টাঙ্গাইলের শত বছরের ঐতিহ্যে বোনা টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি এবার জায়গা করে নিয়েছে ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি তালিকায়। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে তাঁত ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে আনন্দের আমেজ দেখা গেলেও এখনো বিষয়টি সম্পর্কে তেমন জানেন না প্রান্তিক তাঁত শ্রমিকরা। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি শিল্পটির জন্য যেমন গর্বের, তেমনি এর সুফল বাস্তবে তাঁতিদের জীবনে পৌঁছানো নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা ও বড় চ্যালেঞ্জ। জানা যায়, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাঁত শিল্প বংশপরম্পরায় টিকে রয়েছে। রঙিন সিল্ক ও কটন সুতায় দক্ষ হাতের নিপুণ কারুকাজে তৈরি টাঙ্গাইল শাড়ি আজ বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শাড়ির সুতা রং করা ও নকশা তৈরির কাজ করেন পুরুষ তাঁতিরা, আর চরকিতে সুতা কাটার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন নারীরা। একটি শাড়ি তৈরি করতে লাগে দিনের পর দিন শ্রম, ধৈর্য ও নান্দনিক দক্ষতা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা সংকটে পড়েছে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, সস্তা পাওয়ার লুমে উৎপাদিত শাড়ির দাপট এবং আধুনিক পোশাকের প্রতি আগ্রহ বাড়ায় কমে যাচ্ছে হাতে বোনা শাড়ির চাহিদা। এর ফলে পেশা পরিবর্তন করে অন্য কাজে চলে যাচ্ছেন অনেক তাঁতি। টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাথরাইলসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বছরের পর বছর ধরে তাঁত শ্রমিকদের জীবনমানের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। কম মজুরি ও অনিশ্চিত বাজার ব্যবস্থার কারণে হতাশা বাড়ছে তাঁতিদের মধ্যে। নারীদের উৎসবের পোশাক মানেই শাড়ি। বাঙালি নারীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিসেবে ঈদ, পূজা ও পহেলা বৈশাখে টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকলেও বছরজুড়ে তা ধারাবাহিক নয়। ফলে তাঁতিদের আয় স্থায়ীভাবে বাড়ছে না। পাথরাইল এলাকার তাঁতি লাবু বলেন, “আমি ১৩ বছর ধরে এ পেশায় আছি। আগের তুলনায় এখন হাতে বোনা তাঁত শাড়ির চাহিদা অনেক কমে গেছে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে—এটা আমরা জানিই না। এ বিষয়ে আমাদের কেউ কিছু বলেনি।” তিনি আরও বলেন, “মালিকপক্ষ লাভবান হলেও আমাদের আয় খুব কম। সংসার চালাতে কষ্ট হয়।” একই এলাকার তাঁতি মো. সেলিম মুক্তধ্বনি ডটকমকে বলেন, “আগে আমাদের এলাকায় অনেক হ্যান্ডলুম তাঁত ছিল। এখন পাওয়ার লুমের কারণে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হাতে বোনা শাড়ি অনেক বেশি টেকসই ও মানসম্মত হলেও বাজারে তার মূল্য পাওয়া যায় না।” ৩০ বছর ধরে এ পেশায় যুক্ত শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, “একটি শাড়ি তৈরি করলে আমরা ৪ থেকে ৫শ’ টাকা মজুরি পাই। সপ্তাহে ৭ থেকে ৯টি শাড়ি বানানো সম্ভব হয়। এই আয়ে পরিবার চালানো কঠিন। তবুও বংশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশায় টিকে আছি।” তিনি বলেন, “ইউনেস্কোর স্বীকৃতি সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের সরাসরি সহায়তা দরকার।” ৩৭ বছর ধরে তাঁত শিল্পে যুক্ত বাছেদ আলী শেখ জাগো নিউজকে বলেন, “আমাদের এখানে ১৮টি তাঁত মেশিন রয়েছে। আগের তুলনায় এখন বিক্রি অনেক কম। কোনোমতে এ পেশায় টিকে আছি।” অন্যদিকে তাঁত মালিক ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এ শিল্পকে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে পারে। সরকারি সহায়তা, সহজ ঋণ, কাঁচামালে ভর্তুকি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণনের সুযোগ তৈরি হলে টাঙ্গাইল শাড়ি আবারও ফিরে পেতে পারে তার হারানো জৌলুস। তবে এখনো টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব ভারতের নামে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। তাদের দাবি, জিআই স্বত্ব টাঙ্গাইলের নামে হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও শক্ত অবস্থান তৈরি হতো। এক তাঁত ব্যবসায়ী মুক্তধ্বনি ডটকমকে বলেন, “ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা আনন্দিত। এর ফলে সারা বিশ্বের মানুষ টাঙ্গাইল শাড়ির ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। তবে বর্তমানে শাড়ির ব্যবসা খুব ভালো নয়। সরকারি আইন ও নীতিগত সহায়তা পেলে হস্তচালিত তাঁতের সংখ্যা বাড়তে পারতো।” আরেক ব্যবসায়ী তপু বসাক বলেন, “দিনদিন তাঁতির সংখ্যা কমছে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতির ফলে আশা করছি টাঙ্গাইল শাড়ির কদর আবারও বাড়বে এবং নতুন প্রজন্ম এ পেশায় আগ্রহী হবে।” এ বিষয়ে টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক পলাশ চন্দ্র বসাক মুক্তধ্বনি ডটকমকে বলেন, “ইউনেস্কোর তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ফলে টাঙ্গাইল শাড়ির আন্তর্জাতিক পরিচিতি বাড়বে। নতুন বাজার তৈরি হবে। তবে প্রান্তিক তাঁতিদের মধ্যে এ স্বীকৃতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিষয়টি তাঁতিদের জানানো প্রয়োজন।” উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল শাড়ি ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি হিসেবে সদ্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
টাঙ্গাইলে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে শহরের জেলা সদরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। সকালে রাষ্ট্রের পক্ষে জেলা প্রশাসক শরীফা হক শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় তিনি শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে তাঁদের আদর্শ ধারণ করে দেশ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। এরপর ক্রমান্বয়ে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রবিউল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল খালেক মন্ডল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক গোলম মোস্তফা মিয়াসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। এই দিনটি জাতির ইতিহাসে এক শোকাবহ ও কলঙ্কিত অধ্যায়। বক্তারা আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ ও ত্যাগ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং তাঁদের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
(সাজিদ পিয়াল):বাসাইল শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। মহান শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহিদ হওয়া দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন শহিদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন জাতির মেধা ও মননের আলোকবর্তিকা। স্বাধীনতার প্রাক্কালে পরিকল্পিতভাবে তাঁদের হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের আদর্শ ও ত্যাগ আজও জাতিকে পথ দেখাচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের ইতিহাস জানানো অত্যন্ত জরুরি বলে বক্তারা মত প্রকাশ করেন। সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আহসান হাবীব মাসুদ, জেলা আমীর, টাঙ্গাইল জেলা শাখা। সভায় সভাপতিত্ব করেন মিজানুর রহমান চৌধুরী, আমীর, টাঙ্গাইল শহর শাখা। আলোচনা সভায় বক্তারা ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্মমভাবে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তারা বলেন, দেশের মেধাবী সন্তানদের হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল, কিন্তু শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা আজও আমাদের পথ দেখায়। বক্তারা আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ ও দেশপ্রেম নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাদের চিন্তা-চেতনা ধারণ করেই একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আলোচনা শেষে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
(সাজিদ পিয়াল):শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে টাঙ্গাইলে গভীর শ্রদ্ধা বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর ও গৌরবময় দিন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে আজ শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সকালে টাঙ্গাইল বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, টাঙ্গাইল জনাব শরীফা হক। এ সময় শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করা হয় এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শরীফা হক। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা পরিকল্পিতভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এটি ছিল স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার একটি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন জাতির বিবেক তাঁদের চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রেরণা। তিনি আরও বলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আমাদেরকে সত্য ন্যায় ও মানবিকতার পথে চলার শিক্ষা দেয়। নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ছড়িয়ে দেওয়া এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শে দেশ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।আলোচনা সভায় সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ তাঁদের স্মৃতিচারণায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান তুলে ধরেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ শিক্ষাবিদ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আলোচনায় অংশ নেন।এছাড়াও অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত থেকে কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি শোষণমুক্ত সমৃদ্ধ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। গভীর শ্রদ্ধা ভাবগাম্ভীর্য ও শোকের আবহে টাঙ্গাইলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
(সাজিদ পিয়াল)- গোপালপুরে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। টাঙ্গাইলের গোপালপুরে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা, গড়বে আগামীর শুদ্ধতা—এই প্রতিপাদ্যে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টাঙ্গাইল কার্যালয় ও গোপালপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির যৌথ আয়োজনে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে উপজেলা হলরুমে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় গোপালপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. হারুন-অর-রশিদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নবাব আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন গোপালপুর থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন। সভা সঞ্চালনা করেন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান সিকদার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৌরভ কুমার দে, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জুবায়েরুল হক, গোপালপুর প্রেসক্লাবের সম্পাদক অটল শরিয়ত উল্লাহ, সূতী ভিএম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান, উপজেলা অবসর কল্যাণ সমিতির সভাপতি আহমেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ উদ্দিন, লাইটহাউজ স্কুলের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান তালুকদারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা। বক্তারা দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতা অপরিহার্য। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করে নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার চর্চা জোরদার করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তারা।
গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদীর অবস্থা এখনও অত্যন্ত সংকটজনক। তাকে বাঁচাতে চিকিৎসকদের এক টানা চেষ্টায় জটিল ও জীবনরক্ষাকারী অপারেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। গুলিটি তার মাথার বাঁ পাশে লেগে মস্তিষ্কের ভেতরে প্রবেশ করায় ব্রেনে গুরুতর জটিলতা তৈরি হয়। চিকিৎসকদের বরাতে জানা যায়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তার মস্তিষ্কে তীব্র ফোলা (Brain edema) সৃষ্টি হয় এবং ভেতরে চাপ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই অতিরিক্ত চাপ দ্রুত কমানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে ডিকম্প্রেসিভ ক্র্যানিওটমি নামের বড় ধরনের অপারেশন করা হয়। অপারেশনের সময় মাথার বাঁ দিকের খুলির একটি অংশ সাময়িকভাবে অপসারণ করা হয়, যাতে মস্তিষ্কের ওপর চাপ কমে এবং জীবন রক্ষার সুযোগ তৈরি হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর এক পর্যায়ে ওসমান হাদীর হৃদ্পিণ্ড বন্ধ হয়ে যায় (কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট)। এমন পরিস্থিতিতে রোগীর ফিরে আসা অত্যন্ত কঠিন হলেও চিকিৎসকদের দ্রুত ও দক্ষ প্রচেষ্টায় তাকে পুনরায় জীবিত করা সম্ভব হয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর সময় ওসমান হাদীর শারীরিক অবস্থা ছিল চরম সংকটাপন্ন—তার GCS স্কোর ছিল মাত্র ৩, যা জ্ঞানস্তরের সর্বনিম্ন সূচক তার চোখের মনি আংশিকভাবে ডাইলেটেড ছিল, যা ব্রেনের তীব্র ক্ষতির ইঙ্গিত মস্তিষ্কে ছিল তীব্র ফোলা এমনকি ব্রেন ডেথেরও লক্ষণ দেখা যাচ্ছিলবর্তমানে তিনি লাইফ সাপোর্টে আছেন। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম যন্ত্রের মাধ্যমে সচল রাখা হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।মেডিকেলের ভাষ্যে, তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে অত্যন্ত ক্ষীণ। তবুও চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।মানুষকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে ফিরিয়ে আনার মতো বিস্ময় যখন ঘটতে পারে, তখন আমরা আশাবাদী—সর্বশক্তিমান যদি চান, ওসমান হাদী আবারও আমাদের মাঝে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে এইটাই দেশ বাসীর চাওয়া।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির আয়োজনে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্ত কামনায় বলেছেন,“বেশ কিছু দিন ধরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। তার জন্য দেশের মানুষ নামাজ পড়ে, রোজা রেখে দোয়া করছেন। মানুষের স্বার্থেই তার সুস্থতা অত্যন্ত প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর দেশে-বিদেশে কোটি মানুষের মনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার সুস্থতার জন্য কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গ দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। “এশিয়া মহাদেশে এমন আর কোনো নেত্রী নেই যার সুস্থতার জন্য এত বিশাল সংখ্যক মানুষ দোয়া করছেন।” তার মতে, বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রী নন, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে টাঙ্গাইল বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি প্রাঙ্গণে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, টাঙ্গাইল সদরকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত একটি শান্তিপূর্ণ এলাকায় পরিণত করতে আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটই হবে তার শক্তি। তিনি কর্মী–সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের ধৈর্য, শৃঙ্খলা, ঐক্য ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে মাঠে থাকতে হবে। আমরা যেমন দেশনেত্রীর মুক্তি ও সুস্থতার জন্য দোয়া করছি, তেমনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।” সভায় সভাপতিত্ব করেন সকাল-সন্ধ্যা পরিবহনের চেয়ারম্যান সৈয়দ জাদিদুল হক জাদিদ।অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন—টাঙ্গাইল বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি খন্দকার নাজিম উদ্দিন আহমেদ,সাবেক সভাপতি খঃ ইকবাল হোসেন,মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খঃ আতিকুজ্জামান টুটুল,জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু,সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী শফিকুর রহমান লিটন,সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মালিক সমিতির সদস্য শফিকুর রহমান খান শফিক,জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মমিনুল হক খান নিকছন,জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খঃ রাশেদুল আলম,মালিক সমিতির সদস্য বাসুদেব,জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম লাবু প্রমুখ। সভায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মালিক–শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।
টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস ইতিহাসের গৌরবময় এক অধ্যায় যেটি আজকে নানাভাবে পালিত হচ্ছে ১১ ডিসেম্বর, টাঙ্গাইলের জনগণের জীবনে এক অনন্য গৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখলদারিত্ব থেকে টাঙ্গাইলকে সম্পূর্ণ মুক্ত ঘোষণা করেন বাংলার বীর সন্তানেরা। বিজয়ের পতাকা উড়েছিল টাঙ্গাইলের আকাশে—জেগে উঠেছিল স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে টাঙ্গাইলের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বীরত্বগাঁথায় ভরপুর। টাঙ্গাইলের অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও ত্যাগ শুধু দেশেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীর দুর্ধর্ষ আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত হামলায় ১১ ডিসেম্বরের ভোরে টাঙ্গাইলের পথে বিজয়ের অগ্রযাত্রা শুরু হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই শহর শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার এই গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণ করে টাঙ্গাইলবাসী আজও উৎসবে মেতে ওঠে। বাঁধভাঙা আনন্দে ভরে ওঠে পুরো শহর—গৌরব ও ইতিহাসের দিনটিকে ঘিরে নানা আয়োজন হয়ে থাকে জেলার সর্বত্র। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে টাঙ্গাইল মুক্ত দিবস। শহরজুড়ে আলোচনাসভা, র্যালি, প্রার্থনা ও স্মৃতিচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইল।
সাজিদ পিয়াল: টাঙ্গাইল, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫: গৌরব ও ঐতিহ্যের দিন টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে আজ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক বর্ণাঢ্য আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, টাঙ্গাইলের অবদান এবং স্বাধীনতার চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতেই এ আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব। তিনি তাঁর বক্তব্যে ১৯৭১ সালের এই দিনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন—টাঙ্গাইলের মানুষ অসম সাহসিকতা, ত্যাগ ও ঐক্যের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছিল। তাঁর মতে, টাঙ্গাইলের মুক্তির দিন শুধু একটি জেলা নয়, পুরো জাতির বিজয়সংগ্রামের বড় মাইলফলক। বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব আরও বলেন, যে স্বাধীনতার জন্য আমরা জীবন বাজি রেখেছিলাম, সেই স্বাধীনতা আজকের তরুণ প্রজন্মের হাতে সুরক্ষিত থাকবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ইতিহাস জানতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হবে, তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।সভায় অন্যান্য বক্তারাও ১১ ডিসেম্বরের ঘটনা, বিডিআর বিদ্রোহী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘবদ্ধ অভিযান, টাঙ্গাইলের কৌশলগত গুরুত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখযুদ্ধে জেলার অবদান তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিকব্যক্তি, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন সড়কে র্যালি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং শহীদদের স্মরণে দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ ও দেশাত্মবোধক আবেগের উচ্ছ্বাসে ভরপুর অংশগ্রহণ।
১১ ডিসেম্বর: টাঙ্গাইল পাক হানাদারমুক্ত দিবস আজ ১১ ডিসেম্বর—টাঙ্গাইলবাসীর গৌরবোজ্জ্বল ও ঐতিহাসিক একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন। এই দিনে টাঙ্গাইল জেলায় নতুন করে সূচনা হয় স্বাধীনতার, মুক্তির, বিজয়ের মহামন্ত্রে উজ্জ্বল এক প্রত্যয়ের। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, শত্রুমুক্তির আগের রাতটি ছিল টাঙ্গাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ রাত। সারারাত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী ও ধারাবাহিক আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। টানা গোলাগুলিতে শহর ও শহরতলির মানুষজন কাটায় এক নিদ্রাহীন রাত। অবশেষে ১১ ডিসেম্বরের সকালটি নিয়ে আসে কাঙ্ক্ষিত সেই বিজয়ের বারতা। ধ্বংসস্তূপ, রক্তের দাগ, অশ্রুভেজা বিদায়ের মাঝেও হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে—উল্লাসে, আবেগে ও স্বাধীনতার গর্বে উদ্বেল হয়ে। মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের ভূমিকা ছিল অনন্য। সাহস, সংগঠন, পরিকল্পনা ও বীরত্বে এ অঞ্চলটি গড়ে তোলে এক বিশেষ দৃষ্টান্ত। বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ সেসময় শত্রুর বিরুদ্ধে অসাধারণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাদের বীরত্বগাঁথা শুধু দেশের সীমানায় আটকে থাকেনি—পৌঁছে যায় সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে। ইতিহাসবিদরা বলেন, টাঙ্গাইলের এই প্রতিরোধ না হলে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের অগ্রযাত্রা এতটা দ্রুত সফল হতো না। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পরপরই টাঙ্গাইলে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ। ২৬ মার্চ টাঙ্গাইল থানায় উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা—যা মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভিক দিনে এ জেলার অগ্রণী ভূমিকার প্রতীক। ৮ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে টাঙ্গাইল আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। পরে কালিহাতীর পুংলি এলাকায় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পাক সেনারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে তারা প্রাণভয়ে সারারাত ধরে টাঙ্গাইল ছেড়ে ঢাকার দিকে পালাতে থাকে। ১০ ডিসেম্বর রাতে কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক টাঙ্গাইলে প্রবেশ করেন। পরদিন ১১ ডিসেম্বর সকালে কমান্ডার বায়োজিদ, খন্দকার আনোয়ার এবং পরে ব্রিগেডিয়ার ফজলুর রহমান টাঙ্গাইলে পৌঁছান। শহরের সার্কিট হাউজে অবস্থানরত পাকিস্তানি খান সেনারা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আনুষ্ঠানিকভাবেই টাঙ্গাইল হয় শত্রুমুক্ত। এই দিনটি তাই শুধু একটি জেলার নয়—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনবদ্য গৌরবের দিন। আজ টাঙ্গাইলবাসী স্মরণ করছে সেই বীরদের, যারা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার পতাকাকে সমুন্নত করেছিলেন।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেছেন, “আমরা রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণের জন্য। আগামীর বাংলাদেশ হবে মানবিক, গণতান্ত্রিক এবং সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা একটি রাষ্ট্র।” তিনি আরও বলেন, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে কোনো প্রকার হানাহানি থাকবে না, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ হবে এবং মানুষ তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। বুধবার দুপুরে ৭৭তম বিশ্ব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে ইউনিটি ফর ইউনিভার্স হিউম্যান রাইটস অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মানববন্ধন ঘিরে প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। টুকু অভিযোগ করে বলেন, “বিগত দিনে দেশে একটি অবৈধ ও ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় ছিল, যারা মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে মানুষের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যে দেশে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়, সেখানে মানবাধিকার টিকে থাকতে পারে না।” তিনি বলেন, মানুষ এখন পরিবর্তন চায়—একটি মানবিক রাষ্ট্র চায় যেখানে মানুষ নিরাপদে মতামত প্রকাশ করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, “জনগণের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব। সমাজে এখনো অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ বঞ্চিত। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ার বিতরণ করেছি। রাস্তার পাশে ফুটপাতে যারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায়, তাদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। ভবিষ্যতেও মানবিক কাজে আমাদের ভূমিকা আরও বাড়ানো হবে।” দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সামনের নির্বাচন জনগণের। দেশের ভবিষ্যৎ আপনারা নির্ধারণ করবেন। যেন কোনো অমানবিক, স্বৈরাচারী বা ফ্যাসিবাদী সরকার আর এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে।” মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন—জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী, ইউনিটি ফর ইউনিভার্স হিউম্যান রাইটস অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম রফিক, সদস্য সচিব মামুনুর রহমান মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জুয়েল, উপদেষ্টা মনোয়ার হোসেন, বুলবুল আহমেদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এখন একটি বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। মানবাধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজকে সমন্বিত ভূমিকা রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়। মানববন্ধন শেষে একটি শান্তিপূর্ণ র্যালি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাঙ্গাইল ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সমগ্র কর্মসূচিতে ইউনিটি ফর ইউনিভার্স হিউম্যান রাইটস অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন ১০ ডিসেম্বর। এই দিন গোপালপুর ও আশপাশের দুটি অঞ্চল পাক হানাদারমুক্ত হয়ে বিজয়ের পতাকা উড়েছিল। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রায় আট মাস হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, লুটপাট ও অমানবিক শোষণের পর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে এদিন মুক্তির স্বাদ পায় গোপালপুরবাসী। পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৪ বছরের দুঃশাসন, রাজনৈতিক বঞ্চনা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও জাতিগত নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু তার আগের রাত ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্বর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে, যার ছায়া নেমে আসে গোপালপুরেও। মার্চের প্রথম দিক থেকেই দেশের অবস্থা অনুধাবন করে গোপালপুরের দেশপ্রেমিক মানুষ সংগঠিত হতে শুরু করেন এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। গোপালপুর থানা—যা টাঙ্গাইল জেলার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত—ছিল পাক সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। ৭ ডিসেম্বর নিকরাইল রানী দিনমনি হাইস্কুলে ৭০ জন কমান্ডারের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কাদেরিয়া বাহিনী প্রধান বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী গোপালপুর থানায় আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর নির্দেশে নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর, আব্দুর রাজ্জাক ভোলা, আসাদুজ্জামান আরজু, বকুল, আব্দুল হাকিম, নূরুল ইসলাম, আনিসুর রহমান আনিস ও খন্দকার হাবিবুর রহমান কোম্পানিগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নূর হোসেন তালুকদার আঙ্গুর কোম্পানি গরুহাটি দিয়ে,আরজু কোম্পানি দক্ষিণ দিকের কীর্তনখোলা অংশ দিয়ে,আর আব্দুল হাকিম কোম্পানি মর্টারসহ পশ্চিম দিক দিয়ে আক্রমণ চালাবে।পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর রাতভর থানা আক্রমণ শুরু হয় এবং পাক সেনারা চাপে পড়ে যায়। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ৩টায় ভারতীয় বায়ুসেনার তিনটি মিগ-২১ বিমান গোপালপুর ও ঘাটাইল থানার ওপর একযোগে বোমা বর্ষণ ও ট্রাম্পিং করে। বিমান হামলায় ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা রাতের আঁধারে পালাতে শুরু করে। এদিকে, গোপালপুরের সূতি, নন্দনপুর, ভূয়ারপাড়া, চরপাড়া ও গরুহাটি এলাকায় অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ দূরত্ব থেকে শত্রু ঘেরাও করে রাখেন। পাকবাহিনী পালিয়ে যেতে শুরু করলে মিঞা কমান্ডার ও চাঁদ মিঞার প্লাটুন ধাওয়া করে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে গোলাগুলি চালান। ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টার মধ্যেই পাক সেনারা পুরোপুরি গোপালপুর ত্যাগ করে। বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে চাঁদ মিঞার প্লাটুন গুলি করতে করতে থানায় প্রবেশ করেন। এর পরপরই গোপালপুর থানা দখলে আসে মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রথমে চাঁদ মিঞা, সাহেব আলী, শামছুল আলম, আব্দুল লতিফ, আজাহার, কাদের তালুকদার, তোরাপ সিকদার, ইসমাইল হোসেন মৃধা ও আব্দুস সোবহান তুলা থানায় উঠেন। পরে কমান্ডার আসাদুজ্জামান আরজু, বিমল, হায়দার, জয়নাল, শুকুরসহ আরও মুক্তিযোদ্ধারা থানায় প্রবেশ করেন। সেদিন ছিল গোপালপুরের মানুষের জন্য এক অবর্ণনীয় আনন্দের দিন। বিভিন্ন এলাকার লোকজন থানায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে, কোলাকুলি করে অভিনন্দন জানান। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়। বিকেলে গোপালপুর থানার ছাদে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়—গোপালপুর হানাদারমুক্ত। এই দিনটি শুধু একটি থানা মুক্তির দিন নয়, এটি গোপালপুরবাসীর সংগ্রাম, ত্যাগ আর সাহসিকতার অবিনাশী স্মৃতি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই দিনটি স্মরণ করবে গর্ব ও শ্রদ্ধায়।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও মহান রোকেয়া দিবস উপলক্ষে পাঁচ অদম্য নারীকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত এক প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা পান—অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী: নীলা বেগম,শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সফল: সৈয়দা ফারজানা,সফল জননী: সৌমিত্রী বিশ্বাস,নির্যাতনের দুঃখ ঘুচে জীবন সংগ্রামে জয়ী: রনিয়া আক্তার,সমাজ উন্নয়নে অবদানকারী: রুমি আক্তার স্থানীয় নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একই অনুষ্ঠানে ১০ জন নারী উদ্যোক্তার মাঝে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। উদ্যোক্তারা জানান, এই সহায়তা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও আত্মকর্মসংস্থানে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। এর আগে রোকেয়া দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা সমাজে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুরাইয়া ইয়াসমিন। আরও বক্তব্য রাখেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক আজিজ, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন সিদ্দিকা, অদম্য নারী সৈয়দা ফারজানা আক্তারসহ অন্যান্য বক্তারা। বক্তারা বলেন, বেগম রোকেয়ার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও সমাজসেবামূলক সংগঠনগুলোকে আরও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও রোগমুক্তি কামনায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে মধুপুর উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে ভুটিয়া চৌরাস্তা মোড়ে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল-০১ (মধুপুর–ধনবাড়ী) আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব ফকির মাহবুব আনাম স্বপন (স্বপন ফকির)। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বলেন, “দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে বেগম খালেদা জিয়া যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জাতি তা কখনো ভুলবে না। তাঁর সুস্থতা দেশের মানুষের প্রত্যাশা।” অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। দোয়া মাহফিল শেষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু, দ্রুত রোগমুক্তি এবং দেশের শান্তি ও কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। তাই তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দোয়া মাহফিলে যোগ দিয়ে তাঁর সুস্থতা কামনা করেছেন।
টাঙ্গাইলে যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২৫ ও বেগম রোকেয়া দিবস-২০২৫। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর ২০২৫) সকাল থেকেই জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণ ছিল প্রাণবন্ত ও ব্যস্ততম। দিনটি উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য র্যালী, আলোচনা সভা ও শ্রেষ্ঠ ‘অদম্য নারী’ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালীটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নারী সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ, সামাজিক–সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে র্যালীটি হয়ে ওঠে বর্ণিল ও প্রাণবন্ত। র্যালী শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এবারের বেগম রোকেয়া দিবস-২০২৫ এর প্রতিপাদ্য “নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি”—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বক্তারা সমাজে নারী ও কন্যাশিশুর নিরাপত্তা, অধিকার প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সহিংসতা প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। বক্তারা বলেন, বেগম রোকেয়ার আদর্শ বাস্তবায়নে নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ডিজিটাল ক্ষমতায়নকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আলোচনা সভা শেষে ‘অদম্য নারী’ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ অদম্য নারীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন জেলা প্রশাসক, টাঙ্গাইল। সম্মাননা প্রাপ্ত নারীরা নিজেদের সংগ্রাম, সাফল্য ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব তৈরির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। পুরো আয়োজন জুড়ে ছিল নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান। নারীর ক্ষমতায়ন, মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে দিনব্যাপী এ আয়োজন টাঙ্গাইলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
টাঙ্গাইলে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৫ পালিত। সাজিদ পিয়াল: ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা : এই স্লোগানকে সামনে রেখে গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’ প্রতিপাদ্যে বিভিন্ন আয়োজন।সারা দেশের ন্যায় টাঙ্গাইলেও আজ ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদা ও তাৎপর্যের সঙ্গে পালিত হলো আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৫। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জেলা কার্যালয়, টাঙ্গাইল-এর আয়োজনে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপিত হয়।দিবসের প্রধান কর্মসূচি হিসেবে সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা সমন্বয়ক। এতে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “দুর্নীতি জাতির অগ্রযাত্রার প্রধান বাধা। তরুণ প্রজন্মই পারে এই অনিয়ম-অবিচারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি সুশাসিত ও স্বচ্ছ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।” তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবার ও সমাজে সততা চর্চার পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিক্ষক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও ছাত্র প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ শুধুমাত্র দুদকের দায়িত্ব নয়; বরং সমগ্র জাতির সম্মিলিত দায়িত্ব। সবার অংশগ্রহণেই গড়ে উঠবে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ।অনুষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী দিবসের প্রতিপাদ্য—দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা গড়বে আগামীর শুদ্ধতা—এর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। তরুণদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক প্রশিক্ষণ ও প্রচার কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বক্তারা।আলোচনা সভা শেষে দুর্নীতিবিরোধী শপথ গ্রহণ, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, এবং প্রতীকী র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সরকারী কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাধারণ অংশগ্রহণকারীরা যোগ দেন। দিবসটি উপলক্ষে দুদক টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
সারা দেশের ন্যায় ভূঞাপুরে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালিত । সারা দেশের ন্যায় টাঙ্গাইলে আলোচনা সভা ও শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের অঙ্গীকার সারা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হলো আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস-২০২৫। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) এবং ভূঞাপুর উপজেলা শাখার উদ্যোগে, উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সকালে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি উপজেলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালিতে অংশ নেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি ও সর্বস্তরের মানুষ। র্যালির শ্লোগানে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং স্বচ্ছতা-সততার বার্তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। র্যালি শেষে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। বক্তারা বলেন, দুর্নীতি একটি দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করা এবং তাদের ইতিবাচক ভূমিকা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আলোচনা শেষে উপস্থিত সকলের অংশগ্রহণে দুর্নীতি বিরোধী শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। শপথে দুর্নীতির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া, সততা ও নৈতিকতার চর্চা এবং সমাজে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন সবাই। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রচনা, কুইজসহ সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। এদিনের কর্মসূচি ভূঞাপুরে দুর্নীতি প্রতিরোধে নতুন সচেতনতার সঞ্চার করে এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানায় আয়োজকরা।
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনায় টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা বিএনপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ দোয়া মাহফিলে দলীয় নেতা–কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনায় দেশব্যাপী যে দোয়া মাহফিল চলছে, তা প্রমাণ করে তিনি এখনো মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে জায়গা করে আছেন।’ দোয়া মাহফিল শুরুর আগে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন শহর বিএমেহেদী হাসান আলীম, সাধারণ সম্পাদক এজাজুল হক সবুজ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রৌফ, সিনিয়র সহ-সভাপতি হাদিউজ্জামান সোহেল, জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্বপনসহ দলের অন্যান্য নেতা। বক্তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা শুধু বিএনপির নয়, গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রত্যাশা। তাঁরা অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার নিয়মিত উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও রাজনৈতিক কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণকারী নেতা–কর্মীরা জানান, দলীয় প্রধানের সুস্থতার জন্য তারা ব্যক্তিগতভাবেও নিয়মিত প্রার্থনা করছেন। দোয়া শেষে অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি, দীর্ঘায়ু ও সুস্থ জীবন কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম। এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দেন। পুরো আয়োজন জুড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও রোগমুক্তি কামনায় টাঙ্গাইল জেলা দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বাদ যোহর জেলা দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ে এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন—টাঙ্গাইল জেলা দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইমান আলী। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন—টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক শ্যামল ব্যানার্জি,জেলা দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন,সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম,সহ-সভাপতি আব্দুল মতিন সরকার,সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন হোসেন, এবং সংগঠনের আরও নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা। দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বহুদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। দেশের মানুষের নেতা হিসেবে তার সুস্থতা শুধু বিএনপির জন্য নয়, পুরো দেশের জনগণের প্রত্যাশা। তারা আশা প্রকাশ করেন, খুব শিগগিরই তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসবেন। বক্তারা আরও বলেন, দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সদস্যরা সবসময় জনমানুষের সমস্যা-সংকটে পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও মানবিক সহায়তায় কাজ করবে। পরে খালেদা জিয়ার দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। মোনাজাতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনাও করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তবারক বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশের তাঁত শিল্পে নতুন আশার আলো জ্বালালো টাঙ্গাইল শাড়ি। ঐতিহ্য, নকশা ও শৈল্পিক দক্ষতার অনন্য প্রদর্শন হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক পরিসরে সুনাম কুড়ানো এই শাড়িকে এবার ইউনেসকোর মানবজাতির অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য (Intangible Cultural Heritage) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছেন দেশের তাঁত শিল্পীরা। বহু প্রজন্মের স্মৃতি, পরিশ্রম আর ঐতিহ্যের বাহক এই শাড়ি ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন তাঁতিরা। বাংলাদেশের জামদানি শাড়ি ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে আলোচনায় এসেছে, তেমনই সাফল্যের আশা করছেন টাঙ্গাইলের তাঁতিরা। তাঁদের মতে, স্বীকৃতি পেলে শাড়িটির ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়বে, বিদেশি ক্রেতার আগ্রহও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইউনেসকোর তালিকাভুক্ত অনেক সাংস্কৃতিক উপাদানের ক্ষেত্রে পর্যটন বাড়ার পাশাপাশি পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও প্রসারিত হয়েছে। এর উদাহরণ হিসেবে তাঁরা উল্লেখ করছেন বাংলার দুর্গাপুজোর কথা—যা স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকেই বিদেশি দর্শনার্থীর সংখ্যা দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যবাংলার টাঙ্গাইল অঞ্চলে শত বছর ধরে তাঁতশিল্পীদের বসতি গড়ে উঠেছে। এখানকার তাঁতিরা প্রজন্ম ধরে হাতে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ির খ্যাতি ধরে রেখেছেন। অন্য শাড়ির তুলনায় অনেক হালকা ও আরামদায়ক হওয়ায় এটি পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন নারীরা।রঙিন সুতোর বুনন, ফুলেল নকশা ও সূক্ষ্ম কারুকাজ—এসবই টাঙ্গাইল শাড়িকে অন্যসব শাড়ি থেকে আলাদা করে। স্থানীয় তাঁতিরা জানান, এই শাড়ির প্রতিটি ইঞ্চি বুনতে সময় লাগে, প্রয়োজন হয় একাগ্রতা আর অভিজ্ঞতার। তাই টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু একটি পোশাক নয়—এটি একটি শিল্প, একটি সংস্কৃতি, একটি ইতিহাস। টাঙ্গাইলের তাঁতিরা এখন এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। কাঁচামালের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় শাড়ি প্রস্তুতির খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাজারে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ক্রেতা সেভাবে বাড়ছে না। তিনি জানান—প্রস্তুতি খরচ বেড়েছে,বিক্রি কমছে,উৎসবের মৌসুমেও আশানুরূপ বিক্রি হয়নি,যুব সমাজ তাঁত পেশায় আসতে দ্বিধায় ভুগছে।যারা আসছে, তারাও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ভুগছে। তাঁতশিল্পীরা মনে করেন, ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেলে এই সংকট অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। বিশ্ববাজারে নতুন দরজা খুলবে, বাড়বে চাহিদা। ফলে এই পেশায় নতুন প্রজন্ম আগ্রহী হবে। বাংলাদেশের গর্বের তালিকায় রয়েছে বহু সাংস্কৃতিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান—বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ,সুন্দরবন,পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ,বাউল গান,জামদানি,শীতলপাটি,পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা।এবার, সেই তালিকায় টাঙ্গাইল শাড়ি যুক্ত হলে বাংলাদেশ আরও একটি সাংস্কৃতিক সম্পদ বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে পারবে। শিল্পীরা বিশ্বাস করেন, ঐতিহ্যবাহী এই শাড়ির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শুধু সংস্কৃতির গর্বই বাড়াবে না, বরং তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভরশীল লাখো মানুষের জীবিকা রক্ষা করবে। বিশ্ববাজারে পরিচিতি বাড়লে দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। টাঙ্গাইলের তাঁতিরা তাই এখন নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন—“টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু বাংলাদেশের গর্ব নয়, এটি পুরো বিশ্বের ঐতিহ্যের অংশ হোক।”
দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির নতুন ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) হলেন মোঃ মনিরুজ্জামান। নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবারে ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অভিজ্ঞ সংবাদকর্মী মোঃ মনিরুজ্জামান। তার দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতা ও নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠানকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা জানান, দুর্নীতি দমন ও সামাজিক অন্যায়-অবিচার তুলে ধরতে মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির কর্মকাণ্ডকে আরও এগিয়ে নেবে। এই উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেনঃ ১️⃣ মোঃ শাহ নেওয়াজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ২️⃣ মোঃ শহিদুল ইসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ৩️⃣ মোঃ মাহমুদুল হাসান, বার্তা সম্পাদক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন— “আমরা মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি। তার প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবার অচিরেই আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।”
মাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৩৩৪তম পর্বে নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে নিয়ামত কমে যাবে কি না, সে বিষয়ে ঢাকা থেকে চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন একজন দর্শক। অনুলিখন করেছেন জান্নাত আরা পাপিয়া। প্রশ্ন : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে কি নিয়ামত কমে যাবে? উত্তর : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা কুফরি। এটা বড় কুফরি না, ছোট কুফরি। যদি আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কুফরি কাজ করে থাকলেন। এ জন্য আল্লাহ কোরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো, আমার সঙ্গে কুফরি করো না।’ আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন, আল্লাহর নিয়ামত লাভ করে সুন্দর জীবনযাপন করা, এটা যদি কেউ আল্লাহর কাছে সত্যিকার অর্থে তুলে ধরতে না পারে, তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া করলেন না, কুফরি করলেন। এই জন্য আল্লাহ সুরা দোহার শেষ আয়াতে বলেছেন, ‘তুমি তোমার রবের নিয়ামত প্রকাশ করো। কারণ, তোমার কাছে যখন নিয়ামত আসছে, তখন আল্লাহ পছন্দ করেন যে তুমি আল্লাহর এই নিয়ামতের বিষয়টি তুলে ধরবে।’ আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহ আমাকে এই নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ নিয়ামতকে বান্দার কাছে তুলে ধরার জন্য বলেছেন, বহিঃপ্রকাশ করার জন্য বলেছেন। বহিঃপ্রকাশ দুই ধরনের হতে পারে। একটি হলো নিয়ামতের ব্যবহারের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, নিয়ামতের বিষয়টি হলো মানুষের কাছে নিয়ামত তুলে ধরবে। যাতে করে আল্লাহর প্রশংসা প্রকাশ পায়। নিয়ামতের শুকরিয়া যদি কেউ আদায় না করেন, তাহলে কুফরি হবে। আল্লাহ বলেছেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করে থাক, তাহলে আমি আরো বৃদ্ধি করে দেব। বান্দারা যখন নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে, তখন আল্লাহ আরো নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করে দেন। আর যদি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা হয়, তাহলে আল্লাহ নিয়ামত কমিয়ে দেবেন এবং সেইসঙ্গে আরেকটি কঠিন বাণী আল্লাহ বলেছেন, ‘জেনে রাখো আল্লাহর কঠিন আজাবও তোমাদের জন্য অবধারিত থাকবে।’ নিয়ামতের শুকরিয়া শুধু মুখে আদায় করা যথেষ্ট নয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর শুকরিয়া আমলের মাধ্যমে আদায় করো।’ সুতরাং বান্দারা শুকরিয়া আদায় করবে। শুকরিয়ার অনেকগুলো দিক রয়েছে, তার মধ্যে আমলের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা হলো শুকরিয়ার সর্বোচ্চ স্তর।
তিনি ছিলেন মানবজাতির আদর্শ। তিনি অত্যন্ত উদার ও বিনয়ী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং একজন সাহসী যোদ্ধা। এছাড়াও তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক এবং একজন সফল প্রচারক ছিলেন। তিনিই উত্তম চরিত্র ও উদারতার একমাত্র উৎস। তিনি সকলের আদর্শহীন এবং প্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার প্রেমে, দুনিয়া মাতাল। তিনি আমার আদর্শ, তিনি আমার নেতা। তিনি আমার নবী, আমাদের নবী এবং সকলের নবী। তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। সমস্ত মানবজাতির জন্য করুণা। অন্ধকারে নিমজ্জিত বিশ্বের মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে। তার অসাধারণ চরিত্র, মাধুর্য এবং অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব সবাইকে অবাক করেছে। মুমিনের চঞ্চল হৃদয় তাকে এক নজর দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকে। কবি কাজী নজরুল বলেছেন: “বিচ্ছেদের রাত ছিল একাকার কান্নার ভোর; আমার মনে শান্তি নেই, আমি কাঁদছি। হে মদিনাবাসীর প্রেমিক, আমার হাত ধর।" তার নিষ্কলুষ চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।" (সূরা আল-আহজাব, আয়াত 21)। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে আজ কিছু লোক সেই নবীর সম্মানকে অবমাননা করছে। হৃদয় ভেঙ্গে যায়। আমাদের ক্ষমা করুন, হে নবী! তিনি তার অবিস্মরণীয় ক্ষমা, উদারতা, সততা, নম্রতা প্রভৃতির বিরল মুগ্ধতা দিয়ে বর্বর আরব জাতির আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এজন্য তারা তাকে ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তারা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকার করেছিল যে তিনি নম্র এবং গুণী ছিলেন। টাকা দিয়ে নয়, ভালো ব্যবহার দিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে জয় করেছেন। আল্লাহ তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মহৎ চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা আল কালাম, আয়াত ৪)। তিনি কখনো মানুষকে তুচ্ছ করেননি। আত্মসম্মানবোধে তিনি কাউকে তুচ্ছ মনে করেননি। তিনি বিশ্বের হৃদয়ে উচ্চতর চরিত্রের একটি অনুপম মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। নম্রতা তার চরিত্রে সর্বদা উপস্থিত ছিল। পৃথিবীর মানবতার কল্যাণে তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল শ্রেষ্ঠ আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে আমার উত্তম চরিত্র পূর্ণ করার জন্য প্রেরিত করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত) ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বিনয়ী এবং আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয়ী। দুর্বল ব্যক্তিকে কড়া কথায় আঘাত করবেন না। তিনি কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অসাধ্য সাধন করতে বাধ্য করেননি। গরিব-অসহায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। তিনি লোকদেরকে তাদের আচরণে অপ্রয়োজনীয় রাগ ও রাগ থেকে সর্বদা বিরত থাকার উপদেশ দিতেন এবং মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উঁচু করে দেন এবং যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করেন।” (মিশকাত) কাফেররাও তার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে সদয় ও নম্র আচরণ পেয়েছিল। তার অনুসারীরা তাকে উচ্চ সম্মানের সাথে ধরেছিল কারণ তিনি খুব নমনীয় এবং নম্র ছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) তার ভদ্র আচার-আচরণ সম্পর্কে বলেন, ‘নবী (সা.) রূঢ় বক্তা ছিলেন না, প্রয়োজনের সময়ও তিনি কঠোর ভাষা ব্যবহার করতেন না। প্রতিহিংসা তার সাথে ছিল না মোটেও। মন্দের বিনিময়ে ভালোই করেছেন। সব ক্ষেত্রেই তিনি ক্ষমা পছন্দ করতেন। তিনি লোকদেরকে উপদেশ দিয়েছিলেন, “আল্লাহর ইবাদত কর, করুণাময় প্রভু, ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, সালাম দাও এবং এসব কাজের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি উত্তর দিলেন, "ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং অপরিচিত সকলকে সালাম করা।" (বুখারী ও মুসলিম)। মহানবী (সা.)-এর মর্যাদাকে সম্মান করা মুসলমানদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের মৌলিক অংশ।
নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৯২৯তম পর্বে ই-মেইলের মাধ্যমে কানিজ নাহার দিপা জানতে চেয়েছেন, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? অনুলিখন করেছেন মোহাম্মদ সাইফ আহমেদ। প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? উত্তর : না দোয়ার জন্য আলাদা কোনো মাহফিল নেই। এটা আসবে কেন? আমরা একটা জায়গা থেকে বাঁচার জন্য আরেকটি কাজ করছি। কিন্তু সেই কাজটি ভুল করে আরও বড় ভুলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আমাদের সমাজে একটি প্রথা একেবারে ছেয়ে গেছে। যেমন—একজন মারা গেলে তার জন্য মিলাদ-মাহফিল করা কিংবা কূলখানি করা। কিন্তু এগুলো সবই বেদআতি কাজ। এগুলো সঠিক কাজ নয়। অনেকে মনে করছে, দোয়া-মাহফিল করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা একদমই নয়। এসব ইসলামে অনুমোদন দেয়নি। এইগুলো পুরোটাই বেদআত। মানুষ চাইলে যে কোনো সময় কিংবা যে কোনো জায়গা থেকে দোয়া করতে পারবেন। দোয়ার সঙ্গে মাহফিল কিংবা আলাদা কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ঘোষণা করা জায়েজ নেই। আশা করি, আপনি বুঝতে পেরেছেন।
র্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি ও চীনের ডিপসিকের মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতার নয়, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চ্যাটজিপিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্লগ লেখা, গবেষণা, প্রোগ্রামিংসহ নানান কাজে অপরিহার্য টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি চীনের তৈরি ডিপসিক এআই জগতে নতুন আলোড়ন তুলেছে। তারা দাবি করছে, তুলনামূলক কম চিপ ব্যবহার করেই অত্যাধুনিক এআই সেবা দেওয়া সম্ভব, যেখানে ওপেনএআই-এর বিশাল মডেলগুলোর জন্য ১৬,০০০ বা তারও বেশি চিপ প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ২০০০ চিপ দিয়ে ডিপসিক কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম। দুই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। ✅ চ্যাটজিপিটি: বিস্তৃত বিশ্লেষণ ও গভীর গবেষণা উপস্থাপন করতে পারে, যা একাডেমিক ও জটিল সমস্যার সমাধানে সহায়ক। ✅ ডিপসিক: দ্রুত এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে পারে, যা তাৎক্ষণিক ফলাফল প্রত্যাশী ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী। লেখালেখির ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি কেবল ধারণা ও প্লটের কাঠামো গড়ে তোলে, যেখানে ডিপসিক প্রায় পুরো গল্প তৈরি করে দিতে পারে। একইভাবে, কোডিংয়ের ক্ষেত্রেও ডিপসিক কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত সমাধান দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ডিপসিকের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা সংরক্ষণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের সরকার ইতোমধ্যেই ডিপসিকের ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওপেনএআই নিজেও অতীতে অনুমতি ছাড়া মানুষের লেখা ডেটা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারের অভিযোগের মুখে পড়েছিল, যা এখন ডিপসিকের বিরুদ্ধে উঠছে। ডিপসিকের সাফল্যের ফলে এআই চিপের বাজারেও বড় প্রভাব পড়েছে। এনভিডিয়া, যারা উন্নত চিপ তৈরিতে বিশ্বব্যাপী অগ্রগণ্য, তাদের শেয়ারের মূল্য একদিনে প্রায় ১৭% কমে গেছে। কারণ, কম শক্তিশালী হার্ডওয়্যারেও কার্যকর এআই সম্ভব হলে উচ্চমূল্যের উন্নত চিপের বাজার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়, তবে ডিপসিকের উদ্ভাবন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই চীনে উন্নত চিপ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম খরচে ভালো এআই তৈরি হলে মার্কিন প্রযুক্তি খাতেরও লাভ হতে পারে। এই প্রতিযোগিতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎকে আরও উন্নত ও বহুমাত্রিক করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে দ্রুত এবং সাশ্রয়ী সমাধান দরকার, সেখানে হয়তো ডিপসিক এগিয়ে থাকবে, আর যেখানে গবেষণা ও জটিল বিশ্লেষণের প্রয়োজন, সেখানে চ্যাটজিপিটির মতো বৃহৎ মডেলগুলো প্রাধান্য পাবে। শেষ পর্যন্ত, এই প্রতিযোগিতাই হয়তো এআই প্রযুক্তিকে আরও দক্ষ, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী করবে।