ঢাকা, শনিবার, এপ্রিল ১২, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েল গাজায় প্রতি ৪৫ মিনিটে হত্যা করছে একটি শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক

অনলাইন ডেক্স

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ, ২০২৫, ১১:৫১ পিএম

ইসরায়েল গাজায় প্রতি ৪৫ মিনিটে হত্যা করছে একটি শিশু
HTML tutorial

গত ৫৩৫ দিনে গড়ে প্রতিদিন ৩০টি শিশু নিহত হয়েছে।

৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল অন্তত ১৭,৪০০ শিশুকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ১৫,৬০০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেক শিশু চাপা পড়ে আছে, যাদের অধিকাংশই মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যেসব শিশু বেঁচে আছে, তাদের মধ্যে অনেকেই একাধিক যুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হয়েছে। গাজার শিশুরা জন্মের পর থেকেই ইসরায়েলি অবরোধের ছায়ায় বেড়ে উঠেছে, যা তাদের জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করেছে।

গাজার শিশুদের কী অবস্থা?

গাজার ২.৩ মিলিয়ন বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই শিশু।

গত ১৭ মাসে ইসরায়েলি হামলায় তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, স্কুল ধ্বংস হয়েছে, হাসপাতাল ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

একটি কল্পিত কক্ষে যদি ১০০টি শিশু থাকে, তাহলে -

  • ২ জন নিহত হয়েছে

  • ২ জন নিখোঁজ, যাদের মৃত বলে মনে করা হচ্ছে

  • ৩ জন আহত হয়েছে, অনেকের অবস্থা গুরুতর

  • ৫ জন এতিম বা বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে

  • ৫ জন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে

  • বাকিরা সবাই মানসিক আঘাত ও যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি বহন করছে

কারা ছিল এই শিশুরা?

গাজার শিশুদের জীবন ছিল খেলাধুলা, শিক্ষা ও স্বপ্নের। কিন্তু ইসরায়েলি বোমা হামলা তাদের সেই শৈশব ছিনিয়ে নিয়েছে।

নিহত শিশুদের মধ্যে ছিল:

  • ৮২৫ জন নবজাতক, যারা তাদের প্রথম জন্মদিনের আগেই নিহত হয়েছে

  • ৮৯৫ জন এক বছর বয়সী শিশু, যারা হাঁটতে শেখার আগেই মারা গেছে HTML tutorial

  • ৩,২৬৬ জন দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু, যারা খেলাধুলার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে

  • ৪,০৩২ জন ছয় থেকে দশ বছর বয়সী শিশু, যারা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেল না

  • ৩,৬৪৬ জন এগারো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সী শিশু, যারা তিনটি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বেঁচে ছিল, কিন্তু চতুর্থ যুদ্ধে নিহত হলো

  • ২,৯৪৯ জন পনেরো থেকে সতেরো বছর বয়সী কিশোর, যারা ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখছিল, কিন্তু ইসরায়েলি আগ্রাসনে তারা চিরতরে হারিয়ে গেল

মুহাম্মদ আবু হিলাল: এক বছরের শিশু

১৮ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন স্থানে একযোগে ১০০টি বিমান হামলা চালায়, যার ফলে ৪৩৬ জন নিহত হয়, যার মধ্যে ১৮৩ জন শিশু ছিল।

তাদের মধ্যে ছিল এক বছর বয়সী মুহাম্মদ আবু হিলাল। ইসরায়েল ঘোষিত "নিরাপদ জোন" আল-মাওয়াসি ক্যাম্পে তার মা আফনান (যিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন) এবং বাবা আলা তাকে রেখেছিলেন, যাতে সে নিরাপদে থাকে। কিন্তু ইসরায়েলি হামলায় মুহাম্মদ ও তার মা নিহত হয়। HTML tutorial

তার বাবা আলা বিলাপ করে বলেন, "ওহ, আমার আদরের ছেলে, ওপরে যাও, স্বর্গে তোমার সব খেলনা অপেক্ষা করছে।"

হিন্দ রাজাব: একাকী মৃত্যুর করুণ আহ্বান

৫ বছর বয়সী হিন্দ রাজাব পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য হিসেবে একটি গাড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। ইসরায়েলি ট্যাঙ্কের হামলায় তার পরিবার নিহত হয়। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সে ফোন করে রেড ক্রিসেন্টের কাছে সাহায্য চায়।

"আমি ভয় পাচ্ছি, দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন, কেউ এসে আমাকে নিয়ে যান," ফোনে তিন ঘণ্টা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল হিন্দ।

তার মরদেহ ১২ দিন পর উদ্ধার করা হয়।

মাহমুদ দাহদুহ: স্বপ্ন ছিল সাংবাদিক হওয়ার

১৫ বছর বয়সী মাহমুদ দাহদুহ তার দেশের কাহিনি বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ইসরায়েলি হামলায় তার মা, ছোট বোন, এক বছরের ভাইপো এবং আরও ২১ জনের সঙ্গে তিনিও নিহত হন

গাজার শিশুদের এই করুণ পরিণতি মানব ইতিহাসের এক হৃদয়বিদারক অধ্যায় হয়ে থাকবে, যা কখনও ভুলে যাওয়া যাবে না।

মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Google News Icon গুগল নিউজে দেখুন
HTML tutorial