গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম পর্ব। বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় সমাবেশ। উদ্বোধনী বয়ান প্রদান করেন মাওলানা ইবরাহিম দেওলা, আর তার তরজমা করেন মাওলানা জুবায়ের আহমাদ।
উদ্বোধনী বয়ানে আল্লাহ তায়ালার হক আদায়ের গুরুত্ব, মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার পথ নিয়ে আলোচনা করা হয়। মাওলানা ইবরাহিম দেওলা বলেন, “আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াকে পরীক্ষার স্থান হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। কখনো নেয়ামত দিয়ে আবার কখনো নেয়ামত কেড়ে নিয়ে তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। সফল হতে হলে মানুষের উচিত আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং তার নির্দেশিত পথে চলা।”
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য শরীয়তের বিধান দিয়েছেন, যা অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অন্যান্য প্রাণীদের জন্য কোনো শরীয়তের বিধান নেই। মানুষ যদি আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব পালন করে, তবে তিনি তার সাহায্য করবেন ও জীবন সহজ করে দেবেন। অন্যথায় দুনিয়াতেও বিপর্যয় নেমে আসবে এবং আখেরাতে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
বয়ানে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। ফেরাউন, কারুণ ও হামানের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, তারা দুনিয়ায় বিপুল ঐশ্বর্য ও ক্ষমতা লাভ করেছিল, কিন্তু আল্লাহর বিধান অমান্য করার কারণে তারা চরমভাবে অপদস্ত ও ধ্বংস হয়েছে।
“আজও যারা আল্লাহর বিধান মানে না, তারা মানসিক পেরেশানিতে ভোগে, জীবনে অশান্তি ও টেনশন তৈরি হয়,” বলেন বক্তা।
বয়ানে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝানো হয় এবং বলা হয়, “আল্লাহ তায়ালা মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন, কারণ তিনিই তাকে সৃষ্টি করেছেন। তাই তার হক সর্বপ্রথম আদায় করা উচিত।”
আল্লাহর হক আদায়ের মধ্যে রয়েছে:
✅ শিরক থেকে বেঁচে থাকা ও তাওহীদ মেনে চলা
✅ আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর হক আদায় করা
✅ আল্লাহর কিতাবের (কুরআনের) হক আদায় করা
যদি মানুষ এই হকগুলো যথাযথভাবে আদায় করে, তবে আল্লাহ দুনিয়ায় শান্তি ও রহমত বর্ষণ করবেন।
মাওলানা ইবরাহিম দেওলা বলেন, “আল্লাহর রাস্তায় সময় দেওয়া মানে আল্লাহর প্রতি একাগ্র হওয়া এবং তার দেওয়া দায়িত্ব সম্পর্কে জানা।”
তিনি বলেন, দ্বীন হলো আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর দেখানো পথে জীবন পরিচালনা করা। এজন্য তিন দিন, ৪০ দিন বা চার মাস সময় দেওয়া হয়, যাতে মানুষ দ্বীনের শিক্ষা অর্জন করতে পারে।
বক্তা বলেন, সাহাবারা আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর দেখানো পথ অনুসরণ করেই সফল হয়েছিলেন। “আমাদেরও সেই পথ অনুসরণ করতে হবে, তাহলেই আমরা সফল হতে পারবো।”
বিশ্ব ইজতেমার এই পর্বে দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। আগামী দিনগুলোতে আরও গুরুত্বপূর্ণ বয়ান ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।