বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ ও বানান চর্চা জাতিসত্তার ভিত্তি’ — প্রধান অতিথি মনছুরুল আলম হীরা গৌরাঙ্গ বিশ্বাস,বিশেষ প্রতিনিধি যে জাতি তার ভাষাকে শুদ্ধভাবে ভালোবাসতে শেখে, সেই জাতি কখনোই পরাধীন থাকে না”— এমন আহ্বান জানিয়ে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও ফুলতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. মুনছুরুল আলম হীরা বলেছেন, এই বিদ্যালয় আমার স্বপ্ন দেখার সূতিকাগার। এখানে আমি শিখেছি কীভাবে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা মানুষকে চিন্তাশীল, শিকড়সচেতন এবং জ্ঞানসমৃদ্ধ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। শুদ্ধ বানান ও উচ্চারণ কেবল ভাষাগত দক্ষতা নয়, এটি সাংস্কৃতিক দায়িত্বও বটে। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ফুলতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় ‘সর্বস্তরে বাংলা ভাষা: শুদ্ধ বানান ও উচ্চারণ চর্চা’ শীর্ষক কর্মশালা এবং মুক্ত পাঠাগার উদ্বোধন অনুষ্ঠান। ‘ছায়ানীড়’ এর উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মশালায় স্থানীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি অঙ্গনের নানা ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছায়ানীড়ের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও প্রশাসনিক পরিচালক শাহানাজ রহমান। সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অব.) মো. শাহীনুর ইসলাম, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কালিহাতী শাখার সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক শাহ আলম, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. জহুরুল হক সিদ্দিকী, সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল হক, এবং সাবেক সিনিয়র শিক্ষক মিজানুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ভাষা-দক্ষতা গড়ে তুলতে এ কর্মশালা ও পাঠাগার একটি মাইলফলক হবে। শিক্ষার্থীরা যেন শুদ্ধ উচ্চারণ ও বানানে বাংলা ভাষা ব্যবহার করে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। ছায়ানীড়’-এর প্রশাসনিক পরিচালক শাহানাজ রহমান কর্মশালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, আমরা চাই শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষাকে শুধু পাঠ্যবইয়ের সীমায় না রেখে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মর্যাদার সঙ্গে ব্যবহার করুক। মুক্ত পাঠাগার সেই চর্চার দ্বার খুলে দেবে। দিনব্যাপী আয়োজিত এই কর্মশালায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও স্থানীয় সাহিত্যপ্রেমী, সাংবাদিক, অভিভাবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। বাংলা ভাষার শুদ্ধতা রক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে এই আয়োজন উপস্থিত সবার মধ্যে গভীর প্রশংসা কুড়ায়।
আধ্যাত্মিক সাধক ও ফকির দর্শনের প্রবর্তক মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজির ১৩৫তম তিরোধান দিবস সরকারি স্বীকৃতির অংশ হিসেবে সারাদেশের মতো টাঙ্গাইলের কালিহাতীতেও গভীর শ্রদ্ধা, ভাবগাম্ভীর্য ও ভক্তির আবেশে পালিত হয়েছে। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দিনব্যাপী নানা আধ্যাত্মিক আয়োজনে কেন্দ্রীয় সাধু সংঘ দিবসটি পালন করে। ভোরের আলো ফোটার আগেই সংঘের প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে ভক্ত, বাউল ও সাধুসন্তদের পদচারণায়। চারদিকে ভেসে আসে একের পর এক লালনগীতির সুর। সুরের তরঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে মানবতার মর্মবাণী, প্রেম ও ঐক্যের বার্তা। দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, আধ্যাত্মিক বক্তব্য, মধ্যাহ্নভোজ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধু সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কালিহাতী শাখার সভাপতি, সিনিয়র সাংবাদিক শাহ আলম। সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় সাধু সংঘের সভাপতি হরিমোহন পাল। এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান লেলিন, প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ইদ্রিস আলী, স্থানীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার সামসুল আলম ফকির, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাংবাদিক গৌরাঙ্গ বিশ্বাস, সাংবাদিক আতোয়ার রহমান, সাংবাদিক শুভ্র মজুমদারসহ স্থানীয় সমাজসেবক ও অসংখ্য বাউল–ভক্তবৃন্দ। বক্তারা বলেন, লালন সাঁইজি ছিলেন মানবতার মহান দার্শনিক, যিনি জাত, ধর্ম, বর্ণের ভেদরেখা মুছে মানুষে মানুষে ভালোবাসা, সাম্য ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। দিনব্যাপী এই আয়োজনে আশপাশের অঞ্চল থেকে আগত সাধু, বাউল ও লালনভক্তদের মিলনে কেন্দ্রীয় সাধু সংঘের প্রাঙ্গণ পরিণত হয় এক মহামিলনমেলায়। আধ্যাত্মিক ভাব, সঙ্গীত ও মানবতার আলোয় উদ্ভাসিত এ তিরোধান দিবসের সমাপ্তি ঘটে লালনের চিরন্তন বাণীতে 'মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।'
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে এক বাক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইসমাইল হোসেন (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার সৃষ্টি হয়েছে। মামলার পর থেকে পলাতক থাকা ইসমাইলকে শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল র্যাব-১২ এর সিপিসি-৩ সদস্যরা মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে নাছির গ্রুপ কোম্পানি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাক প্রতিবন্ধী ১৮ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে গত মার্চ মাসে একাধিকবার ধর্ষণ করে ইসমাইল। ভয়ে কিশোরী বিষয়টি কাউকে জানায়নি। পরবর্তীতে শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলে পরিবার সন্দেহ করে এবং লিখে ও ইশারায় মেয়েটি ঘটনার বিস্তারিত জানায়। ভুক্তভোগীর বাবা জানান, আমাদের বোবা মেয়েটি এসএসসি পাস করেছে। বড় হয়ে কিছু করার স্বপ্ন ছিল তার। সেই স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে ইসমাইল। সে আমাদের সম্মানও নষ্ট করেছে। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে কালিহাতী থানায় মামলা দায়ের করেন। কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, মামলার পর মেয়েটির মেডিকেল পরীক্ষা ও আদালতে জবানবন্দির ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রেফতার আসামিকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সহপাঠী, প্রতিবেশী ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। কালিহাতী উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক নীরু ব্যানার্জি ও সদস্য সচিব মানিক ভট্টাচার্য বলেন,এ ধরনের জঘন্য অপরাধ সমাজে ভয়াবহ বার্তা দেয়। তাই আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। গ্রেফতারে সন্তোষ প্রকাশ করে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কেন্দ্রীয় নেতা গৌরাঙ্গ বিশ্বাস বলেন, অবশেষে আইন তার নিজস্ব গতিতে কাজ করছে দেখে আমরা স্বস্তি পেয়েছি। এই ঘটনার ন্যায়বিচার যেন দ্রুত নিশ্চিত হয়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কালিহাতী উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাংবাদিক শাহ আলম বলেন, একজন প্রতিবন্ধী কিশোরীর প্রতি এমন পাশবিক আচরণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আমরা চাই, এই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হোক এবং অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। ইসমাইলের গ্রেফতারের খবরে নারান্দিয়া এলাকায় স্বস্তি ও আনন্দের বন্যা বইছে। স্থানীয়রা মিষ্টি বিতরণ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন— ন্যায়বিচার পেলে সমাজে শান্তি ফিরবে। যেন আর কোনো মেয়ে এমন নির্যাতনের শিকার না হয়।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, কালিহাতী উপজেলা শাখার নতুন কমিটির পরিচিতি ও আইডি কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠান গত ১৪ সেপ্টেম্বর রোববার সন্ধ্যা ৬টায় উপজেলা পরিষদের কন্ফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কালিহাতী উপজেলা শাখার সভাপতি শাহ আলম এবং পরিচালনা সংগঠনের সাধারন সম্পাদক আনন্দ মহন দত্ত। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খায়রুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কালিহাতী থানার ওসি তদন্ত মোঃশরিফুল ইসলাম শরিফ, ফেরদৌস আলম ফিরোজ কলেজের অধ্যক্ষ শাজাহান কবির, কালিহাতী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গৌরাঙ্গ বিশ্বাস ও মীর আনোয়ার হোসেন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সোহেল রানা।। অন্যান্যের মধ্য বক্তব্য রাখেন,, সহ সভাপতি গোবিন্দ চন্দ সাহা, মিজানুর রহমান, শফিউর রহমান খান শাফি,মাসুদুর রহমান বালা, আব্দুল বারেক, শামীম প্রামাণিক, জাকির হোসেন জিন্নাহ, শফিকুল ইসলাম, রাশিদা খানম প্রমুখ। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “মানবাধিকার সংরক্ষণ শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ নয়, এর বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মানবিক মূল্যবোধ চর্চার মধ্য দিয়েই একটি সুস্থ সমাজ গড়ে ওঠে।” বিশেষ অতিথি সায়েদা খানম লিজা বলেন, “জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।” অন্য বিশেষ অতিথি মোঃ শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেমন পুলিশের ভূমিকা আছে, তেমনি মানবাধিকার সচেতনতা সমাজে অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।” সভাপতি শাহ আলম বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানবাধিকার সুরক্ষা ও সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। উপজেলা শাখার নবগঠিত কমিটি সে লক্ষ্যেই কাজ করবে।” পরে অতিথিবৃন্দ নতুন কমিটির সদস্যদের হাতে পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির নতুন ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) হলেন মোঃ মনিরুজ্জামান। নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবারে ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অভিজ্ঞ সংবাদকর্মী মোঃ মনিরুজ্জামান। তার দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতা ও নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠানকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা জানান, দুর্নীতি দমন ও সামাজিক অন্যায়-অবিচার তুলে ধরতে মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির কর্মকাণ্ডকে আরও এগিয়ে নেবে। এই উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেনঃ ১️⃣ মোঃ শাহ নেওয়াজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ২️⃣ মোঃ শহিদুল ইসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ৩️⃣ মোঃ মাহমুদুল হাসান, বার্তা সম্পাদক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন— “আমরা মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি। তার প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবার অচিরেই আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।”
মাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৩৩৪তম পর্বে নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে নিয়ামত কমে যাবে কি না, সে বিষয়ে ঢাকা থেকে চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন একজন দর্শক। অনুলিখন করেছেন জান্নাত আরা পাপিয়া। প্রশ্ন : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে কি নিয়ামত কমে যাবে? উত্তর : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা কুফরি। এটা বড় কুফরি না, ছোট কুফরি। যদি আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কুফরি কাজ করে থাকলেন। এ জন্য আল্লাহ কোরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো, আমার সঙ্গে কুফরি করো না।’ আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন, আল্লাহর নিয়ামত লাভ করে সুন্দর জীবনযাপন করা, এটা যদি কেউ আল্লাহর কাছে সত্যিকার অর্থে তুলে ধরতে না পারে, তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া করলেন না, কুফরি করলেন। এই জন্য আল্লাহ সুরা দোহার শেষ আয়াতে বলেছেন, ‘তুমি তোমার রবের নিয়ামত প্রকাশ করো। কারণ, তোমার কাছে যখন নিয়ামত আসছে, তখন আল্লাহ পছন্দ করেন যে তুমি আল্লাহর এই নিয়ামতের বিষয়টি তুলে ধরবে।’ আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহ আমাকে এই নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ নিয়ামতকে বান্দার কাছে তুলে ধরার জন্য বলেছেন, বহিঃপ্রকাশ করার জন্য বলেছেন। বহিঃপ্রকাশ দুই ধরনের হতে পারে। একটি হলো নিয়ামতের ব্যবহারের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, নিয়ামতের বিষয়টি হলো মানুষের কাছে নিয়ামত তুলে ধরবে। যাতে করে আল্লাহর প্রশংসা প্রকাশ পায়। নিয়ামতের শুকরিয়া যদি কেউ আদায় না করেন, তাহলে কুফরি হবে। আল্লাহ বলেছেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করে থাক, তাহলে আমি আরো বৃদ্ধি করে দেব। বান্দারা যখন নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে, তখন আল্লাহ আরো নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করে দেন। আর যদি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা হয়, তাহলে আল্লাহ নিয়ামত কমিয়ে দেবেন এবং সেইসঙ্গে আরেকটি কঠিন বাণী আল্লাহ বলেছেন, ‘জেনে রাখো আল্লাহর কঠিন আজাবও তোমাদের জন্য অবধারিত থাকবে।’ নিয়ামতের শুকরিয়া শুধু মুখে আদায় করা যথেষ্ট নয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর শুকরিয়া আমলের মাধ্যমে আদায় করো।’ সুতরাং বান্দারা শুকরিয়া আদায় করবে। শুকরিয়ার অনেকগুলো দিক রয়েছে, তার মধ্যে আমলের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা হলো শুকরিয়ার সর্বোচ্চ স্তর।
তিনি ছিলেন মানবজাতির আদর্শ। তিনি অত্যন্ত উদার ও বিনয়ী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং একজন সাহসী যোদ্ধা। এছাড়াও তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক এবং একজন সফল প্রচারক ছিলেন। তিনিই উত্তম চরিত্র ও উদারতার একমাত্র উৎস। তিনি সকলের আদর্শহীন এবং প্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার প্রেমে, দুনিয়া মাতাল। তিনি আমার আদর্শ, তিনি আমার নেতা। তিনি আমার নবী, আমাদের নবী এবং সকলের নবী। তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। সমস্ত মানবজাতির জন্য করুণা। অন্ধকারে নিমজ্জিত বিশ্বের মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে। তার অসাধারণ চরিত্র, মাধুর্য এবং অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব সবাইকে অবাক করেছে। মুমিনের চঞ্চল হৃদয় তাকে এক নজর দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকে। কবি কাজী নজরুল বলেছেন: “বিচ্ছেদের রাত ছিল একাকার কান্নার ভোর; আমার মনে শান্তি নেই, আমি কাঁদছি। হে মদিনাবাসীর প্রেমিক, আমার হাত ধর।" তার নিষ্কলুষ চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।" (সূরা আল-আহজাব, আয়াত 21)। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে আজ কিছু লোক সেই নবীর সম্মানকে অবমাননা করছে। হৃদয় ভেঙ্গে যায়। আমাদের ক্ষমা করুন, হে নবী! তিনি তার অবিস্মরণীয় ক্ষমা, উদারতা, সততা, নম্রতা প্রভৃতির বিরল মুগ্ধতা দিয়ে বর্বর আরব জাতির আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এজন্য তারা তাকে ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তারা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকার করেছিল যে তিনি নম্র এবং গুণী ছিলেন। টাকা দিয়ে নয়, ভালো ব্যবহার দিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে জয় করেছেন। আল্লাহ তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মহৎ চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা আল কালাম, আয়াত ৪)। তিনি কখনো মানুষকে তুচ্ছ করেননি। আত্মসম্মানবোধে তিনি কাউকে তুচ্ছ মনে করেননি। তিনি বিশ্বের হৃদয়ে উচ্চতর চরিত্রের একটি অনুপম মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। নম্রতা তার চরিত্রে সর্বদা উপস্থিত ছিল। পৃথিবীর মানবতার কল্যাণে তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল শ্রেষ্ঠ আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে আমার উত্তম চরিত্র পূর্ণ করার জন্য প্রেরিত করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত) ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বিনয়ী এবং আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয়ী। দুর্বল ব্যক্তিকে কড়া কথায় আঘাত করবেন না। তিনি কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অসাধ্য সাধন করতে বাধ্য করেননি। গরিব-অসহায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। তিনি লোকদেরকে তাদের আচরণে অপ্রয়োজনীয় রাগ ও রাগ থেকে সর্বদা বিরত থাকার উপদেশ দিতেন এবং মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উঁচু করে দেন এবং যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করেন।” (মিশকাত) কাফেররাও তার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে সদয় ও নম্র আচরণ পেয়েছিল। তার অনুসারীরা তাকে উচ্চ সম্মানের সাথে ধরেছিল কারণ তিনি খুব নমনীয় এবং নম্র ছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) তার ভদ্র আচার-আচরণ সম্পর্কে বলেন, ‘নবী (সা.) রূঢ় বক্তা ছিলেন না, প্রয়োজনের সময়ও তিনি কঠোর ভাষা ব্যবহার করতেন না। প্রতিহিংসা তার সাথে ছিল না মোটেও। মন্দের বিনিময়ে ভালোই করেছেন। সব ক্ষেত্রেই তিনি ক্ষমা পছন্দ করতেন। তিনি লোকদেরকে উপদেশ দিয়েছিলেন, “আল্লাহর ইবাদত কর, করুণাময় প্রভু, ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, সালাম দাও এবং এসব কাজের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি উত্তর দিলেন, "ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং অপরিচিত সকলকে সালাম করা।" (বুখারী ও মুসলিম)। মহানবী (সা.)-এর মর্যাদাকে সম্মান করা মুসলমানদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের মৌলিক অংশ।
নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৯২৯তম পর্বে ই-মেইলের মাধ্যমে কানিজ নাহার দিপা জানতে চেয়েছেন, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? অনুলিখন করেছেন মোহাম্মদ সাইফ আহমেদ। প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? উত্তর : না দোয়ার জন্য আলাদা কোনো মাহফিল নেই। এটা আসবে কেন? আমরা একটা জায়গা থেকে বাঁচার জন্য আরেকটি কাজ করছি। কিন্তু সেই কাজটি ভুল করে আরও বড় ভুলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আমাদের সমাজে একটি প্রথা একেবারে ছেয়ে গেছে। যেমন—একজন মারা গেলে তার জন্য মিলাদ-মাহফিল করা কিংবা কূলখানি করা। কিন্তু এগুলো সবই বেদআতি কাজ। এগুলো সঠিক কাজ নয়। অনেকে মনে করছে, দোয়া-মাহফিল করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা একদমই নয়। এসব ইসলামে অনুমোদন দেয়নি। এইগুলো পুরোটাই বেদআত। মানুষ চাইলে যে কোনো সময় কিংবা যে কোনো জায়গা থেকে দোয়া করতে পারবেন। দোয়ার সঙ্গে মাহফিল কিংবা আলাদা কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ঘোষণা করা জায়েজ নেই। আশা করি, আপনি বুঝতে পেরেছেন।
র্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি ও চীনের ডিপসিকের মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতার নয়, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চ্যাটজিপিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্লগ লেখা, গবেষণা, প্রোগ্রামিংসহ নানান কাজে অপরিহার্য টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি চীনের তৈরি ডিপসিক এআই জগতে নতুন আলোড়ন তুলেছে। তারা দাবি করছে, তুলনামূলক কম চিপ ব্যবহার করেই অত্যাধুনিক এআই সেবা দেওয়া সম্ভব, যেখানে ওপেনএআই-এর বিশাল মডেলগুলোর জন্য ১৬,০০০ বা তারও বেশি চিপ প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ২০০০ চিপ দিয়ে ডিপসিক কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম। দুই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। ✅ চ্যাটজিপিটি: বিস্তৃত বিশ্লেষণ ও গভীর গবেষণা উপস্থাপন করতে পারে, যা একাডেমিক ও জটিল সমস্যার সমাধানে সহায়ক। ✅ ডিপসিক: দ্রুত এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে পারে, যা তাৎক্ষণিক ফলাফল প্রত্যাশী ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী। লেখালেখির ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি কেবল ধারণা ও প্লটের কাঠামো গড়ে তোলে, যেখানে ডিপসিক প্রায় পুরো গল্প তৈরি করে দিতে পারে। একইভাবে, কোডিংয়ের ক্ষেত্রেও ডিপসিক কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত সমাধান দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ডিপসিকের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা সংরক্ষণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের সরকার ইতোমধ্যেই ডিপসিকের ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওপেনএআই নিজেও অতীতে অনুমতি ছাড়া মানুষের লেখা ডেটা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারের অভিযোগের মুখে পড়েছিল, যা এখন ডিপসিকের বিরুদ্ধে উঠছে। ডিপসিকের সাফল্যের ফলে এআই চিপের বাজারেও বড় প্রভাব পড়েছে। এনভিডিয়া, যারা উন্নত চিপ তৈরিতে বিশ্বব্যাপী অগ্রগণ্য, তাদের শেয়ারের মূল্য একদিনে প্রায় ১৭% কমে গেছে। কারণ, কম শক্তিশালী হার্ডওয়্যারেও কার্যকর এআই সম্ভব হলে উচ্চমূল্যের উন্নত চিপের বাজার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়, তবে ডিপসিকের উদ্ভাবন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই চীনে উন্নত চিপ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম খরচে ভালো এআই তৈরি হলে মার্কিন প্রযুক্তি খাতেরও লাভ হতে পারে। এই প্রতিযোগিতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎকে আরও উন্নত ও বহুমাত্রিক করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে দ্রুত এবং সাশ্রয়ী সমাধান দরকার, সেখানে হয়তো ডিপসিক এগিয়ে থাকবে, আর যেখানে গবেষণা ও জটিল বিশ্লেষণের প্রয়োজন, সেখানে চ্যাটজিপিটির মতো বৃহৎ মডেলগুলো প্রাধান্য পাবে। শেষ পর্যন্ত, এই প্রতিযোগিতাই হয়তো এআই প্রযুক্তিকে আরও দক্ষ, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী করবে।