ঢাকা, বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৩, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৮ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
HTML tutorial

যৌতুক সম্পর্কে কিছু কথা

মাওলানা মোঃ ইমাম হোসেন

প্রকাশিত: ২২ মার্চ, ২০২৩, ১২:৩৮ পিএম

alo
যৌতুক সম্পর্কে  কিছু  কথা
যৌতুক সম্পর্কে কিছু কথা
alo

কয়েক বছর পূর্বে সিরিয়ার একজন বুজুর্গ শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহঃ.আমাদের দেশে তাশরিফ আনেন।ঘটনাক্রমে স্থানীয় একজন বন্ধু আরব বুজুর্গে উপবিষ্ট দেখতে পেয়ে তার নিকট দোয়ার জন্য দরখাস্ত করে বলেন,আমার দুটি মেয়ে বিবাহের যোগ্য হয়েছে, দুয়া করুন আল্লাহ তাআলা যেন তাদের বিয়ের উপকরণের ব্যবস্থা করে দেন।

শায়খ তাকে জিজ্ঞেসা করেন যে,তাদের জন্য কি উপযুক্ত সম্মন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না? তখন সে উত্তর দেয় যে,সম্বন্ধ তো দুজনেরই হয়েছে,কিন্তু আমার নিকট এমন আর্থিক সঙ্গতি নেই যে,তাদেরকে বিয়ে দিতে পারি।

শায়খ কথা শুনে অপরিসীম বিস্ময়ের সঙ্গে জিজ্ঞেসা করেন যে,তারা আপনার মেয়ে না ছেলে? তিনি বললেন মেয়ে। শায়খ আপাদমস্তক বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন,মেয়ে বিয়ে দিতে আর্থিক সঙ্গতির কী প্রয়োজন? তিনি বললেন তাদের কে যৌতুক দেওয়ার মত আমার কাছে কিছু নেই।

শায়খ জিজ্ঞাসা করেন,যৌতুক কী জিনিস? তখন উপস্থিত লোকেরা তাকে বলল,আমাদের দেশের প্রথা এই যে,পিতা মেয়ের বিয়ের সময় তাকে অলংকার, কাপড়-চোপড়,ঘরের আসবাবপত্র এবং আরো অনেক সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে দেয়, তাকে যৌতুক বলা হয়।

যৌতুক দেওয়া পিতার দায়িত্ব মনে করা হয়।যা ছাড়া মেয়ে বিয়ে দেওয়ার কথা মানুষ কল্পনাো করতে পারে না।মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকেরাও যৌতুকের দাবি করে থাকে।

বিস্তারিত আলোচনা শুনে শায়খ মাথায় হাত দিয়ে বসে গেলেন। তিনি বললেন, মেয়ে বিয়ে দেওয়া কি কোনো অপরাধ নাকি, যার কারণে এই শাস্তি পিতাকে দেওয়া হবে? তার পর তিনি বললেন যে,আমাদের দেশে ধরনের কোনো প্রথা নেই।

অধিকাংশ যায়গায় তো এটি ছেলের দায়িত্ব মনে করা হয় যে, সে ঘরে বউ আনার পূর্বে ঘরের সামানাপত্র এবং বউয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যোগাড় করে রাখবে। মেয়ের বাবাকে কোনো খরচ করতে হয় না।আর কতক স্থানের প্রচলন এই যে,মেয়ের প্রয়োজনকে সামনে রেখে সামানাপত্র মেয়ের বাবাই ক্রয় করে দেয়,তবে তার মূল্য ছেলে পরিশোধ করে দেয়।

হ্যাঁ মেয়ের বাবা মেয়েকে বিদায় করার কালে সংক্ষিপ্ত কোন উপঢৌকন দিতে চাইলে তা দিতে পারে।তবে তাও এমন কোনো জরুরিমনে করা হয় না।

ঘটনা থেকে কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে যে,আমাদের সমাজে যৌতুককে মেয়ের যেই আবশ্যকীয় অংশ পরিণত করা হয়েছে, সে সম্পর্কে মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য এলাকার চিন্তাধারা কী?

শায়খের উদ্বৃতিতে উপরে যেমন বর্ণনা করা হলো,শরিয়তের দৃষ্টিতেও যৌতুকের বাস্তবতা শুধু এতটুকু যে,যদি কোনো পিতা তার মেয়েকে তুলে দেওয়ার সময় নিজ সামর্থ্য মতো তাকে কোনো উপঢৌকন দিতে চায় তাহলে দিয়ে দিবে।

বলা বাহুল্য যে,উপঢৌকন দেওয়ার সময় মেয়ের ভবিষ্যৎ কালীন প্রয়োজন কে সামনে রেখে জিনিস নির্বাচন করাটা উত্তম। কিন্তু তা বিয়ের আবশ্যকীয় কোনো শর্তও নয় এবং শ্বশুরালয়ের লোকদের তা দাবি করারও কোনো অধিকার নেই।

কোনো মেয়েকে যৌতুক মোটেও না দেওয়া হলে বা কম দেওয়া হলে তা খারাপ মনে করবে বা সেজন্য মেয়েকে তিরস্কার করবে সে অধিকার কারো নেই। আর এটি পদর্শনীরও কোন জিনিস নয় যে,বিয়ের সময় তা পদর্শন করে নিজের শান-শওকত জাহির করবে।

alo
alo
alo
alo