চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের সামনে আজ হাজারো মানুষের জমায়েত ঘটে, যেখানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ইসকন (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে একটি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ এই সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশে ইসকনের কর্মকাণ্ড ও প্রচারণার বিরোধিতা করা হয়, যা হেফাজতের মতে বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে নষ্ট করছে।
সমাবেশের শুরুতে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বক্তব্য প্রদান করেন এবং ইসকনের কর্মকাণ্ডকে ইসলাম বিরোধী ও দেশের সংস্কৃতির বিপরীতমুখী বলে অভিহিত করেন। বক্তারা দাবি করেন, “ইসকনের মাধ্যমে দেশে এক ধরনের ধর্মীয় হানাহানি এবং বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, যা সহনশীলতার বিপরীত এবং দেশের সামগ্রিক ঐক্যের জন্য ক্ষতিকর।”
হেফাজতের নেতা মাওলানা জুনায়েদ বাঙ্গালী তার বক্তব্যে বলেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম, কিন্তু ইসকন এমন কিছু কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে যা ইসলাম ও মুসলমানদের উপর আঘাত হানছে। তাই ইসকন নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। আমরা সরকারকে সতর্ক করছি যে, যদি তারা এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে আমরা আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।”
হেফাজতের অন্যান্য নেতারাও তাদের বক্তব্যে ইসকনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন, যেমন:
সমাবেশ শেষে বিশাল একটি বিক্ষোভ মিছিল চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন, যেমন "ইসকন নিষিদ্ধ করো", "ইসলামের উপর আঘাত আমরা সহ্য করবো না"। বিক্ষোভকারীদের হাতে নানা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়, যেগুলিতে ইসকনের কর্মকাণ্ডের প্রতি আপত্তি প্রকাশ করা হয়।
চট্টগ্রামের সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল। পুলিশ সতর্ক দৃষ্টিতে পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলেও, কোনো রকম সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি, এবং মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।
এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ নিয়ে সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন মহল থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিষয়টি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। অনেকে ইসকনের কর্মকাণ্ডকে অপ্রয়োজনীয় ও প্ররোচনামূলক বলে মন্তব্য করেছেন, আবার কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়েছেন। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন এবং রাজনীতিবিদরাও এ বিষয়ে মতামত দিয়েছেন এবং অনেকে হেফাজতে ইসলামের দাবি সমর্থন করছেন।
এ ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে, তবে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কর্মকর্তাদের মতে, সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করছে এবং আগামীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পর্যালোচনা করবে। বিশ্লেষকদের মতে, সরকার যদি বিষয়টি দ্রুত সমাধান না করে তবে হেফাজতের মতো সংগঠনগুলো থেকে আরও বড় আন্দোলন হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বার্থে সরকারকে এ বিষয়ে কৌশলী পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসকনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার দাবি যেমন ইসলামপন্থী সংগঠনগুলির মধ্যে শক্তিশালী, তেমনি এমন দাবির কারণে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঝুঁকিও রয়েছে।