সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে মূল আপত্তিটি ছিল কেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হবে, অন্য কেউ নয়। কারণ, ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং তিনি একজন দণ্ডিত ব্যক্তি। এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে একটি দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন? আওয়ামী লীগ তাকে একেবারেই পছন্দ করে না এবং বাংলাদেশে ৩০-৪০% জনগণ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। তাদের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত হবে কি না, এ নিয়ে বিতর্ক ছিল।
আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, সেনাপ্রধান শেষ পর্যন্ত বলেছেন, "আমি বুকে পাথর চাপা দিয়ে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছি।"
তিনি জানান, সেনাবাহিনী দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেছিল যে শেখ হাসিনাকে অপসারণের পর দেশকে কীভাবে পরিচালিত করা হবে। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর ক্ষমতা হাতছাড়া না করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এমনকি, ব্যর্থ হলে সশস্ত্র অভ্যুত্থানেরও প্রস্তুতি ছিল। ৫ই আগস্টের মধ্যে পরিকল্পনা সফল না হলে, সেনাবাহিনী অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিতে প্রস্তুত ছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করা হচ্ছিল। প্রথমদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আহ্বান জানানো হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় ছিল। কারণ, তিনি অতীতেও রাজনৈতিক ভূমিকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
আসিফ মাহমুদ জানান, তিনি ইউনূসের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইউনূসের প্রাইভেট সেক্রেটারি মইন চৌধুরীর মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু হয়। প্রথমদিকে ইউনূস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিকল্প নাম দেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে তিনি রাজি হন।
৫ই আগস্ট, শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর, সেনাবাহিনী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চায়। সন্ধ্যায় চ্যানেল ২৪-এর অফিসে ইউনূসের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা হয়। ইউনূস তখন ফ্রান্সে ছিলেন এবং অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
চূড়ান্ত আলোচনার পর, গভীর রাতে জাতীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়। তবে, ইউনূসের নাম তখনই প্রকাশ করা হয়নি।
এই পরিকল্পনার পেছনে কারা ছিলেন?
১. সাবেক ছাত্রদলের নেতা শামিম
2. রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুশফিকুর ফজল আনসারী
3. গবেষক আলী রিয়াজ
4. বদিউল আলম মজুমদার
5. সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা
আলোচনার সময় ইউনূস কিছু শর্ত দেন, যাতে সেনাবাহিনী পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ না করে এবং সরকার সুশাসনের নীতি মেনে চলে। পরবর্তীতে তিনি সম্মতি দেন, তবে সিদ্ধান্ত গোপন রাখার নির্দেশ দেন।
এই ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন