আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন তাঁর অপার জ্ঞানের মাধ্যমে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারি, পৃথিবী ও মহাবিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টি একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ। কিন্তু প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন আল্লাহ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করার এত দীর্ঘ সময় পর মানুষ সৃষ্টি করলেন? আসুন, কুরআন ও হাদিসের আলোকে এই বিষয়ে আলোচনা করি।
আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী, মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর। তবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, আল্লাহ তাআলা সময় ও স্থানের ঊর্ধ্বে এবং তাঁর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় কাঠামো প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ বলেন:
"আমি তো আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং উহাদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাদের কোন ক্লান্তি স্পর্শ করে নাই।"
(সুরা ক্বাফ ৫০:৩৮)
এই ছয় দিনের ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাখ্যাকারগণ বলেন, এটি মানুষের দিন নয়, বরং আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী এক দীর্ঘ সময়কাল।
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মানুষের সৃষ্টির ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন:
"আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তম গঠনে।"
(সুরা তীন ৯৫:৪)
এছাড়াও, আদম (আ.)-এর সৃষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছে:
"আমি তো তাকে (আদমকে) সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকা থেকে।"
(সুরা সাদ ৩৮:৭১)
আল্লাহ মানুষকে এমন এক পৃথিবীতে পাঠাতে চেয়েছিলেন যেখানে তার জন্য জীবনযাপন সহজ হবে। পৃথিবী ধীরে ধীরে এমনভাবে প্রস্তুত হয়েছিল যাতে মানুষ বসবাস করতে পারে।
আল্লাহর ইলম ও হিকমত অনুযায়ী, মানুষকে সঠিক সময়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে:
"তিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর রাজত্বের মালিক। তিনি যা চান, সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন কন্যাসন্তান এবং যাকে ইচ্ছা দান করেন পুত্রসন্তান।"
(সুরা আশ-শুরা ৪২:৪৯)
আল্লাহ তাআলা মানুষকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি বা খলিফা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। যখন পৃথিবী মানুষের বসবাসের উপযোগী হলো, তখনই আল্লাহ আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন।
"আমি পৃথিবীতে এক খলিফা সৃষ্টি করতে যাচ্ছি।"
(সুরা বাকারা ২:৩০)
আল্লাহ তাআলা অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী। তিনি যখন যা সৃষ্টি করেছেন, তা তাঁর নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও হিকমতের অংশ। মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং এরপর মানুষের সৃষ্টি – সবকিছুই একটি নিখুঁত পরিকল্পনার অংশ। কুরআন ও হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, আল্লাহ ধীরে ধীরে পৃথিবীকে মানুষের জন্য প্রস্তুত করেছেন এবং পরে মানুষকে তাঁর খলিফা হিসেবে পাঠিয়েছেন।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন