টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মাদকবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে—মাদক সেবনের সময় হাতেনাতে চার যুবককে আটক করা হলেও রহস্যজনকভাবে তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মাত্র একজনকে মাদক মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলার রায়ের বাশালিয়া এলাকায়। চারজনকে আটকের পরের দিন শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রিপন শেখ নামে এক যুবককে ২০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে চরবামনহাটা এলাকায় এসআই শরীফ হায়দার আলী ও এএসআই অন্তর কুমার দাসের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় চারজনকে মাদক সেবনের অবস্থায় হাতেনাতে ধরা হলেও তিনজনকে বিভিন্ন তদবিরে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাস্থলে পাওয়া মাদকের পরিমাণ ও মামলায় উল্লেখিত পরিমাণ নিয়েও দেখা দিয়েছে অসঙ্গতি। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভূঞাপুর থানার ফেসবুক পেজে ‘মাদকসহ একজন আটক’ শিরোনামে পোস্ট দেওয়ার পর নানা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন নেটিজেনরা—“হাতেনাতে ধরার পরও তিনজনকে ছেড়ে দিল কেন?”“আইন কি সবার জন্য সমান নয়?”“কার নির্দেশে বা কী বিনিময়ে এ সিদ্ধান্ত?” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বলেন, “মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কঠোর ভূমিকা আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু এমন ঘটনা মানুষের আস্থা নষ্ট করছে।” এ বিষয়ে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এসআই শরীফ হায়দার আলী বলেন, “একসঙ্গে চারজন ছিল ঠিকই, কিন্তু মাদক পাওয়া গেছে কেবল একজনের কাছ থেকে। তাই রিপন শেখের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অন্য তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” ভূঞাপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য দেখার পর এসআইকে জিজ্ঞেস করি। তিনি জানান, তিনজনের কাছে মাদক পাওয়া যায়নি। থানা থেকে মাদকের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করা হয়। তদবিরের কোনো সুযোগ নেই।”তিনি আরও বলেন, “আমি কীভাবে কাজ করি, টাঙ্গাইলের সব সাংবাদিকরা জানেন।” এদিকে পুরো ঘটনাই এখন স্থানীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে—চারজন আটক হয়ে তিনজন মুক্ত, আর একজনের বিরুদ্ধে মামলা—এসব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব জানতে আগ্রহী এলাকাবাসী।
টাঙ্গাইলে চোর সন্দেহে পরকীয়া প্রেমিককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহতের নাম হাসমত উল্লাহ হাসু। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— রাশেদুল ইসলাম (৩৬), গ্রামনাহালি, মহেড়া ইউনিয়ন, মির্জাপুর। ইয়ামিন ইসলাম (৩২), একই গ্রামের বাসিন্দা পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, প্রবাসী রাশেদুল ইসলামের স্ত্রী নিশি বেগমের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে জামালপুরের বকশীগঞ্জের হাসমত উল্লাহর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হাসু টাঙ্গাইল সদরের আইএফআইসি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। রাশেদুল দেশে ফেরার পরও হাসু নিশির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। পরে স্বামী–স্ত্রী মিলে হাসুকে দেখা করতে আসতে বলেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নিশির সঙ্গে দেখা করতে গেলে রাশেদুল, ইয়ামিন ও মেহেদী হাসু কে চোর সন্দেহে মারধর করে গুরুতর আহত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করে। রাত ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহতের ভাই রহমত উল্লাহ ছয়জনকে আসামি করে মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাশেদুল ও ইয়ামিনকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক জাবেদ পারভেজ বলেন, “দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।” মির্জাপুর থানার ওসি মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম জানান, “পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
সাজিদ পিয়াল: টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে অগ্নিসংযোগ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা, গ্রেফতার ৪। টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বাঐখোলা এলাকায় চলন্ত একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।বুধবার (১২ নভেম্বর) রাতে সাড়ে ১২ টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলার বাঐখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাতে বাংলা স্টার নামে যাত্রীবাহী বাস ঢাকা থেকে পাবনার উদ্দেশে যাচ্ছিল। হঠাৎ দুর্বৃত্তরা ওই বাসটিতে আগুন দেয়। এসময় যাত্রীরা দ্রুত বাস থেকে নেমে যান। খবর পেয়ে টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার এস এম হুমায়ূন কার্ণায়েন বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে গ্রেফতার ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন—বাঐখোলা গ্রামের মাসুদ, জুলহাস, কামাল ওরফে তালু এবং বয়রা গ্রামের শহিদ। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (১২ নভেম্বর) রাত সোয়া ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে পাবনাগামী ‘বাংলা স্টার’ পরিবহনের একটি বাস ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কের বাঐখোলা এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা হঠাৎ বাসটিতে আগুন দেয়। বাসের যাত্রীরা দ্রুত নেমে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। পরে স্থানীয় লোকজন ও যাত্রীরা মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে বাসাইল থানা পুলিশ, গোড়াই হাইওয়ে পুলিশ এবং টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে পুড়ে যাওয়া বাসটি রেকারের সহায়তায় গোড়াই হাইওয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অগ্নিসংযোগে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার উদ্দেশ্যে চলন্ত বাসে আগুন ধরানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে গোড়াই হাইওয়ে থানার এসআই মো. ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে বাসাইল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে। বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, “চলন্ত বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর কেউ জড়িত আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির নতুন ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) হলেন মোঃ মনিরুজ্জামান। নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবারে ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অভিজ্ঞ সংবাদকর্মী মোঃ মনিরুজ্জামান। তার দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতা ও নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠানকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা জানান, দুর্নীতি দমন ও সামাজিক অন্যায়-অবিচার তুলে ধরতে মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির কর্মকাণ্ডকে আরও এগিয়ে নেবে। এই উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেনঃ ১️⃣ মোঃ শাহ নেওয়াজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ২️⃣ মোঃ শহিদুল ইসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ৩️⃣ মোঃ মাহমুদুল হাসান, বার্তা সম্পাদক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন— “আমরা মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি। তার প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবার অচিরেই আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।”
মাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৩৩৪তম পর্বে নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে নিয়ামত কমে যাবে কি না, সে বিষয়ে ঢাকা থেকে চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন একজন দর্শক। অনুলিখন করেছেন জান্নাত আরা পাপিয়া। প্রশ্ন : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে কি নিয়ামত কমে যাবে? উত্তর : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা কুফরি। এটা বড় কুফরি না, ছোট কুফরি। যদি আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কুফরি কাজ করে থাকলেন। এ জন্য আল্লাহ কোরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো, আমার সঙ্গে কুফরি করো না।’ আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন, আল্লাহর নিয়ামত লাভ করে সুন্দর জীবনযাপন করা, এটা যদি কেউ আল্লাহর কাছে সত্যিকার অর্থে তুলে ধরতে না পারে, তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া করলেন না, কুফরি করলেন। এই জন্য আল্লাহ সুরা দোহার শেষ আয়াতে বলেছেন, ‘তুমি তোমার রবের নিয়ামত প্রকাশ করো। কারণ, তোমার কাছে যখন নিয়ামত আসছে, তখন আল্লাহ পছন্দ করেন যে তুমি আল্লাহর এই নিয়ামতের বিষয়টি তুলে ধরবে।’ আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহ আমাকে এই নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ নিয়ামতকে বান্দার কাছে তুলে ধরার জন্য বলেছেন, বহিঃপ্রকাশ করার জন্য বলেছেন। বহিঃপ্রকাশ দুই ধরনের হতে পারে। একটি হলো নিয়ামতের ব্যবহারের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, নিয়ামতের বিষয়টি হলো মানুষের কাছে নিয়ামত তুলে ধরবে। যাতে করে আল্লাহর প্রশংসা প্রকাশ পায়। নিয়ামতের শুকরিয়া যদি কেউ আদায় না করেন, তাহলে কুফরি হবে। আল্লাহ বলেছেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করে থাক, তাহলে আমি আরো বৃদ্ধি করে দেব। বান্দারা যখন নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে, তখন আল্লাহ আরো নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করে দেন। আর যদি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা হয়, তাহলে আল্লাহ নিয়ামত কমিয়ে দেবেন এবং সেইসঙ্গে আরেকটি কঠিন বাণী আল্লাহ বলেছেন, ‘জেনে রাখো আল্লাহর কঠিন আজাবও তোমাদের জন্য অবধারিত থাকবে।’ নিয়ামতের শুকরিয়া শুধু মুখে আদায় করা যথেষ্ট নয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর শুকরিয়া আমলের মাধ্যমে আদায় করো।’ সুতরাং বান্দারা শুকরিয়া আদায় করবে। শুকরিয়ার অনেকগুলো দিক রয়েছে, তার মধ্যে আমলের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা হলো শুকরিয়ার সর্বোচ্চ স্তর।
তিনি ছিলেন মানবজাতির আদর্শ। তিনি অত্যন্ত উদার ও বিনয়ী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং একজন সাহসী যোদ্ধা। এছাড়াও তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক এবং একজন সফল প্রচারক ছিলেন। তিনিই উত্তম চরিত্র ও উদারতার একমাত্র উৎস। তিনি সকলের আদর্শহীন এবং প্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার প্রেমে, দুনিয়া মাতাল। তিনি আমার আদর্শ, তিনি আমার নেতা। তিনি আমার নবী, আমাদের নবী এবং সকলের নবী। তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। সমস্ত মানবজাতির জন্য করুণা। অন্ধকারে নিমজ্জিত বিশ্বের মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে। তার অসাধারণ চরিত্র, মাধুর্য এবং অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব সবাইকে অবাক করেছে। মুমিনের চঞ্চল হৃদয় তাকে এক নজর দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকে। কবি কাজী নজরুল বলেছেন: “বিচ্ছেদের রাত ছিল একাকার কান্নার ভোর; আমার মনে শান্তি নেই, আমি কাঁদছি। হে মদিনাবাসীর প্রেমিক, আমার হাত ধর।" তার নিষ্কলুষ চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।" (সূরা আল-আহজাব, আয়াত 21)। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে আজ কিছু লোক সেই নবীর সম্মানকে অবমাননা করছে। হৃদয় ভেঙ্গে যায়। আমাদের ক্ষমা করুন, হে নবী! তিনি তার অবিস্মরণীয় ক্ষমা, উদারতা, সততা, নম্রতা প্রভৃতির বিরল মুগ্ধতা দিয়ে বর্বর আরব জাতির আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এজন্য তারা তাকে ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তারা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকার করেছিল যে তিনি নম্র এবং গুণী ছিলেন। টাকা দিয়ে নয়, ভালো ব্যবহার দিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে জয় করেছেন। আল্লাহ তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মহৎ চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা আল কালাম, আয়াত ৪)। তিনি কখনো মানুষকে তুচ্ছ করেননি। আত্মসম্মানবোধে তিনি কাউকে তুচ্ছ মনে করেননি। তিনি বিশ্বের হৃদয়ে উচ্চতর চরিত্রের একটি অনুপম মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। নম্রতা তার চরিত্রে সর্বদা উপস্থিত ছিল। পৃথিবীর মানবতার কল্যাণে তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল শ্রেষ্ঠ আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে আমার উত্তম চরিত্র পূর্ণ করার জন্য প্রেরিত করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত) ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বিনয়ী এবং আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয়ী। দুর্বল ব্যক্তিকে কড়া কথায় আঘাত করবেন না। তিনি কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অসাধ্য সাধন করতে বাধ্য করেননি। গরিব-অসহায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। তিনি লোকদেরকে তাদের আচরণে অপ্রয়োজনীয় রাগ ও রাগ থেকে সর্বদা বিরত থাকার উপদেশ দিতেন এবং মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উঁচু করে দেন এবং যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করেন।” (মিশকাত) কাফেররাও তার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে সদয় ও নম্র আচরণ পেয়েছিল। তার অনুসারীরা তাকে উচ্চ সম্মানের সাথে ধরেছিল কারণ তিনি খুব নমনীয় এবং নম্র ছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) তার ভদ্র আচার-আচরণ সম্পর্কে বলেন, ‘নবী (সা.) রূঢ় বক্তা ছিলেন না, প্রয়োজনের সময়ও তিনি কঠোর ভাষা ব্যবহার করতেন না। প্রতিহিংসা তার সাথে ছিল না মোটেও। মন্দের বিনিময়ে ভালোই করেছেন। সব ক্ষেত্রেই তিনি ক্ষমা পছন্দ করতেন। তিনি লোকদেরকে উপদেশ দিয়েছিলেন, “আল্লাহর ইবাদত কর, করুণাময় প্রভু, ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, সালাম দাও এবং এসব কাজের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি উত্তর দিলেন, "ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং অপরিচিত সকলকে সালাম করা।" (বুখারী ও মুসলিম)। মহানবী (সা.)-এর মর্যাদাকে সম্মান করা মুসলমানদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের মৌলিক অংশ।
নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৯২৯তম পর্বে ই-মেইলের মাধ্যমে কানিজ নাহার দিপা জানতে চেয়েছেন, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? অনুলিখন করেছেন মোহাম্মদ সাইফ আহমেদ। প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? উত্তর : না দোয়ার জন্য আলাদা কোনো মাহফিল নেই। এটা আসবে কেন? আমরা একটা জায়গা থেকে বাঁচার জন্য আরেকটি কাজ করছি। কিন্তু সেই কাজটি ভুল করে আরও বড় ভুলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আমাদের সমাজে একটি প্রথা একেবারে ছেয়ে গেছে। যেমন—একজন মারা গেলে তার জন্য মিলাদ-মাহফিল করা কিংবা কূলখানি করা। কিন্তু এগুলো সবই বেদআতি কাজ। এগুলো সঠিক কাজ নয়। অনেকে মনে করছে, দোয়া-মাহফিল করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা একদমই নয়। এসব ইসলামে অনুমোদন দেয়নি। এইগুলো পুরোটাই বেদআত। মানুষ চাইলে যে কোনো সময় কিংবা যে কোনো জায়গা থেকে দোয়া করতে পারবেন। দোয়ার সঙ্গে মাহফিল কিংবা আলাদা কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ঘোষণা করা জায়েজ নেই। আশা করি, আপনি বুঝতে পেরেছেন।
র্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি ও চীনের ডিপসিকের মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতার নয়, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চ্যাটজিপিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্লগ লেখা, গবেষণা, প্রোগ্রামিংসহ নানান কাজে অপরিহার্য টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি চীনের তৈরি ডিপসিক এআই জগতে নতুন আলোড়ন তুলেছে। তারা দাবি করছে, তুলনামূলক কম চিপ ব্যবহার করেই অত্যাধুনিক এআই সেবা দেওয়া সম্ভব, যেখানে ওপেনএআই-এর বিশাল মডেলগুলোর জন্য ১৬,০০০ বা তারও বেশি চিপ প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ২০০০ চিপ দিয়ে ডিপসিক কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম। দুই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। ✅ চ্যাটজিপিটি: বিস্তৃত বিশ্লেষণ ও গভীর গবেষণা উপস্থাপন করতে পারে, যা একাডেমিক ও জটিল সমস্যার সমাধানে সহায়ক। ✅ ডিপসিক: দ্রুত এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে পারে, যা তাৎক্ষণিক ফলাফল প্রত্যাশী ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী। লেখালেখির ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি কেবল ধারণা ও প্লটের কাঠামো গড়ে তোলে, যেখানে ডিপসিক প্রায় পুরো গল্প তৈরি করে দিতে পারে। একইভাবে, কোডিংয়ের ক্ষেত্রেও ডিপসিক কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত সমাধান দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ডিপসিকের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা সংরক্ষণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের সরকার ইতোমধ্যেই ডিপসিকের ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওপেনএআই নিজেও অতীতে অনুমতি ছাড়া মানুষের লেখা ডেটা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারের অভিযোগের মুখে পড়েছিল, যা এখন ডিপসিকের বিরুদ্ধে উঠছে। ডিপসিকের সাফল্যের ফলে এআই চিপের বাজারেও বড় প্রভাব পড়েছে। এনভিডিয়া, যারা উন্নত চিপ তৈরিতে বিশ্বব্যাপী অগ্রগণ্য, তাদের শেয়ারের মূল্য একদিনে প্রায় ১৭% কমে গেছে। কারণ, কম শক্তিশালী হার্ডওয়্যারেও কার্যকর এআই সম্ভব হলে উচ্চমূল্যের উন্নত চিপের বাজার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়, তবে ডিপসিকের উদ্ভাবন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই চীনে উন্নত চিপ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম খরচে ভালো এআই তৈরি হলে মার্কিন প্রযুক্তি খাতেরও লাভ হতে পারে। এই প্রতিযোগিতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎকে আরও উন্নত ও বহুমাত্রিক করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে দ্রুত এবং সাশ্রয়ী সমাধান দরকার, সেখানে হয়তো ডিপসিক এগিয়ে থাকবে, আর যেখানে গবেষণা ও জটিল বিশ্লেষণের প্রয়োজন, সেখানে চ্যাটজিপিটির মতো বৃহৎ মডেলগুলো প্রাধান্য পাবে। শেষ পর্যন্ত, এই প্রতিযোগিতাই হয়তো এআই প্রযুক্তিকে আরও দক্ষ, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী করবে।