তালেবান সরকার আফিম উৎপাদনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর আফগানিস্তান একটি নতুন অর্থনৈতিক দিগন্তের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। দেশটি এখন প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষত মূল্যবান খনিজ এবং রত্ন ব্যবসার মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা করছে। এই পদক্ষেপ দেশটির ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার একটি বিশাল দিগন্ত উন্মোচন করছে, যা এক সময় যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, আফগানিস্তানের মোট জিডিপির ৮ শতাংশ আফিম উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল ছিল। তবে তালেবান সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তে ২০২৩ সালের মধ্যে আফিম চাষের জমি ৯৫ শতাংশ কমে গেছে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আফিম নিষিদ্ধের কারণে কৃষকদের প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে এবং ৪ লাখেরও বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন।
তালেবান সরকার নতুনভাবে অর্থনৈতিক কৌশল নিয়ে এগিয়ে এসেছে, যা মূলত দেশটির বিশাল খনিজ সম্পদকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমান অনুযায়ী, আফগানিস্তানের দুর্গম অঞ্চলে কমপক্ষে এক ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ রয়েছে। আফগানিস্তান সমৃদ্ধ তামা, সোনা, দস্তা, লিথিয়াম, এবং অন্যান্য শিল্প খনিজে। এছাড়াও পান্না, রুবি, সাফায়ার, গার্নেট এবং ল্যাপিস লাজুলির মতো মূল্যবান রত্নেও পরিপূর্ণ।
পান্নার জন্য বিখ্যাত পাঞ্জশীর প্রদেশে নিয়মিত সাপ্তাহিক নিলাম অনুষ্ঠিত হয়, যা তালেবান সরকার এখন কর সংগ্রহের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের নতুন উৎসে পরিণত করেছে। শুধু পান্নাই নয়, অন্যান্য খনিজ সম্পদ উত্তোলনের ক্ষেত্রেও কার্যক্রম শুরু করেছে তারা।
তুরস্ক, কাতার, চীন, রাশিয়া এবং ইরান আফগানিস্তানের খনিজ খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে উজবেকিস্তানের একটি কোম্পানির সঙ্গে তেল উত্তোলনের চুক্তি হয়েছে। চীন তাদের নতুন সিল্ক রোড প্রকল্পে আফগানিস্তানকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। তালেবান সরকারের বিচক্ষণ নীতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফলে আফগানিস্তানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সঠিক কৌশল গ্রহণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে আফগানিস্তান অর্থনৈতিকভাবে অনেক দেশকে পেছনে ফেলে দিতে সক্ষম হবে। তালেবান সরকারের নতুন খনিজনীতি ভবিষ্যতে দেশটিকে অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্ব মঞ্চে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।