জামালপুরের মাদারগঞ্জে সমবায় সমিতির কেলেঙ্কারির কারণে প্রায় ৩৫,০০০ গ্রাহক দেড় হাজার কোটি টাকা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। অধিক মুনাফার লোভে শিক্ষক, কর্মচারী, প্রবাসী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ অসংখ্য মানুষ এই সমিতিগুলোতে তাদের সঞ্চয় রেখেছিল। কিন্তু এখন তারা তাদের আসল টাকা পর্যন্ত ফেরত পাচ্ছেন না।
মাদারগঞ্জে অন্তত ৩০টি সমবায় সমিতি দু’বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, এসব সমিতির পেছনে সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের প্রভাব রয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা এবং ঘনিষ্ঠজনেরা বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নির জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিল। বর্তমানে এসব সমিতির মালিকরা পলাতক থাকায় গ্রাহকরা কোনোভাবেই তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
অনেক ভুক্তভোগী চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। কেউ কেউ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, কেউবা অসহায়ভাবে প্রশাসনের সহায়তা চাচ্ছেন। এক শিক্ষিকা তার স্বামীর ব্যবসার টাকা জমা রেখে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফার আশায় মাসিক ভিত্তিতে টাকা জমা রেখেছিলেন, কিন্তু এখন তাদের মূলধনই ফেরত আসছে না।
স্থানীয় প্রশাসন ও সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেননি। জেলা সমবায় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের ক্ষমতা সীমিত, তাই তারা সরাসরি কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারছেন না। ইতোমধ্যে কেলেঙ্কারির তদন্তে বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়েছে, তবে এখনো কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
ভুক্তভোগীদের দাবি, সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই অর্থ উদ্ধার করা। তাদের মতে, মির্জা আজম ও তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরত দেওয়া যেতে পারে। তবে প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার কারণে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জীবনের কষ্টার্জিত সঞ্চয় হারিয়ে জামালপুরের হাজারো মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। তাদের প্রশ্ন, এই দুর্নীতির বিচার কবে হবে এবং তারা তাদের টাকা ফেরত পাবে কি না? প্রশাসনের ব্যর্থতা ও দায়ীদের শাস্তির অভাবে দেশে এ ধরনের প্রতারণার প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। এ বিষয়ে সরকারের কার্যকর হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।