ইসরাইলের বর্বর হামলায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের নিরপরাধ শিশুরা আজ চরম দুর্দশার শিকার। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় হাসপাতালগুলোর অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয়। আহত শিশুদের চেতনানাশক ছাড়াই অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে, কারণ ওষুধ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব প্রকট। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে গাজার সাধারণ মানুষ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন।
নবজাতকদের কোমল শরীরেও অস্ত্রোপচার চলছে চেতনানাশক ছাড়াই, চিকিৎসকরা সরাচ্ছেন বোমা ও মিসাইলের খণ্ডাংশ। হাসপাতালগুলোর শয্যা খালি নেই, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী, দক্ষ চিকিৎসক ও ওষুধের চরম সংকট চলছে। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে আইসিইউ সেবা, ফলে বহু মানুষ চোখের সামনে মারা যাচ্ছেন, কিন্তু বাঁচানোর জন্য কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।
নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছয় সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন গাজার বাসিন্দা খাদের জুনায়েদ। কিন্তু কতদিন নিরাপদ থাকতে পারবেন, আদৌ বেঁচে থাকবেন কিনা, সে প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে তার মনে। যুদ্ধের আতঙ্কে টানা তিনদিন ঘুমাতে পারেননি তিনি। যুদ্ধবিরতির পর কিছুটা আশার আলো দেখা গেলেও, পুনরায় ইসরাইলি হামলায় আবারও ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে গাজার বাসিন্দাদের।
"গাজায় আর কোনো শিশু জীবিত নেই, সবাই জান্নাতের ফুল হয়ে গেছে। আমরা আর যুদ্ধ চাই না, এই বর্বরতা বন্ধ হোক," বলেন এক ফিলিস্তিনি। এই আকুতিই যেন ২৩ লাখ গাজার বাসিন্দার প্রাণের চাওয়া। কিন্তু নতুন করে শুরু হওয়া সর্বাত্মক হামলায় গাজার মানুষ ধীরে ধীরে জীবনীশক্তি হারিয়ে ফেলছেন।
একজন শোকার্ত পিতা বলেন, "আমার দুই সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, কিন্তু এখন সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বও নেই। আমাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, আমরা আজ ভিখারীতে পরিণত হয়েছি। কেউ দয়া করে খাবার বা পানি দিলে তবেই আমাদের খাওয়া জোটে।"
ইসরাইলের স্থল অভিযানের ফলে গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশ ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে। মাত্র তিন দিনের পাশবিক হামলায় নিহত হয়েছেন ৬০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি। গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ থেকে ভয়াবহতর হয়ে উঠছে, এবং মানবিক সহায়তা ছাড়া এই দুর্দশার অবসান সম্ভব নয়।
যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা ও মানবিক বিপর্যয়ের এ চিত্র বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিচ্ছে, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—এই বর্বরতা কবে থামবে?
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন