যাত্রাবাড়ী বিআরটিসি বাস ডিপোর বেহাল দশা

যাত্রাবাড়ী, ঢাকা: যাত্রাবাড়ী বিআরটিসি বাস ডিপোর বর্তমান অবস্থা চরম অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার চিত্র তুলে ধরছে। দীর্ঘদিন সংস্কার ও কার্যকর তদারকির অভাবে ডিপোটি আজ বিপর্যস্ত। ভেঙে পড়া অবকাঠামো, নষ্ট হয়ে যাওয়া বাস এবং দুর্নীতির অভিযোগে যাত্রীসেবার মান ভয়াবহভাবে নেমে গেছে।
বিআরটিসির যাত্রাবাড়ী বাস ডিপোর ইউনিট প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ গোলাম ফারুক, যিনি মূলত প্রধান কার্যালয়ের এস্টেট বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম)। তবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনি এই ডিপো পরিচালনা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ডিপোর পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয়।
বিশেষ করে এসি বাসগুলো অচল হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে ডিপোর অন্তত ১০টি গাড়ির মধ্যে ৭টি বাস অচল অবস্থায় পড়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্টাফ পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত বাসগুলোও নানা যান্ত্রিক ত্রুটিতে জর্জরিত। ডিপোর দৈনন্দিন কার্যপত্র ও জব খাতায় এই তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ রিলেটেড নিউজ
ডিপোর আর্থিক অবস্থাও উদ্বেগজনক। প্রতি মাসে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা লোকসান দেখানো হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ইউনিট প্রধান বিভিন্ন রুটের মেরামতের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপব্যবহার করেন এবং হেড অফিস থেকে প্রাপ্ত মেরামতের বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করেন। উদাহরণস্বরূপ, স্টাফ বাস মেরামতের জন্য হেড অফিস থেকে আনা ৮ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র ১-২টি গাড়িতে আংশিক কাজ করিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে—যার প্রমাণ অফিসের ভাউচারে সংরক্ষিত।
প্রতিদিন ৬-৭টি বাস ডিপোতেই পড়ে থাকে, যা মেরামতের অভাবে রুটে চলাচল করতে পারে না। যে বাসগুলো রুটে পাঠানো হয়, সেগুলো প্রায়ই রাস্তায় নষ্ট হয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলে। এতে করপোরেশনের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, মোঃ গোলাম ফারুক মাসে মাত্র ৫-৬ দিন অফিস করেন, কিন্তু তারপরও বেতন সময়মতো নিয়ে থাকেন এবং যন্ত্রাংশ ক্রয়ের অর্থ ও পাম্পের বিল বাকি রেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভুল তথ্য দিয়ে পরিচালনার ভালো চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেন। পরবর্তী মাসের আয়ে আগের মাসের বকেয়া পরিশোধ করে বিষয়টি আড়াল করেন।
জানা যায়, এর আগে তিনি গাবতলী, চট্টগ্রাম, মিরপুর ও বগুড়া ডিপোতে দায়িত্ব পালনকালে একই ধরনের লুটপাটে জড়িত ছিলেন। বিশেষ করে বগুড়া ডিপোতে দায়িত্ব পালনকালে প্রায় ১.৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি অফিস স্টাফদের সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেন এবং কখনো কখনো গায়ে হাত তোলারও চেষ্টা করেন। এই আচরণের কারণে অনেক স্টাফ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, মোঃ গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, নতুবা বিআরটিসির অন্যান্য বাস ডিপোর মতো যাত্রাবাড়ী ডিপোটিও সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে মোঃ গোলাম ফারুকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন