তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে যে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশজুড়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজনে সাদপন্থী ও আলমীপন্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের পর্যায়ে গিয়ে গত বুধবার অন্তত তিনজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে একটি দেশী-বিদেশী চক্র দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে।
গাজীপুরের টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন ঘিরে সাদপন্থী ও আলমীপন্থীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। সংঘর্ষের ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন পুরো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে এবং ইজতেমার আয়োজন সাময়িক স্থগিত রাখার সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে ব্যবসায়ী ও চলচ্চিত্র পরিচালক অনন্ত এম এ জলিল এবং মুফতি ওসামার নাম উঠে এসেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, তারা বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন এবং একাধিকবার ইসরাইল সফর করেছেন। এই সফরগুলোর সময় তারা বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে অনন্ত জলিল ও মুফতি ওসামা ইসরাইল সফর করেন। সেখানে তারা মোসাদের প্রধানের সাথে দেখা করেন বলে দাবি করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে একটি বৃহৎ চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা বিশ্ব ইজতেমার মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার ইতোমধ্যেই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছে। বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশী মুসল্লিদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ইজতেমার দুই পর্ব স্থগিত রাখার সুপারিশও করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও সংঘাত থামানো সম্ভব হয়নি।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতের মূল লক্ষ্য শুধুমাত্র বিশ্ব ইজতেমাকে ব্যাহত করা নয়, বরং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা। দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক চক্রও এই ষড়যন্ত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে চলমান এই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন ত্বরিত এবং কার্যকর পদক্ষেপ। দ্বন্দ্ব নিরসনে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এছাড়া, তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র ঠেকাতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরো জোরদার করা প্রয়োজন।
বিশ্ব ইজতেমার মতো একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার ষড়যন্ত্র গভীর উদ্বেগের বিষয়। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সরকার, প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়া, ইজতেমা আয়োজকদেরও তাদের দ্বন্দ্ব নিরসনে উদ্যোগী হতে হবে, যাতে ধর্মীয় ঐক্য বজায় থাকে এবং ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে না পারে।
সুত্রঃ ফেস দ্যা পিপল