ঢাকা, সোমবার, এপ্রিল ৭, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিয়ের প্রলোভনে যৌন সম্পর্ক’ – শুধুই কি পুরুষের অপরাধ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ, ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম

বিয়ের প্রলোভনে যৌন সম্পর্ক’ – শুধুই কি পুরুষের অপরাধ?
HTML tutorial

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

নতুন সংশোধিত খসড়ায় ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবৈধ যৌন সম্পর্ক’কে ধর্ষণের সংজ্ঞায় রাখা হয়নি, বরং এটি আলাদা ধারায় চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৬ বছরের বেশি বয়সী নারীর ক্ষেত্রে প্রতারণামূলকভাবে তাঁর সম্মতি আদায় করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হতো। ফলে বহু মামলায় ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি’ বা ‘প্রলোভনে ধর্ষণ’-এর অভিযোগ উল্লেখ করা হতো। কিন্তু সংশোধিত খসড়া অনুযায়ী, এই বিষয়টিকে সরাসরি ধর্ষণ বলা হয়নি, বরং পৃথক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই পরিবর্তন একদিকে ইতিবাচক হলেও নতুন আইন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে যৌন সম্পর্ক’কে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও ঠিক কী অবস্থায় এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, তা স্পষ্ট নয়। কেউ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কি অপরাধ হবে, নাকি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে—এ ব্যাপারে আইনে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।

এ ধরনের আইনের অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্পর্ক ভেঙে গেলে প্রতিশোধপরায়ণ কেউ হয়তো এই ধারায় মামলা করতে পারেন, যা মামলার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ ধরনের আইনি বিধান ‘ব্ল্যাকমেইলিং’-এর হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

এছাড়া, এই আইনের মাধ্যমে একপক্ষকে অপরাধী বানানো কতটা ন্যায়সঙ্গত, সে প্রশ্নও উঠেছে। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের সম্মতির ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যেখানে উভয়ের ‘কন্ট্রিবিউটরি পার্টিসিপেশন’ থাকে। তাহলে কেন শুধু পুরুষের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হলো? যদি কোনো নারী প্রেম বা সম্পর্ক ভেঙে দেন, তাহলে পুরুষ কি তার বিরুদ্ধে একইভাবে মামলা করতে পারবেন? সংশোধিত আইনে এই ধরনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি, যা একপক্ষীয় এবং বৈষম্যমূলক বলে অনেকে মনে করছেন।

বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া বা তা রক্ষা করা একটি নৈতিক এবং সামাজিক বিষয় হতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি না রাখার কারণে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা কতটা যৌক্তিক—সে বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। সম্পর্কের টানাপোড়েন বা পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় বিয়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হয় না। এসব বিষয় বিবেচনা না করেই আইন সংশোধন করা হলে তা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।

আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ সমাজে কতটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।

মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Google News Icon গুগল নিউজে দেখুন

আইন-অপরাধ রিলেটেড নিউজ

HTML tutorial