কায়রো/জেরুজালেম, ১৮ মার্চ (রয়টার্স): ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজায় অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ভোরে চালানো হামলায় বহু লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে, যা জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের ইঙ্গিত দেয়।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস ইসরায়েলকে অস্ত্রবিরতি চুক্তি ভঙ্গের জন্য দায়ী করেছে
বিমান হামলাগুলো গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে চালানো হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে উত্তর গাজা, গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ, খান ইউনিস এবং দক্ষিণ গাজার রাফাহ। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে এবং প্রয়োজন হলে আরও হামলা চালানো হবে। সেনাবাহিনী সতর্ক করে বলেছে, এ হামলা কেবল বিমান হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, যা মাটিতে সংঘর্ষ পুনরায় শুরুর আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এদিকে, গাজায় হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আহতদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিহতদের লাশ সাদা প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় হাসপাতাল চত্বরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা ৮৬ জন নিহত ও ১৩৪ জন আহতের চিকিৎসা দিয়েছে। তবে অনেক মৃতদেহ ব্যক্তিগত গাড়িতে করে হাসপাতালে আনা হয়েছে, ফলে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় গাজার আল-আকসা হাসপাতাল এবং গাজা সিটির আল-আহলি হাসপাতাল—যেগুলো ইতোমধ্যে যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত—এসব হাসপাতালে ৮৫ জনের বেশি নিহতের মরদেহ এসেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।
হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, ফলে এখনো গাজায় বন্দি থাকা ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, "হামাস বারবার আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েল এখন থেকে আরও কঠোর সামরিক অভিযান চালাবে।"
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইসরায়েল হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে বিষয়টি অবহিত করেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র বলেন, "হামাস চাইলে অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়াতে পারত, কিন্তু তারা যুদ্ধকেই বেছে নিয়েছে।"
এদিকে, গাজায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলে গোলাবর্ষণ করেছে। এতে অনেক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে উত্তর দিকে খান ইউনিসে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
এর আগে জানুয়ারিতে অস্ত্রবিরতির চুক্তির আওতায় হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি ও ৫ জন থাই জিম্মিকে মুক্তি দেয়, যার বদলে ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মার্কিন সমর্থনে ইসরায়েল গাজায় আটক বাকি ৫৯ জনকে মুক্ত করতে চাইছিল এবং রমজান ও ইহুদি পাসওভার পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছিল। তবে হামাস দাবি করেছিল, তারা যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করতে চায়।
হামাস বলেছে, "আমরা মধ্যস্থতাকারীদের বলছি, নেতানিয়াহু এবং দখলদার ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য দায়ী।"
গত ১৫ মাসের যুদ্ধের কারণে গাজার বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। সংঘর্ষের সূত্রপাত ৭ অক্টোবর ২০২৩, যখন হাজার হাজার হামাস যোদ্ধা ইসরায়েলের সীমান্তে আক্রমণ চালায় এবং ১,২০০ জনকে হত্যা করে ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে।
ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৮,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গাজার হাসপাতাল ব্যবস্থাও প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন