ঢাকা, মঙ্গলবার, এপ্রিল ৮, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যাকাত: ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদত

মাওলানা মোঃ ইমাম হোসেন

মাওলানা মোঃ ইমাম হোসেন

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ, ২০২৫, ০১:০৭ পিএম

যাকাত: ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদত
HTML tutorial

রমজান মাস একটি পবিত্র ও বরকতময় মাস, যেখানে ইবাদতের গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এই মাসে মুসলিমদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো যাকাত প্রদান করা। যাকাত কেবলমাত্র একটি দানের ব্যবস্থা নয়, বরং এটি ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ যা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সাম্যের ভারসাম্য রক্ষা করে।

যাকাতের সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

যাকাত শব্দটি আরবি "زكاة" থেকে এসেছে, যার অর্থ পবিত্রতা, প্রবৃদ্ধি ও বরকত। ইসলামে যাকাত বাধ্যতামূলক একটি আর্থিক ইবাদত যা সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। এটি সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি সম্পদের শুদ্ধি সাধনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলি

যাকাত আদায়ের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে:

  1. মুসলিম হওয়া: যাকাত শুধুমাত্র মুসলিমদের ওপর ফরজ।

  2. প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবেকবান হওয়া: যাকাত শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ব্যক্তিদের ওপর ফরজ।

  3. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা: একজন ব্যক্তির নিকট এক হিজরি বছর ধরে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে।

  4. ঋণমুক্ত থাকা: যদি কারো দেনা তার সম্পদের সমান বা তার চেয়ে বেশি হয়, তবে তার ওপর যাকাত ফরজ নয়।

নিসাব পরিমাণ সম্পদ ও যাকাতের হিসাব

যাকাতের হার সাধারণত মোট সম্পদের ২.৫%। নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলো:

  • স্বর্ণ: ৭.৫ তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম)

  • রূপা: ৫২.৫ তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম)

  • অর্থ ও বাণিজ্যিক পণ্য: যদি স্বর্ণ বা রূপার নিসাব পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ থাকে, তাহলে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে।

যাকাত দেওয়ার উপযুক্ত খাত

কুরআনে (সূরা আত-তাওবা: ৬০) আটটি খাত উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে যাকাত প্রদান করা যেতে পারে:

  1. ফকির (অত্যন্ত গরিব)

  2. মিসকিন (অভাবগ্রস্ত)

  3. যারা যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের দায়িত্ব পালন করে HTML tutorial

  4. যাদের ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়

  5. দেনাগ্রস্ত ব্যক্তি

  6. আল্লাহর পথে সংগ্রামরত ব্যক্তি (ফি সাবিলিল্লাহ)

  7. মুক্তিপ্রাপ্ত দাস

  8. মুসাফির (যারা ভ্রমণে আর্থিক সংকটে পড়েছে)

যাকাতের উপকারিতা

যাকাত প্রদান করলে সমাজে অনেক ইতিবাচক প্রভাব পড়ে: HTML tutorial

  • সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন হয়।

  • দরিদ্ররা মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়।

  • অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস পায় এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

  • সম্পদ থেকে হিংসা ও লোভ দূর হয় এবং দাতার অন্তর পরিশুদ্ধ হয়।

  • আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় এবং পরকালীন জীবনে পুরস্কার লাভ হয়।

রমজানে যাকাত দেওয়ার বিশেষ ফজিলত

যদিও যাকাত সারা বছর আদায় করা যায়, তবে রমজান মাসে যাকাত প্রদান করা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। কারণ, এই মাসে সওয়াব ৭০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "রমজানে একটি নফল ইবাদত করা ফরজ ইবাদতের সমান, আর একটি ফরজ ইবাদত করা ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমান।" (তিরমিজি)

উপসংহার

যাকাত কেবল দানের একটি ব্যবস্থা নয়, এটি ইসলামের মূল আদর্শগুলোর মধ্যে একটি যা অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। তাই আমাদের উচিত যথাযথ নিয়ম মেনে যাকাত প্রদান করা, বিশেষত এই বরকতময় রমজান মাসে, যাতে আমাদের সম্পদ পবিত্র হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Google News Icon গুগল নিউজে দেখুন
HTML tutorial