ঢাকা, সোমবার, জুন ২৩, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমেরিকার সহায়তায় গাজায় ‘ত্রাণ ফাঁদ’? নিহত ৩২ জন!

মুক্তধ্বনি নিউজ ডেস্ক

মুক্তধ্বনি নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১ জুন, ২০২৫, ০৯:১৯ পিএম

আমেরিকার সহায়তায় গাজায় ‘ত্রাণ ফাঁদ’? নিহত ৩২ জন!
১ জুন ২০২৫, দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনিদের জানাজার সময় একজন শোকাহত ব্যক্তি প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন (রয়টার্স/হাতেম খালেদ)
HTML tutorial

ইসরায়েলি বাহিনী আবারও ফিলিস্তিনি ত্রাণপ্রত্যাশীদের লক্ষ্য করে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে, যেখানে অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এই হামলা ছিল একটি ‘নতুন গণহত্যা’, যা মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণ বিতরণ পয়েন্টে সংঘটিত হয়েছে।

হামলার বিবরণ:
রাফাহ এবং মধ্য গাজার দুটি আলাদা ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি সেনারা সাধারণ মানুষদের ওপর গুলি চালায়। রাফাহ শহরে ৩১ জন এবং মধ্য গাজায় ১ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ২০০ জনেরও বেশি, যাদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, এই মানুষদের মাথা ও বুকে গুলি করা হয়েছে, যা ইসরায়েলি বাহিনীর ‘স্পষ্ট হত্যার উদ্দেশ্য’ নির্দেশ করে।

স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ গারিব জানিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষকে রাফাহর আল-আলাম রাউন্ডআবাউটে একটি মার্কিন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ভোরে সমবেত হতে বলা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই কোয়াডকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ শুরু হয় এবং এরপর ইসরায়েলি সেনারা চারদিক থেকে গুলি চালায়।

মারওয়া আল-নাউক নামে এক নারী জানান, “ত্রাণের জন্য ভিড় বাড়তেই হঠাৎ ড্রোন গুলি ছুঁড়তে শুরু করে, এরপর সেনারা সামনে থেকে গুলি চালায়, আর আমেরিকান নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ছুঁড়তে থাকে। সবাই দিগ্বিদিক ছুটে পালাতে থাকে।”

মাঠ পর্যায়ের হাসপাতাল পরিচালক মারওয়ান আল-হেমস এই ঘটনাকে সরাসরি “ম্যাসাকার এবং গণহত্যা” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “ইসরায়েল ক্ষুধার্ত মানুষদেরই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।”

হাসপাতালগুলোতে রক্তস্বল্পতা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে অনেক প্রাণ বাঁচানো যায়নি বলেও তিনি জানান।

হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েল এই ত্রাণ ব্যবস্থা ব্যবহার করছে ‘গণহত্যার হাতিয়ার’ হিসেবে এবং জাতিসংঘের ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠান GHF-এর মাধ্যমে একটি বিকল্প বিতরণ ব্যবস্থা চালু করেছে।

এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে গত ২৭ মে থেকে ইসরায়েলি হামলায় মোট ৪৯ জন নিহত ও ৩০৫ জন আহত হয়েছেন বলে গাজার মিডিয়া অফিস জানায়।

ঘটনার একমাত্র বেঁচে ফেরা ব্যক্তি আরাফাত সিয়াম বলেন, “আমরা ক্ষুধার্ত সন্তানদের জন্য খাবার আনতে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে আমাদের ওপরই গুলি চালানো হয়। ওরা বলে এটি ‘মানবিক পয়েন্ট’, কিন্তু সেখানে আমাদের মেরে ফেলা হয়।”

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৪,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে কমপক্ষে ১৬,০০০ শিশু রয়েছে।
আরও ১০,০০০ জন নিখোঁজ ও ১,২০,০০০ এর বেশি মানুষ আহত হয়েছে।


বিশ্বব্যাপী সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও, ইসরায়েলি বাহিনীর এই হামলা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব সীমা অতিক্রম করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবিক সংস্থাগুলো এখন প্রশ্ন তুলছে – এই হত্যাযজ্ঞের শেষ কোথায়?

মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Google News Icon গুগল নিউজে দেখুন
HTML tutorial