হোয়াটসঅ্যাপ কি গোপন তথ্য সংগ্রহে যুক্তরাষ্ট্রের হাতিয়ার?

মার্কিন টেক জায়ান্ট মেটার মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপটি বার্তা প্রেরণে এনক্রিপশন সুবিধা প্রদান করলেও, এর গোপনীয়তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন উঠছে। এনক্রিপশন থাকা সত্ত্বেও প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং মেটাডেটা সংগ্রহ করে থাকে—যা মার্কিন সরকার ও সামরিক বাহিনীর নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সূত্র।
মেটার CTO এখন মার্কিন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা!
পার্সটুডের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মেটার প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (CTO) অ্যান্ড্রু বোসওয়ার্থ ২০২৫ সালের জুন মাসে মার্কিন সেনাবাহিনীর ‘ডিটাচমেন্ট ২০১’ ইউনিটে মেজর পদে যোগ দিয়েছেন।
এই ইউনিটে OpenAI, Palantir-এর মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) এবং নজরদারি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা হয়। বোসওয়ার্থ তার শপথে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি "যেকোনো উপায়ে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করবেন।"
হোয়াটসঅ্যাপকে ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ’ অ্যাপ চিহ্নিত করেছে মার্কিন কংগ্রেস
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, মার্কিন কংগ্রেসের সাইবার সিকিউরিটি অফিস হোয়াটসঅ্যাপকে ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ’ অ্যাপ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারা সরকারি কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপের পরিবর্তে Microsoft Teams, Signal, iMessage, FaceTime কিংবা Wickr ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে—
🔺 বিদেশি সংস্থার প্রবেশাধিকারের ঝুঁকি
🔺 এনক্রিপশনের দুর্বলতা
🔺 ডেটা সুরক্ষা নীতির স্বচ্ছতার অভাব
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রিলেটেড নিউজ
হোয়াটসঅ্যাপের এনক্রিপশন কি আদৌ নিরাপদ?
হোয়াটসঅ্যাপ মূল বার্তাসমূহ এনক্রিপ্ট করলেও মেটাডেটা (যেমন বার্তা প্রেরকের নাম, সময়, অবস্থান ইত্যাদি) সংরক্ষণ করে।
বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন তথ্য ফাঁসকারী এডওয়ার্ড স্নোডেন এই মেটাডেটাকে ‘নজরদারির সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কেমন তথ্য সংগ্রহ করে হোয়াটসঅ্যাপ?
হোয়াটসঅ্যাপ শুধু বার্তা নয়, বরং ব্যবহারকারীর —
📱 ফোন নম্বর
📷 প্রোফাইল ছবি
📇 কন্টাক্ট লিস্ট
👥 গ্রুপ তথ্য
📱 ডিভাইস মডেল
🛠️ অপারেটিং সিস্টেম
🌐 ভাষা
📍 GPS লোকেশন
সংগ্রহ করে এবং এইসব তথ্য মেটার অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের সাথে শেয়ার করে।
NSA, PRISM ও মার্কিন নজরদারি ইতিহাস
স্নোডেন ফাঁস করা তথ্যে দেখা যায়, Google, Apple, Microsoft ও Facebook দীর্ঘদিন NSA-এর PRISM প্রোগ্রামের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ডেটা সরবরাহ করেছে। যদিও সেই সময় মেটা হোয়াটসঅ্যাপের মালিক ছিল না, তবুও এই ইতিহাস ব্যবহারকারীদের আস্থায় ধাক্কা দিয়েছে।
এর পাশাপাশি CLOUD Act মার্কিন সরকারকে বিদেশে সংরক্ষিত তথ্যেও প্রবেশাধিকার দেয়—যা আন্তর্জাতিক গোপনীয়তার ওপর বড় প্রশ্ন তোলে।
Pegasus স্ক্যান্ডাল: হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তা ভেঙে পড়েছিল
২০১৯ সালে ইসরাইলি স্পাইওয়্যার Pegasus হোয়াটসঅ্যাপের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে বহু ব্যবহারকারীর ফোনে অনুপ্রবেশ করে। হোয়াটসঅ্যাপ এই ঘটনায় NSO-এর বিরুদ্ধে মামলা করলেও এটি স্পষ্ট করে দেয়, এনক্রিপশন প্রযুক্তি শতভাগ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
২০২১ সালের গোপনীয়তা নীতিমালা বিতর্ক
হোয়াটসঅ্যাপের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবহারকারীদের অধিকতর ডেটা শেয়ার করতে বাধ্য করা হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ফরাসি আইনজীবী আর্থার মেসাউড এটিকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেন।
এরপর লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী Signal-এ চলে যায়—এমনকি ইলন মাস্ক পর্যন্ত টুইট করে Signal ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
ডিজিটাল স্বাধীনতার জন্য হুমকি
হার্ভার্ডের গবেষক ক্রিস্টিন ক্লেমেন্টস ও EFF-এর লারা ওয়ং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহকে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা ও স্বাধীনতার জন্য বড় হুমকি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
🔚 উপসংহার:
হোয়াটসঅ্যাপ যতই ব্যবহার উপযোগী হোক না কেন, এর পেছনে রয়েছে গভীর নজরদারি, ডেটা সংগ্রহ ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার একটি জটিল নেটওয়ার্ক।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে, যারা ডিজিটাল গোপনীয়তা রক্ষা করতে চান, তাদের জন্য বিকল্প অ্যাপ ব্যবহারের পরামর্শই যুক্তিযুক্ত।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন