গাজার মাটিতে যখন প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশের তিনজন সুন্নি আলেমের ইসরায়েল সফর দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ছবিতে দেখা যায়, তারা জেরুজালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে বলছেন—"আল আকসা নিরাপদ, আশপাশে কোনো হামলার চিহ্ন নেই।"
ছবিতে যাদের দেখা গেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদী ও হাসানউদ্দিন নকশবন্দী। তৃতীয় ব্যক্তির পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফেসবুকে ‘মুফতি আলাউদ্দিন’ নামের একটি আইডি থেকে পোস্ট করা ছবিতে দাবি করা হয়েছে, আল আকসা ও তার আশপাশে কোনো সমস্যা নেই, মুসল্লিরা স্বাভাবিকভাবে নামাজ আদায় করছেন।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বোমাবর্ষণে গাজায় ইতিমধ্যে অন্তত ৬২,৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন লাখেরও বেশি মানুষ। নারী ও শিশুরাও এই বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল সফর এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া 'নিরাপদ আল আকসা' বার্তা অনেকের চোখে একধরনের ভ্রান্ত প্রচারণা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনরাও এই সফর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন—এই সফর কোনো ট্যুরিজম ছিল না বরং একটি পরিকল্পিত নরমালাইজেশন প্রচারণার অংশ। অনেকেই তাদের দেশে ফেরার সাথে সাথেই গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। সাংবাদিক সানাউল হক সানী লিখেছেন, “এই ভদ্রলোকেরা টুরিস্ট সেজে গেছেন, বাস্তবতা আড়াল করছেন।”
মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদীর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও সমালোচনা চলছে। একসময় তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রশংসাও করেছেন বিভিন্ন মাহফিলে। পরবর্তীতে হঠাৎ করেই বিএনপি ঘেঁষা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এই সুবিধাবাদী অবস্থানও তাকে ঘিরে বিতর্ক আরও ঘনীভূত করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর শুধু ব্যক্তিগত ছিল না। বরং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিবর্তনের ভূমিকা রাখার জন্যই এমন সফর হতে পারে। তাই অনেকেই এই সফরের অর্থায়ন, উদ্দেশ্য ও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে সরকারিভাবে তদন্ত দাবি করছেন।
যখন মুসলিম বিশ্ব ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার, তখন এমন সফর মুসলিমদের আবেগে আঘাত হানে। শুধু সফরের নয়—এর পেছনের প্রকৃত উদ্দেশ্য উদ্ঘাটন করাই এখন সময়ের দাবি।
সূত্রঃ ফেস দ্যা পিপল
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন