ঢাকা, শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে এইডস সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৮:৩৮ এএম

বাংলাদেশে এইডস সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে

দেশে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের সংখ্যা গত এক বছরে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, নতুনভাবে শনাক্ত হয়েছেন ১,৪৩৮ জন। এটি অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। একই সময়ে ১৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এইডসে। পুরুষ আক্রান্তের হার ৭৭ শতাংশ, নারী ২২ শতাংশ এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১ শতাংশ।

বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আজকের দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে ‘অধিকার নিশ্চিত হলে; এইচআইভি/এইডস যাবে চলে’ প্রতিপাদ্যে। প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর এই দিবস পালন করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এসটিডি বা এইডস শাখার তথ্য অনুযায়ী, নতুন আক্রান্তদের ৬৩ শতাংশের বয়স ২৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া ২১ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছর। নতুন সংক্রমিতদের মধ্যে ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা, ১ শতাংশ নারী যৌনকর্মী এবং ১ শতাংশ হিজড়া।

স্বাস্থ্য রিলেটেড নিউজ

বিবাহিতদের মধ্যে সংক্রমণের হার ৫৫ শতাংশ, অবিবাহিতদের মধ্যে ৪০ শতাংশ এবং বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তদের মধ্যে ৫ শতাংশ। বিভাগীয় ভিত্তিতে, ঢাকায় ৪০৬ জন, চট্টগ্রামে ৩২৬ জন এবং খুলনায় ১৫৪ জন নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, “আমাদের পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে শনাক্তকরণ বেড়েছে। তবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। চিকিৎসার আওতায় বেশি মানুষ আসার কারণে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম।”

সমকামী, হিজড়া ও পুরুষ যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছরের মোট শনাক্তকৃত রোগীদের ৪০ শতাংশের বেশি এই জনগোষ্ঠী থেকে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সামাজিক বৈষম্য, কুসংস্কার ও লজ্জার কারণে এই জনগোষ্ঠী প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কক্সবাজার অঞ্চলে ১,২০০ রোহিঙ্গা এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে।

দেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ১৯৮৯ সালে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৮,০৩২ জন। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮,৭৬১ জনে এবং ২০২৩ সালে ১০,৯৮৪ জনে পৌঁছেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কুসংস্কার, ভয় এবং লজ্জার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা নিতে অনীহা প্রকাশ করে। এদের চিকিৎসার আওতায় আনতে না পারলে নতুন সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বৈষম্য দূর করা জরুরি।

বিশ্ব এইডস দিবসে সকলের প্রতি আহ্বান, এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং আক্রান্তদের প্রতি সহমর্মিতার মনোভাব গড়ে তোলা। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই এইডস সংক্রমণ রোধ সম্ভব।

HTML tutorial