সারাদেশের ন্যায় নেত্রকোনার দুর্গাপুরে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সর্বস্তরের অংশগ্রহনে এ দিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষে পৌরসভা এলাকার বিরিশিরিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন, বৃক্ষরোপন ও শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরবর্তিতে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা আফসানা এর সভাপতিত্বে, একাডেমিক সুপারভাইজার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন এর সঞ্চালনায় অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন তালুকদার ও আবুল আজিজ, উপজেলা বিএনপি‘র সাবেক সভাপতি ইমাম হাসান আবুচান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এডভোকেট এম এ জিন্নাহ, সাবেক অধ্যক্ষ শহীদুল্লাহ খান, ডিএসকে‘র নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ, অফিসার ইনচার্জ কামরুল ইসলাম, প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাখাওয়াত হোসেন সজিব, বিকাশ সরকার প্রমুখ। এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তান, শহীদ পরিবারের সন্তানগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, উপজেলায় কর্মরত অফিসার্সবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ সহ সুশীল সমাজের ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী এ দেশীয় দোসর আল-বদর, আল সামস্ এর সাহায্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে। বাংলাদেশকে মেধাশুন্য করে দিতে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। এমন ন্যাক্কার ঘটনার পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এই দিনকে “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস” ঘোষণা করেন। এই দিনের তাৎপর্য নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে সকলকে আহবান জানানো হয়।
(সাজিদ পিয়াল):বাসাইল শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। মহান শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহিদ হওয়া দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন শহিদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন জাতির মেধা ও মননের আলোকবর্তিকা। স্বাধীনতার প্রাক্কালে পরিকল্পিতভাবে তাঁদের হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের আদর্শ ও ত্যাগ আজও জাতিকে পথ দেখাচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের ইতিহাস জানানো অত্যন্ত জরুরি বলে বক্তারা মত প্রকাশ করেন। সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
(সাজিদ পিয়াল):শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে টাঙ্গাইলে গভীর শ্রদ্ধা বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর ও গৌরবময় দিন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে আজ শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সকালে টাঙ্গাইল বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, টাঙ্গাইল জনাব শরীফা হক। এ সময় শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করা হয় এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শরীফা হক। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা পরিকল্পিতভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এটি ছিল স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার একটি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন জাতির বিবেক তাঁদের চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রেরণা। তিনি আরও বলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আমাদেরকে সত্য ন্যায় ও মানবিকতার পথে চলার শিক্ষা দেয়। নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ছড়িয়ে দেওয়া এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শে দেশ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।আলোচনা সভায় সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ তাঁদের স্মৃতিচারণায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান তুলে ধরেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ শিক্ষাবিদ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আলোচনায় অংশ নেন।এছাড়াও অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত থেকে কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি শোষণমুক্ত সমৃদ্ধ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। গভীর শ্রদ্ধা ভাবগাম্ভীর্য ও শোকের আবহে টাঙ্গাইলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম বলেছেন, “দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে নির্বাচন হলে কৃষক শ্রমিক জনতালীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু যদি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বাদ দিয়ে শুধু বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত নির্বাচন করে, তাহলে ২০ শতাংশ মানুষও ভোট দিতে যাবে না। সে ভোটে আমরাও অংশ নেবো না।” বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে কাদেরিয়া বাহিনীর উদ্যোগে আয়োজিত টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। “শেখ হাসিনার অন্যায় আওয়ামী লীগের অন্যায় নয়” — কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবীর বলেন, “প্রধান উপদেষ্টাকে আমি চিনতে পারিনি। আমার আগে আপনাকে চিনেছে শেখ হাসিনা, চিনেছে দেশের মানুষ। শেখ হাসিনার অন্যায় বঙ্গবন্ধুর অন্যায় নয়, আওয়ামী লীগের অন্যায়ও নয়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যায়ও নয়।” তিনি আরও বলেন, “এই আওয়ামী লীগকে জন্ম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হক। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ জন্ম দেননি। তাকে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করি না, কারণ তিনি মনে করেন দেশটা তার বাবার—আর আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু দেশের সেবক, আমিও দেশের সেবক, আমরা সবাই আল্লাহর গোলাম।” “আওয়ামী লীগের বিচার কেউ করতে পারবে না” কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, “শেখ হাসিনার বিচার করতে চাইলে করুন, কিন্তু আওয়ামী লীগের বিচার করতে পারবেন না। আইয়ুব খান পারেনি, ইয়াহিয়া খান পারেনি—আপনারাও পারবেন না। আওয়ামী লীগের যারা দোষ করেছে তাদের বিচার হোক, কিন্তু সবাই তো দোষ করেনি।” বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি, জিয়াউর রহমানও ছিলেন। দু’জনকেই বীরোত্তম খেতাব দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু সরকার। এখানে ভিন্নতা নেই; ভিন্নতা সৃষ্টি করেই আমরা স্বাধীনতা–বিরোধী জামায়াতকে শক্তিশালী করেছি।” জামায়াত প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াত যে ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন করেছে—বাংলাদেশের মা–বোনের সম্মান ধ্বংস করেছে—তারা ক্ষমা না চাইলে দেশে কথা বলার সুযোগ পেত না। বঙ্গবন্ধুর মানবিকতার কারণেই তারা বেঁচে যেতে পেরেছে।” টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস: ইতিহাস, স্মৃতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল পাক হানাদার মুক্ত হয়—এই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছরের মতো এবারও কাদেরিয়া বাহিনী আলোচনা সভা আয়োজন করে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের স্মৃতি, তখনকার পরিস্থিতি এবং স্বাধীনতার মূল্যায়ন তুলে ধরেন। সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবীর বলেন, “বাংলাদেশ আজ যেকোনো সংকটেও টিকে আছে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কারণেই। দেশের সংকট মোকাবিলায় নতুন প্রজন্মকেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হবে।” সভায় বক্তারা কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন— সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, টাঙ্গাইল জেলা মুজিব বাহিনীর প্রধান আলমগীর খান মেনু, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা বীরপ্রতিক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার ফজলুল হক বীরপ্রতিক, আবুল কালাম আজাদ বীরবিক্রম, কাদেরিয়া বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার কাজী হুমায়ুন বাঙ্গাল, দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান, দেলদুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তহের বাবলু প্রমুখ। সভা শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে বিশেষ দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস ইতিহাসের গৌরবময় এক অধ্যায় যেটি আজকে নানাভাবে পালিত হচ্ছে ১১ ডিসেম্বর, টাঙ্গাইলের জনগণের জীবনে এক অনন্য গৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখলদারিত্ব থেকে টাঙ্গাইলকে সম্পূর্ণ মুক্ত ঘোষণা করেন বাংলার বীর সন্তানেরা। বিজয়ের পতাকা উড়েছিল টাঙ্গাইলের আকাশে—জেগে উঠেছিল স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে টাঙ্গাইলের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বীরত্বগাঁথায় ভরপুর। টাঙ্গাইলের অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও ত্যাগ শুধু দেশেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীর দুর্ধর্ষ আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত হামলায় ১১ ডিসেম্বরের ভোরে টাঙ্গাইলের পথে বিজয়ের অগ্রযাত্রা শুরু হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই শহর শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার এই গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণ করে টাঙ্গাইলবাসী আজও উৎসবে মেতে ওঠে। বাঁধভাঙা আনন্দে ভরে ওঠে পুরো শহর—গৌরব ও ইতিহাসের দিনটিকে ঘিরে নানা আয়োজন হয়ে থাকে জেলার সর্বত্র। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে টাঙ্গাইল মুক্ত দিবস। শহরজুড়ে আলোচনাসভা, র্যালি, প্রার্থনা ও স্মৃতিচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইল।
সাজিদ পিয়াল: টাঙ্গাইল, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫: গৌরব ও ঐতিহ্যের দিন টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে আজ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক বর্ণাঢ্য আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, টাঙ্গাইলের অবদান এবং স্বাধীনতার চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতেই এ আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব। তিনি তাঁর বক্তব্যে ১৯৭১ সালের এই দিনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন—টাঙ্গাইলের মানুষ অসম সাহসিকতা, ত্যাগ ও ঐক্যের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছিল। তাঁর মতে, টাঙ্গাইলের মুক্তির দিন শুধু একটি জেলা নয়, পুরো জাতির বিজয়সংগ্রামের বড় মাইলফলক। বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব আরও বলেন, যে স্বাধীনতার জন্য আমরা জীবন বাজি রেখেছিলাম, সেই স্বাধীনতা আজকের তরুণ প্রজন্মের হাতে সুরক্ষিত থাকবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ইতিহাস জানতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হবে, তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।সভায় অন্যান্য বক্তারাও ১১ ডিসেম্বরের ঘটনা, বিডিআর বিদ্রোহী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘবদ্ধ অভিযান, টাঙ্গাইলের কৌশলগত গুরুত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখযুদ্ধে জেলার অবদান তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিকব্যক্তি, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন সড়কে র্যালি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং শহীদদের স্মরণে দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ ও দেশাত্মবোধক আবেগের উচ্ছ্বাসে ভরপুর অংশগ্রহণ।
১১ ডিসেম্বর: টাঙ্গাইল পাক হানাদারমুক্ত দিবস আজ ১১ ডিসেম্বর—টাঙ্গাইলবাসীর গৌরবোজ্জ্বল ও ঐতিহাসিক একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন। এই দিনে টাঙ্গাইল জেলায় নতুন করে সূচনা হয় স্বাধীনতার, মুক্তির, বিজয়ের মহামন্ত্রে উজ্জ্বল এক প্রত্যয়ের। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, শত্রুমুক্তির আগের রাতটি ছিল টাঙ্গাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ রাত। সারারাত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী ও ধারাবাহিক আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। টানা গোলাগুলিতে শহর ও শহরতলির মানুষজন কাটায় এক নিদ্রাহীন রাত। অবশেষে ১১ ডিসেম্বরের সকালটি নিয়ে আসে কাঙ্ক্ষিত সেই বিজয়ের বারতা। ধ্বংসস্তূপ, রক্তের দাগ, অশ্রুভেজা বিদায়ের মাঝেও হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে—উল্লাসে, আবেগে ও স্বাধীনতার গর্বে উদ্বেল হয়ে। মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের ভূমিকা ছিল অনন্য। সাহস, সংগঠন, পরিকল্পনা ও বীরত্বে এ অঞ্চলটি গড়ে তোলে এক বিশেষ দৃষ্টান্ত। বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ সেসময় শত্রুর বিরুদ্ধে অসাধারণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাদের বীরত্বগাঁথা শুধু দেশের সীমানায় আটকে থাকেনি—পৌঁছে যায় সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে। ইতিহাসবিদরা বলেন, টাঙ্গাইলের এই প্রতিরোধ না হলে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের অগ্রযাত্রা এতটা দ্রুত সফল হতো না। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পরপরই টাঙ্গাইলে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ। ২৬ মার্চ টাঙ্গাইল থানায় উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা—যা মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভিক দিনে এ জেলার অগ্রণী ভূমিকার প্রতীক। ৮ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে টাঙ্গাইল আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। পরে কালিহাতীর পুংলি এলাকায় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পাক সেনারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে তারা প্রাণভয়ে সারারাত ধরে টাঙ্গাইল ছেড়ে ঢাকার দিকে পালাতে থাকে। ১০ ডিসেম্বর রাতে কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক টাঙ্গাইলে প্রবেশ করেন। পরদিন ১১ ডিসেম্বর সকালে কমান্ডার বায়োজিদ, খন্দকার আনোয়ার এবং পরে ব্রিগেডিয়ার ফজলুর রহমান টাঙ্গাইলে পৌঁছান। শহরের সার্কিট হাউজে অবস্থানরত পাকিস্তানি খান সেনারা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আনুষ্ঠানিকভাবেই টাঙ্গাইল হয় শত্রুমুক্ত। এই দিনটি তাই শুধু একটি জেলার নয়—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনবদ্য গৌরবের দিন। আজ টাঙ্গাইলবাসী স্মরণ করছে সেই বীরদের, যারা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার পতাকাকে সমুন্নত করেছিলেন।
বাসাইল রিপোর্টার্স ইউনিটির নবগঠিত কমিটির সভাপতি-সম্পাদকদের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ। বাসাইল রিপোর্টার্স ইউনিটির নবগঠিত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সদস্যরা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম)-এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর ২০২৫) এ সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ বঙ্গবীরের বাসভবনে গিয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং সংগঠনের কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও স্থানীয় সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।এ সময় বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সৎ সাংবাদিকতা ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের বিষয়ে নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।তিনি বলেন,সত্য, ন্যায় ও মানুষের অধিকারের পক্ষে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভীকভাবে কাজ করলে সমাজ উপকৃত হবে। সাক্ষাৎকালে কমিটির সদস্যরা বঙ্গবীরের শারীরিক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন এবং ভবিষ্যতে তার দিকনির্দেশনা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ সংগঠনের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাংবাদিকতা ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড আরও জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন ১০ ডিসেম্বর। এই দিন গোপালপুর ও আশপাশের দুটি অঞ্চল পাক হানাদারমুক্ত হয়ে বিজয়ের পতাকা উড়েছিল। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রায় আট মাস হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, লুটপাট ও অমানবিক শোষণের পর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে এদিন মুক্তির স্বাদ পায় গোপালপুরবাসী। পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৪ বছরের দুঃশাসন, রাজনৈতিক বঞ্চনা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও জাতিগত নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু তার আগের রাত ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্বর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে, যার ছায়া নেমে আসে গোপালপুরেও। মার্চের প্রথম দিক থেকেই দেশের অবস্থা অনুধাবন করে গোপালপুরের দেশপ্রেমিক মানুষ সংগঠিত হতে শুরু করেন এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। গোপালপুর থানা—যা টাঙ্গাইল জেলার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত—ছিল পাক সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। ৭ ডিসেম্বর নিকরাইল রানী দিনমনি হাইস্কুলে ৭০ জন কমান্ডারের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কাদেরিয়া বাহিনী প্রধান বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী গোপালপুর থানায় আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর নির্দেশে নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর, আব্দুর রাজ্জাক ভোলা, আসাদুজ্জামান আরজু, বকুল, আব্দুল হাকিম, নূরুল ইসলাম, আনিসুর রহমান আনিস ও খন্দকার হাবিবুর রহমান কোম্পানিগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর কোম্পানি গরুহাটি দিয়ে,আরজু কোম্পানি দক্ষিণ দিকের কীর্তনখোলা অংশ দিয়ে,আর আব্দুল হাকিম কোম্পানি মর্টারসহ পশ্চিম দিক দিয়ে আক্রমণ চালাবে।পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর রাতভর থানা আক্রমণ শুরু হয় এবং পাক সেনারা চাপে পড়ে যায়। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ৩টায় ভারতীয় বায়ুসেনার তিনটি মিগ-২১ বিমান গোপালপুর ও ঘাটাইল থানার ওপর একযোগে বোমা বর্ষণ ও ট্রাম্পিং করে। বিমান হামলায় ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা রাতের আঁধারে পালাতে শুরু করে। এদিকে, গোপালপুরের সূতি, নন্দনপুর, ভূয়ারপাড়া, চরপাড়া ও গরুহাটি এলাকায় অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ দূরত্ব থেকে শত্রু ঘেরাও করে রাখেন। পাকবাহিনী পালিয়ে যেতে শুরু করলে মিঞা কমান্ডার ও চাঁদ মিঞার প্লাটুন ধাওয়া করে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে গোলাগুলি চালান। ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টার মধ্যেই পাক সেনারা পুরোপুরি গোপালপুর ত্যাগ করে। বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে চাঁদ মিঞার প্লাটুন গুলি করতে করতে থানায় প্রবেশ করেন। এর পরপরই গোপালপুর থানা দখলে আসে মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রথমে চাঁদ মিঞা, সাহেব আলী, শামছুল আলম, আব্দুল লতিফ, আজাহার, কাদের তালুকদার, তোরাপ সিকদার, ইসমাইল হোসেন মৃধা ও আব্দুস সোবহান তুলা থানায় উঠেন। পরে কমান্ডার আসাদুজ্জামান আরজু, বিমল, হায়দার, জয়নাল, শুকুরসহ আরও মুক্তিযোদ্ধারা থানায় প্রবেশ করেন। সেদিন ছিল গোপালপুরের মানুষের জন্য এক অবর্ণনীয় আনন্দের দিন। বিভিন্ন এলাকার লোকজন থানায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে, কোলাকুলি করে অভিনন্দন জানান। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়। বিকেলে গোপালপুর থানার ছাদে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়—গোপালপুর হানাদারমুক্ত। এই দিনটি শুধু একটি থানা মুক্তির দিন নয়, এটি গোপালপুরবাসীর সংগ্রাম, ত্যাগ আর সাহসিকতার অবিনাশী স্মৃতি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই দিনটি স্মরণ করবে গর্ব ও শ্রদ্ধায়।
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ইউনিটির আহ্বায়ক কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স হলরুমে আয়োজিত পরিচিতি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বজলুর রহমান মিয়া। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খান আলো, টাঙ্গাইল জজ কোর্টের এপিপি জামাল উদ্দিন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল খালেক দেওয়ান, সদস্য শেখ ফিরোজ, হারুন-অর-রশিদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার কেবি কায়সার, সদস্য আবু সাইদ মিয়া ও খন্দকার বদরুদুজা কায়ছার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাসাইল পৌরসভা ও সদর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব রুকন উদ্দিন আলমগীর, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের আহ্বায়ক শামীমা খান সীমা এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সভায় বক্তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী বৃদ্ধি, চিকিৎসাসেবা শক্তিশালীকরণ, পরিবার-পরিজনের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্থায়ী কল্যাণ তহবিল তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, স্থানীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার রক্ষায় একতা, শৃঙ্খলা ও সংগঠনের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা প্রয়োজন। পাশাপাশি নতুন কমিটির সদস্যদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়। পরিচিতি সভার শেষে দেশ, জাতি এবং সকল বীর শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করা হয়।
টাঙ্গাইল সদর-৫ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেলেন সুলতান সালাউদ্দিন টাঙ্গাইল সদর-৫ আসনে অবশেষে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দলীয় মনোনয়ন পেলেন সুলতান সালাউদ্দিন। বহুদিন ধরে দলীয় মনোনয়নের জন্য তার সক্রিয় প্রচেষ্টা, মাঠে কাজ করা এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের একযোগে সমর্থনের ফল হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। মনোনয়ন পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সুলতান সালাউদ্দিন বলেন— টাঙ্গাইল সদরবাসীর উন্নয়ন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আমি মাঠে কাজ করব। জনগণই আমার শক্তি।” তার মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা ও নতুন আশার সঞ্চার দেখা গেছে। অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় তিনি এই মনোনয়নের যোগ্য দাবিদার ছিলেন। এদিকে মনোনয়ন প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইল সদর-৫ আসনে নির্বাচনী হাওয়া আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে এই আসনে এবার ভোটযুদ্ধ আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে মর্যাদাপূর্ণভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস (১৪ ডিসেম্বর) এবং মহান বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) উদযাপনের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তুহিন হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ নবাব আলী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার, উপজেলা ভেটেরিনারি অফিসার ডা. গোলাম মোর্শেদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খাইরুল আলম, গোপালপুর পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মো. দেলোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম রুবেল, পৌর বিএনপির সভাপতি খালিদ হাসান উথান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম তালুকদার লেলিন, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সভায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। বক্তারা বলেন, বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। নতুন প্রজন্মের কাছে শহীদদের আত্মত্যাগের মহিমা তুলে ধরতে এসব কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র্যালি, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বক্তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার আহ্বান জানান। উপজেলা প্রশাসন জানায়, দিবসগুলোকে সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে পালন করতে সকল দপ্তর, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষ্যে বহুল প্রতীক্ষিত আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫ এর বর্ণাঢ্য উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে টাঙ্গাইল জেলা স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এ ক্রীড়াযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ক্রীড়াবিদ, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, “তারুণ্যকে সুস্থ ও উদ্দীপনাময় পথে এগিয়ে নিতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। ফুটবল জেলা টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য—এ টুর্নামেন্ট শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, দলীয় মনোভাব ও ক্রীড়া নৈতিকতা শেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” তিনি আরও জানান, নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তির আসক্তি থেকে দূরে রেখে মাঠমুখী করতে জেলা প্রশাসন সবসময়ই ক্রীড়াবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে কাজ করছে। টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে জেলার কলেজগুলোতে চলছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। দলগুলো নিজেদের সেরা প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা যাচ্ছে বাড়তি উৎসাহ; গ্যালারিতেও ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিযোগিতার উত্তাপ। এবারের আয়োজনে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, নাগরপুর, সখীপুর, দেলদুয়ার, মধুপুরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কলেজগুলো অংশগ্রহণ করছে। প্রতিদিন বিভিন্ন দলের মধ্যকার নকআউট ও লিগ ভিত্তিক খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজকদের আশা, পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে জেলাজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের ঢল নামবে। আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, ফুটবল টাঙ্গাইলের প্রাণের খেলা। এই টুর্নামেন্ট তরুণদের মাঝে ক্রীড়া চেতনা, সুস্থ প্রতিযোগিতা এবং সমৃদ্ধ ক্রীড়া সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি দলীয় বন্ধন, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশেও এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আগামী এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধাপে খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ফাইনাল খেলাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন সার্বিকভাবে টুর্নামেন্ট সফল করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। টাঙ্গাইলে ক্রীড়া প্রাণের স্রোত এনে দেওয়া এ আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫ এবারও নতুন উদ্দীপনা ছড়িয়ে দিয়েছে ফুটবলপাগল তরুণদের মাঝে।
ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় বিশ্ববাজারে কমেছে তেলের দাম। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতি হলে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে। ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩৩ সেন্ট কমে ৬২.৮ ডলার, আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ৩২ সেন্ট কমে ৫৮.৩৩ ডলার হয়েছে। মার্কিন থ্যাংকসগিভিং ছুটির কারণে লেনদেন তুলনামূলক ধীর ছিলো। বুধবার তেলের দাম ১ শতাংশ বেড়েছিলো। তবে বাজার এখনো অনিশ্চিত। একদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা, অন্যদিকে অতিরিক্ত সরবরাহের শঙ্কা রয়েছে। এদিকে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ আগামী সপ্তাহে রাশিয়া সফর করবেন সম্ভাব্য শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে। তবে রাশিয়ার এক শীর্ষ কূটনীতিক বলেছেন, মস্কো বড় ধরনের কোনো ছাড় দেবে না। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতি হলে ওয়ার প্রিমিয়াম কমে যাবে, অর্থাৎ তেলের দাম আরও নেমে যেতে পারে। শান্তি হলে রাশিয়ার তেল সহজে বাজারে আসবে, যা ইতোমধ্যেই সরবরাহ বহুল বাজারে আরও চাপ বাড়াবে। এ কারণে তেলের দাম মাঝারি মেয়াদে নিচের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। বাংলাভিশনের গুগল নিউজ ফলো করতে ক্লিক করুন এদিকে ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাতে পারে। সুদের হার কমলে অর্থনীতি চাঙা হয় এবং তেলের চাহিদা বাড়ে।
নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান। গত রোববার (২৩ নভেম্বর) রাতে সখীপুর সরকারি কলেজ মোড়ের এক নির্বাচনী সভায় তিনি বলেন, “আমি নিজেই যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা, সারা জীবন মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করে এসেছি এবং করে যাব।” তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কয়েকটি ফেসবুক আইডি থেকে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সখীপুর উপজেলার কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ আযম খান দীর্ঘদিন ধরেই সখীপুর-বাসাইলের রাজনীতিতে সক্রিয়। তবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা, এ তথ্য আগে কখনো আমাদের জানা ছিল না। তারা বলেন, হয়তো তাদের তথ্য অসম্পূর্ণ থাকতে পারে, তবে আহমেদ আযম খান একজন মুক্তিযোদ্ধা, এমন দাবির কথা এর আগে শোনা যায়নি। তবে সোমবার (২৪ নভেম্বর) সখীপুর উপজেলার একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমি সক্রিয় আঞ্চলিক (বাসাইল অঞ্চলের) সংগঠকদের মধ্যে একজন ছিলাম। আমি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই তখনকার আমাদের যিনি ছাত্রনেতা ছিলেন, খন্দকার আব্দুল বাতেনের সঙ্গে। আমরা যাঁরা খন্দকার আব্দুল বাতেনের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিলাম, তাঁদের কেউই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতাপ্রাপ্ত নই এবং তালিকাভুক্তও নই। কারণ উনি (আব্দুল বাতেন) কোনো স্বীকৃত সাবসেক্টর কমান্ডার ছিলেন না। আমরা তখন তুখোড় ছাত্র রাজনীতি করেছি। এই দেশ স্বাধীনের জন্য ভূমিকা পালন করেছি। কোনো ভাতার জন্য চিন্তা করে এসব করিনি।’ আহমেদ আযম খান আরও বলেন, ‘এর আগে আওয়ামী লীগের সময়েও আমি টক শোতে অনেকবার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলাতে ডিজিএফআইয়ের কথা শুনেছি। তাঁরা বাসাইল ও সখীপুরে তদন্ত করতে এসেছে যে, আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি কি-না। কিন্তু আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন আঞ্চলিক সংগঠকও ছিলাম।’
টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তাঁর বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক খালেক মণ্ডলকে মারধর করার হুমকি এবং আপত্তিকর ভাষায় কথা বলার অভিযোগ উঠেছে। তবে বিএনপি নেতা আহমেদ আযম খান ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ওই অডিও এডিট করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক মণ্ডলের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায়। তিনি ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক মণ্ডল জানান, গত বুধবার (১৯ নভেম্বর) বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে আহমেদ আযম খান তাঁকে ফোন করেন। তাঁদের কথোপকথন হয় ৩ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড। সেই কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক মণ্ডল বলেন, আহমেদ আযম খান আমাকে ফোন করে গালাগাল করেছেন। পিঠের চামড়া থাকবে না বলে হুমকি দিয়েছেন। তিনি আমার সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছেন, তার হুবহু রেকর্ডের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই অডিওতে বিএনপির মনোনিত এমপি প্রার্থী আহমেদ আযম খান বলেন, আপনি আমার নির্বাচনী এলাকায় কমিটি করবেন, আর আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না? আপনার বাড়ি কোথায়? আপনার সিএস আরএস কী। আপনি আমার নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত করবেন, এটা করতে দেওয়া হবে না। খামোশ। আপনার পিঠের চামড়া থাকবে না। কীভাবে আপনি বাসাইল আসেন, দেখব। ফাজিলের বাচ্চা। তিনি আরও বলেন, আপনি কি একা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন? আর কেউ করে নাই? ফাইজলামি পাইছেন। মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পকেটে নিয়ে আইসেন। মুক্তিযোদ্ধার সভাপতি হয়ে দুর্নীতি করছেন। টাকার লোভে পাইছে। টাকার লোভ আপনাকে খাইয়ে দেব, আপনার পিঠের চামড়া থাকবে না, একেবারে খাইয়ে দেব। ফাজিলের বাচ্চা, তোর সাথে আবার কিসের শ্লালিনতা রে, আমি তোকে দেখব। হুমকি দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা আহমেদ আযম খান বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, তবে কোনো হুমকি দিইনি। অডিওতে এআই ব্যবহার করে অন্য রকম করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে উপর্যুপরি চক্রান্ত করছে। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে অডিওটি ভাইরাল করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সখীপুর-বাসাইল আমার নির্বাচনী এলাকা। খালেক মণ্ডল আমার সঙ্গে কথা না বলে তাঁর ব্যক্তিগত লোকজনকে দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি দিয়েছেন। তাঁরা আমার নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত ও আমার ইমেজ নষ্ট করতে অডিও এডিট করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমি অপেক্ষা করছি। আমি তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক মণ্ডল বলেন, ওই অডিও স্পষ্ট। এখানে কোনো এআই ব্যবহার করা হয়নি। তিনি টাঙ্গাইল সদর থানায় অনলাইনে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড থেকে তাঁকে মামলা করতে বলা হয়েছে। তিনি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন
ঢাকার এক আলোচনায় মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র আইনজীবী ফজলুর রহমান পরিষ্কার ভাষায় বললেন, শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে তার কোনও ব্যক্তিগত আপত্তি নেই, কিন্তু যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো কাঠামোতে এ বিচার হওয়া তিনি গ্রহণ করতে পারছেন না। তিনি বলেন, হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে—গণতন্ত্রহীনতা, গুম, হত্যা, মিথ্যা মামলা—এসবের জন্য কঠোর শাস্তি প্রাপ্য। “তার ফাঁসি হোক, আমার আপত্তি নেই,”—এ কথা বললেও তিনি জোর দিয়ে বলেন—“কিন্তু এই ট্রাইব্যুনালে বিচার টিকবে না।” তার মতে, ১৯৭৩ সালের যে আইনে রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের বিচার হয়েছে, সেই একই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার হওয়া আইনি দৃষ্টিতে ভুল। এটি যুদ্ধাপরাধের কোর্ট, রাজনৈতিক অপরাধের নয়। ফজলুর রহমান অভিযোগ করেন, বর্তমান ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিম নিরপেক্ষ নয়। তিনি উল্লেখ করেন, প্রধান প্রসিকিউটর অতীতে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং খুনের মামলারও আসামি ছিলেন। “বরের পিশি, কনের মাসি হয়ে বিচার হয় না”—বলে তিনি প্রসিকিউটরদের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তোলেন। তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে কোনও গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে উচ্চ আদালত এ ট্রাইবুনালের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। তখন দেওয়া রায়ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। “যদি কোর্টই ঠিকভাবে গঠিত না হয়—তাহলে তার দেওয়া ফাঁসির রায়ের মূল্য কী?”—তিনি বলেন। নিজ দলের অবস্থান থেকেও ভিন্ন মত প্রকাশ করে তিনি জানান, দল তাকে অভিনন্দন জানালেও তিনি কেবল একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী হিসেবে নিজের বিবেক অনুযায়ী কথা বলছেন। শেষে তিনি আবারও স্পষ্ট করেন—“ভারত থেকে ধরে এনে হাসিনাকে ফাঁসি দিলেও আমার আপত্তি নেই। কিন্তু ভুল কোর্টে বিচার হলে সেটা আমি মানতে পারি না।”
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১৭ নভেম্বর। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁকে দাফন করা হয় টাঙ্গাইলের সন্তোষে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সন্তোষে তাঁর মাজার প্রাঙ্গণে পরিবার, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ভক্ত, রাজনীতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে। এ ছাড়া মাজার প্রাঙ্গণে সাত দিনব্যাপী মেলা চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল রবিবার ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বলেছেন, ‘ভাসানী সব সময় আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।’ আবদুল হামিদ খান ভাসানী অধিকারবঞ্চিত, অবহেলিত ও মেহনতি মানুষের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় আজীবন নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় সংকটে জনগণের পাশে থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন। ক্ষমতার কাছে থাকলেও তাঁকে কখনো ক্ষমতার মোহ আবিষ্ট করেনি। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন নির্মোহ, অনাড়ম্বর ও অত্যন্ত সাদাসিধা। তাঁর সাধারণ জীবনযাপন দেশ ও জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন। শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য ভাসানী আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আবদুল হামিদ খানের জন্ম ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার সয়াধানগড়া গ্রামে। তিনি ছিলেন হাজী শরাফত আলী ও মজিরন বিবির ছোট সন্তান। তাঁকে ছোটবেলায় ‘চেগা মিয়া’ নামে ডাকা হত।তিনি জীবনের বড় অংশই কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। তিনি তাঁর কৈশোর থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মওলানা ভাসানী আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি লাইন প্রথা উচ্ছেদ, জমিদারদের নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন করেছেন। তাঁর উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি সর্বদলীয় ওয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাধীনতার পর তাঁর সর্বশেষ কীর্তি ছিল ফারাক্কা লং মার্চ। মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকালে তাঁর মাজারে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁর ভক্ত-অনুসারী ও মুরিদানরা সন্তোষে এসেছেন। সন্তোষ তাঁর মাজার প্রাঙ্গণে মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সাত দিনব্যাপী ‘ভাসানী মেলা’ চলছে।
উচ্চ আদালতের জামিনে মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী রোববার (১৬ নভেম্বর) ঢাকার শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। ৮৬ বছর বয়সী লতিফ সিদ্দিকী এদিন ছোটভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে হাজির হন। তার আইনজীবী রেজাউল করিম হিরণ আদালতে আবেদন করে বলেন, ‘বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণে হাজিরা আইনজীবীর মাধ্যমে দেওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করছি।’ আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে লতিফ সিদ্দিকীকে আর সশরীরে হাজিরা দিতে হবে না। হাজিরা শেষে ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে তারা আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। মামলাটি ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান বিষয়ক এক আলোচনা সভায় ‘মব’ হামলার ঘটনায় দায়ের হয়। ওই দিন লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাসহ ১৬ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। পরদিন শাহবাগ থানায় তাদের বিরুদ্ধে ‘দেশকে অস্থিতিশীল করা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। প্রসঙ্গত, ৬ নভেম্বর হাই কোর্ট লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল পান্নাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়। এরপর জামিনের নথি পৌঁছানোর পর ১২ নভেম্বর কেরাণীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। মামলায় আরও গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম ও আবু আলম শহীদ খান। অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন, শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, মঞ্জুরুল আলম, কাজী এ টি এম আনিসুর রহমান বুলবুল, গোলাম মোস্তফা, মো. মহিউল ইসলাম, মো. জাকির হোসেন, মো. তৌছিফুল বারী খান, মো. আমির হোসেন সুমন, মো. আল আমিন, মো. নাজমুল আহসান, সৈয়দ শাহেদ হাসান, মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, দেওয়ান মোহম্মদ আলী ও মো. আব্দুল্লাহীল কাইয়ুম।
গাজার ভবিষ্যৎ শাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখন তর্ক তুঙ্গে, তখন খুব বেশি শব্দ না করেই নিজেদের অবস্থান শক্ত করে ফেলেছে হামাস। যুদ্ধবিরতির পরদিই দেখা যায়—ইসরাইল সেনারা যে অঞ্চলগুলো ছাড়ছে, সেসব জায়গায় প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে টহল দিচ্ছে হামাসের সদস্যরা। গাজার অভ্যন্তরে প্রশাসনিক কাজও এখন তাদের হাতেই। বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, কর আদায়, শুল্ক নির্ধারণ—সবই চলছে হামাসের নির্দেশনায়। স্থানীয়দের দাবি, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে মূল্যবৃদ্ধির জন্য তারা নয়; বরং সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরাই দায়ী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ভিন্ন। তাদের মতে, পণ্যের উপর কর বসিয়ে এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে হামাস, আর তাই তারা কোনোভাবেই চাইছে না দলটি আবারো সরকার পরিচালনা করুক। অন্যদিকে গাজা থেকে হামাসকে সরানো বা নিরস্ত্র করার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো এক অবস্থানে থাকলেও এর বিরোধিতা করছে রাশিয়া, চায়না এবং কয়েকটি আরব রাষ্ট্র। পশ্চিমাদের পছন্দ মাহমুদ আব্বাসের প্রশাসন বা আন্তর্জাতিক কোনো অন্তর্বর্তী সরকার—যেমন টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে। কিন্তু এই প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক শক্তি মানতে নারাজ। মাঠের বাস্তবতা বলছে—ইসরাইল দুই বছর ধরে গাজার ৮০ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল। যুদ্ধবিরতির পর তাদের অবস্থান সরে এলেও এখনো প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকা তাদের দখলে। বাকি ৪৭ শতাংশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ, যাদের জীবনযাত্রা পরিচালিত হচ্ছে হামাসের কাঠামোর ভেতরেই। ২০০৭ সালে ফাতাহ ও মাহমুদ আব্বাসের প্রশাসন থেকে গাজার ক্ষমতা নেয় হামাস। তারপর থেকে অঞ্চলটির প্রশাসন, নিরাপত্তা এবং বাজারব্যবস্থার সব ক্ষেত্রই ধীরে ধীরে তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও দলটির কাঠামো এখনো সক্রিয়। নিহত চার গভর্নরের জায়গায় নতুন চারজনকে নিয়োগ দিয়েছে তারা, আর সরকারি কর্মচারীরাও প্রতি মাসে বেতন পেয়ে গেছে। বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন—হামাস স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, গাজাকে ঘিরে যে কোনো ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণ তাদের বাইরে রেখে তৈরি করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক টানাপোড়েন যত বাড়ছে, তাদের অবস্থান ততই আরও দৃঢ় হয়ে উঠছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এনেছে। ফলে সীমান্ত অঞ্চলে টানাপোড়েন আরও তীব্র হচ্ছে। ভারতের রাজধানী দিল্লি ও পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ঘটে যাওয়া একাধিক সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। উভয় দেশই পাল্টাপাল্টি অভিযোগে মুখর, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও অচল করে তুলছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে তা কেবল দুই দেশের জন্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যও বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না হলে এটি একটি “ফুটন্ত পাত্রের” মতো বিস্ফোরিত হয়ে পড়বে, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে আফগানিস্তানসহ পুরো অঞ্চলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই দেশের জনগণ ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছেন। একই সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে উত্তেজনা প্রশমনের প্রচেষ্টাও চলছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্ত্রাসবাদের পারস্পরিক দোষারোপ বন্ধ না হলে কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির নতুন ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) হলেন মোঃ মনিরুজ্জামান। নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবারে ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অভিজ্ঞ সংবাদকর্মী মোঃ মনিরুজ্জামান। তার দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতা ও নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠানকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা জানান, দুর্নীতি দমন ও সামাজিক অন্যায়-অবিচার তুলে ধরতে মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির কর্মকাণ্ডকে আরও এগিয়ে নেবে। এই উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেনঃ ১️⃣ মোঃ শাহ নেওয়াজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ২️⃣ মোঃ শহিদুল ইসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ৩️⃣ মোঃ মাহমুদুল হাসান, বার্তা সম্পাদক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন— “আমরা মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি। তার প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবার অচিরেই আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।”
মাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৩৩৪তম পর্বে নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে নিয়ামত কমে যাবে কি না, সে বিষয়ে ঢাকা থেকে চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন একজন দর্শক। অনুলিখন করেছেন জান্নাত আরা পাপিয়া। প্রশ্ন : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে কি নিয়ামত কমে যাবে? উত্তর : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা কুফরি। এটা বড় কুফরি না, ছোট কুফরি। যদি আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কুফরি কাজ করে থাকলেন। এ জন্য আল্লাহ কোরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো, আমার সঙ্গে কুফরি করো না।’ আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন, আল্লাহর নিয়ামত লাভ করে সুন্দর জীবনযাপন করা, এটা যদি কেউ আল্লাহর কাছে সত্যিকার অর্থে তুলে ধরতে না পারে, তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া করলেন না, কুফরি করলেন। এই জন্য আল্লাহ সুরা দোহার শেষ আয়াতে বলেছেন, ‘তুমি তোমার রবের নিয়ামত প্রকাশ করো। কারণ, তোমার কাছে যখন নিয়ামত আসছে, তখন আল্লাহ পছন্দ করেন যে তুমি আল্লাহর এই নিয়ামতের বিষয়টি তুলে ধরবে।’ আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহ আমাকে এই নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ নিয়ামতকে বান্দার কাছে তুলে ধরার জন্য বলেছেন, বহিঃপ্রকাশ করার জন্য বলেছেন। বহিঃপ্রকাশ দুই ধরনের হতে পারে। একটি হলো নিয়ামতের ব্যবহারের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, নিয়ামতের বিষয়টি হলো মানুষের কাছে নিয়ামত তুলে ধরবে। যাতে করে আল্লাহর প্রশংসা প্রকাশ পায়। নিয়ামতের শুকরিয়া যদি কেউ আদায় না করেন, তাহলে কুফরি হবে। আল্লাহ বলেছেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করে থাক, তাহলে আমি আরো বৃদ্ধি করে দেব। বান্দারা যখন নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে, তখন আল্লাহ আরো নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করে দেন। আর যদি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা হয়, তাহলে আল্লাহ নিয়ামত কমিয়ে দেবেন এবং সেইসঙ্গে আরেকটি কঠিন বাণী আল্লাহ বলেছেন, ‘জেনে রাখো আল্লাহর কঠিন আজাবও তোমাদের জন্য অবধারিত থাকবে।’ নিয়ামতের শুকরিয়া শুধু মুখে আদায় করা যথেষ্ট নয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর শুকরিয়া আমলের মাধ্যমে আদায় করো।’ সুতরাং বান্দারা শুকরিয়া আদায় করবে। শুকরিয়ার অনেকগুলো দিক রয়েছে, তার মধ্যে আমলের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা হলো শুকরিয়ার সর্বোচ্চ স্তর।
তিনি ছিলেন মানবজাতির আদর্শ। তিনি অত্যন্ত উদার ও বিনয়ী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং একজন সাহসী যোদ্ধা। এছাড়াও তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক এবং একজন সফল প্রচারক ছিলেন। তিনিই উত্তম চরিত্র ও উদারতার একমাত্র উৎস। তিনি সকলের আদর্শহীন এবং প্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার প্রেমে, দুনিয়া মাতাল। তিনি আমার আদর্শ, তিনি আমার নেতা। তিনি আমার নবী, আমাদের নবী এবং সকলের নবী। তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। সমস্ত মানবজাতির জন্য করুণা। অন্ধকারে নিমজ্জিত বিশ্বের মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে। তার অসাধারণ চরিত্র, মাধুর্য এবং অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব সবাইকে অবাক করেছে। মুমিনের চঞ্চল হৃদয় তাকে এক নজর দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকে। কবি কাজী নজরুল বলেছেন: “বিচ্ছেদের রাত ছিল একাকার কান্নার ভোর; আমার মনে শান্তি নেই, আমি কাঁদছি। হে মদিনাবাসীর প্রেমিক, আমার হাত ধর।" তার নিষ্কলুষ চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।" (সূরা আল-আহজাব, আয়াত 21)। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে আজ কিছু লোক সেই নবীর সম্মানকে অবমাননা করছে। হৃদয় ভেঙ্গে যায়। আমাদের ক্ষমা করুন, হে নবী! তিনি তার অবিস্মরণীয় ক্ষমা, উদারতা, সততা, নম্রতা প্রভৃতির বিরল মুগ্ধতা দিয়ে বর্বর আরব জাতির আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এজন্য তারা তাকে ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তারা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকার করেছিল যে তিনি নম্র এবং গুণী ছিলেন। টাকা দিয়ে নয়, ভালো ব্যবহার দিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে জয় করেছেন। আল্লাহ তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মহৎ চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা আল কালাম, আয়াত ৪)। তিনি কখনো মানুষকে তুচ্ছ করেননি। আত্মসম্মানবোধে তিনি কাউকে তুচ্ছ মনে করেননি। তিনি বিশ্বের হৃদয়ে উচ্চতর চরিত্রের একটি অনুপম মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। নম্রতা তার চরিত্রে সর্বদা উপস্থিত ছিল। পৃথিবীর মানবতার কল্যাণে তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল শ্রেষ্ঠ আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে আমার উত্তম চরিত্র পূর্ণ করার জন্য প্রেরিত করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত) ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বিনয়ী এবং আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয়ী। দুর্বল ব্যক্তিকে কড়া কথায় আঘাত করবেন না। তিনি কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অসাধ্য সাধন করতে বাধ্য করেননি। গরিব-অসহায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। তিনি লোকদেরকে তাদের আচরণে অপ্রয়োজনীয় রাগ ও রাগ থেকে সর্বদা বিরত থাকার উপদেশ দিতেন এবং মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উঁচু করে দেন এবং যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করেন।” (মিশকাত) কাফেররাও তার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে সদয় ও নম্র আচরণ পেয়েছিল। তার অনুসারীরা তাকে উচ্চ সম্মানের সাথে ধরেছিল কারণ তিনি খুব নমনীয় এবং নম্র ছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) তার ভদ্র আচার-আচরণ সম্পর্কে বলেন, ‘নবী (সা.) রূঢ় বক্তা ছিলেন না, প্রয়োজনের সময়ও তিনি কঠোর ভাষা ব্যবহার করতেন না। প্রতিহিংসা তার সাথে ছিল না মোটেও। মন্দের বিনিময়ে ভালোই করেছেন। সব ক্ষেত্রেই তিনি ক্ষমা পছন্দ করতেন। তিনি লোকদেরকে উপদেশ দিয়েছিলেন, “আল্লাহর ইবাদত কর, করুণাময় প্রভু, ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, সালাম দাও এবং এসব কাজের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি উত্তর দিলেন, "ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং অপরিচিত সকলকে সালাম করা।" (বুখারী ও মুসলিম)। মহানবী (সা.)-এর মর্যাদাকে সম্মান করা মুসলমানদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের মৌলিক অংশ।
নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৯২৯তম পর্বে ই-মেইলের মাধ্যমে কানিজ নাহার দিপা জানতে চেয়েছেন, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? অনুলিখন করেছেন মোহাম্মদ সাইফ আহমেদ। প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? উত্তর : না দোয়ার জন্য আলাদা কোনো মাহফিল নেই। এটা আসবে কেন? আমরা একটা জায়গা থেকে বাঁচার জন্য আরেকটি কাজ করছি। কিন্তু সেই কাজটি ভুল করে আরও বড় ভুলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আমাদের সমাজে একটি প্রথা একেবারে ছেয়ে গেছে। যেমন—একজন মারা গেলে তার জন্য মিলাদ-মাহফিল করা কিংবা কূলখানি করা। কিন্তু এগুলো সবই বেদআতি কাজ। এগুলো সঠিক কাজ নয়। অনেকে মনে করছে, দোয়া-মাহফিল করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা একদমই নয়। এসব ইসলামে অনুমোদন দেয়নি। এইগুলো পুরোটাই বেদআত। মানুষ চাইলে যে কোনো সময় কিংবা যে কোনো জায়গা থেকে দোয়া করতে পারবেন। দোয়ার সঙ্গে মাহফিল কিংবা আলাদা কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ঘোষণা করা জায়েজ নেই। আশা করি, আপনি বুঝতে পেরেছেন।
র্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি ও চীনের ডিপসিকের মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতার নয়, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চ্যাটজিপিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্লগ লেখা, গবেষণা, প্রোগ্রামিংসহ নানান কাজে অপরিহার্য টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি চীনের তৈরি ডিপসিক এআই জগতে নতুন আলোড়ন তুলেছে। তারা দাবি করছে, তুলনামূলক কম চিপ ব্যবহার করেই অত্যাধুনিক এআই সেবা দেওয়া সম্ভব, যেখানে ওপেনএআই-এর বিশাল মডেলগুলোর জন্য ১৬,০০০ বা তারও বেশি চিপ প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ২০০০ চিপ দিয়ে ডিপসিক কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম। দুই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। ✅ চ্যাটজিপিটি: বিস্তৃত বিশ্লেষণ ও গভীর গবেষণা উপস্থাপন করতে পারে, যা একাডেমিক ও জটিল সমস্যার সমাধানে সহায়ক। ✅ ডিপসিক: দ্রুত এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে পারে, যা তাৎক্ষণিক ফলাফল প্রত্যাশী ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী। লেখালেখির ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি কেবল ধারণা ও প্লটের কাঠামো গড়ে তোলে, যেখানে ডিপসিক প্রায় পুরো গল্প তৈরি করে দিতে পারে। একইভাবে, কোডিংয়ের ক্ষেত্রেও ডিপসিক কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত সমাধান দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ডিপসিকের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা সংরক্ষণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের সরকার ইতোমধ্যেই ডিপসিকের ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওপেনএআই নিজেও অতীতে অনুমতি ছাড়া মানুষের লেখা ডেটা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারের অভিযোগের মুখে পড়েছিল, যা এখন ডিপসিকের বিরুদ্ধে উঠছে। ডিপসিকের সাফল্যের ফলে এআই চিপের বাজারেও বড় প্রভাব পড়েছে। এনভিডিয়া, যারা উন্নত চিপ তৈরিতে বিশ্বব্যাপী অগ্রগণ্য, তাদের শেয়ারের মূল্য একদিনে প্রায় ১৭% কমে গেছে। কারণ, কম শক্তিশালী হার্ডওয়্যারেও কার্যকর এআই সম্ভব হলে উচ্চমূল্যের উন্নত চিপের বাজার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়, তবে ডিপসিকের উদ্ভাবন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই চীনে উন্নত চিপ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম খরচে ভালো এআই তৈরি হলে মার্কিন প্রযুক্তি খাতেরও লাভ হতে পারে। এই প্রতিযোগিতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎকে আরও উন্নত ও বহুমাত্রিক করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে দ্রুত এবং সাশ্রয়ী সমাধান দরকার, সেখানে হয়তো ডিপসিক এগিয়ে থাকবে, আর যেখানে গবেষণা ও জটিল বিশ্লেষণের প্রয়োজন, সেখানে চ্যাটজিপিটির মতো বৃহৎ মডেলগুলো প্রাধান্য পাবে। শেষ পর্যন্ত, এই প্রতিযোগিতাই হয়তো এআই প্রযুক্তিকে আরও দক্ষ, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী করবে।