গাজার ভবিষ্যৎ শাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখন তর্ক তুঙ্গে, তখন খুব বেশি শব্দ না করেই নিজেদের অবস্থান শক্ত করে ফেলেছে হামাস। যুদ্ধবিরতির পরদিই দেখা যায়—ইসরাইল সেনারা যে অঞ্চলগুলো ছাড়ছে, সেসব জায়গায় প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে টহল দিচ্ছে হামাসের সদস্যরা। গাজার অভ্যন্তরে প্রশাসনিক কাজও এখন তাদের হাতেই। বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, কর আদায়, শুল্ক নির্ধারণ—সবই চলছে হামাসের নির্দেশনায়। স্থানীয়দের দাবি, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে মূল্যবৃদ্ধির জন্য তারা নয়; বরং সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরাই দায়ী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ভিন্ন। তাদের মতে, পণ্যের উপর কর বসিয়ে এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে হামাস, আর তাই তারা কোনোভাবেই চাইছে না দলটি আবারো সরকার পরিচালনা করুক। অন্যদিকে গাজা থেকে হামাসকে সরানো বা নিরস্ত্র করার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো এক অবস্থানে থাকলেও এর বিরোধিতা করছে রাশিয়া, চায়না এবং কয়েকটি আরব রাষ্ট্র। পশ্চিমাদের পছন্দ মাহমুদ আব্বাসের প্রশাসন বা আন্তর্জাতিক কোনো অন্তর্বর্তী সরকার—যেমন টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে। কিন্তু এই প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক শক্তি মানতে নারাজ। মাঠের বাস্তবতা বলছে—ইসরাইল দুই বছর ধরে গাজার ৮০ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল। যুদ্ধবিরতির পর তাদের অবস্থান সরে এলেও এখনো প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকা তাদের দখলে। বাকি ৪৭ শতাংশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ, যাদের জীবনযাত্রা পরিচালিত হচ্ছে হামাসের কাঠামোর ভেতরেই। ২০০৭ সালে ফাতাহ ও মাহমুদ আব্বাসের প্রশাসন থেকে গাজার ক্ষমতা নেয় হামাস। তারপর থেকে অঞ্চলটির প্রশাসন, নিরাপত্তা এবং বাজারব্যবস্থার সব ক্ষেত্রই ধীরে ধীরে তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও দলটির কাঠামো এখনো সক্রিয়। নিহত চার গভর্নরের জায়গায় নতুন চারজনকে নিয়োগ দিয়েছে তারা, আর সরকারি কর্মচারীরাও প্রতি মাসে বেতন পেয়ে গেছে। বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন—হামাস স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, গাজাকে ঘিরে যে কোনো ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণ তাদের বাইরে রেখে তৈরি করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক টানাপোড়েন যত বাড়ছে, তাদের অবস্থান ততই আরও দৃঢ় হয়ে উঠছে।
বিরতি চুক্তি কার্যকর থাকার পরও ইসরায়েলি বাহিনীর ৮০ বার লঙ্ঘন; জাতিসংঘ প্রতিনিধি গাজা শহরের ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করেছেন গাজা সরকারী মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আরও ২৩০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত ৮০ বার লঙ্ঘন করেছে বলেও তারা দাবি করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই বিমান হামলাগুলো নাকি হামাসের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়ায় চালানো হয়েছে। তবে হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের গাজা অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৮ হাজার ১৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০৩ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়েছিল। জাতিসংঘের ত্রাণ সমন্বয়ক ইতিমধ্যে গাজা শহরের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করেছেন এবং মানবিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
জীবিত শেষ ২০ ইসরায়েলি বন্দি মুক্ত—ইসরায়েল প্রায় ১,৭০০–২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দি রিলিজ শুরু করেছে; হামাস বলেছে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দিদের বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিবাদী' নির্যাতনের প্রমাণ আছে। মিশরের পর্যটন শহর শার্মুশ শেইখে অনুষ্ঠিত ‘শান্তি সম্মেলনে’ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আঞ্চলিক নেতৃত্ব—মিশরের আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ও তুরস্কের রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান—একটি মধ্যস্থতাবিহীন চুক্তির নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। ট্রাম্প ওই চুক্তিকে 'ঐতিহাসিক' আখ্যা দেন এবং বলেন, গাজায় যুদ্ধ শেষ হয়েছে। চুক্তির প্রথম ধাপে হামাস গৃহীত করেছে শেষ জীবিত ২০ ইসরায়েলি হোস্টেজের মুক্তি এবং বদলে ইসরায়েল প্রায় ১,৭০০–২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দি ও আটককারীদের মুক্তি কার্যক্রম শুরু করেছে—যাদের মধ্যে বিভিন্ন আইনি স্থিতি বা অভিযোগবিহীন বন্দিরা রয়েছেন। একই সাথে মৃত বন্দিদের দেহাবশেষযুক্ত কফিন তুলে দেওয়ার ঘটনাও সংঘটিত হয়। চুক্তির সময় ট্রাম্প উল্লেখ করেন যে এখন মানবিক সহায়তার প্রবাহ বাড়ানো হবে—শত শত ট্রাক খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম গাজায় পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং পুনর্গঠনের জন্য আরব ও আন্তর্জাতিক অর্থায়নের প্রস্তাব প্রস্তুত। সম্মেলনে ভবিষ্যতে গাজার প্রশাসন ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত দ্বিতীয় ধাপের কাঠামো নিয়ে আলোচনা শুরু করার কথাও স্থির করা হয়েছে। হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, মুক্ত হওয়া বন্দিরা "দুই বছর ধরে তারা যে ভয়াবহ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তা আধুনিক যুগে নিমর্ম ও ফ্যাসিবাদের চিত্র তুলে ধরে" এবং তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। পার্সটুডে খবর অনুযায়ী হামাস এ ধরনের অভিযোগ তোলেছে এবং ইসরায়েলের কারাগারে বন্দিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত অপরাধের কথা তুলে ধরেছে। চুক্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত একটি সূত্র বলেছে, এরপরের ধাপে গাজায় একটি নতুন শাসন কাঠামো, আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি নিরাপত্তা বাহিনী এবং বৈদেশিক অর্থায়নে পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হবে—কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখনও বহু কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা জটিলতা থেকে যায়। বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা ও পুনরুদ্ধার কাজের চ্যালেঞ্জ এখনই স্পষ্ট। বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্দি-হোস্টেজ বিনিময় ও সাময়িক যুদ্ধবিরতি অঞ্চলকে স্বস্তির নিঃশ্বাস দিলেও গাজার দীর্ঘমেয়াদি প্রশাসন, দায়িত্বশিয়োগ ও মানবিক পুনর্গঠন কিভাবে হবে—এবং হামাসের ভবিষ্যত ভূমিকা কী হবে—এসবই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সম্মেলনে ইরানসহ কিছু দেশকে আমন্ত্রণ বা অংশগ্রহণ নিয়ে মিশ্র তথ্যও রিপোর্ট হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে।
গাজা সিটিতে হামাস নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র দঘমুশ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বৃহৎ সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার পর এটি গাজার সবচেয়ে ভয়াবহ অভ্যন্তরীণ সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চোখো দেখা সাক্ষীরা জানান, গাজা সিটির জর্ডানিয়ান হাসপাতালের কাছে মুখোশধারী হামাস যোদ্ধারা দঘমুশ গোত্রের যোদ্ধাদের সঙ্গে গুলি বিনিময় করেন। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং সশস্ত্র সদস্যদের আটক করতে তীব্র লড়াই শুরু করে। মন্ত্রণালয় জানায়, “একটি সশস্ত্র মিলিশিয়ার হামলায়” তাদের আট সদস্য নিহত হয়েছেন। চিকিৎসা সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, শনিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে দঘমুশ পরিবারের ১৯ সদস্য ও হামাসের আট যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। চোখো দেখা সাক্ষীরা বলেন, দক্ষিণ গাজা সিটির তেল আল-হাওয়া এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়, যখন ৩০০-র বেশি হামাস যোদ্ধা একটি আবাসিক ভবন ঘিরে ফেলে, যেখানে দঘমুশ পরিবারের সশস্ত্র সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ভারী গুলিবর্ষণের মধ্যে বহু পরিবার ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় — যাদের অনেকেই যুদ্ধ চলাকালীন একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। একজন বাসিন্দা বলেন, “এইবার মানুষ ইসরায়েলি হামলা থেকে নয়, নিজেদের লোকের কাছ থেকে পালাচ্ছিল।” দঘমুশ পরিবার গাজার অন্যতম প্রভাবশালী গোত্র, যাদের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। এর আগেও তাদের মধ্যে একাধিকবার সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা করছে এবং সতর্ক করেছে যে “প্রতিরোধের কাঠামোর বাইরে কোনো সশস্ত্র কর্মকাণ্ড” কঠোরভাবে দমন করা হবে। উভয় পক্ষ একে অপরকে সংঘর্ষ শুরু করার দায়ে অভিযুক্ত করেছে। হামাসের দাবি, দঘমুশ পরিবারের বন্দুকধারীরা তাদের দুই সদস্যকে হত্যা ও পাঁচজনকে আহত করার পর তারা অভিযান চালাতে বাধ্য হয়। তবে দঘমুশ পরিবারের এক সূত্র স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, হামাস বাহিনী গাজা সিটির প্রাক্তন জর্ডানিয়ান হাসপাতাল ভবনে আসে, যেখানে দঘমুশ পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল— কারণ তাদের আল-সাবরা এলাকার বাড়িগুলো সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ওই সূত্রের দাবি, হামাস ওই ভবনটি নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পরিবারটিকে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিল। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর হামাস প্রায় ৭,০০০ নিরাপত্তা সদস্যকে আবার মোতায়েন করেছে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। খবরে আরও জানা গেছে, হামাসের সশস্ত্র ইউনিটগুলো ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকায় মোতায়েন হয়েছে— কেউ বেসামরিক পোশাকে, আবার কেউ গাজা পুলিশের নীল ইউনিফর্মে। তবে হামাসের গণমাধ্যম দপ্তর দাবি করেছে, “রাস্তায় কোনো যোদ্ধা মোতায়েন করা হয়নি।”
ইসরায়েল সরকার গাজা যুদ্ধবিরতির “প্রথম ধাপ” অনুমোদন করেছে, যার অংশ হিসেবে বন্দি বিনিময় ও গাজার কিছু অংশ থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে। হামাসের প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত গ্যারান্টির ভিত্তিতে এই সমঝোতার প্রথম ধাপ মানেই “গাজার যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে শেষ”—এমনটাই তাদের অবস্থান। ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার মধ্যরাতের বৈঠকে শুক্রবার ভোরে (১০ অক্টোবর) যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী— লড়াই থামানো: অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় লড়াই থামানোর পথ তৈরি হবে। বন্দি বিনিময়: হামাসকে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, বিনিময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির কথা রয়েছে। সেনা প্রত্যাহার: ইসরায়েল গাজার কিছু অঞ্চল থেকে ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার করবে এবং নির্ধারিত লাইনে সরে যাবে। হামাসের আলোচক খালিল আল-হাইয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া আশ্বাসে তাদের বিশ্বাস—এই সমঝোতা যুদ্ধের সমাপ্তি টানবে। তবে সমঝোতাটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির বিস্তৃত রূপরেখায় কীভাবে বসানো হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইসরায়েলের ডানপন্থী শরিকরা চুক্তির বিরোধিতা করেছে। জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন—“গাজায় হামাসের শাসন চলতে দিলে” তিনি এমন সরকারের অংশ থাকবেন না। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নিহত: অন্তত ৬৭,১৯৪ জন আহত: ১,৬৯,৮৯০ জনের বেশি ধ্বংসস্তূপে চাপা: আরও বহু মানুষ থাকার আশঙ্কা ইসরায়েলে নিহত (৭ অক্টোবর ২০২৩ হামলা): ১,১৩৯ জন; প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করা হয়েছিল যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন শুরু হলে গাজায় ত্রাণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার হওয়ার আশা করা হচ্ছে। আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল এলাকায় শিশুদের আনন্দ উদ্যাপনের দৃশ্য ধরা পড়েছে, তবে পর্যবেক্ষকদের মতে—সত্যিকারের স্বস্তির জন্য টেকসই রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগেই চূড়ান্ত হয়েছে সিদ্ধান্ত; বিশেষজ্ঞ বলছেন—“১০০ শতাংশ নিশ্চিত, ট্রাম্প এ বছরের বিজয়ী নন” ওসলো, নরওয়ে (এএফপি/টাইমস অব ইসরায়েল): নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সোমবারই নেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার আগেই বিজয়ীর নাম নির্ধারিত হয়েছে। নোবেল ইনস্টিটিউটের মুখপাত্র এরিক আসহেইম বলেন, “নোবেল কমিটির শেষ সভা সোমবার অনুষ্ঠিত হয়।” তিনি জানান, সাধারণত কমিটি পুরস্কার ঘোষণার আগে কয়েক দিন বা সপ্তাহ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। তিনি আরও বলেন, “শেষ প্রস্তুতি সোমবার নেওয়া হয়েছে, তবে আমরা কখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা কখনও প্রকাশ করি না।” এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষিত হবে শুক্রবার দুপুর ১২টায় (ইসরায়েল সময়), যা বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায়। এর ফলে স্পষ্ট যে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির (যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়) কোনো প্রভাব এই সিদ্ধান্তে পড়েনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, “আমার এই পুরস্কার না পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় অপমান হবে।” তিনি দাবি করেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন সংঘাত নিরসনে তার প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ ও বিরোধী নেতা ইয়ায়ার লাপিদ সবাই ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের উপযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন। তবে নোবেল বিশেষজ্ঞ ইতিহাসবিদ আসলে সভেন (Asle Sveen) বলেন, “এই বছর ট্রাম্প কোনোভাবেই পুরস্কার পাচ্ছেন না—আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত।” তিনি বলেন, “ট্রাম্প অনেক আগেই নেতানিয়াহুকে গাজার ওপর অবাধ বোমাবর্ষণের অনুমতি দিয়েছিলেন এবং বিশাল সামরিক সহায়তা দিয়েছেন।” এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩৩৮ জন ব্যক্তি ও সংস্থা মনোনীত হয়েছিলেন। ২০২৪ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিল জাপানের ‘নিহোন হিদানকিয়ো’ (Nihon Hidankyo)—হিরোশিমা ও নাগাসাকির পরমাণু বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের একটি সংগঠন, যারা পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী আন্দোলনে কাজ করে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। আরও ২৫১ জনকে গাজায় অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকেই শুরু হয় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, যা আজও চলছে। ট্রাম্প প্রশাসন যুদ্ধের অবসান ও বন্দিদের মুক্তির বিষয়টিকে তার পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে তুলে ধরেছে। সূত্র: দ্য জেরুজালেম পোস্ট
গাজা উপত্যকায় বৃহস্পতিবার সকালে নতুন করে ভয়াবহ বোমাবর্ষণ চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, যদিও এর আগেই মধ্যস্থতাকারীরা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতভর গাজা সিটি ও খান ইউনুসে ভয়াবহ বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ হয়। এমনকি ইসরায়েলি ড্রোন থেকেও সাধারণ মানুষের উপর বোমা নিক্ষেপ করা হয়। অন্তত একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় এক যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানান, চুক্তির প্রথম ধাপে যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময় এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, এই চুক্তি গাজায় যুদ্ধের অবসান, দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহার, সহায়তা প্রবেশের নিশ্চয়তা এবং বন্দি বিনিময়ের পথ প্রশস্ত করবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে একে “ইসরায়েলের জন্য এক মহান দিন” বলে মন্তব্য করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার তার সরকার এই চুক্তি অনুমোদনের জন্য বৈঠকে বসবে এবং “জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনবে।” গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর নাগাদ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, রবিবার বা সোমবারের মধ্যে হামাস প্রায় ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে, বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। একইসাথে ইসরায়েলি সেনারা ধাপে ধাপে গাজা থেকে প্রত্যাহার শুরু করবে। তবে প্রথম ধাপে সেনা প্রত্যাহারের সীমারেখা এখনও পরিষ্কার নয়। চুক্তি কার্যকর হলে অবিলম্বে অন্তত ৪০০টি সাহায্যবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। চুক্তির অন্যান্য ধাপ—যেমন ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন—পরে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। গাজায় এই যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাসের আকস্মিক ইসরায়েল আক্রমণের পর। হামাস জানিয়েছিল, ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের দখলনীতি, আল-আকসা মসজিদে হামলা, গাজা অবরোধ ও বন্দিদের প্রতি অমানবিক আচরণের প্রতিবাদেই তারা এই পদক্ষেপ নেয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড হামাসের প্রথম আক্রমণের পরপরই ভেঙে পড়ে, ফলে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম দফায় হামাসের আক্রমণে অন্তত ১,১৮০ জন ইসরায়েলি নিহত হয় এবং পরবর্তী লড়াইয়ে আরও ৭০০ জন মারা যায়। এদের অর্ধেকের বেশি ছিল বেসামরিক নাগরিক। এর প্রতিশোধে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালায়, যা দুই বছর ধরে চলে এবং প্রায় পুরো গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। ইসরায়েলি সামরিক সূত্রে ফাঁস হওয়া তথ্যে জানা যায়, এই দুই বছরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৭,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন—যাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। গাজায় এখন দুর্ভিক্ষ, ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো এবং অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয় চলছে। ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ, গির্জা—সবই ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে “গণহত্যা” হিসেবে ঘোষণা করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার গভীর রাতে ঘোষণা করেছেন যে, ইসরায়েল ও হামাস গাজা যুদ্ধের অবসানে তাঁর প্রস্তাবিত “২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার” প্রথম ধাপে একমত হয়েছে। ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম “ট্রুথ সোশ্যাল”-এ লিখেছেন— “এর মানে হলো খুব শিগগিরই সকল বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরায়েল তাদের সেনা নির্ধারিত সীমারেখা পর্যন্ত প্রত্যাহার করবে। এটি একটি শক্তিশালী, টেকসই এবং স্থায়ী শান্তির প্রথম পদক্ষেপ। সকল পক্ষ ন্যায়সঙ্গত আচরণ পাবে।” তিনি আরও বলেন, “আজ আরব ও মুসলিম বিশ্ব, ইসরায়েল, প্রতিবেশী দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি মহৎ দিন। আমরা কাতার, মিসর ও তুরস্ককে ধন্যবাদ জানাই যারা এই ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন ঘটনাটিতে মধ্যস্থতা করেছেন।” কাতারের নিশ্চয়তা: ঘোষণার অল্প সময় পরেই কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম ধাপের “সব শর্ত ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া” নিয়ে চুক্তি হয়েছে। তিনি জানান— “এই চুক্তি যুদ্ধের অবসান ঘটাবে, বন্দি বিনিময় সম্পন্ন করবে এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দেবে।” বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি। ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিক্রিয়া: ইসরায়েল সরকারের এক মুখপাত্র জানান, শনিবারের মধ্যেই বন্দিদের মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে হামাস একটি বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল নিশ্চয়তা প্রদানকারী রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় যেন ইসরায়েল এই চুক্তি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক্স (X)-এ লিখেছেন— “এটি ইসরায়েলের জন্য একটি মহান দিন। আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর দলকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের বন্দিদের মুক্ত করার এই পবিত্র মিশনে তাঁদের ভূমিকার জন্য।” তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার তিনি তাঁর মন্ত্রিসভাকে ডেকে এই চুক্তি অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন এবং “বন্দিদের ঘরে ফিরিয়ে আনবেন।” হামাসের অবস্থান: বুধবারের শুরুতে হামাসের আলোচক দলের প্রধান খালিল আল-হায়া জানান, তাদের প্রতিনিধিদল মিশরের শার্ম আল-শেখ শহরে এসেছে “দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক আলোচনার জন্য”। তিনি বলেন, তাদের লক্ষ্য হলো— 1️⃣ যুদ্ধের অবসান, 2️⃣ গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, 3️⃣ সকল ইসরায়েলি বন্দির (জীবিত বা মৃত) বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি। জাতিসংঘে প্রতিক্রিয়া: জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের উপ-রাষ্ট্রদূত মাজেদ বামিয়া এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে এক্স-এ এক শব্দে লিখেছেন— “Finally…” (অবশেষে...)। চুক্তির পটভূমি ও সমালোচনা: গত সপ্তাহে ট্রাম্প তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা উন্মোচন করেন, যা অনেকেই “ইসরায়েল-কেন্দ্রিক” বলে সমালোচনা করেছেন। প্রথম দফায় বলা হয়— “গাজাকে একটি সন্ত্রাসমুক্ত ও প্রতিবেশী-বান্ধব অঞ্চল হিসেবে পুনর্গঠন করা হবে।” এই পরিকল্পনায় আরও বলা হয় যে, ট্রাম্প ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধান কমিটিতে নেতৃত্ব দেবেন, যা গাজা পরিচালনা করবে। এছাড়াও একটি “আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী” গঠনের প্রস্তাব রয়েছে, যারা গাজায় নিরাপত্তা রক্ষা করবে। তবে সমালোচকরা একে “নতুন ঔপনিবেশিক পরিকল্পনা” হিসেবে দেখছেন, যেখানে ট্রাম্প নিজেকে “Board of Peace”-এর প্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র: ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত, আহত বা নিখোঁজ হয়েছেন। গাজার বাড়িঘর, মসজিদ, গির্জা, হাসপাতাল, স্কুল ও অবকাঠামোর অধিকাংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। একাধিক জাতিসংঘ তদন্ত কমিটি ও মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে— ইসরায়েলের গাজা অভিযান গণহত্যা (Genocide) হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ইসরায়েলি সেনা গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের ৮০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ: 📍 চুক্তি: গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ 📍 মধ্যস্থতাকারী: যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর, তুরস্ক 📍 মূল বিষয়: যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময়, সেনা প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তা 📍 সম্ভাব্য সময়সীমা: বন্দি মুক্তি শনিবারের মধ্যে শুরু হতে পারে 📍 উক্তি: ট্রাম্প – “Blessed are the Peacemakers!
মিশরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় অংশ নেওয়া হামাস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসানের নিশ্চয়তা চান— যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অন্যতম শর্ত। মিশরের পর্যটন শহর শার্ম আল-শেখে অনুষ্ঠিত আলোচনার দ্বিতীয় দিন শেষে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা বন্দিমুক্তির প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে চায়, যা ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। “বাস্তব নিশ্চয়তা চাই” — হামাস হামাসের শীর্ষ আলোচক খালিল আল-হাইয়া মিশরীয় গণমাধ্যম আল কাহেরা নিউজকে বলেন, “আমরা দখলদার শক্তির ওপর এক মুহূর্তের জন্যও ভরসা করি না। আমরা চাই বাস্তব নিশ্চয়তা যে যুদ্ধ সত্যিই শেষ হবে এবং পুনরায় শুরু হবে না।” তিনি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল পূর্বে দুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ট্রাম্পের বক্তব্য হোয়াইট হাউসে যুদ্ধের দুই বছর পূর্তিতে বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “একটি বাস্তব চুক্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।” তিনি জানান, আলোচনায় যুক্ত হতে বুধবার কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ প্রতিনিধিরা শার্ম আল-শেখে পৌঁছাবেন। কাতার, মিসর ও তুরকির মধ্যস্থতা কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি আল জাজিরাকে বলেন, “আমরা পূর্বনির্ধারিত কোনো সূত্র ধরে এগোচ্ছি না। আলোচনার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তাবগুলো তৈরি হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি বুধবার আলোচনায় যোগ দেবেন, যা মধ্যস্থতাকারীদের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতীক। বন্দিমুক্তি ও সেনা প্রত্যাহার একসঙ্গে হামাসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা আল জাজিরাকে জানান, “বন্দিমুক্তির প্রতিটি ধাপ ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। শেষ বন্দি মুক্তির সময়ই চূড়ান্তভাবে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে সরে যাবে।” ইসরায়েলের অবস্থান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধের দুই বছর পূর্তিতে এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি আমাদের অস্তিত্ব ও ভবিষ্যতের জন্য যুদ্ধ।” তিনি ইঙ্গিত দেন, ইসরায়েল তার লক্ষ্যে অবিচল থাকবে— বন্দিমুক্তি, হামাসের শাসনের অবসান এবং গাজা যেন আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয় তা নিশ্চিত করা। যুদ্ধবিরতির আশায় গাজায় মৃত্যু থামছে না আলোচনার মাঝেও ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমান গাজায় অভিযান চালাচ্ছে। মঙ্গলবার গাজার সাবরা ও তল আল-হাওয়া এলাকায় অন্তত ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ‘ওয়াফা’। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দুই বছরে ইসরায়েলি হামলায় মোট ৬৬ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত নতুন করে ১০৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় গাজার আজ-জুয়াইদা এলাকা থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি জানান, “সবাই একটি শান্তিচুক্তির অপেক্ষায়, অথচ বোমা বর্ষণ অব্যাহত। ইসরায়েলি বাহিনী পুরো আবাসিক এলাকা ধ্বংস করে দিচ্ছে যেখানে মানুষ ভেবেছিল তারা ফিরে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করবে।” অবকাঠামো ধ্বংস ও প্রাণহানির ভয়াবহ চিত্র যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংঘর্ষ পর্যবেক্ষক সংস্থা ACLED-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় এ পর্যন্ত ১১,১১০টি বিমান ও ড্রোন হামলা এবং ৬,২৫০টি গোলাবর্ষণ সংঘটিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী গত দুই বছরে সংঘর্ষজনিত মোট মৃত্যুর ১৪ শতাংশই গাজায় ঘটেছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ যুদ্ধে ১,৭০১ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের দুই বছর পূর্তিতে গাজা উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনের হিসেবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৭,১৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৬৯,৬৭৯ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু মানুষের লাশ আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুই বছর আগে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। এর পরপরই ইসরাইল গাজার ওপর ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে, যা এখনও অব্যাহত আছে। আল জাজিরার তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই বছর পূর্তির প্রাক্কালে গত শুক্রবার থেকে অন্তত ১০৪ জন গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন—যদিও একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলকে বোমাবর্ষণ স্থগিতের আহ্বান জানান। ইসরাইলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ১,১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে, যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় নিয়ে মিশরের শারম আল-শেইখে ইসরাইল ও হামাসের প্রতিনিধিদল মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।
তেহরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম তাসনিমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের আর্মি রেডিও সোমবার স্বীকার করেছে যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির ১,১৫২ সৈন্য নিহত হয়েছেন। কঠোর সামরিক সেন্সরশিপের মধ্যেও এই সংখ্যা সামনে এসেছে, যা ইসরায়েলি সমাজে শোকের মাত্রা ও সংঘাতের মানবিক মূল্য আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। রেডিওর তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশই ২১ বছরের কম বয়সী তরুণ, যাঁরা ফ্রন্টলাইনে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং অধিকাংশই অবিবাহিত। এ সময়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর শোকসন্তপ্ত পরিবারের রেজিস্ট্রিতে ৬,৫০০-এর বেশি নতুন স্বজন যুক্ত হয়েছে—যার মধ্যে ১,৯৭৩ জন বাবা-মা, ৩৫১ জন বিধবা, ৮৮৫ জন অনাথ ও ৩,৪৮১ জন ভাইবোন রয়েছেন। গত এক বছরে নতুন করে তালিকাভুক্ত ২৬২ সৈন্যের মৃত্যুর খবরে বলা হয়, নিহতদের বড় অংশই সামনের সারির লড়াইয়ে থাকা তরুণ সেনা। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যুদ্ধ চলাকালীন কঠোর সামরিক সেন্সরশিপের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণচিত্র এখনো অজানা রয়ে গেছে। এদিকে, অবসরপ্রাপ্ত ইসরায়েলি জেনারেল ইয়িত্ঝাক ব্রিক দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধনীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁর ভাষায়, হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে রাজি না হয়ে সংঘাত লম্বা করায় ইসরায়েল “সবচেয়ে বড় পরাজিত” হয়েছে। গাজা থেকে বন্দিদের জীবিত ফেরানো ও প্রতিরোধ সংগঠন ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি বাস্তবে ফলপ্রসূ হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তাসনিমের ভাষ্য, ইসরায়েলি বিমান হামলায় কয়েকজন বন্দির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে, আর গাজায় প্রতিরোধও মাঠে টিকে রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর প্রায় দুই বছর পর এই হিসাব প্রকাশ—এবং অভ্যন্তরীণ সমালোচনার সুর—ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গাজার অভিযানের রাজনৈতিক ও সামরিক মূল্য নিয়ে ইসরায়েলের ভেতরেই প্রশ্ন বাড়ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন প্রস্তাবিত গাজা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আলোচনার প্রাক্কালে ডানপন্থী ইসরায়েলি নেতারা তুলনামূলকভাবে নীরব থাকলেও, তারা মনে করেন পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ইসরায়েলি বাহিনী দীর্ঘসময় “সামরিকভাবে স্বাধীনভাবে” অভিযান চালাতে পারবে—এমন মন্তব্য করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ইসরায়েল বিশ্লেষক মাইরাভ জোনসাইন। আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পরিকল্পনায় ইসরায়েলের জন্য “বহু ফাঁকফোকর” রয়ে গেছে, যা সহজেই প্রক্রিয়াটি ভেস্তে দিতে পারে। জোনসাইনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জিম্মিদের মুক্তি আদায় করা গেলে পরিকল্পনার মূল অংশ—হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, গাজার ‘ডে-আফটার’ কাঠামো—এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। ফলে ইসরায়েলি বাহিনী “ফ্রিডম অব অপারেশন” বজায় রেখে সামরিক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার সুযোগ পাবে। তার ভাষায়, পরিকল্পনা টিকিয়ে রাখতে ট্রাম্প প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে ইসরায়েলকে একটি টেকসই যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে “অত্যন্ত কঠোর” ভূমিকা নিতে হবে। “বর্তমান ইসরায়েলি নেতৃত্বের বেশিরভাগই মনে করে, কোনো এক পর্যায়ে এটি ভেঙে পড়বে,” বলেছেন তিনি। জোনসাইন আরও জানান, পরিকল্পনার বড় একটি অন্তরায় হলো ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারকে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে যুক্ত করা—যা এখনো হামাসের পক্ষ থেকে গৃহীত হয়নি। ফলে মাঠে বাস্তব অগ্রগতি থমকে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব অনিশ্চয়তা ও পূর্বশর্তের জটিলতা পরিকল্পনার রাজনৈতিক সমর্থন ক্ষয় করতে পারে এবং মাটিতে সংঘাতের তীব্রতা কমানোর বদলে স্থিতাবস্থাকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। মূল পয়েন্টসমূহ আলোচনার মধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনীর “সামরিক স্বাধীনতা” বজায় থাকার সম্ভাবনা পরিকল্পনায় বহু “ফাঁকফোকর”—সহজে ভেস্তে যেতে পারে প্রক্রিয়া জিম্মি মুক্তি অগ্রাধিকার পেলেও নিরস্ত্রীকরণ ও ‘ডে-আফটার’ কাঠামো দ্রুত সম্ভব নয় ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার হামাসের নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে শর্তযুক্ত—হামাস এখনো রাজি নয় টেকসই যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োজন
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির লক্ষ্যে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদল সোমবার (৬ অক্টোবর) মিশরের শার্ম আল-শেখে মুখোমুখি আলোচনায় বসছে বলে কায়রোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। আলোচনায় মূল এজেন্ডা হবে জিম্মি–বন্দি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নির্ধারণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার জানান, হামাস প্রস্তাবটি গ্রহণের নিশ্চিতবার্তা দিলে সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং বন্দি বিনিময়ের ধাপ শুরু হবে। তিনি এ উদ্যোগকে “রক্তপাত থামানো ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর” গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ বলে অভিহিত করেন। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে মোসাদ ও শিন বেতের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কৌশলবিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার নেতৃত্বে আলোচনা টিম কায়রো/শার্ম আল-শেখে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানা যায়। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আশা প্রকাশ করেছেন, দ্রুত অগ্রগতি হলে “কয়েক দিনের মধ্যে” জিম্মিদের মুক্তির ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যদিকে, হামাস রবিবার নতুন ফুটেজ প্রকাশ করেছে যেখানে রাজনৈতিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ নেতা খালিল আল-হাইয়া প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন—দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার পর এটিই তার প্রথম উপস্থিতি। তবে তিনি শীর্ষ আলোচক হিসেবে দলকে নেতৃত্ব দেবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। কূটনৈতিক সূত্রগুলোর ভাষ্য, প্রথম দফায় জিম্মি–বন্দি বিনিময় ও গাজায় সামরিক অভিযান থামানোর কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে। পরবর্তী ধাপে মানবিক সহায়তা, পুনর্গঠন এবং সীমান্তব্যবস্থা নিয়ে টেকসই সমাধানের ফ্রেমওয়ার্ক আনার চেষ্টা চলবে। যুক্তরাষ্ট্রের দূতদল ইতিমধ্যে মিশরে পৌঁছেছে এবং ওয়াশিংটন বলছে, চুক্তি “খুব কাছাকাছি”—তবে বিলম্ব হলে পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হামাসকে সতর্ক করা হয়েছে। ইসরায়েল ও হামাস—দুই পক্ষই ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা চুক্তির দিকে অগ্রসর হতে আগ্রহী। সোমবারের বৈঠক সফল হলে যুদ্ধবিরতি বাস্তবে রূপ নিতে পারে, গাজায় মানবিক সঙ্কট কিছুটা লাঘব হতে পারে এবং আঞ্চলিক সংলাপের নতুন পথ খুলে যেতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর রাতভর বিমান ও আর্টিলারি হামলায় আজ শনিবার (৪ অক্টোবর) ভোর থেকে অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলা “অবিলম্বে বন্ধ” করার কথা বলার পরও এই বোমাবর্ষণ থামেনি। Al Jazeera গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাস্সাল এএফপিকে বলেন, “এটা ছিল অত্যন্ত সহিংস একটি রাত; (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) গাজা সিটি ও উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ডজন ডজন বিমান হামলা ও আর্টিলারি শেলিং চালিয়েছে,” এবং রাতের বোমাবর্ষণে কমপক্ষে ২০টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। Dawn স্থানীয় হাসপাতালগুলো হতাহতদের তথ্য দিচ্ছে: গাজা সিটির ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল জানিয়েছে, শহরের তুফ্ফাহ মহল্লায় একটি বাড়িতে হামলার পর তাদের কাছে হতাহত আনা হয়—এর মধ্যে চারজন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত। Al Jazeera খানইউনিসের নাসের হাসপাতাল জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবুতে ড্রোন হামলায় দুই শিশু নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন। Al Jazeera ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের জবাবে হামাস আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়ে কিছু বিষয়ে সম্মতি দিলেও, ইসরায়েলি বাহিনী হামলা অব্যাহত রেখেছে বলে আল জাজিরার লাইভ আপডেটে জানানো হয়েছে। Al Jazeera
কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে, আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন এবং বলেন, “আমরা ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়ের শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নির্মাণে অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল সরকার পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ধ্বংস করছে। এ স্বীকৃতি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাওয়া শক্তিগুলোকে ক্ষমতায়ন করবে এবং হামাসকে নয়। একইসঙ্গে এটি সন্ত্রাসবাদের বৈধতা দিচ্ছে না বা কোনো পুরস্কারও নয়। কার্নি জানান, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কানাডাকে সরাসরি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আগামী বছর সাধারণ নির্বাচন আয়োজন ও রাষ্ট্রকে নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে। তবে এতে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। একইসময়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ং-এর সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, এ সিদ্ধান্ত দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের নতুন গতি সঞ্চার করবে। এর সূচনা হবে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও আটককৃতদের মুক্তির মধ্য দিয়ে। তবে তাদেরও শর্ত, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও এ ঘোষণার পরপরই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেন। তিনি বলেন, “এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলিদের জন্য শান্তির আশা পুনরুজ্জীবিত করবে এবং দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথ খুলে দেবে।” আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিনের মিত্র পশ্চিমা শক্তিগুলোর এ সিদ্ধান্ত ইসরায়েলকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করে তুলছে। বিশেষ করে গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে, যেখানে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য অভিযোগ করছে, এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে হামাসকে পুরস্কৃত করা। তবে আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আরও কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারে। এর মধ্যে ফ্রান্সের নামও রয়েছে।
গাজা সিটিতে ইসরায়েলের টানা ধ্বংসযজ্ঞে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে স্থায়ী উচ্ছেদের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বরের হামলায় ১৫ তলা মুশতাহা টাওয়ার মুহূর্তের মধ্যে ধসে পড়ে। এক দশক ধরে ঋণ শোধ করে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা শাদি সালামা আল-রাইয়েস। কিন্তু সেই ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন তিনি পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অস্থায়ী তাঁবুতে। ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করছে, এসব বহুতল ভবন হামাসের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। গত দুই সপ্তাহে অন্তত ২০টি টাওয়ার ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে তাদের দাবি। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৫০টি “সন্ত্রাসী টাওয়ার” ধ্বংস করা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ—এটি আসলে জনগণকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনার অংশ। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর (OHCHR) বলেছে, জনসংখ্যা উচ্ছেদ করার এ ধরনের পরিকল্পনা জাতিগত নিধনযজ্ঞের শামিল হতে পারে। তবে ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র নাদাভ শোশানি বলেছেন, গাজাকে সমতল করার কোনো কৌশল নেই। তাদের লক্ষ্য কেবল হামাসকে ধ্বংস করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা। সাক্ষীদের দাবি, হামলার আগে ফোনে কয়েক মিনিট সময় দিয়ে ভবন খালি করতে বলা হয়। আতঙ্কে বাসিন্দারা খালি হাতে বের হয়ে আসেন। এরপর মুহূর্তের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনে মুশতাহা টাওয়ারকে ধুলিস্যাৎ করে দেয়। ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশের শরণার্থী শিবিরেও। শুধু টাওয়ার ধ্বংসই নয়, গাজা সিটির প্রান্তিক এলাকায় প্রতিদিন ডজন ডজন বাড়ি উড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল। স্থানীয় এনজিও নেটওয়ার্কের হিসাবে, ইতোমধ্যেই গাজা সিটির ৬৫ শতাংশ ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ স্যাটেলাইট সেন্টারের তথ্য বলছে, গাজার মোট ভবনের প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২১৩টি হাসপাতাল এবং ১,০২৯টি স্কুল। মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা অক্সফাম জানিয়েছে, বহুতল টাওয়ারগুলো ছিল ফিলিস্তিনিদের শেষ আশ্রয়। এগুলো ধ্বংস হলে দক্ষিণাঞ্চলে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ২৩ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি তরুণ তারেক আবদেল-আল বলেন, “আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে তারা ফেরার শেষ আশা পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে।”
মিসর জানিয়েছে, দেশটির ভূখণ্ডে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে কোনো ধরনের হামলা হলে তা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমান বিবেচিত হবে। মিস্রীয় শীর্ষ নিরাপত্তা সূত্র মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছে, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে কায়রোতে থাকা হামাস নেতাদের টার্গেট করতে পরিকল্পনা করেছে এবং একাধিক চেষ্টা মিসর প্রতিহত করেছে। সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, “মিসরের ভেতরে হামলার যে কোনো প্রচেষ্টা আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন। সেই অনুযায়ী আমরা এটিকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে গণ্য করব এবং প্রতিশোধ নিতে পিছপা হব না।” এই ঘোষণা এমন সময় আসে যখন গত সপ্তাহে কাতারের রাজধানী দোহায় হামলা চালিয়ে হামাস নেতৃত্বকে টার্গেট করার খবরregional উত্তেজনা বাড়িয়েছে। দোহা আক্রমণের পরে মিসর–ইসরায়েল যোগাযোগ শীতল হয়ে পড়েছে এবং কায়রো এখন ইসরায়েলকে আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। মিসর কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে যে, সিনাই সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে — প্রাসঙ্গিক খবরে বলা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে যাতে গাজার পরিস্থিতির জেরে প্যালেস্টাইনির সম্ভাব্য তীব্র অবিলম্বে প্রবেশ ঠেকানো যায়। একই সঙ্গে মিসর বলেছে, দোহা হামলায় তাদের কোনো ভূমিকা বা সমন্বয় ছিল না। দেশটির এক সেনা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে ওই হামলায় কোনো ইসরায়েলি বিমান মিসরের আকাশপথ ব্যবহার করেনি এবং মিসরের পূর্ব সীমান্তে একটি চালু চীনা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের কারণে অনুমতি ছাড়া কোনো বিমান প্রবেশ করা কঠিন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী Benjamin Netanyahu যে হুমকি উচ্চারণ করেছিলেন—“হামাসকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে টার্গেট করা হবে”—তার প্রেক্ষিতে কায়রোর বক্তব্য স্পষ্ট: মিসর নিজস্ব সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনও আপস করবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলছেন, মিসরের উদ্বেগ কেবল হামাসের প্রতি সিম্প্যাথি নয়; বিষয়টি দেশটির আঞ্চলিক মর্যাদা এবং মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাকে কেন্দ্র করে। কায়রো কোনোভাবেই 자신의 রাজধানীতে অপমান সহ্য করবে না, এবং এমন কোনো হামলা দেশটির কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে। ইতিহাসগতভাবে মিসর ১৯৭৯ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করা প্রথম আরব দেশ। তবু জনমানসে ইসরায়েলবিরোধী অনুভূতি রয়েছে এবং কায়রোকে মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত সমরূপতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকতে দেখা যায়। মিসর কর্তৃপক্ষ এখন তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে সতর্ক করেছে যে খোলা সংঘাতের ঝুঁকি বাড়লে আঞ্চলিক সমীকরণ দ্রুত বদলে যেতে পারে। কায়রো জোর দিয়ে বলছে: উথিত কূটনৈতিক পথেই গাজার সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। এই ঘোষণার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা বলছেন, যদি ঘটনাপ্রবাহ শig হয় তবে তা শীঘ্রই আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অনিশ্চিত করে তুলবে।
জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC) গাজার রাজধানী গাজা সিটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত সামরিক হামলার কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়কেই এ ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হয়েছে। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে IPC মাত্র পাঁচবার দুর্ভিক্ষ স্বীকৃতি দিয়েছে। দীর্ঘ মাসব্যাপী সতর্কবার্তার পর এবার সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে যে গাজা দুর্ভিক্ষের মানদণ্ডে পৌঁছে গেছে: অন্তত ২০% পরিবার চরম খাদ্য সংকটে, ৩০% শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে, প্রতিদিন প্রতি ১০,০০০ জনের মধ্যে অন্তত ২ জন না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে। IPC-এর তথ্যমতে, গাজা গভর্নরেটের (যার অন্তর্ভুক্ত গাজা সিটি ও আশপাশের শহরগুলো) অর্ধ মিলিয়নের বেশি বাসিন্দা বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মধ্যে রয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এই দুর্যোগ অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ জরুরি খাদ্য সংকটে পড়তে পারে। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দুর্ভিক্ষের কথা অস্বীকার করেছেন এবং অভিযোগ নাকচ করেছেন যে তাঁর সরকার যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে অনাহার ব্যবহার করছে। তিনি দাবি করেছেন, “শত শত ট্রাক” খাদ্য সাহায্য প্রবেশ করেছে। কিন্তু মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েল সীমান্ত বন্ধ করে রাখায় সহায়তা কার্যত আটকে আছে। দুর্ভিক্ষ ঘোষণার সমান্তরালে, ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসী হামলা বাড়িয়েছে। প্রায় ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা মোতায়েন করে নগরীতে অগ্রসর হচ্ছে তারা। টানা বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। এর মধ্যেই গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনাহারে এখন পর্যন্ত ২৭১ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে ১১২ জন শিশু। মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে চালানো "আল-আকসা ঝড়" অভিযানের পর থেকে ইসরায়েলি গণহত্যায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬২ হাজার ১২২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫৮ জন আহত হয়েছেন। ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেনসহ আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, গাজার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগণ এখন "বিপর্যয়কর" অবস্থার দ্বারপ্রান্তে। ইসরায়েল অবরোধ বজায় রেখে খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ঢুকতে না দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছে তারা। ইতিহাসে এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত দুর্ভিক্ষ যা মধ্যপ্রাচ্যে সংঘটিত হলো।
দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির নতুন ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) হলেন মোঃ মনিরুজ্জামান। নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবারে ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অভিজ্ঞ সংবাদকর্মী মোঃ মনিরুজ্জামান। তার দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতা ও নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠানকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা জানান, দুর্নীতি দমন ও সামাজিক অন্যায়-অবিচার তুলে ধরতে মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির কর্মকাণ্ডকে আরও এগিয়ে নেবে। এই উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেনঃ ১️⃣ মোঃ শাহ নেওয়াজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ২️⃣ মোঃ শহিদুল ইসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ৩️⃣ মোঃ মাহমুদুল হাসান, বার্তা সম্পাদক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন— “আমরা মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি। তার প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবার অচিরেই আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।”
মাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৩৩৪তম পর্বে নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে নিয়ামত কমে যাবে কি না, সে বিষয়ে ঢাকা থেকে চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন একজন দর্শক। অনুলিখন করেছেন জান্নাত আরা পাপিয়া। প্রশ্ন : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে কি নিয়ামত কমে যাবে? উত্তর : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা কুফরি। এটা বড় কুফরি না, ছোট কুফরি। যদি আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কুফরি কাজ করে থাকলেন। এ জন্য আল্লাহ কোরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো, আমার সঙ্গে কুফরি করো না।’ আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন, আল্লাহর নিয়ামত লাভ করে সুন্দর জীবনযাপন করা, এটা যদি কেউ আল্লাহর কাছে সত্যিকার অর্থে তুলে ধরতে না পারে, তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া করলেন না, কুফরি করলেন। এই জন্য আল্লাহ সুরা দোহার শেষ আয়াতে বলেছেন, ‘তুমি তোমার রবের নিয়ামত প্রকাশ করো। কারণ, তোমার কাছে যখন নিয়ামত আসছে, তখন আল্লাহ পছন্দ করেন যে তুমি আল্লাহর এই নিয়ামতের বিষয়টি তুলে ধরবে।’ আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহ আমাকে এই নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ নিয়ামতকে বান্দার কাছে তুলে ধরার জন্য বলেছেন, বহিঃপ্রকাশ করার জন্য বলেছেন। বহিঃপ্রকাশ দুই ধরনের হতে পারে। একটি হলো নিয়ামতের ব্যবহারের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, নিয়ামতের বিষয়টি হলো মানুষের কাছে নিয়ামত তুলে ধরবে। যাতে করে আল্লাহর প্রশংসা প্রকাশ পায়। নিয়ামতের শুকরিয়া যদি কেউ আদায় না করেন, তাহলে কুফরি হবে। আল্লাহ বলেছেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করে থাক, তাহলে আমি আরো বৃদ্ধি করে দেব। বান্দারা যখন নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে, তখন আল্লাহ আরো নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করে দেন। আর যদি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা হয়, তাহলে আল্লাহ নিয়ামত কমিয়ে দেবেন এবং সেইসঙ্গে আরেকটি কঠিন বাণী আল্লাহ বলেছেন, ‘জেনে রাখো আল্লাহর কঠিন আজাবও তোমাদের জন্য অবধারিত থাকবে।’ নিয়ামতের শুকরিয়া শুধু মুখে আদায় করা যথেষ্ট নয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর শুকরিয়া আমলের মাধ্যমে আদায় করো।’ সুতরাং বান্দারা শুকরিয়া আদায় করবে। শুকরিয়ার অনেকগুলো দিক রয়েছে, তার মধ্যে আমলের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা হলো শুকরিয়ার সর্বোচ্চ স্তর।
তিনি ছিলেন মানবজাতির আদর্শ। তিনি অত্যন্ত উদার ও বিনয়ী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং একজন সাহসী যোদ্ধা। এছাড়াও তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক এবং একজন সফল প্রচারক ছিলেন। তিনিই উত্তম চরিত্র ও উদারতার একমাত্র উৎস। তিনি সকলের আদর্শহীন এবং প্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার প্রেমে, দুনিয়া মাতাল। তিনি আমার আদর্শ, তিনি আমার নেতা। তিনি আমার নবী, আমাদের নবী এবং সকলের নবী। তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। সমস্ত মানবজাতির জন্য করুণা। অন্ধকারে নিমজ্জিত বিশ্বের মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে। তার অসাধারণ চরিত্র, মাধুর্য এবং অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব সবাইকে অবাক করেছে। মুমিনের চঞ্চল হৃদয় তাকে এক নজর দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকে। কবি কাজী নজরুল বলেছেন: “বিচ্ছেদের রাত ছিল একাকার কান্নার ভোর; আমার মনে শান্তি নেই, আমি কাঁদছি। হে মদিনাবাসীর প্রেমিক, আমার হাত ধর।" তার নিষ্কলুষ চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।" (সূরা আল-আহজাব, আয়াত 21)। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে আজ কিছু লোক সেই নবীর সম্মানকে অবমাননা করছে। হৃদয় ভেঙ্গে যায়। আমাদের ক্ষমা করুন, হে নবী! তিনি তার অবিস্মরণীয় ক্ষমা, উদারতা, সততা, নম্রতা প্রভৃতির বিরল মুগ্ধতা দিয়ে বর্বর আরব জাতির আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এজন্য তারা তাকে ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তারা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকার করেছিল যে তিনি নম্র এবং গুণী ছিলেন। টাকা দিয়ে নয়, ভালো ব্যবহার দিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে জয় করেছেন। আল্লাহ তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মহৎ চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা আল কালাম, আয়াত ৪)। তিনি কখনো মানুষকে তুচ্ছ করেননি। আত্মসম্মানবোধে তিনি কাউকে তুচ্ছ মনে করেননি। তিনি বিশ্বের হৃদয়ে উচ্চতর চরিত্রের একটি অনুপম মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। নম্রতা তার চরিত্রে সর্বদা উপস্থিত ছিল। পৃথিবীর মানবতার কল্যাণে তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল শ্রেষ্ঠ আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে আমার উত্তম চরিত্র পূর্ণ করার জন্য প্রেরিত করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত) ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বিনয়ী এবং আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয়ী। দুর্বল ব্যক্তিকে কড়া কথায় আঘাত করবেন না। তিনি কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অসাধ্য সাধন করতে বাধ্য করেননি। গরিব-অসহায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। তিনি লোকদেরকে তাদের আচরণে অপ্রয়োজনীয় রাগ ও রাগ থেকে সর্বদা বিরত থাকার উপদেশ দিতেন এবং মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উঁচু করে দেন এবং যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করেন।” (মিশকাত) কাফেররাও তার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে সদয় ও নম্র আচরণ পেয়েছিল। তার অনুসারীরা তাকে উচ্চ সম্মানের সাথে ধরেছিল কারণ তিনি খুব নমনীয় এবং নম্র ছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) তার ভদ্র আচার-আচরণ সম্পর্কে বলেন, ‘নবী (সা.) রূঢ় বক্তা ছিলেন না, প্রয়োজনের সময়ও তিনি কঠোর ভাষা ব্যবহার করতেন না। প্রতিহিংসা তার সাথে ছিল না মোটেও। মন্দের বিনিময়ে ভালোই করেছেন। সব ক্ষেত্রেই তিনি ক্ষমা পছন্দ করতেন। তিনি লোকদেরকে উপদেশ দিয়েছিলেন, “আল্লাহর ইবাদত কর, করুণাময় প্রভু, ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, সালাম দাও এবং এসব কাজের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি উত্তর দিলেন, "ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং অপরিচিত সকলকে সালাম করা।" (বুখারী ও মুসলিম)। মহানবী (সা.)-এর মর্যাদাকে সম্মান করা মুসলমানদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের মৌলিক অংশ।
নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৯২৯তম পর্বে ই-মেইলের মাধ্যমে কানিজ নাহার দিপা জানতে চেয়েছেন, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? অনুলিখন করেছেন মোহাম্মদ সাইফ আহমেদ। প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? উত্তর : না দোয়ার জন্য আলাদা কোনো মাহফিল নেই। এটা আসবে কেন? আমরা একটা জায়গা থেকে বাঁচার জন্য আরেকটি কাজ করছি। কিন্তু সেই কাজটি ভুল করে আরও বড় ভুলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আমাদের সমাজে একটি প্রথা একেবারে ছেয়ে গেছে। যেমন—একজন মারা গেলে তার জন্য মিলাদ-মাহফিল করা কিংবা কূলখানি করা। কিন্তু এগুলো সবই বেদআতি কাজ। এগুলো সঠিক কাজ নয়। অনেকে মনে করছে, দোয়া-মাহফিল করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা একদমই নয়। এসব ইসলামে অনুমোদন দেয়নি। এইগুলো পুরোটাই বেদআত। মানুষ চাইলে যে কোনো সময় কিংবা যে কোনো জায়গা থেকে দোয়া করতে পারবেন। দোয়ার সঙ্গে মাহফিল কিংবা আলাদা কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ঘোষণা করা জায়েজ নেই। আশা করি, আপনি বুঝতে পেরেছেন।
র্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি ও চীনের ডিপসিকের মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতার নয়, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চ্যাটজিপিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্লগ লেখা, গবেষণা, প্রোগ্রামিংসহ নানান কাজে অপরিহার্য টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি চীনের তৈরি ডিপসিক এআই জগতে নতুন আলোড়ন তুলেছে। তারা দাবি করছে, তুলনামূলক কম চিপ ব্যবহার করেই অত্যাধুনিক এআই সেবা দেওয়া সম্ভব, যেখানে ওপেনএআই-এর বিশাল মডেলগুলোর জন্য ১৬,০০০ বা তারও বেশি চিপ প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ২০০০ চিপ দিয়ে ডিপসিক কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম। দুই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। ✅ চ্যাটজিপিটি: বিস্তৃত বিশ্লেষণ ও গভীর গবেষণা উপস্থাপন করতে পারে, যা একাডেমিক ও জটিল সমস্যার সমাধানে সহায়ক। ✅ ডিপসিক: দ্রুত এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে পারে, যা তাৎক্ষণিক ফলাফল প্রত্যাশী ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী। লেখালেখির ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি কেবল ধারণা ও প্লটের কাঠামো গড়ে তোলে, যেখানে ডিপসিক প্রায় পুরো গল্প তৈরি করে দিতে পারে। একইভাবে, কোডিংয়ের ক্ষেত্রেও ডিপসিক কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত সমাধান দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ডিপসিকের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা সংরক্ষণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের সরকার ইতোমধ্যেই ডিপসিকের ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওপেনএআই নিজেও অতীতে অনুমতি ছাড়া মানুষের লেখা ডেটা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারের অভিযোগের মুখে পড়েছিল, যা এখন ডিপসিকের বিরুদ্ধে উঠছে। ডিপসিকের সাফল্যের ফলে এআই চিপের বাজারেও বড় প্রভাব পড়েছে। এনভিডিয়া, যারা উন্নত চিপ তৈরিতে বিশ্বব্যাপী অগ্রগণ্য, তাদের শেয়ারের মূল্য একদিনে প্রায় ১৭% কমে গেছে। কারণ, কম শক্তিশালী হার্ডওয়্যারেও কার্যকর এআই সম্ভব হলে উচ্চমূল্যের উন্নত চিপের বাজার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়, তবে ডিপসিকের উদ্ভাবন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই চীনে উন্নত চিপ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম খরচে ভালো এআই তৈরি হলে মার্কিন প্রযুক্তি খাতেরও লাভ হতে পারে। এই প্রতিযোগিতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎকে আরও উন্নত ও বহুমাত্রিক করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে দ্রুত এবং সাশ্রয়ী সমাধান দরকার, সেখানে হয়তো ডিপসিক এগিয়ে থাকবে, আর যেখানে গবেষণা ও জটিল বিশ্লেষণের প্রয়োজন, সেখানে চ্যাটজিপিটির মতো বৃহৎ মডেলগুলো প্রাধান্য পাবে। শেষ পর্যন্ত, এই প্রতিযোগিতাই হয়তো এআই প্রযুক্তিকে আরও দক্ষ, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী করবে।