন পাইপলাইন বসিয়ে আশেপাশের নদী থেকে পানি আনতে হবে

  • পুরোনো পাইপলাইন ও সিস্টেম আধুনিক করতে হবে

  • পানির অপচয় কমিয়ে শহরজুড়ে পানি বণ্টনের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে

তবে এ সব কিছু করতে গেলে দরকার আন্তর্জাতিক সহায়তা, প্রযুক্তি ও অর্থ। যা আফগানিস্তান বর্তমানে পাচ্ছে না নিষেধাজ্ঞার কারণে। HTML tutorial

সূত্র: আল জাজিরা

মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Google News Icon গুগল নিউজে দেখুন

মুসলিম বিশ্ব রিলেটেড নিউজ

HTML tutorial