ঢাকা, রবিবার, এপ্রিল ৬, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য: বিভ্রান্তিকর অপতথ্যের প্রতিবাদ জানাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ, ২০২৫, ১২:২৪ পিএম

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য: বিভ্রান্তিকর অপতথ্যের প্রতিবাদ জানাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
HTML tutorial

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসলামিক খিলাফতের প্রসঙ্গ তুলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড যে মন্তব্য করেছেন, তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার এক বিবৃতিতে গ্যাবার্ডের বক্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর’ বলে অভিহিত করেছে।

বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতি
আজ (১৮-০৩-২০২৫) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য লক্ষ্য করেছি, যেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন ও হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন যে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়, যা ইসলামপন্থী খিলাফতের মাধ্যমে শাসনের ধারণার ওপর ভিত্তি করে।’

বাংলাদেশ সরকার এসব অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে জানায়, ‘বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।’

তুলসী গ্যাবার্ডের অভিযোগের ভিত্তিহীনতা
সরকারি বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ বা বাস্তব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি, বরং এটি বাংলাদেশকে অন্যায়ভাবে কালিমালিপ্ত করার উদ্দেশ্যে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তবে এটি ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্বে আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক সংস্কার এবং সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতার মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে।

সরকারের বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশকে ভিত্তিহীনভাবে "ইসলামিক খিলাফত" ধারণার সঙ্গে যুক্ত করা কেবলমাত্র আমাদের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের কঠোর পরিশ্রমকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা। যারা শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তারা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের শিকার হবে না।’

ভারতের অপতথ্য প্রচার এবং বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা
বাংলাদেশ সরকার আরও দাবি করেছে যে, কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। ভারতের কিছু মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করে, যা বাস্তব সত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিশেষত, সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ এবং ইসলামিক চরমপন্থার উত্থান সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের অপতথ্য প্রচারের মাধ্যমে কিছু মহল বাংলাদেশ ও তার বৈশ্বিক অংশীদারদের মধ্যে সম্পর্ক বিনষ্ট করতে চায়। বাংলাদেশ সব ধর্মের মানুষের জন্য নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ আবাসস্থল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বজায় রেখে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।’

বাংলাদেশের আহ্বান
বাংলাদেশ সরকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্য করার আগে যথাযথ তথ্য যাচাই করার আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘ক্ষতিকর গৎবাঁধা ধারণা প্রচার ও ভীতি সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার চেষ্টা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপে অংশগ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে বাংলাদেশ সমর্থন করে এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ চালিয়ে যাবে।’

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার এবং বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে।

মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Google News Icon গুগল নিউজে দেখুন

বাংলাদেশ রিলেটেড নিউজ

HTML tutorial