ভারতে হঠাৎ করেই মে মাসের শেষের দিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৫,৩৬৪ জন। জানুয়ারি ১ থেকে এ পর্যন্ত ৪,৭০০-এর বেশি মানুষ সুস্থ হয়েছেন এবং ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কোন ভ্যারিয়েন্ট এখন সংক্রমণের জন্য দায়ী?

বর্তমানে NB.1.8.1 নামে একটি নতুন করোনা ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। এই ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, চীন এবং হংকং-এ শনাক্ত হয়েছে। চীন ও হংকং-এ এটি বর্তমানে প্রধান ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভারতে LF.7 নামক আরেকটি ভ্যারিয়েন্টও কিছু সংক্রমণের জন্য দায়ী।

স্বাস্থ্য রিলেটেড নিউজ

বাংলাদেশে এইডস সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে

আরবরা “সান্ডা” কেন খায়? ইসলামিক, বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, এপ্রিলের শেষ দিকে NB.1.8.1 বিশ্বব্যাপী জমা দেওয়া জিনোম সিকোয়েন্সের প্রায় ১০.৭ শতাংশে পাওয়া গেছে, যেখানে মার্চে এটি ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ।

NB.1.8.1 সম্পর্কে কী জানা গেছে?

এই ভ্যারিয়েন্টটি মূলত ওমিক্রন পরিবারের একটি রিকম্বিন্যান্ট (recombinant) রূপ, যা পূর্ববর্তী দুটি বা ততোধিক ভ্যারিয়েন্টের জিনগত মিশ্রণে তৈরি হয়েছে।

২০২৫ সালের ২৩ মে, WHO একে “Variant Under Monitoring (VUM)” ঘোষণা করে। অর্থাৎ এই ভ্যারিয়েন্টে এমন জিনগত পরিবর্তন রয়েছে, যা ভাইরাসের আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে। যদিও এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি এটি কতটা ভয়ংকর বা দ্রুত ছড়ায়।

কেন সংক্রমণ বাড়ছে?

গবেষণাগারে পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী NB.1.8.1 মানুষের কোষের রিসেপ্টরের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কার্যকরভাবে যুক্ত হতে পারে — যা ইঙ্গিত দেয়, এটি আগের স্ট্রেইনের তুলনায় কোষে সহজেই প্রবেশ করতে পারে।

বিশ্বখ্যাত ভাইরোলজিস্ট লারা হেরেরো লিখেছেন, এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি এবং এটি পূর্ববর্তী ভ্যারিয়েন্টগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

লক্ষণগুলো কী কী?

এই ভ্যারিয়েন্টে সাধারণত দেখা যায়:

• গলা ব্যথা

• কাশি

• পেশিতে ব্যথা

• জ্বর

• নাক বন্ধ

তবে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণও দেখা গেছে, যেমন:

• বমি ভাব

• ডায়রিয়া

টিকা কার্যকর কি না?

চিকিৎসকদের মতে, টিকা এখনো কোভিড সংক্রমণ, মারাত্মক অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর। তবে NB.1.8.1 আংশিকভাবে টিকা কিংবা আগের সংক্রমণ থেকে পাওয়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) এড়িয়ে যেতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

তবুও বর্তমানে বিদ্যমান টিকাগুলো এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব?

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:

• উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত করোনা পরীক্ষা করান

• মাস্ক পরুন

• ভিড় এড়িয়ে চলুন

• প্রয়োজন হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন

বর্তমানে এই ভ্যারিয়েন্টকে সবচেয়ে বেশি নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে, যদিও এটি আগের তুলনায় মারাত্মক নয় বলে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সূত্র: আল জাজিরা

এই প্রতিবেদনটি বাংলায় অনুবাদ ও উপস্থাপন করেছে মুকতধ্বনি সংবাদ।