জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন: ফজিলত ও করণীয় আমল

আল্লাহ তাআলা মানব জাতির জন্য কিছু দিন ও রাতকে বিশেষ বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তেমনই একটি বিশেষ সময় হলো জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। এই দিনগুলোতে নেক আমলের ফজিলত এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একে বছরের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
🔹 হাদীসে জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের ফজিলত
রাসুল (সা.) বলেন:
“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় দিন হলো জিলহজ্জের প্রথম দশ দিন। এ দিনগুলোর যে কোনো এক দিনে করা নেক আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।”
(বুখারি: ৯৬৯)
🔸 এই দশ দিনে যে আমলগুলো করা উচিৎ
নিচে এই দশ দিনের সর্বোত্তম আমলগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো:
ইসলাম ও ধর্ম রিলেটেড নিউজ
১. তওবা ও আত্মশুদ্ধি
এই বরকতময় সময়ের শুরুতেই আমাদের উচিত নিজ গুনাহর জন্য খাঁটি অন্তরে তওবা করা এবং আল্লাহর দরবারে ফিরে আসা। কারণ এই দিনগুলোতে আল্লাহর রহমত বহুগুণে নাজিল হয়।
২. নফল রোজা রাখা (বিশেষ করে ৯ জিলহজ্জ - আরাফার দিন)
-
জিলহজ্জের প্রথম নয় দিনে নফল রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
-
বিশেষ করে ৯ জিলহজ্জ (আরাফার দিন) রোজা রাখলে:
“এক বছরের আগের ও পরের গুনাহ মাফ হয়।”
(সহীহ মুসলিম: ১১৬২)
৩. তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ পাঠ
জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনে এবং ঈদের দিনগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো জিকির করা:
📌 যে জিকিরগুলো বেশি করা উচিত:
-
তাকবির:
الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله، والله أكبر الله أكبر ولله الحمد
-
তাহলিল:
لا إله إلا الله
-
তাহমিদ:
الحمد لله
📅 সময়সীমা:
-
৯ জিলহজ্জ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ্জ আসর পর্যন্ত ফরজ নামাজের পর তাকবির বলা ওয়াজিব (তাকবিরে তাশরিক)।
৪. নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও অধিক ইবাদত
-
এই সময়ে বেশি করে নফল নামাজ (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত) পড়া
-
কুরআন তিলাওয়াত
-
দরূদ পাঠ
৫. সদকা ও দান খয়রাত
-
অসহায়, দরিদ্র, এতিম, মিসকিনদের মাঝে সাহায্য বিতরণ করা
-
এই আমলের ফজিলত বরকতময় দিনে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়
৬. কোরবানির নিয়ত থাকলে চুল ও নখ না কাটা
রাসুল (সা.) বলেন:
“তোমাদের কেউ যদি কোরবানির ইচ্ছা করে, তবে সে যেন জিলহজ্জের চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে কোরবানি না করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।”
(সহীহ মুসলিম: ১৯৭৭)
📌 এটি কোরবানিদাতার জন্য মুস্তাহাব (হানাফি মতে) এবং অন্য মাযহাবে কিছুটা ভিন্ন।
৭. আরাফার দিনের দোয়া ও ইবাদতে ব্যস্ত থাকা (৯ জিলহজ্জ)
-
আরাফার দিনকে রাসুল (সা.) বছরের শ্রেষ্ঠ দিন বলেছেন
-
এই দিন দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময়
📌 সর্বোত্তম দোয়া:
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
(তিরমিযী: ৩৫৮৫)
৮. কোরবানি করা (১০ জিলহজ্জ)
-
ঈদুল আযহার দিন পশু কোরবানি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত
-
আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলমানদের জন্য এটি ওয়াজিব (হানাফি মতে)
📌 হাদীস:
“কোরবানির দিনে আল্লাহর কাছে কোরবানির চেয়ে প্রিয় কোনো আমল নেই।”
(তিরমিযী)
✅ সংক্ষিপ্ত চেকলিস্ট: জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের আমল
দিন | করণীয় | ফজিলত |
---|---|---|
১-৮ জিলহজ্জ | রোজা, জিকির, তওবা, কুরআন তিলাওয়াত | বহু সওয়াব |
৯ জিলহজ্জ | আরাফার রোজা, দোয়া, তাকবির | ২ বছরের গুনাহ মাফ |
১০ জিলহজ্জ | ঈদের নামাজ, কোরবানি, দান | আল্লাহর প্রিয় আমল |
🔚 উপসংহার:
এই দশ দিন হলো এমন একটি সময় যা আমাদের ঈমান ও আমলকে পরিশুদ্ধ করে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ এনে দেয়। আসুন, এই বরকতময় সময়কে আমরা হেলাফেলা না করে পূর্ণভাবে কাজে লাগাই।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন