[জুমার বয়ান : ২৬-১০-১৪৪৬ হি., ২৫-৪-২০২৫ ঈ.] [বয়ানটি আলোচকের নযরে সানী ও সম্পাদনার পর পাঠকের সামনে পেশ করা হল। প্রসঙ্গের প্রয়োজনে এতে কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে। –সম্পাদক] গত জুমায় হজ্ব সম্পর্কে কিছু কথা হয়েছিল। আজকের আলোচনাও হজ্বের প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু হবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় সামনে আসায় সেটি নিয়ে কিছু আলোচনা করার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ। কুরআন কারীমে সূরা বাকারায় হজ্ব প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, যখন তোমরা হজ্বের কাজসমূহ সমাপ্ত করবে তখন আল্লাহর যিকির করবে। হজ্ব পালনকারী ব্যক্তি ইহরাম বেঁধে মিনা হয়ে আরাফায় যাবে। আরাফা থেকে মুযদালিফায় আসবে। মুযদালিফা থেকে আবার মিনায় গিয়ে ১১-১২ যিলহজ্ব পর্যন্ত (দুই দিন বা ১৩ যিলহজ্বসহ তিন দিন) অবস্থান করবে। সেখানে জামারায় পাথর নিক্ষেপ করবে। এই পবিত্র স্থানগুলো দুআ কবুলের জায়গা। এসব স্থানে কী দুআ করবে– সেটিও আল্লাহ তাআলা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। দুআটি আমাদের বর্তমান অবস্থার সঙ্গেও খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন– فَاِذَا قَضَیْتُمْ مَّنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَذِكْرِكُمْ اٰبَآءَكُمْ اَوْ اَشَدَّ ذِكْرًا فَمِنَ النَّاسِ مَنْ یَّقُوْلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا وَمَا لَهٗ فِی الْاٰخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ، وَمِنْهُمْ مَّنْ یَّقُوْلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّفِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ، اُولٰٓىِٕكَ لَهُمْ نَصِیْبٌ مِّمَّا كَسَبُوْا وَاللهُ سَرِیْعُ الْحِسَابِ. তোমরা যখন হজ্বের কার্যাবলি শেষ করবে, তখন আল্লাহকে সেভাবে স্মরণ করবে, যেভাবে নিজেদের বাপ-দাদাকে স্মরণ করে থাক; বরং তার চেয়েও বেশি স্মরণ করবে। কিছু লোক তো এমন আছে, যারা (দুআয় কেবল) বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়ায় দান করুন। আখেরাতে কিন্তু তাদের কোনো অংশ নেই। আবার তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দান করুন, দুনিয়ায়ও কল্যাণ এবং আখেরাতেও কল্যাণ এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। এরা এমন লোক, যারা তাদের অর্জিত কর্মের অংশ (সওয়াবরূপে) লাভ করবে। আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। –সূরা বাকারা (০২) : ২০০-২০২ হজ্বের কাজগুলো সমাপ্ত করে মিনায় অবস্থানকালে আল্লাহর যিকির করবে। যেমন তাকবীরে তাশরীক– اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، وَلِلهِ الْحَمْدُ. এই সময় তাকবীরে তাশরীকের যিকিরসহ অন্যান্য যিকিরও করবে। আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর যিকির কর এবং আল্লাহকে স্মরণ কর, তোমাদের বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের স্মরণের মতো। ইসলামপূর্ব যুগে মক্কার মুশরিকসহ অন্যান্য বেদ্বীনরাও হজ্ব করার জন্য মক্কা মুকাররমায় যেত। বলার অপেক্ষা রাখে না, তারা যেহেতু তাওহীদের শিক্ষা হারিয়ে ফেলেছিল, সেহেতু তাদের হজ্ব তাওহীদের হজ্ব ছিল না; ছিল শিরকের হজ্ব। এমনকি হজ্বের মধ্যে তাওহীদের যে তালবিয়া– لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لا شَرِيكَ لَكَ. –সেটি পর্যন্ত তারা পরিবর্তন করে ফেলেছিল। ওই সময় তারা নিজেদের মতো করে হজ্ব সম্পন্ন করার পর নিজেদের পূর্ব পুরুষদের বাস্তব-অবাস্তব যাবতীয় গুণকীর্তন ও প্রশংসা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের তাওহীদের হজ্ব শেখাচ্ছেন। সেখানে এ নির্দেশনাও দিচ্ছেন যে, হজ্ব সমাপ্ত করার পর কেবল আল্লাহর যিকির কর। আগে যেমন পূর্বপুরুষ ও বাপ-দাদার চর্চা করতে, অন্তত ততটুকু যিকির তো আল্লাহর জন্য করবে; বরং তার চেয়ে বেশি কর– اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، وَلِلهِ الْحَمْدُ. মুমিন ও কাফেরের প্রার্থনার পার্থক্য যিকিরের প্রধান ও প্রথম সারির প্রকারগুলোর মধ্যে দুআ অন্যতম। সেই দুআর ধরন কেমন হবে, তা-ও আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন। কিছু লোক আছে, যাদের চিন্তা, স্বপ্ন, প্রার্থনা সবকিছু কেবল দুনিয়া ও ইহজগতকে কেন্দ্র করে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন– فَمِنَ النَّاسِ مَنْ یَّقُوْلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا. কিছু লোক তো বলে, মালিক, আমাদের কেবল দুনিয়া দান করুন! দুনিয়াতে সুখে রাখুন! ইহজগতের সকল সুখ দান করুন! ব্যস, আখেরাতের কোনো আলাপ নেই। আখেরাতের জন্য তাদের কোনো প্রার্থনা নেই। আল্লাহ বলছেন– وَ مَا لَهٗ فِی الْاٰخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ. ‘আখেরাতে তার কোনো অংশ নেই।’ অর্থাৎ তার নিজেরই যেহেতু আখেরাত নিয়ে কোনো ভাবনা নেই, তাই আখেরাতে তার কোনো অংশও নেই। পক্ষান্তরে তাওহীদে বিশ্বাসী মুমিন বান্দাদের দুআ কেমন সেটাও আল্লাহ তাআলা বলেছেন– رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّفِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ. অর্থাৎ আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন! আখেরাতেও কল্যান দান করুন! দুনিয়াতেও যেন আমরা সুখে-শান্তিতে থাকতে পারি! আপনার নেক বান্দা হয়ে থাকতে পারি! আর আখেরাতেও যেন শান্তি ও নিরাপদে থাকতে পারি! এককথায় আমরা আপনার নিকট দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতের কল্যাণ কামনা করি এবং দোযখের আগুন থেকে পানাহ চাই! আল্লাহ তাআলা বলছেন– اُولٰٓىِٕكَ لَهُمْ نَصِیْبٌ مِّمَّا كَسَبُوْا وَ اللهُ سَرِیْعُ الْحِسَابِ. তাদের আমল অনুযায়ী তাদের জন্য আখেরাতে বড় অংশ থাকবে। আর আল্লাহ অনেক দ্রুত হিসাব নিতে পারেন। কোটি কোটি মানুষের মধ্যে কে আল্লাহর কাছে কেবল ইহজগতের কল্যাণ চেয়েছিল আর কে ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের কল্যাণ চেয়েছিল– সেই হিসাব নিতে আল্লাহর কোনো সময় লাগবে না। তিনি অনেক দ্রুত সমস্ত হিসাব সম্পন্ন করতে সক্ষম। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং দেখেন। ভাইয়েরা আমার! আমরা মুমিন, মুসলিম। আমরা তো আল্লাহর নিকট দুনিয়া-আখেরাত উভয়টাই চাই। বরং আমাদের দুনিয়াও নিছক দুনিয়া নয়, মূলত তা আখেরাতের প্রস্তুতির জন্য। আখেরাতের প্রতি অবিশ্বাস ও উদাসীনতা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ সূরা ইউনুসেও আল্লাহ তাআলা বলেন– اِنَّ الَّذِیْنَ لَا یَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا وَرَضُوْا بِالْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَاطْمَاَنُّوْا بِهَا وَالَّذِیْنَ هُمْ عَنْ اٰیٰتِنَا غٰفِلُوْنَ، اُولٰٓىِٕكَ مَاْوٰىهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوْا یَكْسِبُوْنَ، اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ یَهْدِیْهِمْ رَبُّهُمْ بِاِیْمَانِهِمْ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهِمُ الْاَنْهٰرُ فِیْ جَنّٰتِ النَّعِیْمِ، دَعْوٰىهُمْ فِیْهَا سُبْحٰنَكَ اللّٰهُمَّ وَتَحِیَّتُهُمْ فِیْهَا سَلٰمٌ وَاٰخِرُ دَعْوٰىهُمْ اَنِ الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ. নিশ্চয়ই যারা (আখেরাতে) আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আশা রাখে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট ও তাতেই নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে এবং যারা আমার নিদর্শনাবলি সম্পর্কে উদাসীন— নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। (অপরদিকে) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের ঈমানের কারণে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে এমন স্থানে পৌঁছাবেন যে, প্রাচুর্যময় উদ্যানরাজিতে তাদের তলদেশ দিয়ে নহর বহমান থাকবে। তাতে (প্রবেশকালে) তাদের ধ্বনি হবে এই যে, হে আল্লাহ! সকল দোষ-ত্রুটি থেকে আপনি পবিত্র এবং সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। আর তাদের শেষ ধ্বনি হবে এই যে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। –সূরা ইউনুস (১০) : ৭-১০ এখানে আল্লাহ তাআলা বলেন, যাদের আমার সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো আশা নেই বা বিশ্বাস নেই এবং তারা দুনিয়ার জীবনকেই সবকিছু মনে করে, মৃত্যুর পরে কবর থেকে যে জগৎ শুরু হয়, হাশর-নশর, আল্লাহর দরবারে দাঁড়ানো ইত্যাদি বিষয়ে যাদের বিশ্বাস নেই, তাদের পরিণতি জাহান্নাম। তেমনিভাবে যাদের বিশ্বাস আছে, কিন্তু মনোযোগ ও গুরুত্ব নেই। অর্থাৎ আরেকটা জগতের বিষয়ে জানা আছে, কিন্তু সেই জগতের বিষয়ে কোনো তৎপরতা ও প্রস্তুতি নেই, ভাবখানা এমন, সবাই যেহেতু বলছে মৃত্যুর পরের জগতের কথা, কিছু একটা না থাকলে তো আর বলার কথা না! এভাবে একধরনের জানা আছে, কিন্তু তার জন্য প্রস্তুতি ও তৎপরতা নেই। তাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। আয়াতের উপস্থাপনায় যারা পরকালকে বিশ্বাসই করে না এবং যারা মোটামুটি একধরনের বিশ্বাস হয়তো করে, কিন্তু আচরণে তার কোনো প্রকাশ নেই, উভয় শ্রেণির লোকদের কথাই এসে যায়। তারপর বলা হয়েছে– وَرَضُوْا بِالْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ اطْمَاَنُّوْا بِهَا. অর্থাৎ দুনিয়া নিয়েই তারা সন্তুষ্ট এবং মনটাও তার ওপর স্থির ও প্রশান্ত। অর্থাৎ দুনিয়া ঠিক তো সব ঠিক! দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত, আখেরাতের কোনো ভাবনা নেই। وَ الَّذِیْنَ هُمْ عَنْ اٰیٰتِنَا غٰفِلُوْنَ. আর তারা আল্লাহর দেওয়া কুরআনের আয়াত সম্পর্কে গাফেল। তাঁর স্থাপনকৃত কুদরত ও হেদায়েতের বিভিন্ন নিদর্শন সম্পর্কে উদাসীন। তাদের ঠিকানা ও পরিণতির কথা আল্লাহ বলছেন– اُولٰٓىِٕكَ مَاْوٰىهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوْا یَكْسِبُوْنَ. অর্থাৎ তাদের হাতের কামাই অনুযায়ী তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। কারণ আখেরাত বিষয়ে তাদের কোনো গুরুত্বই ছিল না। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে, হিসাব দিতে হবে, এই ভাবনাই তাদের ছিল না; বরং দুনিয়া নিয়েই ছিল ব্যস্ত। পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলছেন– اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ یَهْدِیْهِمْ رَبُّهُمْ بِاِیْمَانِهِمْ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهِمُ الْاَنْهٰرُ فِیْ جَنّٰتِ النَّعِیْمِ. অর্থাৎ যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের ঈমানের বরকতে আল্লাহ তাআলা তাদের সঠিক পথ দেখাবেন। ফলে দুনিয়ায় থেকে তারা আখেরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। আর আখেরাতে গেলে জান্নাত পাবে। এখানে আল্লাহ তাআলা ভাগ করে দিয়েছেন। যার ভাবনা কেবল ইহজগৎ তার ঠিকানা ও পরিণতি কী। আর যার ভাবনা দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টা এবং সে দুনিয়ার কল্যাণও চায় আখেরাতের লক্ষ্যে, যেখানে দুনিয়া পেতে হলে আখেরাত ছাড়তে হয়– সে সেখানে কখনো দুনিয়ার দিকে ধাবিত হয় না; বরং আখেরাতকে প্রাধান্য দেয়– তার ঠিকানা ও পরিণতি কী– তাও আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন : স্পষ্ট আল্লাহদ্রোহিতা ও শরীয়তদ্রোহিতা কুরআনের এই শিক্ষা এবং ইসলাম ও ইসলামী শরীয়তের এই মৌলিক আকীদা মাথায় রেখে একটু ভাবতে পারি, আমাদের বর্তমান অবস্থা কী? সবাই ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি, আমাদের প্রধান উপদেষ্টার নিকট নারী বিষয়ক সংস্কারের প্রতিবেদন জমা হয়েছে। যারা এই প্রতিবেদন ও প্রস্তাবনা পেশ করেছেন, তারা একদিক থেকে তো ধন্যবাদ পাওয়ার উপযুক্ত যে, তারা স্পষ্টভাষী। কারণ কোনো রাখঢাক করেননি তারা; বরং তাদের ভেতরে যা আছে তা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন। কোনো মুসলিম রাষ্ট্র কি কেবল ইহজাগতিক হতে পারে? একটি দৃষ্টান্ত দেখুন। প্রতিবেদনের ৩৫নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘যেহেতু রাষ্ট্র একটি ইহজাগতিক সত্তা, সেহেতু কোনো ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করে সংবিধান শুরু হওয়া উচিত নয়। তা ছাড়া, একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়া ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। তাই অনুচ্ছেদ ২ক বাতিল করা প্রয়োজন।’ তাদেরকে বলা হয়েছে, নারী বিষয়ক সংস্কারের প্রস্তাবনা, মতামত ও পরামর্শ জমা দেওয়ার জন্য, তারা সেখানে দিয়ে বসল রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের মূলনীতি সম্পর্কে প্রস্তাবনা! বলল, আমাদের রাষ্ট্র হল ইহজাগতিক! নাউযুবিল্লাহ! কোনো মুসলিম দেশ কি কেবল ইহজাগতিক হতে পারে? হওয়া সম্ভব? আমাদের দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং তা যুগ যুগ ধরেই আছে। যাদেরকে এদেশ থেকে সবাই মিলে বের করে দিয়েছে তারাও এটা বাদ দেয়নি বা দিতে পারেনি; কিন্তু এই কমিশন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এটা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করছে! এই রাষ্ট্র নাকি ইহজাগতিক, নাউযুবিল্লাহ! একথা একাধিক জায়গায়ই বলেছে। ২৪০নং পৃষ্ঠায় আছে, ‘রাষ্ট্র হবে ইহজাগতিক এবং মানবিক!’ অর্থাৎ রাষ্ট্র হবে কেবল দুনিয়াকেন্দ্রিক, যেখানে আখেরাত সংক্রান্ত কিছুই থাকবে না। যাদের সবকিছু দুনিয়া কেন্দ্রিক, তাদের ঠিকানা কোথায় হবে– একটু আগেই আমরা কুরআনে দেখলাম। সুতরাং আমরা কি আমাদের দেশ ও সমাজের জন্য এমন কিছু চাই? চাইতে পারি? কখনোই না। আরও বলছে ‘মানবিক’! আরে, যেটা কেবল ইহজাগতিক হয়, সেটা মানবিক হওয়া কখনো সম্ভব নয়। মানবতা কোত্থেকে আসবে? আপনাকে ‘মানবিক’ হতে হলে তো আপনার মধ্যে সর্বপ্রথম আখেরাতমুখিতা ও পরকাল ভাবনা থাকতে হবে। আখেরাতের ফিকির যার নেই, সে কখনো মানবতা বাস্তবায়ন করতে পারে না এবং পারবেও না। এই যে দুই কথাকে একসঙ্গে মিলিয়ে দিল যে ‘রাষ্ট্র হবে ইহজাগতিক এবং মানবিক’ এটা কি পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়? ইহজাগতিক হলে সেটি কখনোই মানবিক হতে পারে না; বরং সম্পূর্ণ অমানবিক। মানবিক বানাতে হলে সেটিকে অবশ্যই আখেরাতমুখী ও আল্লাহমুখী বানাতে হবে। বলতে হবে– لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لا شَرِيكَ لَكَ. اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، وَلِلهِ الْحَمْدُ. একজন মুমিনের ন্যায় বলতে হবে– سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا. আল্লাহ, আমরা আপনার বিধান শুনেছি, তা গ্রহণ করেছি এবং মেনে নিয়েছি। আবারো বলছি, তারা কিন্তু স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তাদের কাছে রাষ্ট্র হল সম্পূর্ণ ইহজাগতিক ও দুনিয়াকেন্দ্রিক! এর মধ্যে আখেরাত, ঈমান-আমল ও দ্বীন-শরীয়তের কিছু পাওয়া যাবে না। সুতরাং যার কাছে ঈমান-আমল ও আখেরাতের গুরুত্ব নেই, সে এটা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু যার কাছে কুরআন-হাদীস, ঈমান-আমল, ইসলামী শরীয়ত ও আখেরাতের গুরুত্ব আছে, সে এটা কখনো গ্রহণ করতে পারে না। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার স্পষ্ট বার্তা : ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে নবীজীর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ্ই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ, উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আপনাদের জানার কথা, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরীতে জগনণের উদ্দেশে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের সীরাত বিষয়ক একটি বাণী ও বার্তা দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) এসেছিলেন তওহিদের মহান বাণী নিয়ে। সব ধরনের কুসংস্কার, অন্যায়, অবিচার, পাপাচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তি, শান্তি, প্রগতি ও সামগ্রিক কল্যাণের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তিনি। বিশ্ববাসীকে তিনি মুক্তি ও শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়ে অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়েছিলেন এবং সত্যের আলো জ্বালিয়েছেন। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার জন্য অনিন্দ্য সুন্দর অনুসরণীয় শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন, যা প্রতিটি যুগ ও শতাব্দীর মানুষের জন্য মুক্তির দিশারি হিসেবে পথ দেখাবে। আজকের দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় বিশ্বে মহানবী (সা.)-এর অনুপম জীবনাদর্শ, তাঁর সর্বজনীন শিক্ষা ও সুন্নাহর অনুসরণ এবং (আল্লাহর) ইবাদতের মাধ্যমেই বিশ্বের শান্তি, ন্যায় এবং কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে বলে আমি মনে করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ বিশ্ববাসীর জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ, উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং এর মধ্যেই মুসলমানদের অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে।’ আমি আমাদের সরকারকে অনুরোধ করব, যেহেতু নবীজীর এই সীরাতই হল সবকিছুর সমাধান, তাই নারী উন্নয়ন চান আর নারী অধিকার চান, সবই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত থেকে গ্রহণ করুন! কুরআন ও হাদীস থেকে গ্রহণ করুন। তার জন্য আপনাকে আলাদা কোনো কমিশন বানাতে হবে না। ধর্মমন্ত্রণালয়ের অধীনে আমাদের ইসলামিক ফাউন্ডেশন আছে, ফাউন্ডেশনকে বলুন। আপনাকে সর্বোচ্চ সুন্দর ও চমৎকার নারী উন্নয়ন নীতিমালা পেশ করে দিতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ; বরং পেশ করা আছেও। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সীরাত বিষয়ক যেমন বই লেখা আছে, নারী বিষয়েও যাবতীয় বিধিবিধান বই আকারে ছাপা আছে। আর কুরআন-সুন্নাহ ও নবীজীর সীরাত থেকে আপনাদেরকে যে কোনো সময়ই প্রস্তুত করে পেশ করা সম্ভব! সেটাকে বাস্তবায়ন করে দিন! দেখবেন, পুরো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শান্তিতে ও সম্মানে থাকবে আমাদের দেশের মা-বোনেরা! কিন্তু সরকার যাদেরকে এই কমিশনের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা কি আসলে এসব সূত্র থেকে নারী উন্নয়নের নীতি খোঁজ করেছেন? এদেশের নারীরা আসলে কী চান? তারা কীভাবে থাকতে সম্মানবোধ করেন? তারা তাদের কোন্ অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করতে চান? সর্বপ্রকার জুলুম-নির্যাতন ও বঞ্চনা থেকে তাদেরকে মুক্ত করার জন্য কোন্ পন্থাটি আসলে সঠিকভাবে কার্যকর– এই কমিশনের সদস্যগণ কি সত্যিই সেটি অনুধাবন করার ক্ষমতা বা যোগ্যতা রাখেন? তাদের প্রতিবেদনটি দেখলে তো অন্তত তা বোঝা যায় না। পশ্চিমাদের পার্থিব উন্নতি অশ্লীলতা ও আল্লাহবিমুখতার কারণে নয় পশ্চিমাদের দাপট দেখে অনেকে মনে করে, সেখান থেকে আমাদের সবকিছু নিতে হবে। অথচ বোঝে না যে, পশ্চিমাদের জাগতিক উন্নতি ও অগ্রগতি তাদের অশ্লীলতা ও খোদাবিমুখতার কারণে নয়। যে কারণে তাদের জাগতিক অগ্রগতি, বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সে বিষয়ে তাদের থেকে আমাদের নেওয়ার কিছু নেই; বরং আমাদের কাছেই আছে তাদের চেয়ে অনেক উন্নত পথ ও পন্থা। আসলে আমাদেরগুলোই তারা গ্রহণ করেছে; ফলে তারা জাগতিক উন্নতি করছে। কাজেই নিজের ঘরেরটাই বাস্তবায়ন করে দেখুন, জাগতিক উন্নতি কীভাবে সাধিত হতে থাকে! তাদের জাগতিক উন্নতি দেখে ভাববার কোনো প্রয়োজন নেই যে, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার কারণে তারা উন্নতি করছে! বা তাদের জাহেলী সভ্যতার কারণে তারা উন্নতি করছে। আচ্ছা, তারা কি সুদের কারণে উন্নতি করছে? সেক্যুলারিজমের কারণে উন্নতি করছে? লিবারেলিজমের কারণে উন্নতি করেছে? সেক্যুলার শিক্ষা ও সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে অথবা নারী উন্নয়নের নামে যতসব বেহায়াপনা রয়েছে, সেগুলোর কারণে কিংবা লিবারেলিজমের অবাধ উশৃঙ্খল উন্মত্ত চাল-চলনের কারণে উন্নতি করছে তারা? কখনোই নয়। বরং বেহায়াপনা বিস্তার করে নিজেরা যেমন বরবাদ হয়েছে, অন্যদেরও বরবাদ করতে চাচ্ছে। পশ্চিমাদের পার্থিব উন্নতির মৌলিক দুটি কারণ আবারো বলছি, এগুলো পশ্চিমা বিশ্বের উন্নতির চালিকাশক্তি নয়! তাদের সামরিক শক্তি ও পার্থিব উন্নতির কারণ এসব নয়। বরং তার কারণ অন্য কিছু। মৌলিকভাবে দুটি : প্রথমত, মুসলিম উম্মাহর মাঝে ব্যাপকভাবে তাকওয়ার অভাব এবং শরীয়ত পালনে উদাসীনতা বেড়ে গেছে, যার কারণে আল্লাহ তাআলা এদের শক্তি তাদেরকে দিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, আমাদের নবীজীর সীরাতের মধ্যে যেসব শিক্ষা রয়েছে, যেমন দুর্নীতি না করা, ধোঁকা ও প্রতারণা না করা, সততা ও সত্যবাদিতা গ্রহণ করা ইত্যাদি; তারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নিজেদের বিশেষ কিছু গণ্ডিতে এই নীতিগুলোর চর্চা ধরে রেখেছে। এর পাশাপাশি তাদের মধ্যে রয়েছে পরিশ্রম, উদ্যম, পরিকল্পনা মাফিক কাজ, টিমওয়ার্ক, সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা এবং জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের পারদর্শিতা, যা আমাদের খোলাফায়ে রাশেদীন ও খাইরুল কুরুনের যামানার বৈশিষ্ট্য ছিল। ফলে তারা জাগতিক উন্নতি লাভ করছে। তাদের জাগতিক উন্নতি এজন্য নয় যে, তারা সকল অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাদের জাগতিক উন্নতি এজন্যও নয় যে, তারা খোদাবিমুখতা ও আখেরাত বিমুখতা প্রদর্শন করে। সেজন্য আমাদের অনুরোধ, আল্লাহর ওয়াস্তে সেখান থেকে কোনো কিছু ধার নিতে না যাই! বরং আমাদের নবীজীর সীরাত ও শরীয়তের মধ্যেই সব আছে। সেখান থেকেই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। এই প্রতিবেদন জুলাই-আগস্টের শহীদদের সঙ্গে স্পষ্ট গাদ্দারি মনে রাখবেন, যদি এক্ষেত্রে আমরা ভুল করি এবং এই ধরনের অহেতুক ও পঁচা-গান্দা জিনিস এদেশে বাস্তবায়নের চিন্তা করা হয়, এটা হবে সবচেয়ে বড় জুলুম! এটা হবে সবচেয়ে বড় বেঈমানী! সবচেয়ে বড় খেয়ানত! জুলাই-আগস্টের শহীদদের সঙ্গে সবচেয়ে বড় গাদ্দারি! জুলাই-আগস্টের শহীদদের কথা বিশেষভাবে এজন্য বললাম, এই প্রতিবেদন পেশ করার সময় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেছেন, “জুলাইতে যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের স্মরণার্থে এমন কিছু করতে চেয়েছি, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে”। নাউযুবিল্লাহ! আরে, যে জিনিসের মধ্যে জুলাই-আগস্টের শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করা হয়েছে, সেখানে বলছে, এটা নাকি তাদের স্মরণার্থে করা হয়েছে! এটা মুনাফেকী নয় কি? খবরদার, যে জিনিস শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি, সেটি তাদের স্মরণে করতে যাবেন না! বলেছেন ‘মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে।’ অথচ এই প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে, সেটা মানুষের জন্যও অকল্যাণকর, সমাজের জন্যও অকল্যাণকর। দেশের জন্যও অকল্যাণকর, সর্বোপরি এটি নারীদের জন্যও অকল্যাণকর। এর মধ্যে কল্যাণের কিছু নেই। সমতা নয়, চাই নারীর ন্যায্য অধিকার আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি এবং আখেরাতের প্রতি ঈমান আছে এমন কোনো নারী এ প্রতিবেদন মেনে নিবে না; মেনে নিতে পারে না। যদিও প্রতিবেদনে বারবার সমতা ও সমান অধিকারের জিগির তোলা হয়েছে। কিন্তু সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন পুরুষ-মহিলা সকলেই বোঝেন, যেখানে ভিন্নতা প্রযোজ্য ও ন্যায়সংগত সেখানে সমতার দাবি অন্যায়। বরং যে বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং ন্যায়সংগত তা হল ন্যায্য অধিকার। সেটা ক্ষেত্র বিশেষে দুই শ্রেণির জন্য সমানও হতে পারে, কম বেশিও হতে পারে। সব জায়গায় সমান করার দাবি যেমন অবাস্তব তেমনি অন্যায়। নারীর প্রতিও অন্যায়। যারই আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান আছে, সেই বুঝতে সক্ষম– অধিকার তো যিনি খালেক, মালেক, রাব্বুল আলামীন, তিনিই নির্ধারণ করতে পারেন। কাজেই অধিকারের নাম ব্যবহার করে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করার অধিকার কারও নেই। অথচ এ প্রতিবেদনে এ কাজটিই হয়েছে। এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু যেমন কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়ত বিরোধী, তেমনি এটি বাস্তবতা বিরোধীও। এটি সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি ও সুস্থ রুচি বিরোধী। সর্বোপরি এটি হায়া-লজ্জা বিরোধী! মানুষের মধ্যে তো ন্যূনতম লজ্জাবোধ বলতে কিছু থাকে– সেই বিবেচনায়ও এই প্রতিবেদন প্রত্যাহারযোগ্য। এই প্রতিবেদনের দাবি হল, হায়া-শরম, লজ্জা জাতীয় শব্দগুলোই সমাজ থেকে বের করে দাও! নাউযুবিল্লাহ! এরা ‘শালীনতা’ ও ‘নৈতিকতা’ শব্দগুলোকেই বাদ দিতে চাচ্ছে আমাদের সংবিধানের ৩৯।(২) অনুচ্ছেদে শালীনতা ও নৈতিকতার কথা আছে। তারা বলে কী– এই অনুচ্ছেদ থেকে শালীনতা ও নৈতিকতার বিষয়টি বাদ দিয়ে দিতে হবে। অথচ আমাদের সংবিধান সংস্কার করা প্রয়োজন এজন্য যে, যদিও সেখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, একথা লেখা আছে, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অনুচ্ছেদে ইসলামবিরোধী বিভিন্ন কথাও আছে; সেজন্য এর সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু এরা এসে সংবিধান থেকে ইসলামই বাদ দিয়ে দিতে চাচ্ছে! শালীনতা আর নৈতিকতার যা কিছু অবশিষ্ট আছে, সেটাও বাদ দিতে চাচ্ছে! শালীনতা ও নৈতিকতা যারা বাদ দিতে চায়, তারা কি আসলে নারীর উন্নয়ন চায়? প্রতিবেদনের ৩৫নং পৃষ্ঠায় প্রস্তাব করেছে– ‘(সংবিধানে) শব্দ প্রয়োগে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। ... ‘গণিকাবৃত্তি’, ... শালীনতা, নৈতিকতা–’ শব্দসমূহের ব্যবহার পরিহার করা।’ তারা আরও বলেছে, অস্পষ্ট কোনো শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। ১৬২নং পৃষ্ঠায় তারা অস্পষ্ট পরিভাষা পরিহার করতে বলেছে এবং টীকায় অস্পষ্ট পরিভাষার উদাহরণ দিয়ে বলেছে, ‘অস্পষ্ট পরিভাষা যেমন, ‘নৈতিক অবক্ষয়’, ‘সুস্থ বিনোদন’, ‘জনস্বার্থ বিরোধী’, ‘অশ্লীল’, ‘ধর্মীয় অনুভূতি’। ‘রাজনৈতিক অনুভূতি’। ‘শালীনতাপূর্ণ পোশাক’।’ তারা বলছে, এসব পরিভাষা বিলুপ্ত করে দিতে! এতদিন আমাদের অভিযোগ ছিল, আপনারা ইসলামী শরীয়ত ও নবীজীর শিক্ষা পরিপূর্ণ গ্রহণ করুন। এই ধরনের অস্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করে কিছু মানবেন আর কিছু মানবেন না– এমনটা হয় না। কিন্তু এরা এসে প্রস্তাব করছে যে, এই শব্দগুলোই সংবিধান থেকে মুছে দাও! এই যে ‘নৈতিক অবক্ষয়’– এটা কত বড় আফসোসের বিষয়! এখন তারা শব্দটাই বাদ দিয়ে দিতে বলছে! ‘সুস্থ বিনোদন’ বলার দরকার কী? বরং যে কোনো বিনোদনের জন্য রাস্তা খুলে দাও! ‘জনস্বার্থ বিরোধী’ আবার কী জিনিস? মানুষের ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ ‘রাজনৈতিক অনুভূতিতে আঘাত’ শব্দগুলো আমাদের দেশে খুব প্রচলিত। এই ভাষাগুলোর মাধ্যমে কিছুটা হলেও আমরা নৈতিকতা ও শালীনতার বার্তা পেতাম এবং বিভিন্ন অপরাধকে এসব শব্দের আওতায় এনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাকড়াও বা প্রতিবাদ করার একটা সুযোগ থাকত। কিন্তু এখন এরা এসে বলে, এগুলোই বাদ দিয়ে দাও! দেখুন, কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে এরা! এরা শালীনতা ও নৈতিকতার শেষ চিহ্নটুকুও মুছে দিতে চায়! এরা ‘শালীনতা’ আর ‘নৈতিকতা’কে বাদ দিতে বলে। অথচ এই হালকা হালকা শব্দগুলো দিয়ে কোনোরকমে একটু হলেও আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছিল, সেই কথাগুলোকেই তারা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করছে! এর মানে এরা শালীনতা ও নৈতিকতার শেষ চিহ্নটুকুও মুছে দিতে চায়! কতটা জঘন্য দেখুন! কতটা কঠিন দুর্গন্ধযুক্ত এই প্রতিবেদন! এসবের পরেও পৃথকভাবে বলার প্রয়োজন আছে কি যে, এই প্রতিবেদনের কোন্ কোন্ অনুচ্ছেদ কুরআনবিরোধী, হাদীসবিরোধী? ইসলামী শরীয়তে চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা, দৃষ্টির হেফাজত, সব ধরনের অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকার যত নির্দেশনা এবং বিবাহ ও তালাক বিষয়ক, মিরাস, নসব তথা বংশ বিষয়ক, হিযানাহ তথা সন্তান লালন-পালন বিষয়ক যত বিধান ইসলামী শরীয়তে রয়েছে, তাদের প্রস্তাব হল এ সবকিছু বাদ দিয়ে দাও! এর মানে, তারা মুসলিম উম্মতকে দ্বীন-শরীয়ত, ঈমান-আখলাক এবং তাকওয়া-তাহারাত সবকিছু থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে বলছে। আল্লাহর শরীয়তের পরিবর্তে আল্লাহদ্রোহী ও আখেরাত বিমুখ সমাজের কৃষ্টি-কালচার গ্রহণ করতে বলছে। ঈমানের পরিবর্তে কুফুর, পবিত্রতার পরিবর্তে কলুষতা, পারিবারিক বন্ধনের পরিবর্তে লাগামহীনতা, হায়া-লজ্জার পরিবর্তে নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা এবং জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নাম খরিদ করতে বলছে। কাজেই যারা এই প্রতিবেদন সমর্থন করতে চায়, তাদের এর পরিণতি বুঝে-শুনে সমর্থন করা উচিত। মনে রাখতে হবে, তাওহীদের এই যমীনে ঈমান-আখলাক বরবাদকারী এমন প্রস্তাবনা কখনো বাস্তবায়ন হবে না ইনশাআল্লাহ! বরং যারা বাস্তবায়ন করতে যাবে, তারাই বরবাদ হয়ে যাবে! তাদের দাবি হল, কেবল ইসলাম ধর্মই নয়, অন্য যতসব ধর্ম রয়েছে, সকল ধর্মের সবকিছু বাদ দিয়ে নতুন করে সবার জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন বানাও! নাউযুবিল্লাহ! এদেরকে শরীয়ত পরিবর্তনের অধিকার কে দিল? প্রশ্ন হল, আপনাদেরকে শরীয়ত পরিবর্তন করে বিভিন্ন নিয়ম-নীতি বানাবার দায়িত্ব কে দিয়েছে? ইসলামী শরীয়তে অন্য সকল বিষয়ের মতো এই বিষয়েও প্রয়োজনীয় হেদায়েত ও নির্দেশনা তো দেওয়াই আছে। শরীয়ত দেওয়ার মালিক তো একমাত্র আল্লাহ তাআলা। কোনো মাখলুক অপর মাখলুকের জন্য শরীয়ত দিতে পারে না। আপনাকে শরীয়ত বানানোর দায়িত্ব তো দেওয়া হয়নি! আপনাকে একথা বলার জন্য তো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি যে, মুসলিমরা তাদের পারিবারিক আইন বাদ দেবে। হিন্দুরা তাদের পারিবারিক আইন বাদ দেবে, খ্রিস্টানরা নিজেদের পারিবারিক আইন বাদ দেবে! ব্যভিচার ও পতিতাবৃত্তিকে আইনি বৈধতা দেওয়ার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা যেটা করার কাজ সেটার খবর নেই, উল্টো পতিতাবৃত্তি, বিবাহ বহির্ভূত অবাধ যৌনতা, এলজিবিটির কর্মকাণ্ড কীভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা যায়– সেই ধান্দায় আছে তারা। যৌনকর্মীদের কি ওভাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন, না তাদেরকে পাপাচারের ঘৃণ্য পথ থেকে সরিয়ে সঠিক পথে এনে সম্মানজনক স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনবেন? তাদের জন্য যেটা করণীয়, সেটা না বলে তারা বলছে, ওরা পতিতালয়ে আছে, সেখানেই তাদের রাখা হোক এবং সেভাবেই তাদেরকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে দেওয়া হোক! বিষয়টা কি তাদের প্রতি ইনসাফ হল? বরং এটি তাদের প্রতিও না-ইনসাফী নয় কি? আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অধ্যায়ে অনুচ্ছেদ ১৮।(২) -এ বলা আছে, ‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ এই কমিশন দাবি করেছে, এই অনুচ্ছেদের ‘গণিকাবৃত্তির বিষয়টি বাদ দিতে হবে। কারণ জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতার নামে যৌনকর্মীদের পেশাকে নিরোধ করা মানবাধিকার লঙ্ঘন।’ আপনারা কী বলেন, যারা পতিতাবৃত্তির মতো ঘৃণ্য কাজে জড়িয়ে গেছে, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসাটা মানবাধিকার, নাকি তাদেরকে সেই ঘৃণ্য কাজে রেখে দেওয়াটা মানবাধিকার? তাদেরকে সেই পথ থেকে ফিরিয়ে এনে সুস্থ ধারায় পুনর্বাসন করা সরকারের দায়িত্ব, সমাজের দায়িত্ব। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন উল্টো পতিতাবৃত্তিকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। কোনো শব্দও যদি এর পথে অন্তরায় হয় সেই ‘শব্দ’কেও দেশছাড়া করতে চাচ্ছে। ‘শালীনতা’ ‘নৈতিকতা’র মতো শব্দকেও সংবিধান থেকে বাদ দিতে বলছে। আর এটাও লক্ষণীয় বিষয় যে, ‘যিনা-ব্যভিচার’, ‘গণিকাবৃত্তি’, ‘ব্যভিচারিণী’ শব্দ বাদ দিয়ে ‘যৌনকর্ম’ ‘যৌনকর্মী’ শব্দ আমদানি করা হচ্ছে। যেন শব্দ থেকে এসমস্ত ঘৃণ্য কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি না হয়। এটাও এই ধরনের লোকদের একটি প্রতারণা। একদিকে এই নোংরা কাজকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করছে, সেইসাথে শালীনতা, নৈতিকতা, হায়া-লজ্জাকে বাদ দিতে বলছে– এভাবে তারা এই সমাজকে কী পরিমাণ বরবাদ করতে চাচ্ছে– তা কি আর বোঝার বাকি থাকে? আরেকটি বিষয় দেখুন, প্রতিবেদনের দশম অধ্যায়ের শিরোনামটি লক্ষ করুন– ‘শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার’ একথা কারা বলে, কী মতলবে বলে, সেটা যারা বোঝেন, তাদেরকে তো কিছু বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। এরা শিক্ষা-পাঠ্যক্রমেও অশ্লীলতা ঢোকাতে চায় প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা ৭৪-এ বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা-পাঠ্যক্রম সংস্কারের মাধ্যমে সম্মতি বিষয়ে ধারণা, যৌন নির্যাতন ও হয়রানি কী... সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।’ হুবহু একই কথা পৃষ্ঠা ২০৬-এও বলা হয়েছে। বুঝতেই পারছেন ইসলামের বিয়ের বিধান এবং যিনা-ব্যভিচার হারাম হওয়ার বিধানের জায়গায় তারা পশ্চিমা কুফরী কালচার ঢুকাচ্ছে। শব্দের মারপ্যাঁচে ট্রান্সজেন্ডারের বৈধতার অপচেষ্টা আরও শুনুন, এর মধ্যে ট্রান্সজেন্ডারের সবকিছু আছে; শব্দের মারপ্যাঁচে। আজকাল ট্রান্সজেন্ডারের যে ফেতনা চলছে, তার পুরোটাই এখানে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে; কেবল শব্দটা ব্যবহার করেনি। তদ্রূপ শব্দের মারপ্যাঁচে এলজিবিটি, সমকামিতা বলতে যা আছে এবং যত প্রকারের আছে, সবকিছুকে আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে বৈধতা দেওয়া, বরং প্রতিষ্ঠিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মোটকথা, অশ্লীলতার কোনো কিছুই বাদ রাখেনি। এজন্যই তারা চাচ্ছে যে ‘অশ্লীলতা’ শব্দই বিলুপ্ত করে দেওয়া হোক! যেন আপনি অভিযোগ করতে না পারেন যে, ছি ছি, এমন অশ্লীল প্রস্তাব তারা কীভাবে দিল? যেন আমাদের অভিধান থেকেই শব্দগুলোকে বিদায় করে দিতে চাচ্ছে! অর্থাৎ পুরো ইসলামী শরীয়তের বিপরীতে একটা জিনিস দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এটা মুসলিম উম্মতের ফয়সালা করার বিষয়। তারা কি ইসলামের শরীয়ত চায়? জান্নাত চায়? যদি চায়, তাহলে প্রস্তাবিত এই নীতিমালাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এটি বাস্তবায়নের চিন্তা হবে আত্মঘাতী! আর এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, একটি মুসলিম দেশে তাওহীদের যমীনে আমাদেরকে দেখতে হল সংস্কারের নামে আল্লাহর নাযিলকৃত কুরআন-সুন্নাহ ও আল্লাহর দেওয়া শরীয়তের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি প্রতিবেদন এবং তা জাতির সামনে পেশও করা হল। আমাদের কাছে আফসোস প্রকাশেরও ভাষা নেই, নিন্দা জানানোরও ভাষা নেই। অন্য ধর্মের লোকদেরও চিন্তা করা উচিত। যদিও আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য ধর্ম কেবল ইসলাম, কিন্তু অন্য ধর্মের লোকেরাও তো তাদের ধর্ম পালন করে থাকে। তাদেরকেও বলা হচ্ছে, তোমাদের ধর্ম নয়, বরং এখানে যে নীতিমালা প্রদান করা হবে, সেটাই মানবে! সুতরাং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা কী করবে, না করবে– সেটা তাদের বিষয়। যেসব ধর্মের কোনো গোড়া নেই এবং বাতিল ধর্ম, তারা তাদের ধর্মের বিষয়ে বিভিন্ন কম্প্রোমাইজ ও সমঝোতা করলে তা তাদের বিষয়; কিন্তু মুসলিম উম্মতের জন্য কম্প্রোমাইজ বা সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। আমরা কি একথা বলতে পারি যে, কুরআনের এই বিধানগুলো আমরা পশ্চিমাদের খাতিরে বাদ দিয়ে দিব? এটা কি সম্ভব? কখনো নয়। কাজেই ঠান্ডা মাথায় আমাদেরকে ভাবতে হবে, তাওহীদের এই যমীনে ইসলামী শরীয়ত বিরোধী এই ধরনের কোনো নীতিমালা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়! এটা দেশের জন্য হুমকি। আমরা দুআ করি, আল্লাহ তাআলা আমাদের রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের হাতকে শক্তিশালী করুন দেশ ও জাতির কল্যাণে! সমস্ত অকল্যাণ থেকে তাদেরকে হেফাজত করুন! এই ধরনের বিষয়গুলো উপস্থাপন করা এবং সেগুলো বাস্তবায়নের চিন্তা থেকে আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে দূরে রাখুন! আর এটা অনুভব করার তাওফীক দান করুন যে, এটা বাস্তবায়ন করার চিন্তা করতে গেলেই আত্মঘাতী হবে! এই কমিশনের আসল কাজ কিন্তু বাকিই রয়ে গেল আরেকটি কথা, এই কমিশনের আসল যে কাজ ছিল, তা কিন্তু বাকিই রয়ে গেল। তারা যা করেছেন তা হল, আগাগোড়া অনধিকার চর্চা, আল্লাহদ্রোহিতা এবং আল্লাহর দেওয়া কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়তদ্রোহিতা। যেটা দরকার ছিল তা হল, নারী বিষয়ে ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়নের অভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা যে অধিকার বঞ্চিত হয়, সেটার জন্য বাস্তবমুখী একটি প্রস্তাবনা পেশ করা, যাতে নারীরা আল্লাহর দেওয়া বিধি-বিধান মেনে আল্লাহর নেক বান্দি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে এবং আল্লাহর দেওয়া বিধি-বিধান অনুযায়ী নিজেদের সমস্ত অধিকার লাভ করতে পারে। এ কমিশনের সংস্কার করার মতো আরেকটি কাজ ছিল– ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে শরীয়তের স্পষ্ট বিরোধী অনেকগুলো ধারা রয়েছে। উলামায়ে কেরামের সহায়তা নিয়ে এই ধারাগুলোকে শরীয়তসম্মত করে দেওয়া। তা তো করেইনি, উল্টো আরও কুফরী মতবাদ এবং জাহেলী রীতি-নীতি অবলম্বনের প্রস্তাব করেছে। সরকার যদি আসলেই দেশ ও জনগণের কল্যাণ চায়, তাহলে এই প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী শরীয়ত ও নবীজীর সীরাত থেকে নারী বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করা কর্তব্য। ব্যস, ভাই! বলার আরও অনেক কিছুই আছে। এতটুকুতে আমি শেষ করলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
তিনি ছিলেন মানবজাতির আদর্শ। তিনি অত্যন্ত উদার ও বিনয়ী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং একজন সাহসী যোদ্ধা। এছাড়াও তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক এবং একজন সফল প্রচারক ছিলেন। তিনিই উত্তম চরিত্র ও উদারতার একমাত্র উৎস। তিনি সকলের আদর্শহীন এবং প্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার প্রেমে, দুনিয়া মাতাল। তিনি আমার আদর্শ, তিনি আমার নেতা। তিনি আমার নবী, আমাদের নবী এবং সকলের নবী। তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। সমস্ত মানবজাতির জন্য করুণা। অন্ধকারে নিমজ্জিত বিশ্বের মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে। তার অসাধারণ চরিত্র, মাধুর্য এবং অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব সবাইকে অবাক করেছে। মুমিনের চঞ্চল হৃদয় তাকে এক নজর দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকে। কবি কাজী নজরুল বলেছেন: “বিচ্ছেদের রাত ছিল একাকার কান্নার ভোর; আমার মনে শান্তি নেই, আমি কাঁদছি। হে মদিনাবাসীর প্রেমিক, আমার হাত ধর।" তার নিষ্কলুষ চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।" (সূরা আল-আহজাব, আয়াত 21)। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে আজ কিছু লোক সেই নবীর সম্মানকে অবমাননা করছে। হৃদয় ভেঙ্গে যায়। আমাদের ক্ষমা করুন, হে নবী! তিনি তার অবিস্মরণীয় ক্ষমা, উদারতা, সততা, নম্রতা প্রভৃতির বিরল মুগ্ধতা দিয়ে বর্বর আরব জাতির আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এজন্য তারা তাকে ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তারা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকার করেছিল যে তিনি নম্র এবং গুণী ছিলেন। টাকা দিয়ে নয়, ভালো ব্যবহার দিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে জয় করেছেন। আল্লাহ তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মহৎ চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা আল কালাম, আয়াত ৪)। তিনি কখনো মানুষকে তুচ্ছ করেননি। আত্মসম্মানবোধে তিনি কাউকে তুচ্ছ মনে করেননি। তিনি বিশ্বের হৃদয়ে উচ্চতর চরিত্রের একটি অনুপম মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। নম্রতা তার চরিত্রে সর্বদা উপস্থিত ছিল। পৃথিবীর মানবতার কল্যাণে তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল শ্রেষ্ঠ আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে আমার উত্তম চরিত্র পূর্ণ করার জন্য প্রেরিত করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত) ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বিনয়ী এবং আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয়ী। দুর্বল ব্যক্তিকে কড়া কথায় আঘাত করবেন না। তিনি কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অসাধ্য সাধন করতে বাধ্য করেননি। গরিব-অসহায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। তিনি লোকদেরকে তাদের আচরণে অপ্রয়োজনীয় রাগ ও রাগ থেকে সর্বদা বিরত থাকার উপদেশ দিতেন এবং মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উঁচু করে দেন এবং যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করেন।” (মিশকাত) কাফেররাও তার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে সদয় ও নম্র আচরণ পেয়েছিল। তার অনুসারীরা তাকে উচ্চ সম্মানের সাথে ধরেছিল কারণ তিনি খুব নমনীয় এবং নম্র ছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) তার ভদ্র আচার-আচরণ সম্পর্কে বলেন, ‘নবী (সা.) রূঢ় বক্তা ছিলেন না, প্রয়োজনের সময়ও তিনি কঠোর ভাষা ব্যবহার করতেন না। প্রতিহিংসা তার সাথে ছিল না মোটেও। মন্দের বিনিময়ে ভালোই করেছেন। সব ক্ষেত্রেই তিনি ক্ষমা পছন্দ করতেন। তিনি লোকদেরকে উপদেশ দিয়েছিলেন, “আল্লাহর ইবাদত কর, করুণাময় প্রভু, ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, সালাম দাও এবং এসব কাজের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি উত্তর দিলেন, "ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং অপরিচিত সকলকে সালাম করা।" (বুখারী ও মুসলিম)। মহানবী (সা.)-এর মর্যাদাকে সম্মান করা মুসলমানদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের মৌলিক অংশ।
নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৯২৯তম পর্বে ই-মেইলের মাধ্যমে কানিজ নাহার দিপা জানতে চেয়েছেন, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? অনুলিখন করেছেন মোহাম্মদ সাইফ আহমেদ। প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? উত্তর : না দোয়ার জন্য আলাদা কোনো মাহফিল নেই। এটা আসবে কেন? আমরা একটা জায়গা থেকে বাঁচার জন্য আরেকটি কাজ করছি। কিন্তু সেই কাজটি ভুল করে আরও বড় ভুলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আমাদের সমাজে একটি প্রথা একেবারে ছেয়ে গেছে। যেমন—একজন মারা গেলে তার জন্য মিলাদ-মাহফিল করা কিংবা কূলখানি করা। কিন্তু এগুলো সবই বেদআতি কাজ। এগুলো সঠিক কাজ নয়। অনেকে মনে করছে, দোয়া-মাহফিল করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা একদমই নয়। এসব ইসলামে অনুমোদন দেয়নি। এইগুলো পুরোটাই বেদআত। মানুষ চাইলে যে কোনো সময় কিংবা যে কোনো জায়গা থেকে দোয়া করতে পারবেন। দোয়ার সঙ্গে মাহফিল কিংবা আলাদা কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ঘোষণা করা জায়েজ নেই। আশা করি, আপনি বুঝতে পেরেছেন।
মাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৩৩৪তম পর্বে নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে নিয়ামত কমে যাবে কি না, সে বিষয়ে ঢাকা থেকে চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন একজন দর্শক। অনুলিখন করেছেন জান্নাত আরা পাপিয়া। প্রশ্ন : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে কি নিয়ামত কমে যাবে? উত্তর : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা কুফরি। এটা বড় কুফরি না, ছোট কুফরি। যদি আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কুফরি কাজ করে থাকলেন। এ জন্য আল্লাহ কোরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো, আমার সঙ্গে কুফরি করো না।’ আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন, আল্লাহর নিয়ামত লাভ করে সুন্দর জীবনযাপন করা, এটা যদি কেউ আল্লাহর কাছে সত্যিকার অর্থে তুলে ধরতে না পারে, তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া করলেন না, কুফরি করলেন। এই জন্য আল্লাহ সুরা দোহার শেষ আয়াতে বলেছেন, ‘তুমি তোমার রবের নিয়ামত প্রকাশ করো। কারণ, তোমার কাছে যখন নিয়ামত আসছে, তখন আল্লাহ পছন্দ করেন যে তুমি আল্লাহর এই নিয়ামতের বিষয়টি তুলে ধরবে।’ আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহ আমাকে এই নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ নিয়ামতকে বান্দার কাছে তুলে ধরার জন্য বলেছেন, বহিঃপ্রকাশ করার জন্য বলেছেন। বহিঃপ্রকাশ দুই ধরনের হতে পারে। একটি হলো নিয়ামতের ব্যবহারের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, নিয়ামতের বিষয়টি হলো মানুষের কাছে নিয়ামত তুলে ধরবে। যাতে করে আল্লাহর প্রশংসা প্রকাশ পায়। নিয়ামতের শুকরিয়া যদি কেউ আদায় না করেন, তাহলে কুফরি হবে। আল্লাহ বলেছেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করে থাক, তাহলে আমি আরো বৃদ্ধি করে দেব। বান্দারা যখন নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে, তখন আল্লাহ আরো নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করে দেন। আর যদি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা হয়, তাহলে আল্লাহ নিয়ামত কমিয়ে দেবেন এবং সেইসঙ্গে আরেকটি কঠিন বাণী আল্লাহ বলেছেন, ‘জেনে রাখো আল্লাহর কঠিন আজাবও তোমাদের জন্য অবধারিত থাকবে।’ নিয়ামতের শুকরিয়া শুধু মুখে আদায় করা যথেষ্ট নয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর শুকরিয়া আমলের মাধ্যমে আদায় করো।’ সুতরাং বান্দারা শুকরিয়া আদায় করবে। শুকরিয়ার অনেকগুলো দিক রয়েছে, তার মধ্যে আমলের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা হলো শুকরিয়ার সর্বোচ্চ স্তর।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: اِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ اِذَا عَمِلَ اَحَدُكُمْ عَمَلاً اَن يُّتْقِنَهٗ "নিশ্চয়ই, আল্লাহ পছন্দ করেন যে আপনি যা করছেন তা দক্ষতার সাথে সম্পাদন করুন।"[1] আল্লাহর সমর্থন ব্যক্তির সাথে তার কর্মের সাথে সাথে থাকে। যে ব্যক্তি দক্ষতা ও মার্জিততার সাথে এটি সম্পন্ন করে তার জন্য কর্মের পুরষ্কার দ্বিগুণ হয়। যখন কোন ব্যক্তি এ ব্যাপারে উন্নতি করে, তখন সে আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়ে যায়। আল্লাহ যাকে দক্ষতা ও প্রতিভা দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন তাকে অর্থ লাভের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। বরং আল্লাহর সৃষ্টিকে উপকৃত করার জন্য তাদের দক্ষতা ব্যবহার করা উচিত, যা আল্লাহর নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি রূপ। আমাদের বিশ্বাস আমাদেরকে সমাজের দায়িত্বশীল সদস্য হতে উৎসাহিত করে যারা অনিচ্ছা ছাড়াই তাদের কাজ করে। এটি আমাদেরকে আমাদের লেনদেন, কর্ম এবং ধর্মীয় ও নাগরিক কর্তব্যগুলিকে নিখুঁত করার আহ্বান জানায়। এই দায়িত্ববোধ একটি কারণ যে ইসলামিক ইতিহাসকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। দায়িত্ববোধের জন্য প্রয়োজন যে কাজটি একজনের সর্বোত্তম ক্ষমতা এবং দক্ষতা অনুযায়ী সময়মতো সম্পন্ন করা হয়। যদি এটি না হয়, তাহলে ফলাফল অপর্যাপ্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষকরা, যাদের কার্যকরভাবে শেখানোর যোগ্যতা এবং দক্ষতার অভাব রয়েছে তাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নষ্ট করার ঝুঁকি রয়েছে। অযোগ্য স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের জন্য মারাত্মক পরিণতি ঘটাতে পারে। এবং সর্বোপরি, ইসলামী প্রকল্পগুলিতে একজন অদক্ষ এবং অদক্ষ অবদানকারী মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে এবং তাদের বিশ্বাসকে বিপন্ন করতে পারে। জীবনে আপনার দক্ষতার প্রয়োগ এবং নেতিবাচক ফলাফল প্রতিরোধ করার গুরুত্ব নবী صَلَّى الـلّٰـهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم দ্বারা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। যে ব্যক্তি এই দক্ষতাগুলি প্রয়োগ করেছিল তাকে আল্লাহর প্রিয় বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। দক্ষতার সাথে কাজ সম্পাদন করার জন্য, কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। 1. ক্রমাগত পেশাদার উন্নয়ন (CPD) আজকের বিশ্বে, প্রতিটি ক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং প্রতিটি সেক্টরকে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানিয়ে নিতে হবে। নিজেকে ক্রমাগত উন্নত না করে, আপনি পিছিয়ে পড়বেন এবং বেকার হয়ে যাবেন। অতএব, আপনি যদি সফল হতে চান তবে নিয়মিত পেশাদার বিকাশ করুন। 2. স্ব-মূল্যায়ন একজন ব্যক্তি পরিশ্রম করে আঙ্গুরের একটি ছবি তৈরি করেছেন। ছবিটি এতটাই বাস্তবসম্মত ছিল যে পাখিরা সেগুলিকে বাস্তব বলে মনে করেছিল এবং সেগুলি খাওয়ার চেষ্টা করেছিল। এ কারণে ছবিটি মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। লোকে শিল্পীর প্রশংসা করলেও তাকে সন্তুষ্ট দেখাচ্ছিল না। কেউ একজন শিল্পীকে জিজ্ঞাসা করেছিল কেন এবং তিনি উত্তর দিলেন: আঙ্গুরের প্রতিচ্ছবিটি বাস্তব মনে হচ্ছে এবং সেই কারণেই পাখিরা এর দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আঙ্গুরের কাছাকাছি স্ক্যারেক্রোর ছবিটি বাস্তব দেখায় না। তা হলে পাখিরা ভয়ে উড়ে যেত। আমি স্বীকার করি এটি একটি ত্রুটি, এবং আমি এই ছবিতে আরও কঠোর পরিশ্রম করব। শিল্পী এই অভাব পূরণ করে পরের দিন তার লক্ষ্য পূরণ করেন। বিভ্রম এবং অসারতা দক্ষতার পথে প্রধান বাধা, কারণ তারা আমাদের ত্রুটি এবং ত্রুটিগুলির প্রতি আমাদের অন্ধ করে দেয়। আমরা কথায় মহান প্রমাণিত হই কিন্তু যখন কর্মের সময় আসে তখন ব্যর্থ হই। আপনার অর্জনগুলিকে সমালোচনামূলকভাবে মূল্যায়ন করা এবং আরও উন্নতি করার উপায় খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এই সম্ভাবনাগুলি আপনার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের আপনার যাত্রায় সহায়ক হবে। 3. একটি দৈনিক পরিকল্পনাকারী ডিজাইন করুন পরিকল্পনা আপনার লক্ষ্য অর্জনের মূল চাবিকাঠি। একটি দৈনিক পরিকল্পনাকারীর সাথে, আপনি কার্যকরভাবে আপনার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলিকে সংগঠিত করতে পারেন। একটি ভালো নিয়তের আশীর্বাদের কারণে, আপনার লক্ষ্যগুলি স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং আল্লাহর রহমত নিশ্চিত করে যে আপনার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দৈনিক পরিকল্পনাকারী ব্যবহার করা সহজ হবে যদি এটি সহজ হয় এবং আপনার সমস্ত কাজ একসাথে সংযুক্ত করে। এটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ফোকাস বজায় রাখতেও সহায়তা করে। 4. স্ক্রীন টাইম কমিয়ে দিন ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি অনুৎপাদনশীলতা, অদক্ষতা এবং অসাবধানতার একটি প্রধান কারণ। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট, স্ট্যাটাস, টুইট এবং মেসেজ চেক করা আপনার কাজের জন্য বিষাক্ত। এমনকি লোকেরা অপারেশন থিয়েটারে, গাড়ি চালানোর সময়, রান্নাঘরে কাজ করার সময় এবং অফিসে মিটিং করার সময় তাদের ফোন চেক করার জন্য পরিচিত। এতে জীবন বা জীবিকা নষ্ট হতে পারে। আপনার ফোনে অত্যধিক সময় ব্যয় করা আপনাকে আপনার দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধা দেয়। আপনি যদি দক্ষতার সাথে আপনার কাজ সম্পূর্ণ করতে চান তাহলে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিন। আপনি যদি এই বাধা অতিক্রম করেন তবে আপনার স্বপ্নগুলি বাস্তবে পরিণত হবে এবং আপনি সাফল্য অর্জন করতে থাকবেন। 5. সময় বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিচক্ষণ হোন দৈনিক পরিকল্পনাকারীর মাধ্যমে, আমরা সিদ্ধান্ত নিই কোন কাজটি করতে হবে এবং একটি সময়সূচীর মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নিই কখন এটি করতে হবে এবং কতটা সময় দিতে হবে। অতএব, আমাদের অবশ্যই সৎ এবং নির্ভুল হতে হবে। প্রতিটি কার্যকলাপের জন্য একটি উপযুক্ত সময় বরাদ্দ করা আবশ্যক। এটি আমাদের দক্ষতা প্রকাশ করতে এবং সাফল্য অর্জন করতে সহায়তা করবে। আল্লাহ আমাদেরকে দক্ষতা ও দক্ষতার বরকত দান করুন এবং সেগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন। اٰمِیْن بِجَاہِ النَّبِیِّ الْاَمِیْن صَلَّی اللہ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلہٖ وَسَلَّم
পরিচ্ছেদঃ ১/১. আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কীভাবে ওয়াহী শুরু হয়েছিল। وَقَوْلُ اللهِ جَلَّ ذِكْرُهُ (إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَى نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِنْ بَعْدِهِ এ মর্মে আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ ’’নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সেরূপ ওয়াহী প্রেরণ করেছি যেরূপ নূহ ও তাঁর পরবর্তী নবীদের (নবীদের) প্রতি ওয়াহী প্রেরণ করেছিলাম।’’ (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/১৬৩) ১. ’আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহ.) হতে বর্ণিত। আমি ’উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়্যাত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশে- তবে তার হিজরত সে উদ্দেশেই হবে, যে জন্যে, সে হিজরত করেছে।] (৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩; মুসলিম ২৩/৪৫ হাঃ ১৯০৭, আহমাদ ১৬৮) ( আধুনিক প্রকাশনী- ১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন শারী‘আহ্র মূল উৎস হচ্ছে ওয়াহী। ওয়াহী দু’ প্রকার। ওয়াহী মাতলু (আল-কুরআন) ও ওয়াহী গাইরে মাতলু (সুন্নাহ ও হাদীস)। এবং দ্বীনে ইলাহীর ভিত্তি শুধুমাত্র দু’টি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত। ইজমা‘ ও কিয়াস কোন শার‘ঈ দলীল নয়। বরং যে কিয়াস এবং ইজমা‘ ওয়াহীর পক্ষে অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ মুতাবিক হবে তা গ্রহণযোগ্য এবং যেটা বিপক্ষে যাবে সেটা পরিত্যাজ্য ও অগ্রহণযোগ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً) (النساء:৫৯) (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ) (محمد:৩৩) কিন্তু বাতিল ফির্কার লোকেরা ইজমা‘ ও কিয়াসকে ওয়াহীর আসনে বসিয়েছে এবং বলে থাকেঃ শারী‘আহ্র ভিত্তি চারটি বিষয়ের উপর। কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা‘ ও কিয়াস। বড় আশ্চর্যের বিষয় এই যে, সহাবায়ে কেরাম যাদের উপর আল্লাহ তা‘আলা তার সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন, তাদেরকে সত্যবাদী বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে সকলেই একমত। অথচ তারা সহাবায়ে কেরামকে দু’ ভাগে ভাগ করেছেন। (১) ফকীহ (২) গাইরে ফকীহ। আর বলেছেন যে সকল সাহাবী ফকীহ ছিলেন তারা যদি কিয়াসের বিপরীতে হাদীস বর্ণনা করেন তবে তা গ্রহণযোগ্য কিন্তু যে সকল সাহাবী গাইরে ফকীহ অর্থাৎ ফকীহ নন তাঁরা যদি কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করেন তাহলে তা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। প্রকৃতপক্ষে এটা উম্মাতে মুহাম্মাদিয়াহকে সিরাতে মুস্তাকীমের পথ হতে সরিয়ে দেয়ার একটা বড় অস্ত্র এবং পরিকল্পনা। কেননা তাঁরা কিয়াসকে মূল এবং হাদীসকে দ্বিতীয় স্থানে রেখেছেন। সকল সাহাবীর উপর আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট কিন্তু তারা খুশী নন। সকল সাহাবীর ব্যাপারে উম্মাতের ঐকমত্য রয়েছে। কিন্তু তাদের নিকট গাইরে ফকীহ সাহাবীগণ ‘আদিল নন। ধোঁকাবাজীর কিছু নমুনাঃ তারা বলেন, ফকীহ সাহাবীগণ কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করলে তা গ্রহণীয় হবে। কিন্তু গাইরে ফকীহ সাহাবীগণ কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করলে তা বাতিল হয়ে যাবে এবং কিয়াসের উপর ‘আমল করতে হবে। বাই‘য়ি মুসারাহ এর হাদীস আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত এবং তা কিয়াসের খেলাফ। এই জন্য তা বাতিল। এবং কিয়াসের উপর ‘আমলযোগ্য। অথচ এই হাদীস ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতেও বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন সহীহ বুখারী ২৮৮ পৃষ্ঠা রশিদিয়া ছাপা)
কুরআন আল্লাহ প্রদত্ত চূড়ান্ত গ্রন্থ, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াতের পথনির্দেশনা দেয়। এটি অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি পরিবর্তন ও বিকৃতির শিকার হয়নি, যা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোষণা করেছেন— "আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই একে সংরক্ষণ করবো।" (সুরা আল-হিজর: ৯) কুরআনের সংরক্ষণের এই প্রতিশ্রুতি কীভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, তার একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ নিচে তুলে ধরা হলো। কুরআন সংরক্ষণের প্রথম ধাপ: নবী (সা.)-এর যুগ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে কুরআন সংরক্ষণের জন্য দুইটি প্রধান উপায় ছিল: ১. মুখস্থকরণ (হিফজ) নবী (সা.)-এর সাহাবিরা কুরআনের আয়াত মুখস্থ করতেন এবং তা তাঁদের জীবনাচারে অনুসরণ করতেন। সাহাবিদের মধ্যে আবু বকর (রা.), উমর (রা.), উসমান (রা.), আলী (রা.) সহ অনেকেই কুরআন সম্পূর্ণ মুখস্থ করেছিলেন। ২. লিখিত সংরক্ষণ কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হলে নবী (সা.) তা সঙ্গে সঙ্গে লেখকদের দিয়ে লিখিয়ে নিতেন। খেজুর পাতার টুকরো, চামড়া, পশুর হাড় ও পাথরের টুকরোতে কুরআনের আয়াত সংরক্ষণ করা হতো। জাইদ ইবনে সাবিত (রা.), উবাই ইবনে কাব (রা.) এবং অন্যান্য সাহাবি লিখনীর দায়িত্ব পালন করতেন। আবু বকর (রা.)-এর যুগে সংকলন নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর ইয়ামামার যুদ্ধে বহু হাফেজ কুরআন শহীদ হন, যা উমর (রা.)-কে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তিনি আবু বকর (রা.)-কে কুরআন একত্র করার পরামর্শ দেন। আবু বকর (রা.) প্রথমবারের মতো কুরআন লিখিত আকারে একত্র করার নির্দেশ দেন। জাইদ ইবনে সাবিত (রা.) এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। মুখস্থ করা ও লিখিত দলিল যাচাই করে কুরআন একত্রিত করা হয়। সংকলিত কুরআন খলিফা আবু বকর (রা.)-এর কাছে সংরক্ষিত ছিল এবং পরবর্তীতে উমর (রা.) ও পরে উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.)-এর কাছে রাখা হয়। উসমান (রা.)-এর যুগে কুরআনের প্রতিলিপি তৈরি খলিফা উসমান (রা.)-এর সময় ইসলামের প্রচার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন উচ্চারণ ও পাঠভঙ্গির কারণে কিছু মতভেদ দেখা দেয়। তখন তিনি কুরআনের একটি নির্দিষ্ট পাঠভঙ্গি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। হাফসা (রা.)-এর সংরক্ষিত মূল পাণ্ডুলিপির ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক প্রতিলিপি তৈরি করা হয়। একই উচ্চারণভঙ্গির উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি কপি তৈরি করে মুসলিম বিশ্বে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যেসব ব্যক্তিগত সংগ্রহে পার্থক্য ছিল, সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে এককভাবে নির্ভুল কুরআন সংরক্ষিত থাকে। পরবর্তী যুগে সংরক্ষণ ও প্রসার উসমান (রা.)-এর সংকলিত কুরআন আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। পরবর্তী সময়ে মুসলিম উম্মাহ কুরআন সংরক্ষণের জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ১. আরবি বিন্দু ও উচ্চারণ চিহ্ন সংযোজন ইসলামের প্রসার ঘটার ফলে অনারবদের জন্য উচ্চারণ সহজ করতে হজ্জাজ ইবনে ইউসুফ কুরআনে বিন্দু ও উচ্চারণ চিহ্ন সংযোজন করেন। ২. মুদ্রণ ও ডিজিটাল সংরক্ষণ মুদ্রণযুগে মদিনার "কিং ফাহাদ কমপ্লেক্স" থেকে লক্ষাধিক কুরআনের কপি ছাপানো হয়। বর্তমানে ডিজিটাল ফরম্যাটেও কুরআন সংরক্ষিত ও সহজলভ্য রয়েছে। উপসংহার কুরআন সংরক্ষণের ইতিহাস ইসলামের অন্যতম বিস্ময়কর দিক। কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এর এক অক্ষরও পরিবর্তন হয়নি। মুখস্থ, লিখিত সংকলন, উসমানি প্রতিলিপি এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কুরআন সংরক্ষিত রয়েছে। কুরআনের এই সংরক্ষণের অলৌকিকত্ব ইসলামের সত্যতার অন্যতম প্রমাণ।
কুরআন হলো ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, যা বিশ্বমানবতার জন্য সর্বশেষ ও চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এটি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার বাণী, যা জিবরাইল (আ.) ফেরেশতার মাধ্যমে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। কুরআন শুধুমাত্র একটি ধর্মগ্রন্থ নয়; এটি মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে আলোর দিশারী। কুরআনের সংজ্ঞা ও পরিচিতি কুরআন শব্দটি আরবি "قرأ" (ক্বারা'আ) মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ "পড়া" বা "তিলাওয়াত করা"। এটি ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ, যা ২৩ বছরে পর্যায়ক্রমে অবতীর্ণ হয়েছে। এতে রয়েছে ১১৪টি সূরা, ৬২৩৬টি আয়াত এবং অসংখ্য বিধিবিধান, নীতি ও দিকনির্দেশনা যা মানুষের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। কুরআন অবতীর্ণের প্রক্রিয়া কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এটি তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়েছে: ১. লাওহে মাহফুজে সংরক্ষণ কুরআন অবতীর্ণের পূর্বেই আল্লাহ তাআলা এটি লাওহে মাহফুজে সংরক্ষণ করেছিলেন। এটি এমন এক মহাগ্রন্থ, যা আল্লাহর জ্ঞানের অংশ এবং যা পূর্বনির্ধারিত ছিল। ২. বাইতুল ইজ্জতে স্থানান্তর পরবর্তী ধাপে কুরআনকে সম্পূর্ণরূপে প্রথম আসমানে অবস্থিত "বাইতুল ইজ্জত" নামক স্থানে প্রেরণ করা হয়। এটি ছিল লাইলাতুল কদরের রাতে একবারে অবতীর্ণ হওয়ার ঘটনা। আল্লাহ তাআলা বলেন: "নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি।" (সূরা আল-কদর: ১) ৩. ২৩ বছরে পর্যায়ক্রমে অবতরণ বাইতুল ইজ্জত থেকে কুরআনের আয়াতসমূহ প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপে ধাপে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অবতীর্ণ করা হয়। কুরআন প্রথমে মক্কায় ১৩ বছর এবং পরে মদিনায় ১০ বছর ধরে বিভিন্ন সময়, পরিস্থিতি ও ঘটনার আলোকে নাজিল হয়। প্রথম ও শেষ অবতীর্ণ আয়াত কুরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াত ছিল: "পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।" (সূরা আল-আলাক: ১) এবং সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত ছিল: "আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, আমার নেয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণযোগ্য করলাম।" (সূরা আল-মায়িদাহ: ৩) কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্য কুরআন কেবল একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং এটি মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক। এর প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ হলো: তাওহিদের প্রচার: আল্লাহর একত্ববাদকে প্রতিষ্ঠা করা। সঠিক পথের দিশা: মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ: উত্তম চরিত্র গঠনের শিক্ষা দেওয়া। আইন ও বিধিবিধান: সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন। কিয়ামতের প্রতি সতর্কতা: আখিরাত ও পরকাল সম্পর্কে দিকনির্দেশনা। উপসংহার কুরআন মানবজাতির জন্য এক পরিপূর্ণ জীবনবিধান। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় নির্দেশনা নয়, বরং মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রদান করে। কুরআনের শিক্ষাকে সঠিকভাবে অনুধাবন ও পালন করা আমাদের কর্তব্য। যদি আমরা কুরআনের আদর্শ অনুসরণ করি, তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করতে পারব।
বাংলাদেশে চলতি বছরের (১৪৪৬ হিজরি/২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ) ফিতরার হার নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভায় এ হার নির্ধারণ করা হয়। নতুন ফিতরার হার ঘোষণা সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরার হার ১১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর (২০২৪) সর্বনিম্ন ফিতরা ছিল ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৯৭০ টাকা। জাতীয় সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট আলেমরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে কমিটির সভাপতি সাংবাদিকদের নতুন ফিতরার হার ঘোষণা করেন। ফিতরার হার নির্ধারণের ভিত্তি ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী, ফিতরা নির্ধারণ করা হয় গম, আটা, যব, খেজুর, কিশমিশ ও পনিরের নির্দিষ্ট পরিমাণের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। একজন মুসলমান সামর্থ্য অনুযায়ী এসব পণ্যের যে কোনো একটি বা তার সমপরিমাণ বাজারমূল্য ফিতরা হিসেবে প্রদান করতে পারবেন। এই বছর ফিতরার হার নির্ধারণে যে পরিমাণ খাদ্যশস্যের মূল্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তা হলো: গম বা আটা: ১.৬৩ কেজি যব: ৩.২৫ কেজি খেজুর: ৩.২৫ কেজি কিশমিশ: ৩.২৫ কেজি পনির: ৩.২৫ কেজি ফিতরা আদায়ের গুরুত্ব সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। এটি ঈদের দিন গরিব ও দুস্থদের জন্য সাহায্য হিসেবে দেওয়া হয়, যাতে তারা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। ইসলামি পণ্ডিতরা পরামর্শ দেন, ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করা উত্তম। যাদের ওপর ফিতরা ওয়াজিব, তারা যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এটি বিতরণ করেন এবং গরিবদের সহযোগিতা করেন। প্রতিবছরের মতো এবারও ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত ফিতরার হার মুসলিম উম্মাহকে শরিয়াহ নির্দেশিত পন্থায় এই ইবাদত সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে। সামর্থ্য অনুযায়ী ফিতরা প্রদান করে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ইসলামের শিক্ষা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন তাঁর অপার জ্ঞানের মাধ্যমে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারি, পৃথিবী ও মহাবিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টি একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ। কিন্তু প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন আল্লাহ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করার এত দীর্ঘ সময় পর মানুষ সৃষ্টি করলেন? আসুন, কুরআন ও হাদিসের আলোকে এই বিষয়ে আলোচনা করি। মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়কাল আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী, মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর। তবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, আল্লাহ তাআলা সময় ও স্থানের ঊর্ধ্বে এবং তাঁর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় কাঠামো প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ বলেন: "আমি তো আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং উহাদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাদের কোন ক্লান্তি স্পর্শ করে নাই।" (সুরা ক্বাফ ৫০:৩৮) এই ছয় দিনের ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাখ্যাকারগণ বলেন, এটি মানুষের দিন নয়, বরং আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী এক দীর্ঘ সময়কাল। মানুষের সৃষ্টি: কুরআনের বর্ণনা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মানুষের সৃষ্টির ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন: "আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তম গঠনে।" (সুরা তীন ৯৫:৪) এছাড়াও, আদম (আ.)-এর সৃষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছে: "আমি তো তাকে (আদমকে) সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকা থেকে।" (সুরা সাদ ৩৮:৭১) কেন দেরিতে সৃষ্টি? ১. মহাবিশ্ব ও পৃথিবী প্রস্তুত করা আল্লাহ মানুষকে এমন এক পৃথিবীতে পাঠাতে চেয়েছিলেন যেখানে তার জন্য জীবনযাপন সহজ হবে। পৃথিবী ধীরে ধীরে এমনভাবে প্রস্তুত হয়েছিল যাতে মানুষ বসবাস করতে পারে। ২. আল্লাহর পরিকল্পনা অনুযায়ী সময় নির্ধারণ আল্লাহর ইলম ও হিকমত অনুযায়ী, মানুষকে সঠিক সময়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে: "তিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর রাজত্বের মালিক। তিনি যা চান, সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন কন্যাসন্তান এবং যাকে ইচ্ছা দান করেন পুত্রসন্তান।" (সুরা আশ-শুরা ৪২:৪৯) ৩. মানুষের পরীক্ষা ও খিলাফতের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা মানুষকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি বা খলিফা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। যখন পৃথিবী মানুষের বসবাসের উপযোগী হলো, তখনই আল্লাহ আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন। "আমি পৃথিবীতে এক খলিফা সৃষ্টি করতে যাচ্ছি।" (সুরা বাকারা ২:৩০) উপসংহার আল্লাহ তাআলা অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী। তিনি যখন যা সৃষ্টি করেছেন, তা তাঁর নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও হিকমতের অংশ। মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং এরপর মানুষের সৃষ্টি – সবকিছুই একটি নিখুঁত পরিকল্পনার অংশ। কুরআন ও হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, আল্লাহ ধীরে ধীরে পৃথিবীকে মানুষের জন্য প্রস্তুত করেছেন এবং পরে মানুষকে তাঁর খলিফা হিসেবে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দান করুন। আমিন।
১.কখনো পাপ কাজ হয়ে গেলে খাবার গ্রহণ করবে না। কেননা পাপীর জন্য আল্লাহর নেয়ামতের স্বাদ গ্রহণ মোটেই সমীচিন নয়। ২.পাপ কাজ করার ইচ্ছে হলে খোদায়ী রাজত্ব থেকে বেরিয়ে যাও। কেননা কারো এলাকায় অবস্থান করে তার নাফরমানি করা অনুচিত। ৩.এমন জায়গায় গিয়ে পাপ কর, যেখানে আল্লাহ তোমাকে দেখবেন না।কারণ তার চোখের সামনে তার নাফরমানি নির্লজ্জতা ছাড়া কিছুই নয়। ৪.যখন মালাকুল মওত শিয়রে উপস্থিত হবে,তার নিকট থেকে চেয়ে কিছু সময় নিয়ে নাও।যদি তা সম্ভম না হয় তাহলে মৃত্যুর পূর্বই সঠিক ভাবে তওবা করে নাও। ৫.কবরে নিজের নিকট মুনকার -নাকীরকে আসতে দিওনা। এটা সম্ভব না হলে উত্তরের জন্য প্রস্ততি গ্রহণ করতে থাক। ৬.কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তা য়ালা গুনাহগারকে জাহান্নামে যেতে বললে তখন তুমি তা প্রত্যাখান কর।এমন হিম্মত না হলে এখন থেকেই গুনাহ পরিত্যাগ করতে থাক।
কুরআন হলো ইসলামের প্রধান গ্রন্থ, যা মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা প্রদান করে। তবে কুরআনের অনেক আয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝতে তাফসির (ব্যাখ্যা) প্রয়োজন হয়। কুরআনের তাফসির কেবল ভাষাগত ব্যাখ্যা নয়, বরং এটি কুরআনের গভীর অর্থ ও প্রসঙ্গ বুঝতে সাহায্য করে। এই নিবন্ধে কুরআন ও হাদিসের আলোকে কুরআনের তাফসির কীভাবে করা হয় তা বিশদভাবে আলোচনা করা হবে। তাফসিরের সংজ্ঞা ও গুরুত্ব ‘তাফসির’ শব্দটি আরবি فَسَّرَ (ফাস্সারা) ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো "ব্যাখ্যা করা", "উন্মোচন করা"। ইলমুত-তাফসির (তাফসিরবিদ্যা) হলো কুরআনের অর্থ, ভাষা, উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করার বিজ্ঞান। আল্লাহ তাআলা বলেন: "এটি এক মহা বরকতময় কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা উপদেশ গ্রহণ করে।" (সূরা ছাদ: ২৯) এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, কুরআনের অর্থ বোঝার জন্য গবেষণা ও চিন্তাভাবনা করা জরুরি, আর এটি সম্ভব তাফসিরের মাধ্যমে। কুরআনের তাফসির করার পদ্ধতি কুরআনের তাফসির করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু মূলনীতি রয়েছে। এগুলো মূলত চারটি প্রধান উৎসের ভিত্তিতে করা হয়: ১. কুরআনের তাফসির কুরআন দ্বারা কুরআনের অনেক আয়াত অন্য আয়াতের ব্যাখ্যা করে। যখন কোনো আয়াতের ব্যাখ্যা স্পষ্ট না হয়, তখন অন্য আয়াত দ্বারা তার অর্থ বোঝা যায়। উদাহরণস্বরূপ: সূরা ফাতিহার "সিরাতুল মুস্তাকিম" (সঠিক পথ) বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় সূরা আন-নিসার ৬৯ নম্বর আয়াতে, যেখানে বলা হয়েছে যে এটি নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের পথ। ২. কুরআনের তাফসির হাদিস দ্বারা রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন কুরআনের সর্বোত্তম ব্যাখ্যাকারী। আল্লাহ তাআলা তাঁকে কুরআন বোঝার ও বোঝানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন: "আমি তোমার প্রতি স্মরণিকা (কুরআন) নাজিল করেছি, যাতে তুমি মানুষকে ব্যাখ্যা করে দাও যা তাদের প্রতি নাজিল করা হয়েছে।" (সূরা নাহল: ৪৪) উদাহরণ: সূরা বাকারা ২:২৮৫-তে ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে, যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে পাই, বিশেষ করে জিবরাইল (আ.)-এর হাদিসে। ৩. সাহাবিদের ব্যাখ্যা সাহাবিরা (রা.) সরাসরি নবী (সা.)-এর কাছ থেকে কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং তাঁরা কুরআনের সঠিক অর্থ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখতেন। তাই তাঁদের ব্যাখ্যা তাফসিরের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। উদাহরণ: ইবনে আব্বাস (রা.)-কে তাফসিরবিদদের নেতা বলা হয়। তিনি নবী (সা.)-এর কাছ থেকে সরাসরি তাফসির শিখেছেন। তাঁর ব্যাখ্যা বহু প্রসিদ্ধ তাফসির গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। ৪. তাবেয়ি ও সালাফদের ব্যাখ্যা তাবেয়িগণ সাহাবিদের থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা শিখেছেন। তাদের ব্যাখ্যাগুলোও নির্ভরযোগ্য এবং তাফসিরে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: ইমাম মুজাহিদ, কাতাদা, হাসান বসরি প্রমুখ তাবেয়িরা কুরআনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ৫. ভাষা ও ব্যাকরণ অনুসারে তাফসির কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে, তাই তাফসির করতে হলে আরবি ব্যাকরণ, শব্দতত্ত্ব, অলঙ্কার ও সাহিত্য বিশ্লেষণ করা হয়। তাফসিরের ধরণ তাফসির সাধারণত দুইভাবে করা হয়: ১. তাফসির বিল মাসুর (প্রমাণিত সূত্রভিত্তিক তাফসির) এটি কুরআন, হাদিস, সাহাবি ও তাবেয়িদের ব্যাখ্যার ভিত্তিতে করা হয়। প্রসিদ্ধ তাফসির: তাফসির ইবনে কাসির তাফসির আত-তাবারি তাফসির আস-সা’দি ২. তাফসির বিল রাই (যুক্তি ও বিশ্লেষণভিত্তিক তাফসির) এটি ভাষা, ব্যাকরণ ও ব্যক্তিগত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে করা হয়, তবে এটি নির্ভরযোগ্য হাদিসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। প্রসিদ্ধ তাফসির: তাফসির আল-জালালাইন তাফসির আল-কুরতুবি ভুল তাফসির থেকে বাঁচার উপায় কিছু মানুষ কুরআনের আয়াতকে ভুল ব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই সঠিক তাফসিরের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত: ১. তাফসির কুরআন, হাদিস ও সাহাবিদের বক্তব্য অনুযায়ী হতে হবে। ২. ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ ইসলামি স্কলারদের মতামত অনুসরণ করতে হবে। ৩. শুধু ভাষাগত অনুবাদ নয়, বরং আয়াতের শানে নুযুল (অবতরণের প্রেক্ষাপট) জানা জরুরি। ৪. বিদআত ও মনগড়া ব্যাখ্যা পরিহার করতে হবে। উপসংহার কুরআনের তাফসির একটি গভীর জ্ঞানসম্পন্ন শাস্ত্র, যা সঠিক পদ্ধতিতে করতে হয়। কুরআন, হাদিস, সাহাবি ও তাবেয়িদের বক্তব্যের আলোকে তাফসির করলে তা নির্ভরযোগ্য হয়। আজকের যুগে সঠিক ইসলামি স্কলারদের রচিত তাফসির অধ্যয়ন করে কুরআনের গভীর জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহ আমাদের কুরআন বোঝার ও তা অনুসারে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
আল্লাহ তাআলা মানব জাতির জন্য কিছু দিন ও রাতকে বিশেষ বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তেমনই একটি বিশেষ সময় হলো জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। এই দিনগুলোতে নেক আমলের ফজিলত এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একে বছরের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। 🔹 হাদীসে জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের ফজিলত রাসুল (সা.) বলেন: “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় দিন হলো জিলহজ্জের প্রথম দশ দিন। এ দিনগুলোর যে কোনো এক দিনে করা নেক আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।” (বুখারি: ৯৬৯) 🔸 এই দশ দিনে যে আমলগুলো করা উচিৎ নিচে এই দশ দিনের সর্বোত্তম আমলগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো: ইসলাম ও ধর্ম রিলেটেড নিউজ ১. তওবা ও আত্মশুদ্ধি এই বরকতময় সময়ের শুরুতেই আমাদের উচিত নিজ গুনাহর জন্য খাঁটি অন্তরে তওবা করা এবং আল্লাহর দরবারে ফিরে আসা। কারণ এই দিনগুলোতে আল্লাহর রহমত বহুগুণে নাজিল হয়। ২. নফল রোজা রাখা (বিশেষ করে ৯ জিলহজ্জ - আরাফার দিন) জিলহজ্জের প্রথম নয় দিনে নফল রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। বিশেষ করে ৯ জিলহজ্জ (আরাফার দিন) রোজা রাখলে: “এক বছরের আগের ও পরের গুনাহ মাফ হয়।” (সহীহ মুসলিম: ১১৬২) ৩. তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ পাঠ জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনে এবং ঈদের দিনগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো জিকির করা: 📌 যে জিকিরগুলো বেশি করা উচিত: তাকবির: الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله، والله أكبر الله أكبر ولله الحمد তাহলিল: لا إله إلا الله তাহমিদ: الحمد لله 📅 সময়সীমা: ৯ জিলহজ্জ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ্জ আসর পর্যন্ত ফরজ নামাজের পর তাকবির বলা ওয়াজিব (তাকবিরে তাশরিক)। ৪. নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও অধিক ইবাদত এই সময়ে বেশি করে নফল নামাজ (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত) পড়া কুরআন তিলাওয়াত দরূদ পাঠ সারা দিন জিকির ও আল্লাহর প্রশংসা করা ৫. সদকা ও দান খয়রাত অসহায়, দরিদ্র, এতিম, মিসকিনদের মাঝে সাহায্য বিতরণ করা এই আমলের ফজিলত বরকতময় দিনে বহুগুণ বৃদ্ধি পায় ৬. কোরবানির নিয়ত থাকলে চুল ও নখ না কাটা রাসুল (সা.) বলেন: “তোমাদের কেউ যদি কোরবানির ইচ্ছা করে, তবে সে যেন জিলহজ্জের চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে কোরবানি না করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।” (সহীহ মুসলিম: ১৯৭৭) 📌 এটি কোরবানিদাতার জন্য মুস্তাহাব (হানাফি মতে) এবং অন্য মাযহাবে কিছুটা ভিন্ন। ৭. আরাফার দিনের দোয়া ও ইবাদতে ব্যস্ত থাকা (৯ জিলহজ্জ) আরাফার দিনকে রাসুল (সা.) বছরের শ্রেষ্ঠ দিন বলেছেন এই দিন দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময় 📌 সর্বোত্তম দোয়া: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (তিরমিযী: ৩৫৮৫) ৮. কোরবানি করা (১০ জিলহজ্জ) ঈদুল আযহার দিন পশু কোরবানি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলমানদের জন্য এটি ওয়াজিব (হানাফি মতে) 📌 হাদীস: “কোরবানির দিনে আল্লাহর কাছে কোরবানির চেয়ে প্রিয় কোনো আমল নেই।” (তিরমিযী) ✅ সংক্ষিপ্ত চেকলিস্ট: জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের আমল দিন করণীয় ফজিলত ১-৮ জিলহজ্জ রোজা, জিকির, তওবা, কুরআন তিলাওয়াত বহু সওয়াব ৯ জিলহজ্জ আরাফার রোজা, দোয়া, তাকবির ২ বছরের গুনাহ মাফ ১০ জিলহজ্জ ঈদের নামাজ, কোরবানি, দান আল্লাহর প্রিয় আমল 🔚 উপসংহার: এই দশ দিন হলো এমন একটি সময় যা আমাদের ঈমান ও আমলকে পরিশুদ্ধ করে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ এনে দেয়। আসুন, এই বরকতময় সময়কে আমরা হেলাফেলা না করে পূর্ণভাবে কাজে লাগাই।
দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির নতুন ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) হলেন মোঃ মনিরুজ্জামান। নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবারে ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অভিজ্ঞ সংবাদকর্মী মোঃ মনিরুজ্জামান। তার দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতা ও নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠানকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা জানান, দুর্নীতি দমন ও সামাজিক অন্যায়-অবিচার তুলে ধরতে মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির কর্মকাণ্ডকে আরও এগিয়ে নেবে। এই উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেনঃ ১️⃣ মোঃ শাহ নেওয়াজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ২️⃣ মোঃ শহিদুল ইসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ৩️⃣ মোঃ মাহমুদুল হাসান, বার্তা সম্পাদক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন— “আমরা মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি। তার প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবার অচিরেই আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।”
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদল সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লা পাড়া ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকালে সদর উপজেলার স্থানীয় বেতগঞ্জ বাজাএই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আবুল কাশেম দুলু সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এডভোকেট দীপংঙ্কর বনিক সুজিতের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক মনাজ্জির হোসেন। সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক সুহেল মিয়া, শাহজাহান মিয়া, এডভোকেট আব্দুল আহাদ জুয়েল, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মুজাব্বির হোসেন অপু, ইমরান হোসেন শ্যামল, বিপ্লব খান, মো:শামিম আহমদ, সেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক সাদিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য আতাউর চৌধুরী শাহীন প্রমুখ। এ ছাড়া ও উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার আলম, লিয়াকত আলী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য আতহাব চৌধুরী হাসান, শাখাওয়াত হোসেন পলাশ, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইমন আহমেদ, ফয়সাল আহমেদ, মিছবাহ হোসেন, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মহিম উদ্দিন, জেলা যুবদলের সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মঈনুদ্দিন আহমেদ রিপন,সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য আব্দুল কাইয়ুম সৌরভ, বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম, ময়না মিয়া,স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রুজেল আহমেদ, আবুল হাসনাত, জেলা ছাত্রদল নেতা ইয়াহিয়া হাসান প্রমুখ। এ সময় সদর উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন,বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের দুঃসময়ে যারা রাজপথে নির্যাতিত ও নিপিিতড় হয়েছেন, তাদের যথাযথ মূল্যায়নের ভিত্তিতেই ভবিষ্যতের ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে হবে। আওয়ামী লীগ ঘেঁষা বা ফ্যাসিস্টদের সাথে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা যাবে না বলেও তারা দাবি জানান। দুর্দিনে যারা আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন তাদেরকে কমিটিতে মুল্যায়ন করা হবে। তারা বলেন,সুনামগঞ্জে জাতীয়তাবাদি শক্তির প্রাণপূরুষ এবং বিগত স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে জেল জুলুম,হুলিয়া মাথায় নিয়ে এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা কেবল জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বর্তূমান জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৪(সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুলের নেতৃত্বে আমরা রাজপথে ছিলাম এবং আগামী নির্বাচনে এই আসনে জনপ্রিয় ধানের শীষের প্রার্থী একমাত্র নুরুল ইসলাম নুরুলকে বিএনপির প্রার্থী করতে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া,ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নিকট তৃণমূলের নেতৃবৃন্দরা জোর দাবী জানান।
সুনামগঞ্জে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর কোন সুযোগ নেই। অবাধ,সুষ্ঠ সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সরকারের পাশাপাশি সকল বাহিনী ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার লাউরেরঘর এলাকায় শ্রী শ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভুর মন্দির কমপ্লেক্স ভবণ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে এসব কথা বলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সরকার নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে এবং নির্বাচন কমিশন সেই অনুযায়ী কাজ করবে। সেই সাথে ইতিমধ্যে পুলিশের ট্রেনিং, সেনাবাহিনীর কতজন লোক থাকবে সেই কাজও শুরু হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা নির্ধারিত তারিখে এই সরকার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎস উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে জাতীয় নির্বাচন সম্পূর্ণ করতে পারবে সেই প্রস্তুুতি সরকারের আছে। এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমরা আমাদের পুরোনো ঠিকানায় চলে যাবো। এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক ডাঃ মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান মানিক ,শ্রী শ্রী অদ্বৈত ধাম পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক অদ্বৈত রায় ও সুরঞ্জিত চৌধুরী টপ্পা প্রমুখ।
“মিস এন্ড মিসেস এলিগেন্স বাংলাদেশ সিজন ওয়ান”–এ প্রথম রানার্সআপ আদ্রিজা আফরিন সিনথিয়া দেশের আয়োজিত বর্ণাঢ্য প্রতিযোগিতা “মিস এন্ড মিসেস এলিগেন্স বাংলাদেশ সিজন ওয়ান”-এ প্রথম রানার্সআপের মুকুট জয় করলেন তরুণ ফ্যাশন মডেল আদ্রিজা আফরিন সিনথিয়া। ফ্যাশন জগতে ইতিমধ্যেই তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কাজ করে। শুধু মডেলিং নয়, সিনথিয়া অভিনয়ের ক্ষেত্রেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন বুকে লালন করছেন। ইতোমধ্যে তিনি সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সাদেক সিদ্দিকীর পরিচালনায় “দেনা পাওনা” সিনেমায় অভিনয় করছেন। রানার্সআপের মুকুট মাথায় পরার পর আবেগে আপ্লুত সিনথিয়া জানান—ঢালিউড কুইন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস আমাকে মুকুট পড়িয়ে দিয়েছেন এই আনন্দ আমি বুঝাতে পারবো না। “এই সাফল্য আমার জন্য অনেক বড় অর্জন। তবে আমি শুধু এখানেই থেমে থাকতে চাই না। আমি চাই নিজেকে মিডিয়া অঙ্গনে আরও দূর, বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে। দেশবাসীর কাছে আমি দোয়া চাই।” আজকের এই অর্জন আমি আবার মা বাবা পরিবার এবং আমাকে যারা সাপোর্ট করেছেন তাদেরকে উৎসর্গ করতে চাই। বহু বাধা ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছেন সিনথিয়া। তাঁর অদম্য চেষ্টা, আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্নই তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফ্যাশন থেকে চলচ্চিত্র—সব জায়গাতেই আলো ছড়ানোর ইচ্ছে তার। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে সিনথিয়া এখন এক অনুপ্রেরণার নাম। তাঁর কথায়— “এই মুকুট আমার স্বপ্নযাত্রার প্রথম ধাপ মাত্র। সামনে আরও অনেক পথ, আরও অনেক লড়াই।”
স্বামীর অতিরিক্ত লোভের কারনে আত্মহত্যার পথ বেচে নিল চট্টগ্রামের মেয়ে আবিদা তাসমিন ঘটনাটি ঘটে জিইসির মোর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ইসমাইল টাওয়ারের (২য়) তলায় তথ্য সুত্রে জানাযায় গত ১৬/০৯/২০১৯ সালে সাইফুদ্দিন মাহমুদ মারুফ (৩৮) এর সাথে আবিদা তাসমিন (৩২) এর সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পরবর্তী কিছু বছর তাদের দাম্পত্য জীবন স্বভাবিক ছিল। কিন্তু ইসমাইল টাওয়ারের ফ্ল্যাট টি ছিল আবিদা তাসমিন (৩২) এর নামে। উক্ত ফ্ল্যাটটি তাহার স্বামির নামে লিখে দেওয়ার জন্য তাসমিনকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু তাসমিন উক্ত ফ্লাটটি স্বামীর নামে লিখে না দেওয়ায় গত ২ বছর যাবৎ তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি ও পারিবারিক কলহে লিপ্ত হইয়া তাসমিনকে মারধর ও মানসিক অত্যাচার করতে লাগলো। তার স্বমীর এসব কর্মকান্ডে তাসমিন মানসিক ভাবে প্রচন্ড বিপর্যস্ত এবং নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করিছিল। এই বিষয়ে বিভিন্ন সময় তাসমিনকে হুমকি ও দিত। ০২/১০/২০২৫ ইং তারিখআনুমানিক ০৭:০০ ঘটিকার সময় আবিদা তাসমিন (৩২) তাহার স্বামী সাইফুদ্দিন মাহমুদ মারুফ এর সঙ্গে প্রতিবেশীর ফ্ল্যাটে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। কিছুক্ষণ পর অর্থাৎ ০২/১০/২০২৫ ইং তারিখ অনুমানিক সন্ধ্যা ০৭:৩০ হতে অনুমান ০৭:৪০ মিনিটের মধ্যে হঠাৎ বিল্ডিং এর নীচ থেকে লোকজনের চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পাই। শোরগোলের আওয়াজ শুনে প্রতিবেশীরা বিল্ডিং এর নীচে গিয়ে দেখতে পাই আবিদা তাসমিন (৩২) রক্তাক্ত অবস্থায় বিল্ডিং এর মূল গেইটের সামনে রাস্তায় পরে আছে। তথ্য সুত্রে জনা যায় তাসমিন ৯ তলা ভবনের ছাদের উপর থেকে আত্মহত্যার জন্য লাফ দিয়ে নীচে পড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ তাহার স্বামী সাইফুদ্দিন মাহমুদ মারুফ ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাসমিনকে প্রথমে চট্টগ্রাম চকবাজার থানাধীন মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও পরবর্তীতে পার্কভিও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পার্কভিও হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার তাসনিমের অবস্থা আশংকা জনক দেখে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ০২/১০/২০২৫ ইং তারিখ আনুমানিক ০৯:০০ ঘটিকার সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার আবিদা তাসমিন (৩২) কে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ০২/১০/২০২৫ ইং তারিখ ১০ ঘটিকার সময় মৃত ঘোষনা করেন। ডাক্তার আবিদা তাসমিন (৩২) এর মৃত্যুর কারণ Brought in Dead/Fall from height বলে উল্লেখ করেন। উক্ত ঘটনা নিয়েঐ এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্দেশে চকবাজার থানার একটি চৌকশ টিমের সহায়তায় ঘাতক স্বামী মারুফকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাই এলাকার জনগণের একটাই দাবি আর কত মেয়ে স্বামীর লোভের কারণে তার পথ বেছে নেবে তাই দ্রুত এই লোভী নরঘাতক পাষন্ড স্বামীকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করার প্রশাসনের কাছে করার জন্য অনুরোধ জানান।