ঈদুল-ফিতর মুসলমানদের জন্য এক আনন্দের দিন, যা মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার পর উদযাপিত হয়। তবে ঈদের প্রকৃত আনন্দ ও তাৎপর্য তখনই পাওয়া যাবে, যখন আমরা কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের প্রস্তুতি গ্রহণ করব। আসুন জেনে নিই, কিভাবে আমরা ঈদুল-ফিতরের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি।
রমজানের মূল লক্ষ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ বলেন—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।" (সুরা বাকারা: ১৮৩)
তাই ঈদের প্রস্তুতি হলো রমজানের শিক্ষা ধরে রাখা ও তাকওয়ার ওপর অবিচল থাকা।
ফিতরা আদায় করা ঈদের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে একটি।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন—
"আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সদাকাতুল ফিতরকে ফরজ করেছেন, যা এক ‘সা’ (প্রায় ৩ কেজি) খেজুর বা গম। এটা ছোট-বড়, স্বাধীন-দাস, নারী-পুরুষ সকল মুসলমানের ওপর ফরজ।" (বুখারি: ১৫০৩, মুসলিম: ৯৮৪)
ফিতরা ঈদের আগেই গরিবদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে তারাও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
ঈদের রাতেও ইবাদত করা অনেক ফজিলতপূর্ণ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন—
"যে ব্যক্তি ঈদের রাত জাগ্রত থেকে ইবাদতে কাটায়, তার হৃদয় কেয়ামতের দিন মরে যাবে না।" (ইবনে মাজাহ: ১৭৮২)
তাই এ রাতে তাকবির বলা, কুরআন তিলাওয়াত করা, নফল নামাজ আদায় করা উচিত।
গোসল করা: ঈদের দিনের অন্যতম সুন্নত হলো ফজরের আগে গোসল করা।
সুগন্ধি ব্যবহার করা: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঈদের দিনে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।
পরিষ্কার ও সুন্দর পোশাক পরা: ইসলামে শালীন ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঈদের দিনে নামাজের আগে খেজুর খেতেন।
আনাস (রা.) বলেন:
"রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন নামাজে যাওয়ার আগে কয়েকটি খেজুর খেতেন এবং তিনি বিজোড় সংখ্যা খেতেন।" (বুখারি: ৯৫৩)
হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া উত্তম।
এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া ও অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা সুন্নত।
উচ্চ স্বরে তাকবির বলা—
اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
ঈদের নামাজ ফরজ না হলেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন—
"আমাদের ঈদগাহের নামাজ নারী, শিশু, বৃদ্ধ সকলের জন্য সুন্নত।" (বুখারি)
আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করা।
গরিব ও দুস্থদের সাহায্য করা।
ঈদের আনন্দ অহংকারে পরিণত না করা এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা।
ঈদুল-ফিতর শুধুমাত্র আনন্দের দিন নয়, এটি তাকওয়ার পুরস্কার ও আল্লাহর রহমতের প্রকাশ। তাই আসুন, কোরআন ও হাদিসের আলোকে ঈদের প্রস্তুতি গ্রহণ করি, যেন আমাদের ঈদ আনন্দের পাশাপাশি কল্যাণ ও বরকতপূর্ণ হয়।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিকভাবে ঈদ উদযাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন