ঢাকা, রবিবার, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শবে বরাতের সঠিক গুরুত্ব: সহীহ হাদীসের আলোকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১০:১৯ পিএম

শবে বরাতের সঠিক গুরুত্ব: সহীহ হাদীসের আলোকে

সহীহ হাদীস থেকে শবে বরাতের গুরুত্ব:

১. আল্লাহর বিশেষ রহমত: সহীহ হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে শবে বরাত রাতে আল্লাহ (তাআলা) পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত প্রকাশ করেন। যে ব্যক্তিরা এই রাতে তাঁর কাছে দোয়া করে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাদের পাপ মাফ করেন।

হাদীস:

"শবে বরাত রাতে আল্লাহ (তাআলা) পৃথিবীতে নেমে এসে বলেন, 'কী ব্যক্তি আছো যারা ক্ষমা চাচ্ছে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।' "
(সহীহ মুসলিম)

এই হাদীস থেকে জানা যায় যে শবে বরাতের রাতটি ক্ষমা প্রাপ্তির একটি বিশেষ রাত। আল্লাহ বান্দাদের পাপ মাফ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন, বিশেষত যারা সত্যিকারভাবে তাঁর কাছে ক্ষমা চায়।

  1. অতীতের পাপ মাফ করা: সহীহ হাদীসে শবে বরাতের রাতে আল্লাহ বিশেষভাবে আত্মবিশ্বাসী বান্দাদের পাপ মাফ করে দেন এবং তাদের প্রতি রহমত প্রদর্শন করেন।

    হাদীস:

    "এই রাতে আল্লাহ (তাআলা) কুরআনুল কারিমে বলেন, 'আমি বান্দাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করছি, তাদের পাপ মাফ করছি।'"
    (সহীহ মুসলিম)

    এই হাদীসের মাধ্যমে এটা প্রতিভাত হয় যে, শবে বরাতের রাতে যারা আল্লাহর কাছে দোয়া করেন এবং পরিশুদ্ধ মন নিয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা চান, আল্লাহ তাদের পাপ মাফ করে দেন।

মুসলমানদের জন্য কী করতে হবে:

শবে বরাতের রাতে মুসলমানদের জন্য কিছু বিশেষ ইবাদত পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ রাতে যারা ইবাদত করবেন, তাদের জন্য বিশেষভাবে বরকত ও পুণ্য অপেক্ষা করে থাকে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং কার্যক্রম দেওয়া হলো যা মুসলমানদের জন্য শবে বরাতে পালন করা উচিত:

১. নফল নামাজ ও দোয়া:

শবে বরাতের রাতে নফল নামাজ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে রাতে যে সময়ে অন্যান্য লোক ঘুমাচ্ছেন, তখন অতিরিক্ত নামাজ পড়া পুণ্যপ্রদানকারী। এছাড়া আল্লাহর কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। মুমিনরা এই রাতে বেশি বেশি তাসবীহ ও দোয়া পড়তে পারেন।

  • নফল নামাজ: ২ রাকাত অথবা আরও বেশি নফল নামাজ পড়তে পারেন।
  • দোয়া: ব্যক্তিগতভাবে বা জামাত আকারে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

২. কোরআন তিলাওয়াত:

এই রাতে কোরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ভালো। অনেক আলেমরা শবে বরাতের রাতটিকে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কোরআন পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট কল্যাণ প্রার্থনা করা যেতে পারে।

৩. কবরস্থানে যাওয়া:

শবে বরাতের রাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করা একটি প্রচলিত রেওয়াজ। যদিও হাদীসে এর স্পষ্ট নির্দেশনা নেই, তবে কিছু অঞ্চলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি হিসেবে পালন করা হয়। মৃতদের জন্য দোয়া করতে, তাদের জন্য আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করা উচিত।

৪. সৎকর্ম ও দান:

এই রাতে সৎকর্ম ও দান-খয়রাত করাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি অন্যদের সাহায্য করা, গরিবদের দান করা বা কেউ যদি বিপদে থাকে তার সাহায্য করার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট পুণ্য অর্জন করা সম্ভব।

৫. প্রত্যেক মুসলিমের জন্য সংশোধন ও তওবা:

শবে বরাতের রাতে তওবা ও নিজের জীবন সংশোধন করার জন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এই রাতটি পাপ মাফ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কারো উপর পাপের বোঝা থাকে, তবে এই রাতে সেই পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া উচিত।

উপসংহার:

শবে বরাতের রাতে আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষিত হয় এবং এটি ক্ষমা প্রার্থনার একটি মহৎ সময়। শবে বরাতের রাতে মুসলমানদের উচিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা, নফল নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা এবং একে অপরের জন্য দোয়া করা। তবে, এই রাতে কোনো বিশেষ ফরজ বা ওয়াজিব ইবাদত নেই, তবে অতিরিক্ত ইবাদত করলে আল্লাহর রহমত পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। HTML tutorial

HTML tutorial