৩ আলোচিত ইসলামী অ্যাক্টিভিস্টের বিরুদ্ধে জ*ঙ্গী মামলা; সমালোচনার ঝড়
.png)
ইসলামী ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা জঙ্গি মামলার প্রতিবাদে এবং জনপরিসরে ইসলামের অবস্থান সংকুচিত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এক জোরালো সংবাদ সম্মেলন করেছেন জনপ্রিয় লেখক ও গবেষক আসিফ আদনান এবং ইসলামী ভাবধারার বিশ্লেষক সাংবাদিক জাকারিয়া মাসউদ। তারা অভিযোগ করেছেন, সম্প্রতি দায়েরকৃত একটি তথাকথিত জঙ্গি মামলায় বিনা প্রমাণে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের নাম জড়ানো হয়েছে।
আজ (১৭ জুলাই) বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুরুল হক হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা দেন আসিফ আদনান। সম্মেলনের আয়োজন করে বৈষম্যহীন কারামুক্ত আন্দোলন।
আসিফ আদনান বলেন, “গত ১৫ জুলাই একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারি যে, আমাকে, জাকারিয়া মাসউদ ভাইকে এবং সম্মানিত আলেম মাওলানা রেজাউল করিম আবরারকে একটি জঙ্গি মামলায় ‘পলাতক আসামি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ আমরা কেউই পলাতক নই, বরং নিয়মিতভাবে সেমিনার, দাওয়াতি কার্যক্রম ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছি। জনসমক্ষে আমাদের কার্যক্রম প্রমাণিত।”
আইন-অপরাধ রিলেটেড নিউজ
তিনি আরও জানান, “মামলাটি করেছে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। এটি একটি ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত অভিযোগ। আমাদের সমস্ত বক্তব্য ও লেখালেখি পাবলিক ডোমেইনে বিদ্যমান। এই মামলা মূলত ইসলামী বুদ্ধিজীবীদের দমন করার জন্য একটি কৌশল।”
আসিফ আদনান বলেন, “জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় খোলার বিরোধিতা করেছে ইসলামপন্থীরা। সেই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বার্তা দিতে এই ধরনের মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে যে, ‘ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিলে রাষ্ট্র তোমার প্রতিপক্ষ হবে।’”
তিনি এই মামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এই মামলা শুধু মানহানিকরই নয়, এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। বাংলাদেশে অতীতে ‘জঙ্গি তকমা’ দিয়ে অনেক নিরীহ মুসলমানকে গুম, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার করা হয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রেও একই পরিকল্পনা কি অপেক্ষা করছে?”
আসিফ বলেন, “এই ধরনের মিথ্যা মামলার শিকার যদি সুপরিচিত ব্যক্তিত্বরা হন, তাহলে সাধারণ ছাত্র, শিক্ষক কিংবা চাকরিজীবী ধর্মপ্রাণ মুসলমান কতটা নিরাপদ? আজ ‘জঙ্গি’ বলে অপবাদ দিচ্ছে, কাল হয়তো তাকে গুম করবে—এর কোনও জবাবদিহিতা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্টের লংমার্চকে 'জঙ্গি হামলা' বলে প্রচার করেছিল সরকার। আজ সেই পুরনো স্ক্রিপ্টেরই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। আগেও শেখ হাসিনার শাসনামলে 'জঙ্গিবাদ দমন' নাটকের আড়ালে কোটি কোটি টাকার বিদেশি ফান্ড নেওয়া হতো, এবং সেই ফান্ডের বাস্তবায়নে আমাদের মতো নিরীহদের ব্যবহার করা হতো।”
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামি পোশাক, দাড়ি, টুপি, টাখনুর ওপরে কাপড়, ইসলামি বই পড়াকে ‘উগ্রবাদ’ বলে প্রচার করার আগের ‘প্রোপাগান্ডা যুগ’-এর কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। তিনি বলেন, “এসব ছিল একটি আন্তর্জাতিক ইসলামবিরোধী চক্রান্ত, যা এখন আবার নতুনভাবে ফিরে এসেছে।”
আসিফ আদনান বলেন, “এই মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ নেই। কোনো বিচার নেই, প্রমাণ নেই—শুধু অপবাদই যথেষ্ট শাস্তি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এটি সভ্য রাষ্ট্রে এক গভীর অগণতান্ত্রিক প্রবণতার প্রমাণ।”
তিনি বলেন, “পূর্ববর্তী সরকার গুম কমিশনের রিপোর্ট, আয়নাঘর তদন্ত এবং অন্যান্য অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে যে, 'জঙ্গি দমন'-এর নামে রাষ্ট্র নিজেই বর্বরতা চালিয়েছে। ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন—সবকিছু ঘটেছে রাষ্ট্রের ছত্রছায়ায়। সেই জাহেলিয়াতই আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।”
এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসিফ বলেন, “আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছি। একই সঙ্গে সাংবাদিক, আইনজীবী, নাগরিক সমাজ ও ইসলামপন্থী সকল শক্তিকে আহ্বান জানাচ্ছি—এই ফ্যাসিবাদী অপচেষ্টা রুখে দাঁড়ান।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন লেখক ও আলোচক আহমাদ রফিক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ডা. মাহদি হাসান, বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কেএসএম ইনতিসার ইনজিমাম, হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক তালুকদার, বৈষম্যহীন কারামুক্ত আন্দোলনের সেক্রেটারি মুফতি শফিকুল ইসলাম, জয়েন্ট সেক্রেটারি মাওলানা ইসহাক খান ও মাওলানা আল আমীন সাকী প্রমুখ।
শেষে বক্তারা আহ্বান জানান, “এই জঙ্গি নাটক বন্ধ করতে হবে। পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ইসলামপন্থীদের মুখ বন্ধ করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে হবে। আর যদি রাষ্ট্রের অভিযোগ সত্যিই প্রমাণিত হয়, তবে তা গণমাধ্যমে তথ্যপ্রমাণসহ প্রকাশ করতে হবে—অন্যথায় এসব মামলা জনগণের আস্থা হারাবে।”
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন