ইসরায়েলকে খুশি রাখতে SCO-র নিন্দা এড়িয়ে গেল ভারত!
.png)
নয়াদিল্লি:
ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলার নিন্দা জানানো থেকে ভারতের বিরত থাকা আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। রাশিয়া ও চীনের নেতৃত্বাধীন সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO)-এর যৌথ বিবৃতি থেকে ভারত নিজেকে আলাদা করে নিয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় একটি সূক্ষ্ম কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করছে নয়াদিল্লি।
SCO কী বলেছে?
চীনের নেতৃত্বাধীন SCO শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং ইরানের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সামরিক হামলাকে আমরা জোরালোভাবে নিন্দা জানাচ্ছি।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “বেসামরিক এলাকা, জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।”
এই বিবৃতিতে SCO সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে। তবে ভারত এই বিবৃতির আলোচনায় অংশ নেয়নি এবং নিজ অবস্থান তুলে ধরেছে।
মুসলিম বিশ্ব রিলেটেড নিউজ
ভারতের অবস্থান
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয় সে জন্য আমরা উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।”
এছাড়া ভারত জানায়, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার খবর পর্যবেক্ষণ করছে এবং সংকট নিরসনে সংলাপ ও কূটনীতির আহ্বান জানিয়েছে।
ভারত স্পষ্ট করে বলেছে, “আমরা ইসরায়েল ও ইরান—উভয় দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখি এবং সংকট নিরসনে প্রয়োজনে সহায়তা করতে প্রস্তুত।”
কেন ভারত আলাদা অবস্থান নিল?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এখন এমন এক কৌশলগত অবস্থানে আছে যেখানে তাকে একদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করতে হচ্ছে।
ভারত ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক, আবার ইরানের চাবাহার বন্দর প্রকল্পেও ভারতের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। সেই বন্দরকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপন সহজ হবে।
বিশ্লেষক শান্তি ডি’সুজা বলেন, “ভারতের জন্য SCO-এর ভাষায় সম্মত হওয়া কঠিন ছিল, কারণ একদিকে তার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক, অন্যদিকে রাশিয়া-চীন ঘনিষ্ঠ ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে।”
ভারত কি ইসরায়েলকে সমর্থন করছে?
না, ভারত সরাসরি ইসরায়েলকে সমর্থন করেনি। কিন্তু SCO-এর যৌথ বিবৃতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ভারত কার্যত ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান দুর্বল করেছে।
এমনকি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গাজায় ‘অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’র প্রস্তাবে ভারত ভোটদানে বিরত থাকে, যা নীতিগতভাবে বিস্ময় তৈরি করেছে।
বিশ্লেষক কবীর তানেজা বলেন, “ভারতের এই অবস্থান আসলে SCO-এর কাঠামোর মধ্যেই ভারতের ব্যতিক্রমী অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। SCO-র বেশিরভাগ সদস্য যদি ইরানের ঘনিষ্ঠ হয়, তবে ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দিকে কিছুটা ঝুঁকে আছে।”
মার্কিন চাপ ও ভারতের কৌশলগত ঝুঁকি
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর ইরানের ওপর আবারও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, যার প্রভাব পড়ে ভারতের চাবাহার বন্দর প্রকল্পেও।
চাবাহার প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানকে বাইপাস করে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় প্রবেশাধিকার পেতে চায়। এর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভারতের এই কৌশলগত মহাসড়ক প্রকল্পকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
তানেজার মতে, “ভারতের জন্য ইরান শুধু বন্দর নয়, বরং একটি কৌশলগত ভূগোল – যার মাধ্যমে ভারত মধ্য এশিয়া এবং আফগানিস্তানে তার প্রভাব বিস্তার করতে চায়।”
সূত্রঃ আলজাজিরা
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন