পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের (PoK) আকাশে এবার নতুন এক ছায়া দেখা গেল। সেখানে প্রকাশ্যে উপস্থিত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রতিনিধি দল। এই ঘটনাকে ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
প্রথমবারের মতো হামাসের কোনো প্রতিনিধি সরাসরি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে উপস্থিত থাকলেন। ৫ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীর সংহতি দিবসে রাওয়ালকোটের শহীদ সাবির স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় কাশ্মীর সংহতি ও হামাস অপারেশন আল-আকসা ফ্লাট সম্মেলন। এতে পাকিস্তান ভিত্তিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ছিল জয়েশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের ভাই তালহা সাইফ, জয়েশ কমান্ডার আজগর খান কাশ্মীরী এবং লস্কর-ই-তৈয়বার শীর্ষ নেতারা।
এই সম্মেলনে অন্যতম আলোচিত অতিথি ছিলেন হামাসের ইরান প্রতিনিধি ড. খালিদ আল কাদুমি। তার উপস্থিতি শুধু একটি তাৎক্ষণিক ঘটনা নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় হামাসের প্রভাব বিস্তারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
হামাস মূলত ইসরাইলের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে লড়াই করে। তবে পাকিস্তান ভিত্তিক কাশ্মীরি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। এটি কেবল ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কেই নয়, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে সুসম্পর্ক এবং হামাসের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক প্রভাবই এই সংযোগ সম্ভব করেছে। কাশ্মীরের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগকে কাজে লাগিয়ে হামাস সেখানে সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এটি কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের নতুন পথ খুলে দিতে পারে। অন্যদিকে, হামাসের দাবি অনুযায়ী, তারা শুধু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে না, বরং বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে জম্মু-কাশ্মীরে সামরিক দমননীতি অব্যাহত রেখেছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এর সমালোচনা করলেও ভারত সে বিষয়ে কর্ণপাত করছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে হামাসের প্রবেশ দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পরিস্থিতি নতুন করে ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক সমীকরণে পরিবর্তন আনবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে একথা নিশ্চিত যে, কাশ্মীরের সংকট এখন নতুন এক আন্তর্জাতিক মাত্রায় পৌঁছেছে।