টাঙ্গাইলে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে শহরের জেলা সদরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। সকালে রাষ্ট্রের পক্ষে জেলা প্রশাসক শরীফা হক শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় তিনি শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে তাঁদের আদর্শ ধারণ করে দেশ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। এরপর ক্রমান্বয়ে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রবিউল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল খালেক মন্ডল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক গোলম মোস্তফা মিয়াসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। এই দিনটি জাতির ইতিহাসে এক শোকাবহ ও কলঙ্কিত অধ্যায়। বক্তারা আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ ও ত্যাগ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং তাঁদের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
(সাজিদ পিয়াল):বাসাইল শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। মহান শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহিদ হওয়া দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন শহিদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন জাতির মেধা ও মননের আলোকবর্তিকা। স্বাধীনতার প্রাক্কালে পরিকল্পিতভাবে তাঁদের হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের আদর্শ ও ত্যাগ আজও জাতিকে পথ দেখাচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের ইতিহাস জানানো অত্যন্ত জরুরি বলে বক্তারা মত প্রকাশ করেন। সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
(সাজিদ পিয়াল):শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে টাঙ্গাইলে গভীর শ্রদ্ধা বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর ও গৌরবময় দিন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে আজ শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সকালে টাঙ্গাইল বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, টাঙ্গাইল জনাব শরীফা হক। এ সময় শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করা হয় এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শরীফা হক। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা পরিকল্পিতভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এটি ছিল স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার একটি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন জাতির বিবেক তাঁদের চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রেরণা। তিনি আরও বলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আমাদেরকে সত্য ন্যায় ও মানবিকতার পথে চলার শিক্ষা দেয়। নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ছড়িয়ে দেওয়া এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শে দেশ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।আলোচনা সভায় সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ তাঁদের স্মৃতিচারণায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান তুলে ধরেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ শিক্ষাবিদ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আলোচনায় অংশ নেন।এছাড়াও অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত থেকে কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি শোষণমুক্ত সমৃদ্ধ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। গভীর শ্রদ্ধা ভাবগাম্ভীর্য ও শোকের আবহে টাঙ্গাইলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম বলেছেন, “দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে নির্বাচন হলে কৃষক শ্রমিক জনতালীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু যদি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বাদ দিয়ে শুধু বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত নির্বাচন করে, তাহলে ২০ শতাংশ মানুষও ভোট দিতে যাবে না। সে ভোটে আমরাও অংশ নেবো না।” বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে কাদেরিয়া বাহিনীর উদ্যোগে আয়োজিত টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। “শেখ হাসিনার অন্যায় আওয়ামী লীগের অন্যায় নয়” — কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবীর বলেন, “প্রধান উপদেষ্টাকে আমি চিনতে পারিনি। আমার আগে আপনাকে চিনেছে শেখ হাসিনা, চিনেছে দেশের মানুষ। শেখ হাসিনার অন্যায় বঙ্গবন্ধুর অন্যায় নয়, আওয়ামী লীগের অন্যায়ও নয়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যায়ও নয়।” তিনি আরও বলেন, “এই আওয়ামী লীগকে জন্ম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হক। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ জন্ম দেননি। তাকে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করি না, কারণ তিনি মনে করেন দেশটা তার বাবার—আর আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু দেশের সেবক, আমিও দেশের সেবক, আমরা সবাই আল্লাহর গোলাম।” “আওয়ামী লীগের বিচার কেউ করতে পারবে না” কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, “শেখ হাসিনার বিচার করতে চাইলে করুন, কিন্তু আওয়ামী লীগের বিচার করতে পারবেন না। আইয়ুব খান পারেনি, ইয়াহিয়া খান পারেনি—আপনারাও পারবেন না। আওয়ামী লীগের যারা দোষ করেছে তাদের বিচার হোক, কিন্তু সবাই তো দোষ করেনি।” বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি, জিয়াউর রহমানও ছিলেন। দু’জনকেই বীরোত্তম খেতাব দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু সরকার। এখানে ভিন্নতা নেই; ভিন্নতা সৃষ্টি করেই আমরা স্বাধীনতা–বিরোধী জামায়াতকে শক্তিশালী করেছি।” জামায়াত প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াত যে ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন করেছে—বাংলাদেশের মা–বোনের সম্মান ধ্বংস করেছে—তারা ক্ষমা না চাইলে দেশে কথা বলার সুযোগ পেত না। বঙ্গবন্ধুর মানবিকতার কারণেই তারা বেঁচে যেতে পেরেছে।” টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস: ইতিহাস, স্মৃতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল পাক হানাদার মুক্ত হয়—এই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছরের মতো এবারও কাদেরিয়া বাহিনী আলোচনা সভা আয়োজন করে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের স্মৃতি, তখনকার পরিস্থিতি এবং স্বাধীনতার মূল্যায়ন তুলে ধরেন। সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবীর বলেন, “বাংলাদেশ আজ যেকোনো সংকটেও টিকে আছে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কারণেই। দেশের সংকট মোকাবিলায় নতুন প্রজন্মকেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হবে।” সভায় বক্তারা কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন— সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, টাঙ্গাইল জেলা মুজিব বাহিনীর প্রধান আলমগীর খান মেনু, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা বীরপ্রতিক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার ফজলুল হক বীরপ্রতিক, আবুল কালাম আজাদ বীরবিক্রম, কাদেরিয়া বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার কাজী হুমায়ুন বাঙ্গাল, দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান, দেলদুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তহের বাবলু প্রমুখ। সভা শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে বিশেষ দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস ইতিহাসের গৌরবময় এক অধ্যায় যেটি আজকে নানাভাবে পালিত হচ্ছে ১১ ডিসেম্বর, টাঙ্গাইলের জনগণের জীবনে এক অনন্য গৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখলদারিত্ব থেকে টাঙ্গাইলকে সম্পূর্ণ মুক্ত ঘোষণা করেন বাংলার বীর সন্তানেরা। বিজয়ের পতাকা উড়েছিল টাঙ্গাইলের আকাশে—জেগে উঠেছিল স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে টাঙ্গাইলের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বীরত্বগাঁথায় ভরপুর। টাঙ্গাইলের অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও ত্যাগ শুধু দেশেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীর দুর্ধর্ষ আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত হামলায় ১১ ডিসেম্বরের ভোরে টাঙ্গাইলের পথে বিজয়ের অগ্রযাত্রা শুরু হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই শহর শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার এই গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণ করে টাঙ্গাইলবাসী আজও উৎসবে মেতে ওঠে। বাঁধভাঙা আনন্দে ভরে ওঠে পুরো শহর—গৌরব ও ইতিহাসের দিনটিকে ঘিরে নানা আয়োজন হয়ে থাকে জেলার সর্বত্র। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে টাঙ্গাইল মুক্ত দিবস। শহরজুড়ে আলোচনাসভা, র্যালি, প্রার্থনা ও স্মৃতিচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইল।
সাজিদ পিয়াল: টাঙ্গাইল, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫: গৌরব ও ঐতিহ্যের দিন টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে আজ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক বর্ণাঢ্য আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, টাঙ্গাইলের অবদান এবং স্বাধীনতার চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতেই এ আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব। তিনি তাঁর বক্তব্যে ১৯৭১ সালের এই দিনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন—টাঙ্গাইলের মানুষ অসম সাহসিকতা, ত্যাগ ও ঐক্যের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছিল। তাঁর মতে, টাঙ্গাইলের মুক্তির দিন শুধু একটি জেলা নয়, পুরো জাতির বিজয়সংগ্রামের বড় মাইলফলক। বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব আরও বলেন, যে স্বাধীনতার জন্য আমরা জীবন বাজি রেখেছিলাম, সেই স্বাধীনতা আজকের তরুণ প্রজন্মের হাতে সুরক্ষিত থাকবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ইতিহাস জানতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হবে, তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।সভায় অন্যান্য বক্তারাও ১১ ডিসেম্বরের ঘটনা, বিডিআর বিদ্রোহী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘবদ্ধ অভিযান, টাঙ্গাইলের কৌশলগত গুরুত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখযুদ্ধে জেলার অবদান তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিকব্যক্তি, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন সড়কে র্যালি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং শহীদদের স্মরণে দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ ও দেশাত্মবোধক আবেগের উচ্ছ্বাসে ভরপুর অংশগ্রহণ।
১১ ডিসেম্বর: টাঙ্গাইল পাক হানাদারমুক্ত দিবস আজ ১১ ডিসেম্বর—টাঙ্গাইলবাসীর গৌরবোজ্জ্বল ও ঐতিহাসিক একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন। এই দিনে টাঙ্গাইল জেলায় নতুন করে সূচনা হয় স্বাধীনতার, মুক্তির, বিজয়ের মহামন্ত্রে উজ্জ্বল এক প্রত্যয়ের। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, শত্রুমুক্তির আগের রাতটি ছিল টাঙ্গাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ রাত। সারারাত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী ও ধারাবাহিক আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। টানা গোলাগুলিতে শহর ও শহরতলির মানুষজন কাটায় এক নিদ্রাহীন রাত। অবশেষে ১১ ডিসেম্বরের সকালটি নিয়ে আসে কাঙ্ক্ষিত সেই বিজয়ের বারতা। ধ্বংসস্তূপ, রক্তের দাগ, অশ্রুভেজা বিদায়ের মাঝেও হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে—উল্লাসে, আবেগে ও স্বাধীনতার গর্বে উদ্বেল হয়ে। মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের ভূমিকা ছিল অনন্য। সাহস, সংগঠন, পরিকল্পনা ও বীরত্বে এ অঞ্চলটি গড়ে তোলে এক বিশেষ দৃষ্টান্ত। বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ সেসময় শত্রুর বিরুদ্ধে অসাধারণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাদের বীরত্বগাঁথা শুধু দেশের সীমানায় আটকে থাকেনি—পৌঁছে যায় সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে। ইতিহাসবিদরা বলেন, টাঙ্গাইলের এই প্রতিরোধ না হলে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের অগ্রযাত্রা এতটা দ্রুত সফল হতো না। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পরপরই টাঙ্গাইলে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ। ২৬ মার্চ টাঙ্গাইল থানায় উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা—যা মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভিক দিনে এ জেলার অগ্রণী ভূমিকার প্রতীক। ৮ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে টাঙ্গাইল আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। পরে কালিহাতীর পুংলি এলাকায় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পাক সেনারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে তারা প্রাণভয়ে সারারাত ধরে টাঙ্গাইল ছেড়ে ঢাকার দিকে পালাতে থাকে। ১০ ডিসেম্বর রাতে কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক টাঙ্গাইলে প্রবেশ করেন। পরদিন ১১ ডিসেম্বর সকালে কমান্ডার বায়োজিদ, খন্দকার আনোয়ার এবং পরে ব্রিগেডিয়ার ফজলুর রহমান টাঙ্গাইলে পৌঁছান। শহরের সার্কিট হাউজে অবস্থানরত পাকিস্তানি খান সেনারা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আনুষ্ঠানিকভাবেই টাঙ্গাইল হয় শত্রুমুক্ত। এই দিনটি তাই শুধু একটি জেলার নয়—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনবদ্য গৌরবের দিন। আজ টাঙ্গাইলবাসী স্মরণ করছে সেই বীরদের, যারা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার পতাকাকে সমুন্নত করেছিলেন।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন ১০ ডিসেম্বর। এই দিন গোপালপুর ও আশপাশের দুটি অঞ্চল পাক হানাদারমুক্ত হয়ে বিজয়ের পতাকা উড়েছিল। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রায় আট মাস হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, লুটপাট ও অমানবিক শোষণের পর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে এদিন মুক্তির স্বাদ পায় গোপালপুরবাসী। পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৪ বছরের দুঃশাসন, রাজনৈতিক বঞ্চনা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও জাতিগত নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু তার আগের রাত ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্বর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে, যার ছায়া নেমে আসে গোপালপুরেও। মার্চের প্রথম দিক থেকেই দেশের অবস্থা অনুধাবন করে গোপালপুরের দেশপ্রেমিক মানুষ সংগঠিত হতে শুরু করেন এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। গোপালপুর থানা—যা টাঙ্গাইল জেলার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত—ছিল পাক সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। ৭ ডিসেম্বর নিকরাইল রানী দিনমনি হাইস্কুলে ৭০ জন কমান্ডারের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কাদেরিয়া বাহিনী প্রধান বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী গোপালপুর থানায় আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর নির্দেশে নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর, আব্দুর রাজ্জাক ভোলা, আসাদুজ্জামান আরজু, বকুল, আব্দুল হাকিম, নূরুল ইসলাম, আনিসুর রহমান আনিস ও খন্দকার হাবিবুর রহমান কোম্পানিগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর কোম্পানি গরুহাটি দিয়ে,আরজু কোম্পানি দক্ষিণ দিকের কীর্তনখোলা অংশ দিয়ে,আর আব্দুল হাকিম কোম্পানি মর্টারসহ পশ্চিম দিক দিয়ে আক্রমণ চালাবে।পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর রাতভর থানা আক্রমণ শুরু হয় এবং পাক সেনারা চাপে পড়ে যায়। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ৩টায় ভারতীয় বায়ুসেনার তিনটি মিগ-২১ বিমান গোপালপুর ও ঘাটাইল থানার ওপর একযোগে বোমা বর্ষণ ও ট্রাম্পিং করে। বিমান হামলায় ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা রাতের আঁধারে পালাতে শুরু করে। এদিকে, গোপালপুরের সূতি, নন্দনপুর, ভূয়ারপাড়া, চরপাড়া ও গরুহাটি এলাকায় অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ দূরত্ব থেকে শত্রু ঘেরাও করে রাখেন। পাকবাহিনী পালিয়ে যেতে শুরু করলে মিঞা কমান্ডার ও চাঁদ মিঞার প্লাটুন ধাওয়া করে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে গোলাগুলি চালান। ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টার মধ্যেই পাক সেনারা পুরোপুরি গোপালপুর ত্যাগ করে। বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে চাঁদ মিঞার প্লাটুন গুলি করতে করতে থানায় প্রবেশ করেন। এর পরপরই গোপালপুর থানা দখলে আসে মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রথমে চাঁদ মিঞা, সাহেব আলী, শামছুল আলম, আব্দুল লতিফ, আজাহার, কাদের তালুকদার, তোরাপ সিকদার, ইসমাইল হোসেন মৃধা ও আব্দুস সোবহান তুলা থানায় উঠেন। পরে কমান্ডার আসাদুজ্জামান আরজু, বিমল, হায়দার, জয়নাল, শুকুরসহ আরও মুক্তিযোদ্ধারা থানায় প্রবেশ করেন। সেদিন ছিল গোপালপুরের মানুষের জন্য এক অবর্ণনীয় আনন্দের দিন। বিভিন্ন এলাকার লোকজন থানায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে, কোলাকুলি করে অভিনন্দন জানান। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়। বিকেলে গোপালপুর থানার ছাদে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়—গোপালপুর হানাদারমুক্ত। এই দিনটি শুধু একটি থানা মুক্তির দিন নয়, এটি গোপালপুরবাসীর সংগ্রাম, ত্যাগ আর সাহসিকতার অবিনাশী স্মৃতি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই দিনটি স্মরণ করবে গর্ব ও শ্রদ্ধায়।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মৌন মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্যোগে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের পৌর উদ্যান থেকে এই মৌন মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও পৌর উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শহর বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান আলীমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান জিন্নাহ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রৌফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম ঝলক, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইজাজুল হকসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কয়েকটি আসনে যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। টাঙ্গাইল-৫ আসনেও কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভ্রান্ত করে এমন একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যার জন্ম অন্য উপজেলায়—যা স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বলেন, “যে আসনে স্থানীয় মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, সেখানে বাইরের কাউকে মনোনয়ন দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা তৈরি হয়েছে।" সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে ঘোষিত মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করে স্থানীয় নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতা ফরহাদ ইকবালকে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি জানান। তারা বলেন, ফরহাদ ইকবাল স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়, যোগ্য এবং দীর্ঘদিন ধরে দলের কঠিন সময়ে রাজপথে ছিলেন। মিছিলে সদর উপজেলা ও শহর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন। পুরো কর্মসূচি জুড়ে দলীয় নেতারা মুখে কালো ব্যাজ ধারণ করে নীরব প্রতিবাদ জানান। স্থানীয় রাজনীতিতে এই মৌন মিছিলকে বড় ধরনের বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশের তাঁত শিল্পে নতুন আশার আলো জ্বালালো টাঙ্গাইল শাড়ি। ঐতিহ্য, নকশা ও শৈল্পিক দক্ষতার অনন্য প্রদর্শন হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক পরিসরে সুনাম কুড়ানো এই শাড়িকে এবার ইউনেসকোর মানবজাতির অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য (Intangible Cultural Heritage) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছেন দেশের তাঁত শিল্পীরা। বহু প্রজন্মের স্মৃতি, পরিশ্রম আর ঐতিহ্যের বাহক এই শাড়ি ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন তাঁতিরা। বাংলাদেশের জামদানি শাড়ি ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে আলোচনায় এসেছে, তেমনই সাফল্যের আশা করছেন টাঙ্গাইলের তাঁতিরা। তাঁদের মতে, স্বীকৃতি পেলে শাড়িটির ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়বে, বিদেশি ক্রেতার আগ্রহও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইউনেসকোর তালিকাভুক্ত অনেক সাংস্কৃতিক উপাদানের ক্ষেত্রে পর্যটন বাড়ার পাশাপাশি পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও প্রসারিত হয়েছে। এর উদাহরণ হিসেবে তাঁরা উল্লেখ করছেন বাংলার দুর্গাপুজোর কথা—যা স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকেই বিদেশি দর্শনার্থীর সংখ্যা দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যবাংলার টাঙ্গাইল অঞ্চলে শত বছর ধরে তাঁতশিল্পীদের বসতি গড়ে উঠেছে। এখানকার তাঁতিরা প্রজন্ম ধরে হাতে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ির খ্যাতি ধরে রেখেছেন। অন্য শাড়ির তুলনায় অনেক হালকা ও আরামদায়ক হওয়ায় এটি পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন নারীরা।রঙিন সুতোর বুনন, ফুলেল নকশা ও সূক্ষ্ম কারুকাজ—এসবই টাঙ্গাইল শাড়িকে অন্যসব শাড়ি থেকে আলাদা করে। স্থানীয় তাঁতিরা জানান, এই শাড়ির প্রতিটি ইঞ্চি বুনতে সময় লাগে, প্রয়োজন হয় একাগ্রতা আর অভিজ্ঞতার। তাই টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু একটি পোশাক নয়—এটি একটি শিল্প, একটি সংস্কৃতি, একটি ইতিহাস। টাঙ্গাইলের তাঁতিরা এখন এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। কাঁচামালের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় শাড়ি প্রস্তুতির খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাজারে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ক্রেতা সেভাবে বাড়ছে না। তিনি জানান—প্রস্তুতি খরচ বেড়েছে,বিক্রি কমছে,উৎসবের মৌসুমেও আশানুরূপ বিক্রি হয়নি,যুব সমাজ তাঁত পেশায় আসতে দ্বিধায় ভুগছে।যারা আসছে, তারাও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ভুগছে। তাঁতশিল্পীরা মনে করেন, ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেলে এই সংকট অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। বিশ্ববাজারে নতুন দরজা খুলবে, বাড়বে চাহিদা। ফলে এই পেশায় নতুন প্রজন্ম আগ্রহী হবে। বাংলাদেশের গর্বের তালিকায় রয়েছে বহু সাংস্কৃতিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান—বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ,সুন্দরবন,পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ,বাউল গান,জামদানি,শীতলপাটি,পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা।এবার, সেই তালিকায় টাঙ্গাইল শাড়ি যুক্ত হলে বাংলাদেশ আরও একটি সাংস্কৃতিক সম্পদ বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে পারবে। শিল্পীরা বিশ্বাস করেন, ঐতিহ্যবাহী এই শাড়ির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শুধু সংস্কৃতির গর্বই বাড়াবে না, বরং তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভরশীল লাখো মানুষের জীবিকা রক্ষা করবে। বিশ্ববাজারে পরিচিতি বাড়লে দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। টাঙ্গাইলের তাঁতিরা তাই এখন নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন—“টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু বাংলাদেশের গর্ব নয়, এটি পুরো বিশ্বের ঐতিহ্যের অংশ হোক।”
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা নদীর পূর্ব পাড় থেকে গোবিন্দাসী বাজার হয়ে আমলা পর্যন্ত বিস্তৃত শত বছরের পুরোনো খালটি একসময় ছিল এলাকার অর্থনীতি ও যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একসময় এই খাল দিয়ে পালতোলা নৌকা চলাচল করত, ব্যবসা-বাণিজ্যের মালামাল আনা-নেওয়া হতো, পাশাপাশি মানুষজনও নৌকা ব্যবহার করতেন। তবে সময়ের স্রোতে খালটি তার স্বাভাবিক রূপ ও ইতিহাস হারিয়ে ফেলেছে। দখল, দূষণ ও অবহেলার কারণে আজ খালটি প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। একসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও কার্যকারিতার দিক থেকে সুপরিচিত এই খালটির প্রস্থ ছিল ৪৫ থেকে ২২ মিটার। বর্তমানে খালটির পাশে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধ দোকানপাট, গুদামঘর এবং বসতবাড়ি গড়ে তুলে খালটি দখল করে নিয়েছে। এর ফলে খালটির প্রস্থ সংকুচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিটারে। বাজার অংশে খালটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নোংরা পানি, দুর্গন্ধ এবং পঁচা আবর্জনায় আশপাশের মানুষজনের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় বাজার ও আশপাশের এলাকা জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হয়। হাট-বাজারে ও আশেপাশের এলাকায় তলিয়ে যাওয়া পানির কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। গোবিন্দাসী বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, “দুইপাশে দখল করে অনেকে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট তৈরি করেছে। খালে ময়লা ফেলার কারণে চারপাশে দুর্গন্ধ ও রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে খাল উপচে হাট-বাজার এবং আশপাশের এলাকা পানিতে ডুবে যায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে খালটি দখলমুক্ত করার এবং ময়লা ফেলার জন্য অন্যত্র ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের জোর দাবি জানাচ্ছি।” ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হাসান জানান, “খালটি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রাথমিক কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ে খালটি দখলমুক্ত করা হবে এবং স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে।” স্থানীয়রা আশা করছেন, প্রশাসনের তৎপরতার মাধ্যমে খালটি পুনরুদ্ধার করা হলে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি আবার জীবন্ত হয়ে উঠবে।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে মর্যাদাপূর্ণভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস (১৪ ডিসেম্বর) এবং মহান বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) উদযাপনের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তুহিন হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ নবাব আলী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার, উপজেলা ভেটেরিনারি অফিসার ডা. গোলাম মোর্শেদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খাইরুল আলম, গোপালপুর পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মো. দেলোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম রুবেল, পৌর বিএনপির সভাপতি খালিদ হাসান উথান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম তালুকদার লেলিন, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সভায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। বক্তারা বলেন, বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। নতুন প্রজন্মের কাছে শহীদদের আত্মত্যাগের মহিমা তুলে ধরতে এসব কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র্যালি, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বক্তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার আহ্বান জানান। উপজেলা প্রশাসন জানায়, দিবসগুলোকে সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে পালন করতে সকল দপ্তর, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে পোস্টাল ভোট নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা কামনায় পর্তুগাল বিএনপির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার স্থানীয় সময় লিসবনের একটি হল রুমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পর্তুগাল বিএনপির আহবায়ক আবু ইউসুফ তালুকদার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদস্য সচিব ছায়েফ আহমেদ সুইট। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন বলেন— “জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনের প্রকৃত তাৎপর্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আজ আমাদের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। মহান আল্লাহ যেন তাঁকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন।” তিনি পর্তুগাল বিএনপির সফল আয়োজনের প্রশংসা করে আরও জানান, দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তা ঘোষণা করা হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অসাংগঠনিক কার্যক্রম করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। সভাপতির বক্তব্যে আহবায়ক আবু ইউসুফ তালুকদার বলেন— “পর্তুগালে বসবাসরত যোগ্য ও সক্রিয় নেতাকর্মীদের নিয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে। পদ-পদবীর লোভে যারা অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সদস্য সচিব ছায়েফ আহমেদ সুইট প্রবাসীদের পোস্টাল ভোট দেওয়ার সকল নিয়ম-কানুন বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেন— “দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়মে পোস্টাল ভোট দিলে দেশ ও গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।” তিনি ৫ আগস্ট বেগম জিয়ার সাথে ফিরোজায় সাক্ষাতের সময় পর্তুগাল বিএনপি ও প্রবাসীদের বিষয়ে যেসব আলোচনা হয়েছিল—সেগুলোর কথাও তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— যুগ্ম আহবায়ক শামসুজ্জামান জামান, মিজানুর রহমান শাহ জামাল, এম কে নাসির, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ আহমেদ ফাহিম, পর্তুগাল বিএনপির সদস্য বদরুল আলম, শাহাব উদ্দীন, রুবেল চৌধুরী, জুবেল আহমদ, জায়েদ আহমদ, বেজা বিএনপির সভাপতি মইনুল ইসলাম, সান্তারাইম বিএনপির আহবায়ক সোহেল চৌধুরী, আলগ্রাভ বিএনপি নেতা এম তাহের, সেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আজীম চৌধুরী গিলমান, বিএনপি নেতা আলী আকবর জুয়েল, কাজী জুয়েল, শাহান উমর, সোহেল মিয়া, জাসাস সদস্য সচিব কাজী মইনুর, যুবদল নেতা মাজেদ আহমদ সামী, এস এম কাওসার আলম, মর্তুজ আলী, যুবনেতা আব্দুল ওয়াদুদ মোহন প্রমুখ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— আব্দুল আজিজ, মহদ আজাদ, মন্জুর এলাহী, মাহাদী মুন্না, আব্দুল ওয়াদুদ অনিক, দেলোয়ার খান, আরাফাত, আদনান ওলি, নাইম, তারেক, শুভ, ইকবাল, রাফিউজ্জামান খান, সায়েম তালুকদার, মসতফা কামাল, আলমগির হোসেন, মোহাম্মদ সৈইকত, আহমদ লিমন, রিয়াদ আহমদ, রাশেদ মাহমুদ, আবু নাইম, পাপ্পু হাসান, রাহিদ মিয়া, এস কে মুহিব, সামাদ রাজিবসহ আরও অনেকে। এছাড়া ভেজা বিএনপি থেকে উপস্থিত ছিলেন—আবু বকর, শফিক মিয়া, জদর আলী, আতিকুর রহমান, মাহবুব আলম, আলাল আহমদ, জামিল আহমেদ, শাওন মিয়া, শামসুল হক। আল্গ্রাভ বিএনপি থেকে উপস্থিত ছিলেন—আবু সাইদ, মো. নুরুজ্জামান, মো. তাহির হোসেন, মো. দেলওয়ার হোসাইন, মো. ইমরান প্রমুখ। আলোচনা শেষে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি, দীর্ঘায়ু, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফিরাত, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ সম্পন্নতা এবং দেশের সার্বিক শান্তি, উন্নয়ন ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন লিসবন বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মাওলানা কায়েস আহমেদ আব্দুল্লাহ।
চমচম, টমটম ও শাড়ি’—এই তিনেই টাঙ্গাইলের পরিচয়। সময়ের বিবর্তনে টমটম প্রায় হারিয়ে গেলেও দেশ-বিদেশে এখনও সমান জনপ্রিয় টাঙ্গাইলের শাড়ি আর পোড়াবাড়ীর চমচম। তবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, দেশি গাভির দুধের স্বল্পতা, উপকরণের সংকট ও নকল চমচমের ছড়াছড়ির কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) স্বীকৃতি পাওয়া পোড়াবাড়ীর চমচমের সুনাম আজ অনেক জায়গায় ব্যবহার করা হলেও বেশিরভাগই আসল নয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পোড়াবাড়ীর চমচমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রায় দুই শতকের ইতিহাস। স্থানীয় প্রবীণদের মতে, ব্রিটিশ আমলে আসাম থেকে আগত দশরথ গৌড় প্রথম ধলেশ্বরী নদীর পানি ও স্থানীয় গাভির দুধ দিয়ে চমচম তৈরি শুরু করেন। পরে তিনি মিষ্টির দোকান গড়ে তোলেন। আরেক মতে, বাঙালি চন্দ্র গৌড় নামের একজন ছিলেন এ মিষ্টির প্রকৃত উদ্যোক্তা। তার বংশধরেরাই এখনও পোড়াবাড়ীর প্রাচীন চমচমের স্বাদ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। কিছু ইতিহাসবিদ আবার বলেন, ১৬০৮ সালে ধলেশ্বরীর তীরে গড়ে ওঠা পোড়াবাড়ী নদীবন্দরের জমজমাট বাজারেই প্রথম জনপ্রিয় হয় চমচম। তখন বড় বড় সওদাগরি নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমার ভিড়ত এই ঘাটে। সেখানকার ব্যস্ত বাজারে যুক্ত হয় চমচমের সুমিষ্ট খ্যাতি। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে অর্ধশতাধিক কারখানা। পোড়াবাড়ীর চমচম লম্বাটে আকৃতির। হালকা আঁচে পোড় খাওয়া বলে এর রং হয় গাঢ় বাদামি—কিছুটা পোড়া ইটের মতো। বাইরে শক্ত হলেও ভেতরটা নরম, রসে ভরা এবং লালচে আভাযুক্ত। প্রতিটি অংশে থাকে ঘন রস, এলাচের ঘ্রাণ আর ছানার টাটকা স্বাদ। চমচম তৈরির উপাদানও একেবারেই সহজ—দুধ, চিনি, পানি, সামান্য ময়দা ও এলাচ দানা। স্বাদ, গন্ধ ও রঙের এই ব্যতিক্রমী সমন্বয়ের কারণেই পোড়াবাড়ীর চমচমকে বলা হয় ‘মিষ্টির রাজা’। বিয়ে-শাদী, উৎসব, পূজা, জন্মদিন, পরীক্ষার ফল প্রকাশ—পোড়াবাড়ীর চমচম প্রায় সব উপলক্ষেই প্রথম পছন্দ। শহরের পাঁচআনি বাজারে প্রায় অর্ধশত দোকানে প্রতিদিন তৈরি হয় হাজার হাজার চমচম। অনেক দোকানই নিজেদের তৈরি চমচম বিক্রি করে থাকে। ৭৫ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা এক বাসিন্দা স্মৃতিচারণ করে বলেন— > “আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, মাত্র ১০ পয়সায় ১ সের দুধ, আর সে দুধ থেকে তৈরি চমচম ২ টাকা সের দামে বিক্রি হতো। এখন দুধ ৮০–১০০ টাকা কেজি, আর চমচম ৩২০–৩৫০ টাকা।”তিনি আরও বলেন, আগে গরুকে খাওয়ানো হতো দুর্বা ঘাস। এখন কৃত্রিম ফিড ও কীটনাশকে উৎপাদিত ঘাস খাওয়ানো হচ্ছে, ফলে আগের মতো খাঁটি দুধ পাওয়া যায় না। আগে ১ মন দুধ থেকে ৭–৮ কেজি ছানা পাওয়া যেত, এখন সর্বোচ্চ ৬ কেজি। স্থানীয়দের দাবি—সরকারি নজরদারি ও সুরক্ষা দরকার ব্যবসায়ী, বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়দের মতে—দুধ উৎপাদনে মানোন্নয়ন,জিআই মার্ক কঠোরভাবে প্রয়োগ,চমচমের বিরুদ্ধে অভিযান কারিগরদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা।এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে টাঙ্গাইলের এই মিষ্টি শিল্প আবারও পুরোনো জৌলুস ফিরে পাবে।
সাজিদ পিয়াল: টাঙ্গাইলে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল । বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় টাঙ্গাইলে এক বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বাদ জুম্মা টাঙ্গাইল কবরস্থান সংলগ্ন জামিয়া ইসলামিয়া দারুস-সুন্নাহ মাদ্রাসা মসজিদে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে স্থানীয় মুসল্লী, বিএনপি নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। মিলাদ ও দোয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন,আমাদের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাঁকে রোগমুক্ত করেন এবং সুস্বাস্থ্যে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন—এই দোয়া করি।” খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে টুকু আরও বলেন,“দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। অথচ গত সরকারের আমলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তাকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দী রেখে নির্যাতন করেছে। ছয় বছর তিনি জেলে ছিলেন—এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়।”তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার দ্রুত আরোগ্য কামনায় দলমত নির্বিশেষে দেশবাসীর প্রতি দোয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।” দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন— জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক শানু, সদর থানা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী, সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা সৈয়দ শহিদুল আলম টিটু, বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি ও অঙ্গ–সংগঠনের নেতাকর্মী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাধারণ মুসল্লীরা। মাহফিল শেষে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।শুক্রবার বাদ জুম্মা নগরীর টাঙ্গাইল কবরস্থান জামিয়া ইসলামিয়া দারুস-সুন্নাহ মাদ্রাসা মসজিদে বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তিনি বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন আমাদের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দ্রুত সুস্থ করে দেন এ কামনা করি। টুকু আরও বলেন, বিগত আমলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা অন্যায়ভাবে তাকে ৬ বছর জেলে রেখে নির্যাতন করেছে, যিনি দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করে এই দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। আজ সেই নেত্রী অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই।
টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী সরকারি সা'দত কলেজের ১২ প্রভাষককে "সহকারী অধ্যাপক" পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাতে "মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ" সরকারি কলেজ-১ এর এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি কলেজ গুলোর ১৮৭০ প্রভাষককে "সহকারী অধ্যাপক" পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতি প্রাপ্ত ব্যক্তিরা স্ব স্ব কলেজেই নিজ দায়িত্ব পালন করবে বলে জানানো হয়। সরকারি সা'দত কলেজের পদোন্নতি প্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেনঃ- ১। তানিয়া তাসরিন (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ), ২। রাজিবুল ইসলাম (ইংরেজি বিভাগ) ৩। শারমিন আক্তার (ইতিহাস বিভাগ) ৪। সুবীর পাল (উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ) ৫। জামিল হোসেন (দর্শন বিভাগ) ৬। মোহাম্মদ সাব্বির হাসান (পদার্থবিদ্যা বিভাগ) ৭। ফাহিমা আক্তার (বাংলা বিভাগ) ৮। মোঃ সাইফুল ইসলাম (বাংলা বিভাগ) ৯। শারমিন সুলতানা (বাংলা বিভাগ) ১০। মুমু আক্তার (রসায়ন বিভাগ) ১১। লায়লা ইয়াসমিন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ) ১২। মোঃ রাসেল খান (হিসাববিজ্ঞান বিভাগ)
১৮ নভেম্বর, মঙ্গলবার আমাদের ডিবেটিং ক্লাবে অনুষ্ঠিত হলো ২০২৪–২৫ সেশনের বিদায়ী কমিটির সভাপতি সানজিদা মেহের নাহিদা ও সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়ার রাহমান সাজিদ এর বিদায় এবং নতুন কমিটি (২০২৫–২৬) ও নতুন তার্কিকদের আনুষ্ঠানিক বরণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণবন্ত, উৎসবমুখর এবং আবেগঘন। ক্লাবের পুরনো ও নতুন প্রজন্ম একসাথে মিলিত হয়ে এক সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন: অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মনিরুজ্জামান মিয়া, সাবেক উপাধ্যক্ষ প্রফেসর সুব্রত কুমার সাহা ও সাবেক উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মৃদুনচন্দ্র ।বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন: আব্দুল্যাহ তালুকদার সাধারণ -সম্পাদক, সরকারি সাদ'ত কলেজ শিক্ষক পরিষদ, ড. আরমান হোসেন আজম সহকারি অধ্যাপক, বাংলা ও শিক্ষক উপদেষ্টা, সরকারি সা'দত কলেজ ডিবেটিং ক্লাব,মো. নাইমুল হাসান সহকারী অধ্যাপক ইসলামী শিক্ষা ও শিক্ষক উপদেষ্টা, সরকারি সা'দত কলেজ ডিবেটিং ক্লাব, সাইফুল মালেক আনসারি, বিভাগীয় প্রধান অর্থনীতি, আবেদ আহাদ, বিভাগীয় প্রধান, সমাজকর্ম। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোঃ আবু হানিফ, সভাপতি সরকারি সা'দত কলেজ ডিবেটিং ক্লাব। সাথে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের গর্ব, সম্মানিত সাবেকরা: প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ও জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা খন্দকার নিপুণ হোসাইন,সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান রুবেল,সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন,সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন,সাবেক সভাপতি আবু আহমেদ শেরশাহ,সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হাসান ও এছাড়াও সরকারি সা'দত কলেজ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সরকারি সা'দত কলেজ ছাত্রদলের সদস্য , সরকারি সা'দত কলেজ ছাত্রশিবির। এসময় বিদায়ী কমিটির সদস্যদের ক্রেস্ট ও ফুল দিয়ে সম্মাননা জানানো হয় এবং নতুন কমিটি ও সদস্যদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত জানানো হয়। আলোচনা পর্বে ক্লাবের অর্জন, অতীত ইতিহাস, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ক্লাবের সম্ভাবনা, বর্তমান কার্যক্রম সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন সম্মানিত অতিথিবৃন্দ। ক্লাবের সদস্যরা রম্য বিতর্ক, গান, ম্যাজিক ও আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিলো। অংশগ্রহণকারী সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সকলের সমর্থন প্রত্যাশা করি। বিদায়ী কমিটির দায়িত্বশীল নেতৃত্ব আমাদের ক্লাবকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে। আর নতুন কমিটি ও নতুন তার্কিকরা ক্লাবকে আরও এগিয়ে নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা সবসময় ক্লাবের পাশে থেকেছেন। তাদের দিকনির্দেশনা, সহযোগিতা এবং একান্ত সমর্থনই অনুষ্ঠানটিকে এত সুন্দরভাবে আয়োজন করতে সাহায্য করেছে। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের প্রধান অতিথি মনিরুজ্জামান মিয়া স্যারকে, তার সহযোগিতা ও সমর্থনের কারণে আয়োজন সফল হয়েছে। ডিবেটিং ক্লাব সবসময় যুক্তি, সত্য ও সুন্দর মত প্রকাশের জায়গা। পুরানোদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের স্বপ্ন এক হয়ে ক্লাবকে এগিয়ে নেবে আরও অনেক দূর।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে চলতি আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দীর্ঘ প্রতিকূলতা পেরিয়ে এমন ফলনে কৃষক-কৃষাণীদের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি। স্বপ্ন পূরণের আশায় তারা দিন গুনেছেন। সেই সোনালি ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছেন। আর সেই ধান বাজারে বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা মেটাবেন। ছেলে-মেয়েদের জন্য নতুন জামাকাপড়, পরিবারের সকল চাহিদা মেটানোর নতুন স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক নতুন ধান বিক্রি করে বাজার থেকে গরম জিলাপি ও মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ের যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হতো নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। ঋতু চক্রের পথ পরিক্রমায় হেমন্ত কালের অগ্রহায়ণ মাসের যাত্রা শুরু। অগ্রহায়ণকে ঘিরে নবান্নের ঘ্রাণে ভরে উঠছে কৃষকের আঙ্গিনা। এ অঞ্চলে কৃষকদের ঘরে ঘরে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। গ্রামীণ জীবন থেকে নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসলেও অনেকে বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। বাজারে ধানের দাম ভাল এবং বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ভালভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারায় কৃষকরা খুবই খুশি। বাংলার প্রকৃতিতে অগ্রহায়ণ এলেই কৃষককেরা দিগন্ত জুড়ে ধানকাটা মাড়াই উৎসবে মেতে উঠেন কৃষক। ব্যস্ত সময় কাটান কৃষক-কৃষাণীরা। ধান তোলার সুভাস ভেসে বেড়ায় বাতাসে বাতাসে। কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনা ভরে উঠছে সোনালী ধানে। নতুন চালের ভাতে ভিন্ন এক আমেজ এনে দেয় কৃষক পরিবারে। অনেক পরিবারে তৈরি হয় নতুন চালের পিঠা, ক্ষীর, পায়েসসহ নানা উপাদেয় খাদ্য। নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবকেই নবান্ন উৎসব বলা হলেও বাস্তব জীবন থেকে এই উৎসবটি অচেনা এক দূরে চলে যেতে বসলেও কেউ কেউ ধরে রেখেছেন পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য। সরজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, হেমন্তের হালকা বাতাসে দুলছে পাকা ও আধাপাকা ধানের স্বর্ণালি শীষ। মাঠজুড়ে ধানের সমারোহ যেন সৌন্দর্যের উৎসব। পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠেছে বাংলার মাঠ-ঘাট। কোনো কোনো জায়গায় শুরু হয়েছে ধান কাটার মহোৎসব। কৃষকের উঠোনে ইতোমধ্যে জমতে শুরু করেছে নতুন ধান। ব্যস্ত সময়ের মাঝে কৃষাণীরাও দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না। ধান কাটার পর দ্রুত জমি প্রস্তুত করে সরিষা চাষের পরিকল্পনায় ব্যস্ত সবাই। নতুন করে পাইজাম ধান চাষে রেকর্ড গত কয়েক বছর অতিরিক্ত বন্যার কারণে যেসব জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হয়নি। এবার সেসব জমিতে পানির পরিমাণ কম থাকায় রেকর্ড পরিমাণ পাইজাম জাতের ধান চাষ হয়েছে। ফলে আমন উৎপাদন আরও বেড়েছে। স্থানীয় কৃষক আলম মিয়া বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার বন্যার পানি কম থাকায় ফলন অনেক ভালো হয়েছে। ধানের দাম কিছুটা কম হলেও খড়ের দাম বেশি। সব মিলিয়ে খরচ মিটিয়ে ভালোই লাভ হবে আশা করছি। কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, আগে নবান্ন উৎসব ধুমধাম করে পালিত হতো। এখন ধুমধাম না থাকলেও বাপ-দাদার ঐতিহ্যটি ধরে রেখেছে তার পরিবার। কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ১০ বছর আগেও ধুমধাম করে পহেলা অগ্রহায়ণে তিনি নবান্ন পালন করতেন। নবান্নে তিনি আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন। নবান্ন উপলক্ষে ২ দিন আগে সকাল বেলা গোসল সেরে পবিত্র হয়ে বাম হাত দিয়ে এক মুঠি ধান কর্তন করে নবান্নের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করতাম। গত বেশকয়েক বছর থেকে তার বাড়িতে এসব অনুষ্ঠান অনুপস্থিত। চাকরিজীবী তরুন আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, আমি ছোট বেলায় গ্রামে দেখেছি, দাদা-দাদী নানা-নানি আত্মীয়-স্বজন সকলে মিলে নবান্ন উৎসব পালন করত। ধান ঘরে তোলার দিন মসজিদের ইমামকে ডেকে দোয়া পড়িয়ে নবান্ন উৎসব শুরু করা হতো। সবাই মিলে এক সাথে দুপুরের খাবার খেতাম। ইতিহাস লেখক জুবায়ের আলী বলেন, গ্রামেগঞ্জে আবহমানকাল ধরে নবান্ন উৎসব অত্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়ে এলেও বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই উৎসবে ভাটা পড়েছে। এ বিষয়ে গোপালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, এবার আমনে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে অর্জন হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ হেক্টর। প্রতিবারের মতো এবারও কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হয়েছে। গোপালপুরে ইউনিয়ন ও পৌর শহরের আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, তাই কৃষকের মুখে হাসি। এবারের আমন মৌসুমে এমন অপ্রত্যাশিত বাম্পার ফলন কৃষকদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। কৃষকের মাঠ এখন সোনালি শস্যে ভরে উঠেছে।
মোস্তফা মাসুদ: মানবকল্যাণে ঐক্য সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল কালিগঞ্জ” এই প্রতিপাদ্য স্লোগানকে সামনে রেখে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সমিতির গঠনতন্ত্র প্রণয়ন সংক্রান্ত ও সমিতির কার্যকরী কমিটি গঠন বিষয়ে সর্বশেষ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।সন্ধ্যায় ঢাকার উত্তরা, বাড়ি নং ৩ রোড নম্বর ১০ এবং ৭ সেক্টরে ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাশেম এর বাসভবনে কালিগঞ্জ উপজেলা সমিতির প্রধান উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুৃষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন কালিগঞ্জ উপজেলা প্রস্তাবিত সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা বকুলুজ্জামান, এ্যাডঃ মরিয়ম মনসুর, স ম মেহেদী হাসান, মুন্সি আব্দুর রাশেদ, এস এম ইমদাদ হোসেন, মোহাম্মদ রুবায়েত, শেখ সাইফুল বারী সফু, সুকুমার দাশ বাচ্চু, নুর আহমেদ প্রমুখ। এ সভায় উপজেলা সমিতির গঠনতন্ত্র অনুমোদন, সদস্য অন্তর্ভুক্তি সিদ্ধান্ত, জানুয়ারিতে সাধারণ সভা, ও পিকনিক অনুষ্ঠিত হবে। কার্যকরী কমিটির ব্লেজার সহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বকুলুজ্জামান জানান, ঢাকা মহানগরীতে নিয়মিতভাবে বসবাসরত উপজেলার অধিবাসীদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কল্যাণ সাধন এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা,পরস্পারিস সৌহার্দ্য ও ঐক্য স্থাপন, তাদের কল্যাণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং একই সাথে কালিগঞ্জ উপজেলা সার্বিক উন্নয়নকে সক্রিয়ভাবে উদ্বুদ্ধকরণ করা। এছাড়া ঢাকা সহ অবস্থানরত কালিগঞ্জ উপজেলার অধিবাসীদের কর্মসংস্থান, চিকিৎসা, সহায়তা, অস্থায়ী আশ্রয় প্রদান এবং মেধাবী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা, উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক ধারা উপস্থাপন এবং সার্বিক উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালানো। কালিগঞ্জ উপজেলা সমিতির ঢাকা ও কালিগঞ্জে লাইব্রেরীতে একটি কার্যালয় প্রাথমিক পর্যায়ে থাকবে। কালিগঞ্জ উপজেলা প্রস্তাবিত সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাশেমকে প্রধান উপদেষ্টা করে ৩০ সদস্য বিশিষ্ট পৃষ্ঠপোষক, ১৫ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ ও মোঃ আবু মাসুদকে সভাপতি ও মোস্তফা বকুলুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে মোট ২৭ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়।
চীন থেকে মাও জেদংয়ের উপহার পাওয়া ট্রাক্টর, টাইপরাইটারসহ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে টাঙ্গাইলের সন্তোষে। অনেক সরঞ্জাম আবার নষ্টও হয়ে যাচ্ছে। এই সরঞ্জামগুলো ভালোভাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ, পরিবারের সদস্য, ভক্ত ও অনুসারীরা। সরেজমিন দেখা যায়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের পশ্চিম পাশে একটি টিনশেডে রয়েছে ট্রাক্টর ও টাইপরাইটারটি। টিনশেডের চারপাশে স্বচ্ছ কাচ। ট্রাক্টর ও টাইপরাইটার মেশিনটিতে জমেছে ধুলার আস্তরণ। মওলানা ভাসানী ও চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবের নেতা মাও জেদংয়ের স্মৃতিবিজড়িত এই ট্রাক্টরের সামনের একটি চাকা নেই। এটি উচ্চতায় ৬ ফুট, লম্বায় ১০ ফুট। জানা যায়, মওলানা ভাসানী ১৯৬৩ সালে প্রথম এবং ১৯৬৪ সালে দ্বিতীয়বার চীন সফর করেন। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ‘মাও সে-তুঙ এর দেশে’ নামে একটি বইও লেখেন। ১৯৬৬ সালে মওলানা ভাসানী তৃতীয় ও শেষবার চীন সফর করেন। সে সময় চীনের নেতা মাও জেদং তাকে একটি ট্রাক্টর উপহার দেন। ১৯৬৭ সালে চীন থেকে ট্রাক্টরটি এ দেশে পাঠানো হয়। সমবায় পদ্ধতির কৃষিকাজে ট্রাক্টরটির সাহায্যে একসঙ্গে ৫০ একর জমি চাষ করা যেত। সে সময় মওলানা ভাসানীর কৃষিকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড চলমান ছিল জয়পুরহাটের পাঁচবিবির মহীপুর এলাকায়। সেখানে ট্রাক্টরটি কিছুদিন কাজে লাগানো হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে ট্রাক্টরটি টাঙ্গাইলের সন্তোষে নিয়ে আসা হয়। পরে মওলানা ভাসানী ট্রাক্টরটি বসিয়ে না রেখে কাজ করার জন্য বিএডিসিকে দিয়ে দেন। বিএডিসি সেটি জামালপুরে কিছুদিন কাজে লাগায়। জামালপুরে ট্রাক্টরটি একপর্যায়ে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকার পর বিক্রির কথা ওঠে। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ড ট্রাক্টরটি ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনে। বর্তমানে ট্রাক্টরটি মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ শিক্ষার্থী আক্তারুজ্জামান সাজু বলেন, মওলানা ভাসানী দলমত নির্বিশেষে আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ; তিনি আছেন আদর্শ, স্মৃতি, ইতিহাস ও কবির কবিতায়। তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ ও জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এই বঙ্গীয় ‘ব’-দ্বীপে এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নিয়েও যে বিশ্বরাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করা যায় মওলানা ভাসানী তার জ্বলন্ত উদাহরণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তার রেখে যাওয়া স্মৃতিচিহ্ন ও প্রতিষ্ঠানগুলো আজ ধ্বংসের পথে। মজলুম জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর ‘হক কথা’ পত্রিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘শান্তি প্রেস’র ব্যবহার্য সরঞ্জামগুলো আজ অবহেলায় অযত্নে পড়ে আছে; এই স্মৃতি সংরক্ষণে সরকার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও দায় নেই। মওলানা ভাসানী জাদুঘরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে তার স্মৃতি সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবি। ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সমাপ্তি খান বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন কৃষক ও মেহনতি মানুষের নেতা। তার সংগ্রামী জীবন, চীন থেকে উপহার পাওয়া ট্রাক্টরসহ নানা স্মৃতি আজ আমাদের ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এসব জিনিসপত্র অনেক জায়গায় অযত্ন ও অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভাসানীর ব্যবহৃত জিনিস, যেমন-ট্রাক্টর, পোশাক, দলিল, বই ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য একটি স্থায়ী ‘ভাসানী জাদুঘর’ করা উচিত। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাজেট ও তদারকি টিম গঠন করা দরকার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জীবন ও আদর্শ পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তার ভাষণ, চিঠিপত্র ও আলোকচিত্র ডিজিটাল আকারে সংরক্ষণ করে অনলাইনে উন্মুক্ত করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সহজে জানতে পারবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়মিত মেরামত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করতে হবে। মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক চেতনা তরুণদের মাঝে উজ্জীবিত করতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই ‘আদি নববর্ষ’ উদ্যাপনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। গত শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামীকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় দিনব্যাপী নববর্ষের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। তিনি বলেন, প্রায় প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলে নববর্ষের উৎসব উদ্যাপিত হতো। নববর্ষের আদি অনুষ্ঠান হিসেবে ‘আমানি’ উৎসব বা ‘নবান্ন’ উৎসবের কথা বলেছেন ঐতিহাসিকেরা, যা পয়লা অগ্রহায়ণে অনুষ্ঠিত হতো। এটি ছিল মূলত কৃষকের উৎসব। সম্রাট আকবরের সময় থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ‘বৈশাখ’ মাসকে বাংলা বছরের প্রথম মাস হিসেবে প্রচলন করা হয়। কিন্তু বৈশাখকে বছর শুরুর মাস আর পয়লা বৈশাখকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে বাংলার মানুষ উদ্যাপন করেনি বলে দাবি করেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের রূপ পায় বলেও জানান তিনি। মুসাদ্দিক বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম আজ ভুলতে বসেছে, এককালে পয়লা অগ্রহায়ণই ছিল এ অঞ্চলের মানুষের নববর্ষ। প্রজন্মকে সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা নবান্ন উৎসবকে আদি নববর্ষ উৎসব নামে উদ্যাপন করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির নতুন ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) হলেন মোঃ মনিরুজ্জামান। নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবারে ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অভিজ্ঞ সংবাদকর্মী মোঃ মনিরুজ্জামান। তার দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতা ও নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠানকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা জানান, দুর্নীতি দমন ও সামাজিক অন্যায়-অবিচার তুলে ধরতে মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির কর্মকাণ্ডকে আরও এগিয়ে নেবে। এই উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেনঃ ১️⃣ মোঃ শাহ নেওয়াজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ২️⃣ মোঃ শহিদুল ইসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ৩️⃣ মোঃ মাহমুদুল হাসান, বার্তা সম্পাদক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন— “আমরা মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি। তার প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবার অচিরেই আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।”
মাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৩৩৪তম পর্বে নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে নিয়ামত কমে যাবে কি না, সে বিষয়ে ঢাকা থেকে চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন একজন দর্শক। অনুলিখন করেছেন জান্নাত আরা পাপিয়া। প্রশ্ন : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে কি নিয়ামত কমে যাবে? উত্তর : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা কুফরি। এটা বড় কুফরি না, ছোট কুফরি। যদি আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কুফরি কাজ করে থাকলেন। এ জন্য আল্লাহ কোরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো, আমার সঙ্গে কুফরি করো না।’ আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন, আল্লাহর নিয়ামত লাভ করে সুন্দর জীবনযাপন করা, এটা যদি কেউ আল্লাহর কাছে সত্যিকার অর্থে তুলে ধরতে না পারে, তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া করলেন না, কুফরি করলেন। এই জন্য আল্লাহ সুরা দোহার শেষ আয়াতে বলেছেন, ‘তুমি তোমার রবের নিয়ামত প্রকাশ করো। কারণ, তোমার কাছে যখন নিয়ামত আসছে, তখন আল্লাহ পছন্দ করেন যে তুমি আল্লাহর এই নিয়ামতের বিষয়টি তুলে ধরবে।’ আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহ আমাকে এই নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ নিয়ামতকে বান্দার কাছে তুলে ধরার জন্য বলেছেন, বহিঃপ্রকাশ করার জন্য বলেছেন। বহিঃপ্রকাশ দুই ধরনের হতে পারে। একটি হলো নিয়ামতের ব্যবহারের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, নিয়ামতের বিষয়টি হলো মানুষের কাছে নিয়ামত তুলে ধরবে। যাতে করে আল্লাহর প্রশংসা প্রকাশ পায়। নিয়ামতের শুকরিয়া যদি কেউ আদায় না করেন, তাহলে কুফরি হবে। আল্লাহ বলেছেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করে থাক, তাহলে আমি আরো বৃদ্ধি করে দেব। বান্দারা যখন নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে, তখন আল্লাহ আরো নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করে দেন। আর যদি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা হয়, তাহলে আল্লাহ নিয়ামত কমিয়ে দেবেন এবং সেইসঙ্গে আরেকটি কঠিন বাণী আল্লাহ বলেছেন, ‘জেনে রাখো আল্লাহর কঠিন আজাবও তোমাদের জন্য অবধারিত থাকবে।’ নিয়ামতের শুকরিয়া শুধু মুখে আদায় করা যথেষ্ট নয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর শুকরিয়া আমলের মাধ্যমে আদায় করো।’ সুতরাং বান্দারা শুকরিয়া আদায় করবে। শুকরিয়ার অনেকগুলো দিক রয়েছে, তার মধ্যে আমলের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা হলো শুকরিয়ার সর্বোচ্চ স্তর।
তিনি ছিলেন মানবজাতির আদর্শ। তিনি অত্যন্ত উদার ও বিনয়ী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং একজন সাহসী যোদ্ধা। এছাড়াও তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক এবং একজন সফল প্রচারক ছিলেন। তিনিই উত্তম চরিত্র ও উদারতার একমাত্র উৎস। তিনি সকলের আদর্শহীন এবং প্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার প্রেমে, দুনিয়া মাতাল। তিনি আমার আদর্শ, তিনি আমার নেতা। তিনি আমার নবী, আমাদের নবী এবং সকলের নবী। তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। সমস্ত মানবজাতির জন্য করুণা। অন্ধকারে নিমজ্জিত বিশ্বের মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে। তার অসাধারণ চরিত্র, মাধুর্য এবং অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব সবাইকে অবাক করেছে। মুমিনের চঞ্চল হৃদয় তাকে এক নজর দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকে। কবি কাজী নজরুল বলেছেন: “বিচ্ছেদের রাত ছিল একাকার কান্নার ভোর; আমার মনে শান্তি নেই, আমি কাঁদছি। হে মদিনাবাসীর প্রেমিক, আমার হাত ধর।" তার নিষ্কলুষ চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।" (সূরা আল-আহজাব, আয়াত 21)। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে আজ কিছু লোক সেই নবীর সম্মানকে অবমাননা করছে। হৃদয় ভেঙ্গে যায়। আমাদের ক্ষমা করুন, হে নবী! তিনি তার অবিস্মরণীয় ক্ষমা, উদারতা, সততা, নম্রতা প্রভৃতির বিরল মুগ্ধতা দিয়ে বর্বর আরব জাতির আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এজন্য তারা তাকে ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তারা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকার করেছিল যে তিনি নম্র এবং গুণী ছিলেন। টাকা দিয়ে নয়, ভালো ব্যবহার দিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে জয় করেছেন। আল্লাহ তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মহৎ চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা আল কালাম, আয়াত ৪)। তিনি কখনো মানুষকে তুচ্ছ করেননি। আত্মসম্মানবোধে তিনি কাউকে তুচ্ছ মনে করেননি। তিনি বিশ্বের হৃদয়ে উচ্চতর চরিত্রের একটি অনুপম মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। নম্রতা তার চরিত্রে সর্বদা উপস্থিত ছিল। পৃথিবীর মানবতার কল্যাণে তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল শ্রেষ্ঠ আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে আমার উত্তম চরিত্র পূর্ণ করার জন্য প্রেরিত করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত) ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বিনয়ী এবং আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয়ী। দুর্বল ব্যক্তিকে কড়া কথায় আঘাত করবেন না। তিনি কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অসাধ্য সাধন করতে বাধ্য করেননি। গরিব-অসহায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। তিনি লোকদেরকে তাদের আচরণে অপ্রয়োজনীয় রাগ ও রাগ থেকে সর্বদা বিরত থাকার উপদেশ দিতেন এবং মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উঁচু করে দেন এবং যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করেন।” (মিশকাত) কাফেররাও তার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে সদয় ও নম্র আচরণ পেয়েছিল। তার অনুসারীরা তাকে উচ্চ সম্মানের সাথে ধরেছিল কারণ তিনি খুব নমনীয় এবং নম্র ছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) তার ভদ্র আচার-আচরণ সম্পর্কে বলেন, ‘নবী (সা.) রূঢ় বক্তা ছিলেন না, প্রয়োজনের সময়ও তিনি কঠোর ভাষা ব্যবহার করতেন না। প্রতিহিংসা তার সাথে ছিল না মোটেও। মন্দের বিনিময়ে ভালোই করেছেন। সব ক্ষেত্রেই তিনি ক্ষমা পছন্দ করতেন। তিনি লোকদেরকে উপদেশ দিয়েছিলেন, “আল্লাহর ইবাদত কর, করুণাময় প্রভু, ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, সালাম দাও এবং এসব কাজের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি উত্তর দিলেন, "ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং অপরিচিত সকলকে সালাম করা।" (বুখারী ও মুসলিম)। মহানবী (সা.)-এর মর্যাদাকে সম্মান করা মুসলমানদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের মৌলিক অংশ।
নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৯২৯তম পর্বে ই-মেইলের মাধ্যমে কানিজ নাহার দিপা জানতে চেয়েছেন, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? অনুলিখন করেছেন মোহাম্মদ সাইফ আহমেদ। প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? উত্তর : না দোয়ার জন্য আলাদা কোনো মাহফিল নেই। এটা আসবে কেন? আমরা একটা জায়গা থেকে বাঁচার জন্য আরেকটি কাজ করছি। কিন্তু সেই কাজটি ভুল করে আরও বড় ভুলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আমাদের সমাজে একটি প্রথা একেবারে ছেয়ে গেছে। যেমন—একজন মারা গেলে তার জন্য মিলাদ-মাহফিল করা কিংবা কূলখানি করা। কিন্তু এগুলো সবই বেদআতি কাজ। এগুলো সঠিক কাজ নয়। অনেকে মনে করছে, দোয়া-মাহফিল করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা একদমই নয়। এসব ইসলামে অনুমোদন দেয়নি। এইগুলো পুরোটাই বেদআত। মানুষ চাইলে যে কোনো সময় কিংবা যে কোনো জায়গা থেকে দোয়া করতে পারবেন। দোয়ার সঙ্গে মাহফিল কিংবা আলাদা কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ঘোষণা করা জায়েজ নেই। আশা করি, আপনি বুঝতে পেরেছেন।
র্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি ও চীনের ডিপসিকের মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতার নয়, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চ্যাটজিপিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্লগ লেখা, গবেষণা, প্রোগ্রামিংসহ নানান কাজে অপরিহার্য টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি চীনের তৈরি ডিপসিক এআই জগতে নতুন আলোড়ন তুলেছে। তারা দাবি করছে, তুলনামূলক কম চিপ ব্যবহার করেই অত্যাধুনিক এআই সেবা দেওয়া সম্ভব, যেখানে ওপেনএআই-এর বিশাল মডেলগুলোর জন্য ১৬,০০০ বা তারও বেশি চিপ প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ২০০০ চিপ দিয়ে ডিপসিক কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম। দুই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। ✅ চ্যাটজিপিটি: বিস্তৃত বিশ্লেষণ ও গভীর গবেষণা উপস্থাপন করতে পারে, যা একাডেমিক ও জটিল সমস্যার সমাধানে সহায়ক। ✅ ডিপসিক: দ্রুত এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে পারে, যা তাৎক্ষণিক ফলাফল প্রত্যাশী ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী। লেখালেখির ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি কেবল ধারণা ও প্লটের কাঠামো গড়ে তোলে, যেখানে ডিপসিক প্রায় পুরো গল্প তৈরি করে দিতে পারে। একইভাবে, কোডিংয়ের ক্ষেত্রেও ডিপসিক কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত সমাধান দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ডিপসিকের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা সংরক্ষণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের সরকার ইতোমধ্যেই ডিপসিকের ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওপেনএআই নিজেও অতীতে অনুমতি ছাড়া মানুষের লেখা ডেটা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারের অভিযোগের মুখে পড়েছিল, যা এখন ডিপসিকের বিরুদ্ধে উঠছে। ডিপসিকের সাফল্যের ফলে এআই চিপের বাজারেও বড় প্রভাব পড়েছে। এনভিডিয়া, যারা উন্নত চিপ তৈরিতে বিশ্বব্যাপী অগ্রগণ্য, তাদের শেয়ারের মূল্য একদিনে প্রায় ১৭% কমে গেছে। কারণ, কম শক্তিশালী হার্ডওয়্যারেও কার্যকর এআই সম্ভব হলে উচ্চমূল্যের উন্নত চিপের বাজার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়, তবে ডিপসিকের উদ্ভাবন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই চীনে উন্নত চিপ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম খরচে ভালো এআই তৈরি হলে মার্কিন প্রযুক্তি খাতেরও লাভ হতে পারে। এই প্রতিযোগিতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎকে আরও উন্নত ও বহুমাত্রিক করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে দ্রুত এবং সাশ্রয়ী সমাধান দরকার, সেখানে হয়তো ডিপসিক এগিয়ে থাকবে, আর যেখানে গবেষণা ও জটিল বিশ্লেষণের প্রয়োজন, সেখানে চ্যাটজিপিটির মতো বৃহৎ মডেলগুলো প্রাধান্য পাবে। শেষ পর্যন্ত, এই প্রতিযোগিতাই হয়তো এআই প্রযুক্তিকে আরও দক্ষ, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী করবে।