ঢাকা, বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১০, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় শত শত মানুষের মৃত্যুর খবর, নেতানিয়াহু বললেন 'শুরু মাত্র'

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯ মার্চ, ২০২৫, ১২:৩২ পিএম

গাজায় শত শত মানুষের মৃত্যুর খবর, নেতানিয়াহু বললেন 'শুরু মাত্র'
HTML tutorial

মঙ্গলবার রাতে এক দৃঢ় ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন যে, "ইসরায়েল আবারও সম্পূর্ণ শক্তিতে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে।" তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, "আলোচনা শুধুমাত্র গোলাগুলির মধ্যে চলবে," এবং "এটি মাত্র শুরু।"

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো হয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং শত শত আহত হয়েছেন।

এই হামলার মাত্রা ১৯ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে বড় ছিল। সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি মোটামুটি কার্যকর থাকলেও এই নতুন হামলা স্থায়ী শান্তি আলোচনার সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

মঙ্গলবার বেইত লাহিয়া, রাফাহ, নুসাইরাত ও আল-মাওয়াসিতে হামলা চালানো হয়, যা গাজার জনগণের সাম্প্রতিক কিছুটা শান্তির পরিবেশকে ধ্বংস করেছে। হাসপাতালগুলো আবারও আহতদের ভিড়ে উপচে পড়েছে।

এই হামলাগুলোকে "যুদ্ধবিরতির চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন" বলে উল্লেখ করেছে মিশর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তামিম খাল্লাফ বলেন, "এটি একটি বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি।"

গাজার জাবালিয়া আল-বালাদের বাসিন্দা হায়েল বিবিসি আরবিকে বলেন, "আমি হতবাক হয়েছি যে যুদ্ধ আবার শুরু হয়েছে, তবে একই সঙ্গে আমরা ইসরায়েলিদের কাছ থেকে এটাই আশা করি। আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। দেড় বছর ধরে এই পরিস্থিতি চলছে, যথেষ্ট হয়েছে।"

এই হামলায় হামাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ছিলেন গাজার উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদ আবু ওয়াতফা। তিনি হামাসের নিরাপত্তা কাঠামোর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ছিলেন।

নেতানিয়াহু তার ভাষণে বলেন, "আমরা হামাসের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছিলাম, যাতে বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু প্রতিবারই হামাস আমাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।"

হামাস এবং ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী ধাপে একমত হতে পারেনি। তিন পর্বের চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ ছয় সপ্তাহ আগে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল চুক্তির প্রথম ধাপ বাড়াতে চেয়েছিল, যাতে আরও বন্দি মুক্তি পেতে পারে। কিন্তু হামাস এই পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করে এবং একে "অগ্রহণযোগ্য" বলে ঘোষণা করে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই হামলার আগে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করেছিল। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেন, "হামাস যদি বন্দিদের মুক্তি দিত, তাহলে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত হতে পারত। কিন্তু তারা যুদ্ধকেই বেছে নিয়েছে।"

হামাস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে যে, ইসরায়েলের নতুন হামলা গাজায় আটক বন্দিদের জন্য "মৃত্যুদণ্ডের রায়ের সমান" হবে।

গাজায় কর্মরত চিকিৎসক সাবরিনা দাস বিবিসিকে বলেন, "সবকিছু খুব হঠাৎ করে ঘটেছে… সবার মনোবল ভেঙে পড়েছে, কারণ আমরা বুঝতে পেরেছি এটি আবার যুদ্ধের শুরু।"

গাজার হাসপাতালের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাকুত বলেন, "হামলাগুলো এত দ্রুত হয়েছে যে পর্যাপ্ত চিকিৎসকও পাওয়া যাচ্ছিল না, তাই অতিরিক্ত মেডিকেল টিম ডাকা হয়েছে।"

বন্দিদের পরিবারের এক দল বলছে, ইসরায়েল সরকার তাদের মুক্তির পরিবর্তে হামলা চালিয়ে বন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনাকে নষ্ট করছে। কিছু পরিবার তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে। HTML tutorial

ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবারগুলোর এক সদস্য লিরান বারম্যান বলেন, "ইসরায়েল যথেষ্ট করছে না, কারণ আমার ভাইরা এখনো ফেরেনি। কিন্তু যদি হামাস চাইত, তারা বন্দিদের মুক্তি দিত।"

ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, হামাস এখনো ৫৯ জন বন্দি ধরে রেখেছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে বিশ্বাস করা হয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়, যাতে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ৪৮,৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

গাজা শহরের শুজাইয়া জেলার ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এক শিশু কিছু অবশিষ্ট সামগ্রী খুঁজছে, যা যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স

মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Google News Icon গুগল নিউজে দেখুন
HTML tutorial