ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল জেলার আটটি আসনের মধ্যে চারটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন। দলটি সারাদেশের ঘোষিত ১২৫টি আসনের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলার চারটি আসনে চারজনকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী— টাঙ্গাইল-১ (ধনবাড়ী ও মধুপুর) মনোনয়ন পেয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা এনসিপির সদস্য ও ধনবাড়ী উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী সাইদুল ইসলাম আপন। তিনি জুলাই আন্দোলনের শহীদ সাজিদের ভাই। টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ডেপুটি মুখ্য-সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) ও সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) সাইফুল্লাহ হায়দার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। টাঙ্গাইল-৫ (সদর) টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সদস্যসচিব মাসুদুর রহমান রাসেলকে মনোনীত করা হয়েছে। টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) টাঙ্গাইল জেলা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক খন্দকার মাসুদ পারভেজ মনোনয়ন পেয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা কমিটির সদস্যসচিব ও সদরে মনোনীত প্রার্থী মাসুদুর রহমান রাসেল বলেন, “যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।” দলীয় সূত্র জানায়, বাকি আসনগুলোতেও প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগিরই পর্যায়ক্রমে ঘোষণা দেওয়া হবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল জেলাজুড়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। জেলার ৮টি আসনের মধ্যে অন্তত পাঁচটিতে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, ক্ষোভ ও বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নেয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা। প্রায় প্রতিদিনই এসব আসনে মিছিল, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, মৌন মিছিলসহ নানা কর্মসূচি চলছে। একাধিক স্থানে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়াও ঘটছে। অবস্থান বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে—বিএনপির এই অভ্যন্তরীণ সংকটের সুযোগ নিতে ইতোমধ্যে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জানা গেছে, টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর–ধনবাড়ী), টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল), টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী), টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) ও টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল–সখীপুর) আসনে মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই তীব্র প্রতিযোগিতা ও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। মনোনয়ন বঞ্চিতরা দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র অবস্থান নিয়ে মাঠে নেমেছেন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মনোনয়নকে কেন্দ্রেও জমেছে ক্ষোভ। তার বিপক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী ফরহাদ ইকবালের সমর্থকেরা মশাল মিছিল, মৌন মিছিলসহ নানা কর্মসূচি করছেন। টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনেও মনোনীত প্রার্থী রবিউল আওয়াল লাভলুকে ঘিরে নেতাকর্মীদের একাংশের মধ্যে দৃশ্যমান অসন্তোষ বিরাজ করছে। দেলদুয়ারে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহতও হয়েছেন। টাঙ্গাইল-১: ফকির মাহবুব আনাম স্বপন বনাম অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী। এই আসনে কোন্দল দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। মনোনীত প্রার্থী ফকির মাহবুব আনাম স্বপন ও মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ইতোমধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল, দোকানপাট ভাঙচুরসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।স্থানীয়রা জানান, দু’গ্রুপের প্রতিনিয়ত অবস্থান—এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। বিএনপির এই বিভক্ত পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ মোন্তাজ আলী। টাঙ্গাইল-৩: নাসির বনাম আজাদ, উত্তেজনায় ঘাটাইল। ঘাটাইলে নতুন মুখ অ্যাডভোকেট এসএম ওবায়দুল হক নাসির মনোনয়ন পেলেও সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ তার ছেলে-মেয়ে, অনুসারীদের নিয়ে শোডাউনে ব্যস্ত। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, মানববন্ধনসহ নানা ধরনের কর্মসূচির কারণে ঘাটাইল এলাকায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে কুণ্ঠাবোধ করছেন না। এদিকে জামায়াতের প্রার্থী হুসনি মোবারক বাবুল নীরবে-নিভৃতে মাঠ গরম রাখছেন। টাঙ্গাইল-৪: দীর্ঘদিনের বিভক্তি, যুক্ত হলো নতুন অধ্যায়। কালিহাতীতে দীর্ঘদিনের বিএনপির বিভক্তি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। মনোনীত প্রার্থী লুৎফর রহমান মতিন সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকলেও, বেনজির আহমেদ টিটো মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে শক্ত অবস্থান বজায় রেখেছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত মিটিং-মিছিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই আসনে আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সম্ভাব্য প্রার্থিতাকে ঘিরে। তার অনুসারীরা তাকে স্বাগত জানিয়ে যে শোডাউন করেছেন, তা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এদিকে জামায়াত, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং সারওয়ার সিরাজ শুক্লার সম্ভাব্য প্রার্থিতাও এই আসনকে বহুমাত্রিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রস্থলে পরিণত করেছে। টাঙ্গাইল-৭: আজাদ সিদ্দিকী বনাম সাইদ সোহরাব—মির্জাপুরে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মির্জাপুরে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী পুরোদমে প্রচারণায় নেমেছেন। অন্যদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নেতা সাইদুর রহমান সাইদ সোহরাব প্রকাশ্যেই মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি তুলে সভা-সমাবেশ করছেন। এই আসনে কয়েকটি ইসলামী দলের প্রার্থীও সক্রিয় হওয়ায় প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। টাঙ্গাইল-৮: বাসাইল–সখীপুরে দুই প্রার্থীর শক্ত অবস্থান। বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান মাঠে প্রচারণা জোরদার করলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনোনয়ন প্রত্যাশী সালাউদ্দিন আলমগীর রাসেল মাঠে ব্যাপক তৎপরতা বজায় রেখেছেন। রাসেলের তহবিল থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজে অনুদান, রাস্তাঘাট মেরামতসহ জনসম্পৃক্ত কার্যক্রম তাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। এ আসনে কাদের সিদ্দিকীর সম্ভাব্য প্রার্থিতা এবং জামায়াতের সক্রিয়তা নির্বাচনকে আরও জটিল করবে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন,“মনোনয়ন নিয়ে এমন বিভক্তি থাকলে বিএনপির ভোটব্যাংক ছিন্নভিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে স্বতন্ত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থীরা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন।”অন্যদিকে, তৃণমূল বিএনপি নেতাদের দাবি—“কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত দ্রুত ও দৃঢ়ভাবে কার্যকর না হলে প্রার্থী–বিরোধিতা বিএনপির নিজস্ব শক্তিকেই দুর্বল করে দেবে।” জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন—“বিএনপি বড় দল। একাধিক প্রার্থী থাকাই স্বাভাবিক, তবে বিশৃঙ্খলা কাম্য নয়। অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে একমঞ্চে আসতে হবে।”
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে টাঙ্গাইল র্যাব ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিপিসি-৩, র্যাব-১৪ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর কাওছার বাঁধন জানান, সিপিসি-৩, র্যাব-১৪, টাঙ্গাইল ক্যাম্পের তথ্যপ্রযুক্তি এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে মাদক কারবারীরা টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর থানাধীন অরণখোলা এলাকায় বিপুল পরিমাণে অবৈধ মাদক দ্রব্য গাঁজা নিজেদের হেফাজতে রেখে কেনাবেচা করছে। উক্ত সংবাদের সত্যতা যাচাই এবং অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধারের লক্ষ্যে মঙ্গলব্রা (৯ ডিসেম্বর) ভোর রাতে র্যাব-১৪, সিপিসি-৩, টাঙ্গাইলের একটি চৌকস আভিধানিক দল উক্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।টাঙ্গাইলে র্যাব-১৪ এর সাম্প্রতিক অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে এবং একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ অভিযানে মধুপুর উপজেলা থেকে ১২৭ কেজি গাঁজাসহ একজনকে গ্রেফতার করা হয়। ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোরে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ভুটিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ১২৭ কেজি ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ মোঃ নজরুল ইসলাম (৩৪) নামের এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়। ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে মির্জাপুর ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলা থেকে পৃথক অভিযানে ৫ হাজার ২৮ পিস ইয়াবা এবং ৬৬ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. আকরাম হোসেন (৪০) ও মো. জুয়েল খান (৩৮)। ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ৪৬০ গ্রাম হেরোইনসহ মোঃ তোহর আলী (৬০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র্যাব।র্যাব-১৪-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর কাওসার বাঁধন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন এবং মাদকবিরোধী এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও রোগমুক্তি কামনায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে মধুপুর উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে ভুটিয়া চৌরাস্তা মোড়ে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল-০১ (মধুপুর–ধনবাড়ী) আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব ফকির মাহবুব আনাম স্বপন (স্বপন ফকির)। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বলেন, “দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে বেগম খালেদা জিয়া যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জাতি তা কখনো ভুলবে না। তাঁর সুস্থতা দেশের মানুষের প্রত্যাশা।” অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। দোয়া মাহফিল শেষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু, দ্রুত রোগমুক্তি এবং দেশের শান্তি ও কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। তাই তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দোয়া মাহফিলে যোগ দিয়ে তাঁর সুস্থতা কামনা করেছেন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ট্রাকের চাপায় মোঃ রনি মিয়া (২০) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে টাঙ্গাইল–ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্টের শাহপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘাটাইল থানার ডিউটি অফিসার এএসআই মোঃ সায়েম হোসেন। নিহত রনি মিয়া টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার জহুর আলীর ছেলে। তিনি মধুপুর তৌফিক প্লাজায় একটি দোকানে ব্যবসা করতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য হওয়ায় তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রাতে রনি মোটরসাইকেলে করে মধুপুর থেকে ঘাটাইলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে শাহপুর এলাকায় পৌঁছালে পেছন দিক থেকে একটি দ্রুতগামী ট্রাক তার মোটরসাইকেলকে সজোরে ধাক্কা দেয়। ধাক্কার পর ট্রাকটি রনিকে চাপা দিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা ছুটে এসে রনির মরদেহ সড়কের পাশেই দেখতে পান এবং পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে ঘাটাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এএসআই মোঃ সায়েম হোসেন বলেন, “ট্রাকটি দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায়। অন্ধকারের কারণে গাড়ির নম্বর কিংবা পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহসহ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।” এদিকে, আকস্মিক এই মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের পরিবার, স্বজন ও স্থানীয়দের মধ্যে শোকের পাশাপাশি ক্ষোভও দেখা দিয়েছে। তারা ঘাতক ট্রাক ও চালককে শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন
ভালো বীজ, আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার এবং অনুকূল আবহাওয়ার ফলে টাঙ্গাইলে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ২ থেকে ৪ মণ পর্যন্ত উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার কৃষকদের মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। পরিবার থেকে পাড়া—গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এ খুশির বার্তা। তবে তারা বাজারে আমন ধানের ন্যায্যমূল্য প্রত্যাশা করছেন। অগ্রহায়নের শুরু থেকেই টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকরা রোপা আমন কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ৬৩ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। মাঠে চলছে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর ব্যস্ততা—কিষাণী থেকে কৃষক সবাই এখন সময় দিচ্ছেন নতুন ধান ওঠানোর কাজে। টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে ১২টি উপজেলায় রোপা আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ দুই হাজার হেক্টর। সরকারি প্রণোদনা, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ ও কৃষকদের আগ্রহের কারণে এ সংখ্যা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে এক লাখ চার হাজার ৫৮৩ হেক্টরে।উপজেলা ভিত্তিক আবাদ: সদর: লক্ষ্যমাত্রা ৫,৪০০ হেক্টর; আবাদ ৫,৪০৫ হেক্টর বাসাইল: ৩৯০ হেক্টর; আবাদ ৩৯২,কালিহাতী: ৮,০৩০ হেক্টর; আবাদ ৮,৪৬৫,ঘাটাইল: ১৮,০৪০ হেক্টর; আবাদ ১৯,৪৯০,নাগরপুর: ২,৫১০ হেক্টর; আবাদ ৩,২০১,মির্জাপুর: ৪,৮৫০ হেক্টর; আবাদ ৪,৮৪৮,মধুপুর: ১৩,০০০ হেক্টর; আবাদ ১৩,০০২,ভূঞাপুর: ৬,২৩০ হেক্টর; আবাদ ৬,১০৫,গোপালপুর: ১২,৯০০ হেক্টর; আবাদ ১৩,০০০,সখীপুর: ১৭,২৬০ হেক্টর; আবাদ ১৭,২৬৫,দেলদুয়ার: ৩,৪৩০ হেক্টর; আবাদ ৩,৪৬০,ধনবাড়ী: লক্ষ্যমাত্রা ৯,৯৬০ হেক্টর; আবাদ ৯,৯৫০। কালিহাতীর সহদেবপুর ইউনিয়নের দিগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে ধান কাটার উৎসব। আধুনিক কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে ভালো খড় পাওয়ার জন্য এখনো ৮০–৮৫ শতাংশ কৃষক হাতে ধান কেটে মেশিনে মাড়াই করছেন। উঠানে উঠানে নতুন ধানের স্তুপ জমতে শুরু করেছে; কিষাণীরা ব্যস্ত দম ফেলার ফুরসত নেই। কৃষকদের ভাষ্য, গত বছর বিঘাপ্রতি ১৪–১৬ মণ ধান পেলেও এবার পাওয়া যাচ্ছে ১৮–২০ মণ। ভালো বীজ, জমি প্রস্তুত থেকে মাড়াই পর্যন্ত আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার—সব মিলিয়ে ফলন বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবও ছিল। ঝড়-বৃষ্টি ও বাতাসে অনেক ধান জমিতে লুটিয়ে পড়ে—এর ফলে কিছু চিটা ধান দেখা গেছে। এরপরও বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত ২–৪ মণ ধান পেয়ে কৃষকরা সন্তুষ্ট। কৃষকদের আশা, বাজারে আমন ধানের দাম ভালো থাকলে তারা এবার লাভবান হবেন। অন্যথায় উৎপাদনপ্রবণতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আশেক পারভেজ জানান,“ফিল্ড লেভেলে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা এবং বীজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের ফলে এ বছর রোপা আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে এবং ফলন হয়েছে আশানুরূপ। ইতোমধ্যে উৎপাদিত ধানের প্রায় ৬৩ শতাংশ কাটা শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই পুরো জেলায় ধান কাটার কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”তিনি আরও জানান, "এ বছর জেলায় হাইব্রিড ও উফশী জাতের পাশাপাশি কিছু এলাকায় স্থানীয় জাতের ধানও চাষ হয়েছে। রোগবালাই তুলনামূলক কম থাকায় সব জাতেই ভালো ফলন এসেছে।"
টাঙ্গাইলে প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৬ একর বনভূমি রয়েছে—যা দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাল-গজারি বন হিসেবে পরিচিত। মধুপুর, ঘাটাইল, সখীপুর, কালিহাতী ও মির্জাপুর জুড়ে বিস্তৃত এই বনাঞ্চল দেশের পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বনকে ঘিরেই জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ৫৩৯টি করাতকল—যার মধ্যে মাত্র ১৬৩টি বৈধ। বাকি ৩৭৬টি অবৈধ করাতকলে প্রতিদিন চলছে নির্বিচারে গাছ কাটা ও কাঠ পাচার। সরেজমিনে মধুপুর, ধলাপাড়া, বাঁশতৈল, অরণখোলা থেকে শুরু করে দোখলা ও বহেড়াতলী পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়—কোথাও সামাজিক বনের পাশে,কোথাও সংরক্ষিত বনের গা ঘেঁষে,আবার কোথাও বনের ভেতরেই উঠে গেছে করাতকল।অনেক ক্ষেত্রে এসব মিল রেঞ্জ ও বিট অফিসের ঠিক পাশেই, যেন প্রশাসন ও বনবিভাগকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে—এখানে ‘সবই সম্ভব’। বন আইনে বনাঞ্চল থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে ঠিক উল্টো চিত্র— সংরক্ষিত বনের শাল, গজারি, পাইকর, কাঁকরাসহ মূল্যবান গাছ কেটে আনা হচ্ছে,অবৈধ স’মিলে এনে দ্রুত চিরাই করলেই হয়ে যাচ্ছে “বৈধ কাঠ”।স্থানীয় বাজারে তা দেদারসে বিক্রি হচ্ছে কোনো বাধা ছাড়াই। মধুপুরে ৪৫,৫০০ একর বনভূমির মধ্যে প্রায় ৩৫,০০০ একর ইতোমধ্যেই বৃক্ষশূন্য। বনে এখন গাছের জায়গা দখল করেছে—আনারস,কলা, ড্রাগন,পেঁপে ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ফসল।বাকি ১০ হাজার একর বনও মারাত্মকভাবে ক্ষয়িষ্ণু বলে জানায় স্থানীয় সূত্র। ঘাটাইলে ৯০টি করাতকল, যার মধ্যে ৪৫টি অবৈধ,মধুপুরে ৯০টির মধ্যে ৭৩টিই লাইসেন্সবিহীন, সখীপুরে শতাধিক মিল—লাইসেন্স মাত্র ১২টি।কালিহাতী ও মির্জাপুরেও একই অবস্থা—অধিকাংশ মিলই চালু বছরের পর বছর। অবৈধ করাতকলের মালিক, শ্রমিক ও কাঠ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে ভয়াবহ চিত্র—এক মিল মালিক ইদ্রিস আলী বলেন,“মিলের কোনো কাগজ নেই। বন বিভাগের লোকজন এলে চা-খরচ দিয়ে বিদায় করি।”অন্য মালিক জানান,“বন কর্মকর্তাদের মাসিক চাঁদা দেই। জেলা থেকে অভিযান এলে আগেই জানিয়ে দেয়।”কাঠ ব্যবসায়ী মাসুদ রানার ভাষ্যে, “বন অফিসাররা নিজেরাই টাকা নেন। তাই মিল মালিকদের কোনো ভয় থাকে না।”শ্রমিক বাবুল হোসেন জানান,“বিট অফিসার টাকা খেয়েও হয়রানি করে।”এই অভিযোগগুলো স্থানীয়দের মধ্যে বহুদিনের, কিন্তু এখন তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নিয়মভঙ্গ করে—স্কুল,মসজিদ, বাজার ও আবাসিক এলাকার পাশে উঠেছে বিপুলসংখ্যক করাতকল। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাঠ কাটার শব্দে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে, স্থানীয়দের জীবন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। টাঙ্গাইল বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন—জেলায় ৫৩৯টি স’মিল,১৬৩টি বৈধ, ৩৭৬টি অবৈধ।সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে অবৈধ করাতকলের তালিকা দেয়া হয়েছে।প্রতি মাসে অভিযান পরিচালিত হয়।গত মাসে ৭টি অভিযান, এ মাসে ১টি অভিযান হয়েছে।যৌথবাহিনী ও প্রশাসনের মাধ্যমে উচ্ছেদ অব্যাহত রয়েছে। পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন— “করাতকল বিধিমালা ২০১২ স্পষ্ট—বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে মিল স্থাপন নিষিদ্ধ। টাঙ্গাইলের বেশিরভাগ করাতকলই আইন ভঙ্গ করছে। অবিলম্বে উচ্ছেদ না করলে বন ও জীববৈচিত্র পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।”তিনি আরও বলেন—“বন ধ্বংস হলে বন্যা, খরা, খরা-উত্তর অগ্নিকাণ্ড, নদীভাঙনসহ ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে।” স্থানীয়দের দাবি—অবৈধ করাতকলের অস্তিত্ব, বনের ভেতর কৃষি জমি তৈরি,মাসোহারা বাণিজ্য। এসব রোধে শুধু মাসিক “দেখানো অভিযান” যথেষ্ট নয়। যতদিন পর্যন্ত অসাধু বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি এবং করাতকল মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া হবে—ততদিন টাঙ্গাইলের বন রক্ষা করা অসম্ভব।
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আউশনারা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বেলচুঙ্গি এলাকায় সুদে লাগানো টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে এক ঋণগ্রহীতার বাড়িতে হামলা, লুটপাট, মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তীর একই গ্রামের মৃত মোন্তাজ আলীর ছেলে সুদখোর ভোলা মিয়ার (ভোলা) বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী হলেন হবিবুর রহমান, মৃত আরফান আলীর ছেলে। ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। স্থানীয়ভাবে একে ‘সুদের টাকার জের ধরে সংঘটিত হামলা’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। হবিবুর রহমান জানান, দুই বছর আগে সাংসারিক প্রয়োজনে প্রতিবেশী ভোলার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ২৭ হাজার টাকা সুদ পরিশোধের কথা ছিল। দুই বছর ধরে তিনি নিয়মিতভাবে মোট ৫৪ হাজার টাকা সুদ দিয়েছেন। চলতি বছরে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় ভোলা মূলধনসহ সুদ ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। “টাকা দিতে না পারায় প্রায় ১০-১২ দিন আগে চাষের জন্য ভোলাকে কিছু জমি বুঝিয়ে দিই। এরপরও তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন। হঠাৎ মঙ্গলবার সকালে ভোলা–মিন্টু, হানিফ, সিদ্দিক ড্রাইভারসহ ৮-১০ জন আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। ট্রাঙ্ক ভেঙে ১৬ শতাংশ জমি বিক্রি করে রাখা নগদ টাকা লুট করে নেয়। দুটি গরুও নিয়ে যায়। বাধা দিতে গেলে আমাকে ও পরিবারের সদস্যদের লাঠি ও প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে মারধর করে।”তার দাবি, এ ঘটনায় পরিবারের অন্তত ৩জন আহত হয়েছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে ঋণদাতা ভোলা মিয়া জানান, “হবিবুর চার বছর আগে আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছে ধানের উপর। জমি দেয়ার কথাও বলেছিল। সময় পার হলেও টাকা–জমি কিছুই দেয়নি। মীমাংসার সিদ্ধান্তও মানে না। থানায় অভিযোগ দিয়েও টাকা পাইনি। ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজনকে নিয়ে তার বাড়ি থেকে দুটি গরু আনা হয়েছে। পরে সেগুলো ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।” তবে হামলা, লুটপাট বা মারধরের অভিযোগ তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। হবিবুরের দাবি, ঘটনার পর মধুপুর থানায় অভিযোগ দিতে গেলে থানায় অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবির বলেন, “নাগরিকের যেকোনো আইনি সমস্যায় অভিযোগ দিলে থানা অবশ্যই গ্রহণ করবে। যদি অভিযোগ নিয়ে না থাকে, তাহলে আবার অভিযোগ নিয়ে থানায় আসার অনুরোধ করছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগী পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে স্বতন্ত্র এমপি পদপ্রার্থী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আসাদুল ইসলাম আজাদ নির্বাচনী মতবিনিময় সভা করেছেন। রবিবার (১ ডিসেম্বর) রাতে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার নাগবাড়ী এলাকায় তার নতুন নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন শেষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কর্নেল আজাদ বলেন, “তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে মাদক। এই ভয়াল ছোবল থেকে তাদের রক্ষা করতে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও সুস্থ বিনোদনের বিকল্প নেই। পাশাপাশি আধুনিক ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্পও নেই।” তিনি আরও বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও এলাকার উন্নয়নই হবে তার নির্বাচনী অঙ্গীকার। মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন—মধুপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম মাসুদ, উপজেলা বিএনপির মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক নূরুল আলম মেম্বার, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান, যুবদল নেতা মিনহাজ হোসেন এবং ছাত্রদল নেতা মোজাম্মেল হোসেন। সভায় মধুপুর উপজেলা, পৌরসভা, বিভিন্ন ইউনিয়নসহ ধনবাড়ী-মধুপুর অঞ্চলের কর্নেল আজাদ সমর্থক গোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বাস ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
টাঙ্গাইলে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষ্যে বহুল প্রতীক্ষিত আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫ এর বর্ণাঢ্য উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে টাঙ্গাইল জেলা স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এ ক্রীড়াযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ক্রীড়াবিদ, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, “তারুণ্যকে সুস্থ ও উদ্দীপনাময় পথে এগিয়ে নিতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। ফুটবল জেলা টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য—এ টুর্নামেন্ট শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, দলীয় মনোভাব ও ক্রীড়া নৈতিকতা শেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” তিনি আরও জানান, নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তির আসক্তি থেকে দূরে রেখে মাঠমুখী করতে জেলা প্রশাসন সবসময়ই ক্রীড়াবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে কাজ করছে। টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে জেলার কলেজগুলোতে চলছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। দলগুলো নিজেদের সেরা প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা যাচ্ছে বাড়তি উৎসাহ; গ্যালারিতেও ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিযোগিতার উত্তাপ। এবারের আয়োজনে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, নাগরপুর, সখীপুর, দেলদুয়ার, মধুপুরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কলেজগুলো অংশগ্রহণ করছে। প্রতিদিন বিভিন্ন দলের মধ্যকার নকআউট ও লিগ ভিত্তিক খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজকদের আশা, পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে জেলাজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের ঢল নামবে। আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, ফুটবল টাঙ্গাইলের প্রাণের খেলা। এই টুর্নামেন্ট তরুণদের মাঝে ক্রীড়া চেতনা, সুস্থ প্রতিযোগিতা এবং সমৃদ্ধ ক্রীড়া সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি দলীয় বন্ধন, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশেও এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আগামী এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধাপে খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ফাইনাল খেলাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন সার্বিকভাবে টুর্নামেন্ট সফল করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। টাঙ্গাইলে ক্রীড়া প্রাণের স্রোত এনে দেওয়া এ আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫ এবারও নতুন উদ্দীপনা ছড়িয়ে দিয়েছে ফুটবলপাগল তরুণদের মাঝে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীর সমর্থনে সহস্রাধিক মোটরসাইকেলের শোডাউন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে মধুপুর উপজেলা বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এই শোভাযাত্রা। স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে পুরো এলাকা হাততালি, শ্লোগান ও মোটরসাইকেলের হর্নে মুখরিত হয়ে ওঠে। নেতাকর্মীরা বলেন—এই শোডাউনই প্রমাণ করে মধুপুর-ধনবাড়ীতে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীই তৃণমূলে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থী। শোভাযাত্রায় অংশ নেন—মধুপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন খান বাবল,সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদ সরকার, সদস্য আনোয়ার হোসেন,শোলাকুড়ি ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান হবিবর রহমান,পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ পান্না,উপজেলা যুবদলের সাবেক আহবায়ক আব্দুল মান্নান, ধনবাড়ী উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক শাজাহান আলী,মধুপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ,মধুপুর কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মানিক মিয়া। এছাড়াও দলীয় বিভিন্ন স্তরের হাজারো নেতাকর্মী শোভাযাত্রায় যোগ দেন।শোভাযাত্রা শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, “ফকির মাহবুব আনাম স্বপন এই এলাকার সন্তান নন। তিনি শুধু নির্বাচনের সময়েই এলাকায় আসেন। দলের মনোনয়ন পেয়ে দুইবার নির্বাচনে অংশ নিয়েও পরাজিত হয়েছেন।” বক্তারা বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় টাঙ্গাইল-১ আসনে বিজয় নিশ্চিত করতে হলে স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য ও পরীক্ষিত নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীকেই মনোনয়ন দিতে হবে। এজন্য তারা দলীয় হাইকমান্ডের কাছে স্বপন ফকিরের পরিবর্তে মোহাম্মদ আলীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি জানান।সমাবেশে আরও বলা হয়—অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি তৃণমূলে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তার নেতৃত্বে মধুপুর-ধনবাড়ীতে বিএনপি সুসংগঠিত হয়েছে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে এ আসন পুনরুদ্ধারের জন্য তিনিই সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে সিজারিয়ান অপারেশনের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে খাদিজা খাতুন (২০) নামে এক তরুণীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া নবজাতকটি বেঁচে গেলেও তরুণীর মৃত্যু কেন্দ্রীক ক্ষোভে হাসপাতালজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে রাতের মীমাংসা বৈঠকে ৩ লাখ টাকায় বিষয়টি রফাদফা করার তথ্য পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে মধুপুর হাসপাতাল রোডের প্রাইভেট ক্লিনিক এশিয়া হাসপাতালে। মৃত খাদিজা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কেশোরগঞ্জ এলাকার বাকতা গ্রামের সৌদি প্রবাসী শাহীন মিয়ার স্ত্রী। এটি ছিল তার দ্বিতীয় সিজার। স্বজনরা জানান, সিজার সম্পন্ন হওয়ার পরপরই খাদিজার শরীরে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ সময় দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়া হলেও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। পরিবার অভিযোগ করে,অপারেশনের পর দীর্ঘ সময় রোগীর কাছে কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি,চিকিৎসকদের অবহেলার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।অবস্থার অবনতি হলেও সময়মতো অন্যত্র রেফার করা হয়নি।স্বজনদের দাবি—সন্ধ্যার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলেও ততক্ষণে খাদিজা মারা গিয়েছিলেন। এশিয়া হাসপাতালের অন্যতম পরিচালক মানিক সাহা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান— “অপারেশনের পর রোগীকে নিয়ম অনুযায়ী পোস্ট অপারেটিভ রুমে রাখা হয়। সেখানে কাউকে যেতে দেওয়া হয় না। খাদিজার আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট ছিল। রক্তক্ষরণ ও শ্বাসকষ্টের কারণে তাকে আইসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও অবস্থার অবনতি ঘটে।” তিনি আরও দাবি করেন, ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিতে দেরি হওয়াতেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। খাদিজার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতালের সামনে স্বজন ও স্থানীয়রা বিক্ষোভ শুরু করেন। স্বজনরা চিকিৎসার কাগজপত্র চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। এসময় হাসপাতালজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি সিজারের জন্য ভর্তি থাকা একাধিক রোগী হাসপাতাল ছাড়তে দেখা যায়। বিক্ষোভ ও চাপের মুখে রাতের দিকে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে হাসপাতাল প্রশাসন ও মৃতের পরিবারের মধ্যে মীমাংসা বৈঠক বসে। রাত ১১টা পর্যন্ত চলে এই বৈঠক। বৈঠকে তিন লাখ টাকায় রফাদফা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্থানীয়রা। স্বজনদের দাবি—চিকিৎসার স্পষ্ট অবহেলাতেই খাদিজার মৃত্যু হয়েছে, যা অর্থ দিয়ে শেষ করার মতো নয়।
টাঙ্গাইল, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহ—এই চার জেলার ২৫টি উপজেলা থেকে মোট ৮ হাজার শিশু শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে এবারের নূরানী স্কলারশিপ বৃত্তি পরীক্ষায়। টাঙ্গাইল জেলা নূরানী শিক্ষক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এবারও ধাপে ধাপে বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ বৃত্তি পরীক্ষা। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) গোপালপুরের দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৭০০ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। এর আগে ভূঞাপুর, কালিহাতী, ঘাটাইল, মধুপুর, ধনবাড়ী এবং জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় বৃত্তি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। হেরাল মডেল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান তালুকদার বলেন, “টাঙ্গাইল জেলা নূরানী শিক্ষক ফাউন্ডেশনের স্কলারশিপ বৃত্তি পরীক্ষা নূরানী শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য বয়ে আনবে। এটি বাচ্চাদের পড়ার গতি ও মনোযোগ বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে।” গোহাটা মসজিদের ইমাম ও ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা হাফেজ মাওলানা মুফতি নাজির সিদ্দিকী বলেন, “নূরানী শিক্ষা শিশুদের প্রাথমিক ও ভিত্তিমূলক শিক্ষা। আরবি হরফ ও বাংলা বর্ণের সাথে পরিচয়ের প্রথম ধাপ এটি। তাই শিশুদের চরিত্র গঠন ও নৈতিক শিক্ষায় এর ভূমিকা অনন্য।” ফাউন্ডেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন উপজেলার জিম্মাদাররাও পরীক্ষা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঘাটাইল উপজেলা জিম্মাদার মুফতি আব্দুর রশিদ বলেন, “এ ধরনের বৃত্তি পরীক্ষা শিশুদের মাঝে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে এবং তাদের পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ায়।” মাওলানা জুবায়ের বলেন, “শিশুরা সারা বছর যে পরিশ্রম করে, এই পরীক্ষার মাধ্যমে তার সঠিক মূল্যায়ন হয়। অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ে।” মধুপুর উপজেলা জিম্মাদার মাওলানা ইবরাহিম খলিল জানান, “নূরানী শিক্ষার প্রসারের জন্য ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ছোট বাচ্চাদের শিক্ষাজীবনে এটি বড় উৎসাহের সৃষ্টি করে।” গোপালপুর উপজেলা জিম্মাদার মাওলানা নোমান আহমেদ বলেন, “প্রতিটি কেন্দ্রেই অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা ছিল প্রশংসনীয়।” অভিভাবকরা জানান, নূরানী স্কলারশিপ পরীক্ষা শিশুদের পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ায় এবং সারা বছরের শেখার মূল্যায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে। মাদরাসার শিক্ষকরা বলেন, “এটি শুধু বৃত্তি পরীক্ষা নয়, বরং শিক্ষার মানোন্নয়ন, প্রতিযোগিতা সৃষ্টি এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। একই সাথে ধর্মীয় শিক্ষায় শিশুদের আগ্রহ বাড়ে।” টাঙ্গাইল জেলা নূরানী শিক্ষক ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেখ মাহদী হাসান শিবলী জানান, “২০১৭ সাল থেকে এ বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে। উত্তীর্ণ মেধাবীদের বাইসাইকেল, শিক্ষা উপকরণ, সম্মাননা ক্রেস্টসহ নানা পুরস্কার দেওয়া হয়। পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদেরও সম্মাননা প্রদান করা হয়। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।” সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস, নূরানী শিক্ষার বিস্তারে এ ধরনের উদ্যোগ শিশুদের শিক্ষাজীবনকে আরও উৎসাহিত করবে এবং আলোর পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
সাজিদ পিয়াল: টাঙ্গাইলে বিভিন্ন জায়গায় মোটরসাইকেল আরোহীদের পুলিশি হয়রানির অভিযোগ। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সড়কে মোটরসাইকেল আরোহীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অতিরিক্ত তল্লাশি ও অযৌক্তিক জিজ্ঞাসাবাদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যস্ত সড়কে হঠাৎ থামিয়ে কাগজপত্র দেখানোর নামে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রাখা, বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও উল্টো ধমক দেওয়া এবং গাড়ি জব্দের হুমকি দেওয়ার মতো আচরণের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ আরোহীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, টাঙ্গাইল শহর, নতুন বাসস্ট্যান্ড, এলেঙ্গা, করটিয়া, মধুপুর ও কালিহাতী সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই পুলিশের চেকপোস্টে মোটরসাইকেল আরোহীদের লক্ষ্য করে কঠোর তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে কাগজপত্র ঠিক থাকলেও আরোহীরা অযথা হয়রানির মুখে পড়ছেন। ভুক্তভোগী এক মোটরসাইকেলচালক বলেন, “লাইসেন্স, ইনস্যুরেন্স ও রেজিস্ট্রেশন সব ঠিক থাকলেও কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে ১৫ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। কিছু বলতে গেলেই উল্টো ধমক দেন।”আরো অভিযোগ পাওয়ার যায় তাঁরা মিডিয়া বা গণমাধ্যমের মোটর সাইকেল দেখলে তাঁদের দার করিয়ে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয় বাকবিদ্বন্দায় জড়িয়ে পড়ে এই পরিস্থিতি আমাদের দেশের মনুষের উপর নেতি বাঁচক প্রভাব ফেলছে। এ বিষয়ে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অপরাধ প্রতিরোধ ও সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে কেউ হয়রানির শিকার হলে লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশি আচরণে অসঙ্গতির অভিযোগে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা পুলিশের আচরণে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
সাজিদ পিয়াল: ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে টাঙ্গাইলের মধুপুরের মধুপুর ফল্ট। স্থানীয়দের সচেতনতার দাবি ,রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গত এক সপ্তাহে দফায় দফায় ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় টাঙ্গাইলের মধুপুরের ভূতাত্ত্বিক ফাটল— মধুপুর ফল্ট— নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই সক্রিয় ফল্ট যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে আরও সচেতনতা ও প্রস্তুতি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন তারা।বাংলাদেশে তিনটি প্রধান ভূমিকম্পন বলয় রয়েছে, যার একটি হলো মধুপুর ফল্ট। এই ফল্টের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, গাজীপুর এবং রাজধানী ঢাকাকে উচ্চ ঝুঁকিতে রেখেছে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এখানে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তিশালী ফাটল বিদ্যমান।ঢাকা থেকে মধুপুর ফল্টের দূরত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার হওয়ায় বিশেষ আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে এই ফল্টটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র ভূমিকম্প হলে রাজধানীসহ আশপাশের ব্যাপক অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরেও টাঙ্গাইলের মধুপুরে ৪.২ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। ওই সময় মধুপুর উপজেলার গড় এলাকার বোকারবাইদ গ্রামে প্রায় আধা মাইল দীর্ঘ, তিন থেকে চার ইঞ্চি ব্যাসের ও ১৫–২০ ফুট গভীর ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল, যা স্থানীয়দের আতঙ্কিত করে তোলে। ক্যাব মধুপুর শাখার সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহীদ বলেন,“গত সপ্তাহে দেশে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প হওয়ার পর আবারও মধুপুর ফল্ট নিয়ে শঙ্কা বেড়েছে। এই ফল্টে ৬ থেকে সাড়ে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ–গাজীপুর ও ঢাকা প্রায় ১ কোটি মানুষের মৃত্যু আশঙ্কাজনক।”টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. জানে আলম বলেন,“টাঙ্গাইলের উত্তর অংশ ভূমিকম্পের জন্য রেড জোনে। আমাদের প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে। চারটি স্টেশনে বাড়তি সরঞ্জাম রয়েছে এবং কমিউনিটি ভলান্টিয়ার দল শক্তিশালী করা হচ্ছে।মধুপুর ফল্টের ভূমিকম্পের জন্য শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, মধুপুর গড়াঞ্চলের টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং গাজীপুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে। মধুপুর ফল্ট একটি সক্রিয় ফল্ট, যা যে কোনো সময় ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে। ঢাকা থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর অঞ্চলে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা রয়েছে। এর ফলে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঢাকাসহ আশপাশের অনেক জেলা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর মো. মোজাম্মেল হক বলেন,“মধুপুর ফল্ট বাংলাদেশের তিনটি প্রধান ফল্টের অন্যতম। এটি সক্রিয় এবং যেকোনো সময়ে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। ৬ থেকে সাড়ে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে।”মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন বলেন,“মধুপুর ফল্টের সক্রিয়তায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্যোগ প্রশমন দিবসে ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয় নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করা হয়েছে। শিগগিরই স্থানীয়ভাবে মহড়া আয়োজন করা হবে।”প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে বিশেষজ্ঞরা ভবন নির্মাণ নীতিমালা মেনে চলা, জরুরি উদ্ধার সরঞ্জাম বৃদ্ধি এবং জনগণের মধ্যে ভূমিকম্প-সচেতনতা বিস্তারের ওপর জোর দিয়েছেন।
নূরানী স্কলারশীপ বৃত্তি পরীক্ষায় মেধা যাচাইয়ে টাঙ্গাইল, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ২৫টি উপজেলা থেকে এবার ৮ হাজার শিশু শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। টাঙ্গাইল জেলা নূরানী শিক্ষক ফাউন্ডেশন এই বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করেন। ধাপে ধাপে এই ৪ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এই বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের শাহ্পুর তাহিরীয়া দারুস্ সুন্নাহ্ হাফিজিয়া ও নূরানী মাদরাসা এবং কালিহাতীর রাজাফৈর কওমীয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও আবু আশরাফ খান (অবঃ জজ) মাদসায় বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে জেলার ভূঞাপুর, মধুপুর, গোপালপুর, ধনবাড়ী ও জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন মাদরাসা এই বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কালিহাতীর রাজাফৈর কওমীয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও আবু আশরাফ খান (অবঃ জজ) মাদসায় বৃত্তি পরীক্ষা প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিহা, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিয়া ও হাসান বলেন- তারা এর আগে কখনো বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেননি। এবারই প্রথম অংশ নিয়েছেন, পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরে তারা আনন্দিত। অভিভাবকরা বলেন- এই স্কলারশীপ বৃত্তি পরীক্ষায় শিশুদের পড়াশোনায় উৎসাহ তৈরি করছে এবং বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সারা বছরের পড়াশোনার মেধার বিকাশ ঘটে। মাদরাসার শিক্ষকরা বলেন- এটি শুধু বৃত্তি পরীক্ষা নয়, এই পরীক্ষার মাধ্যমে পড়ার উন্নয়ন ঘটে এবং পড়াশোনায় ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে প্রতিযোগীতা ও শিক্ষার্থীদের পাঠ্যভাসে আরও আত্মবিশ^াসী হয়। এছাড়াও ধর্মীয় শিক্ষায় শিশুদের আগ্রহ বাড়াতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। টাঙ্গাইল জেলা নূরানী শিক্ষক ফাউন্ডেশন সভাপতি শেখ মাহদী হাসান শিবলী বলেন- টাঙ্গাইল, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ২৫টি উপজেলা থেকে এবার ৮ হাজার শিশু শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এবং ধাপে ধাপে পরীক্ষাগুলো বিভিন্ন উপজেলায় বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাহদী হাসান শিবলী আরও বলেন- ২০১৭ সাল থেকে টাঙ্গাইল জেলা নূরানী শিক্ষক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই পরীক্ষার আয়োজন করে আসছেন। উত্তীর্ণ মেধাবী মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে বাইসাইকেল, শিক্ষা উপকরণ ও সম্মাননা ক্রেস্টসহ বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করে থাকেনা। পাশাপাশি ফাউন্ডশন থেকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদেরও সম্মাননা প্রদান করেন। তারা এই ধারাবাহিকতা ভবিষতেও অব্যাহত রাখবেন। ক্যাপশন: টাঙ্গাইল জেলা নূরানী শিক্ষক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নূরানী স্কলারশীপ বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
টাঙ্গাইলের মধুপুরে বেড়াতে এসে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টেলকি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ঘাটাইল উপজেলার পশ্চিম পাকুটিয়া গ্রামের মোখলেছুর রহমান মুকুলের ছেলে ইয়াসিন হোসেন (২৭) এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার রাকিব (২৫)। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলটি মধুপুর বনাঞ্চলের টেলকি রসুলপুর মোড় এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলের দুই আরোহীর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমরানুল কবির জানান, নিহতরা মধুপুর বনে বেড়াতে এসেছিলেন। নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
সাজিদ পিয়াল:টাঙ্গাইলের মধুপুরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা নিহত দুই যুবকের স্বপ্ন থেমে গেল মুহূর্তে টাঙ্গাইলের মধুপুরে গত রোববার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঘটে গেল হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনা। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের টেলকি সাইনবোর্ড রসুলপুর মোড় এলাকায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন দুই তরুণ। মুহূর্তেই নিভে গেল দুটি সম্ভাবনাময় জীবনের প্রদীপ। নিহত দুইজন হলেন—ঘাটাইল উপজেলার পশ্চিম পাকুটিয়া গ্রামের মোখলেছুর রহমান মুকুলের ছেলে মো. ইয়াসিন হোসেন (২৭) এবং বরিশাল জেলার চর ফ্যাশন উপজেলার মো. রাকিব (২৫)। পরিবার ও স্বজনদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, ভেঙে পড়েছে দুই পরিবারই। পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলটি মধুপুর বনাঞ্চলের টেলকি রসুলপুর মোড় এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা একটি শক্ত পিলারের সঙ্গে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা লাগে। ধাক্কার তীব্রতায় ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী। স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে গিয়ে অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে। মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমরানুল কবির বলেন, "প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মোটরসাইকেলটি অতিরিক্ত গতিতে চলছিল। নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের লাশ অরণখোলা ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। একদিকে ঘাটাইলের পশ্চিম পাকুটিয়া গ্রামে, অন্যদিকে বরিশালের চর ফ্যাশনের জনপদে নেমেছে গভীর শোক। তরুণ দুইজনের অকাল মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবার ও স্বজনরা বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন, কেউ কেউ বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে কিছুক্ষণ আগেও হাসিমুখে থাকা দুই তরুণ এমন করেই চলে গেলেন চিরতরে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, টেলকি সাইনবোর্ড রসুলপুর মোড় এলাকায় দুর্ঘটনা নতুন নয়। বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটলেও এখনো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা দ্রুত গতিনিরোধক ও সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপনের দাবি জানান। দুর্ঘটনার পর বেশ কিছুক্ষণ পর্যন্ত মহাসড়কে আতঙ্ক বিরাজ করে। যান চলাচলও কিছুক্ষণ ব্যাহত হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
২০০৭ সালে মধুপুর পুরাতন তিন তলা উপজেলা পরিষদের ভবনের ছাদে ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র সিসমোগ্রাফ যন্ত্রটির গোলাকৃতি টাওয়ার স্থাপন করা হয় কিন্তু বর্তমানে এটি অচল অবস্থায় আছে। মধুপুর উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয় "মেশিনটি স্থাপনের কয়েক বছরের মধ্যেই মেশিনটিতে আগুন ধরে এবং তারপর থেকে মেশিনটির কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যায়"। বর্তমানে মেশিনটি অংশবিশেষ মধুপুর পুরাতন উপজেলা পরিষদ ভবনের লাইব্রেরির একটি কোণে জরাজীর্ণ অংশবিশেষ পড়ে আছে। ভূমিকম্প বিশ্লেষকদের মতে, মধুপুর অঞ্চলে যে ভূমিকম্প ফল্ট টি রয়েছে সেটিতে ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেক অবকাঠামো ধসে পড়বে এবং বিপুল পরিমাণ হতাহতের ঘটনা ঘটবে। তাছাড়াও এ অঞ্চলের ভূমিকম্প ফল্টটি আঘাত হানলে আশেপাশের অঞ্চলগুলো বিশেষ করে ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুরে ব্যাপক পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হবে। ভূমিকম্পন প্রবল এ অঞ্চলের সিসমোগ্রাফ যন্ত্রটি বর্তমানে অচল অবস্থায় পড়ে আছে যেটি খুবই দুঃখজনক এবং এর ফলেএ অঞ্চলে ভূমিকম্প হলে ভূমিকম্পের সঠিক পরিমাপ টি গণনা করা যাবেনা। বিগত দুইদিন যাবত ছোট ছোট মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানছে এটি বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে অসহায় হত দরিদ্র পরিবারের মাঝে তেল,চিনি,চাল, ডাল, লবণ ও মসলা মোট ১৫ কেজি করে জনপ্রতি বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার(২০নভেম্বর) সকালে মধুপুর উপজেলা পরিষদ কার্যালয় থেকে এ খাবার বিতরণ করা হয়। বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন-মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মির্জা জুবায়ের হোসেন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার রাজীব আল-রানা। এসময় মধুপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা ইমরান হোসেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা সুমি, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান ও আইসিটি কর্মকর্তা আবরারুল হক শিমুলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। মধুপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার রাজীব আল-রানা জানান, দুর্যোগকালীন ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার দুস্থ ২শ৬২ জন মানুষের মাঝে এ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলীকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা বিএনপির অফিস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা শহরের বিভিন্নস্থানে প্রদক্ষণিক করে বিএনপির অফিসে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় মধুপুর বিএনপি সভাপতি জাকির হোসেন সরকার, ধনবাড়ি উপজেলা সভাপতি আজিজুর রহমান, মধুপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, পৌর বিএনপির সভাপতি প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আব্দুল মোতালেব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় বক্তারা বলেন, টাঙ্গাইল ১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ফকির মাহবুব আনাম স্বপন মনোনয়ন পরিবর্তনের নাম করে দাবিতে গতকাল বুধবার টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বিক্ষোভ করছিলো মোহাম্মদ আলীর সমর্থকরা। জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মী ও শ্রমিকরা এগিয়ে আসলে মোহাম্মদ আলী সমর্থকরা হামলা করে। এসময় দুটি ক্লিনিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়। আমরা এ ঘটনায় মোহাম্মদ আলীকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি করছি। একই সাথে ঘটনার জড়িত সবাইকে বহিষ্কারের দাবি করেছি। এছাড়া মোহাম্মদ আলী লোকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।
দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির নতুন ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) হলেন মোঃ মনিরুজ্জামান। নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবারে ব্যুরো চিপ (ঢাকা বিভাগ) পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অভিজ্ঞ সংবাদকর্মী মোঃ মনিরুজ্জামান। তার দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতা ও নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠানকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা জানান, দুর্নীতি দমন ও সামাজিক অন্যায়-অবিচার তুলে ধরতে মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভির কর্মকাণ্ডকে আরও এগিয়ে নেবে। এই উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেনঃ ১️⃣ মোঃ শাহ নেওয়াজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ২️⃣ মোঃ শহিদুল ইসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি ৩️⃣ মোঃ মাহমুদুল হাসান, বার্তা সম্পাদক, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন— “আমরা মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি। তার প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি পরিবার অচিরেই আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।”
মাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৩৩৪তম পর্বে নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে নিয়ামত কমে যাবে কি না, সে বিষয়ে ঢাকা থেকে চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন একজন দর্শক। অনুলিখন করেছেন জান্নাত আরা পাপিয়া। প্রশ্ন : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে কি নিয়ামত কমে যাবে? উত্তর : নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা কুফরি। এটা বড় কুফরি না, ছোট কুফরি। যদি আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কুফরি কাজ করে থাকলেন। এ জন্য আল্লাহ কোরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো, আমার সঙ্গে কুফরি করো না।’ আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন, আল্লাহর নিয়ামত লাভ করে সুন্দর জীবনযাপন করা, এটা যদি কেউ আল্লাহর কাছে সত্যিকার অর্থে তুলে ধরতে না পারে, তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া করলেন না, কুফরি করলেন। এই জন্য আল্লাহ সুরা দোহার শেষ আয়াতে বলেছেন, ‘তুমি তোমার রবের নিয়ামত প্রকাশ করো। কারণ, তোমার কাছে যখন নিয়ামত আসছে, তখন আল্লাহ পছন্দ করেন যে তুমি আল্লাহর এই নিয়ামতের বিষয়টি তুলে ধরবে।’ আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহ আমাকে এই নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ নিয়ামতকে বান্দার কাছে তুলে ধরার জন্য বলেছেন, বহিঃপ্রকাশ করার জন্য বলেছেন। বহিঃপ্রকাশ দুই ধরনের হতে পারে। একটি হলো নিয়ামতের ব্যবহারের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, নিয়ামতের বিষয়টি হলো মানুষের কাছে নিয়ামত তুলে ধরবে। যাতে করে আল্লাহর প্রশংসা প্রকাশ পায়। নিয়ামতের শুকরিয়া যদি কেউ আদায় না করেন, তাহলে কুফরি হবে। আল্লাহ বলেছেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করে থাক, তাহলে আমি আরো বৃদ্ধি করে দেব। বান্দারা যখন নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে, তখন আল্লাহ আরো নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করে দেন। আর যদি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা হয়, তাহলে আল্লাহ নিয়ামত কমিয়ে দেবেন এবং সেইসঙ্গে আরেকটি কঠিন বাণী আল্লাহ বলেছেন, ‘জেনে রাখো আল্লাহর কঠিন আজাবও তোমাদের জন্য অবধারিত থাকবে।’ নিয়ামতের শুকরিয়া শুধু মুখে আদায় করা যথেষ্ট নয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর শুকরিয়া আমলের মাধ্যমে আদায় করো।’ সুতরাং বান্দারা শুকরিয়া আদায় করবে। শুকরিয়ার অনেকগুলো দিক রয়েছে, তার মধ্যে আমলের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা হলো শুকরিয়ার সর্বোচ্চ স্তর।
তিনি ছিলেন মানবজাতির আদর্শ। তিনি অত্যন্ত উদার ও বিনয়ী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং একজন সাহসী যোদ্ধা। এছাড়াও তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক এবং একজন সফল প্রচারক ছিলেন। তিনিই উত্তম চরিত্র ও উদারতার একমাত্র উৎস। তিনি সকলের আদর্শহীন এবং প্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার প্রেমে, দুনিয়া মাতাল। তিনি আমার আদর্শ, তিনি আমার নেতা। তিনি আমার নবী, আমাদের নবী এবং সকলের নবী। তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। সমস্ত মানবজাতির জন্য করুণা। অন্ধকারে নিমজ্জিত বিশ্বের মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে। তার অসাধারণ চরিত্র, মাধুর্য এবং অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব সবাইকে অবাক করেছে। মুমিনের চঞ্চল হৃদয় তাকে এক নজর দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকে। কবি কাজী নজরুল বলেছেন: “বিচ্ছেদের রাত ছিল একাকার কান্নার ভোর; আমার মনে শান্তি নেই, আমি কাঁদছি। হে মদিনাবাসীর প্রেমিক, আমার হাত ধর।" তার নিষ্কলুষ চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।" (সূরা আল-আহজাব, আয়াত 21)। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে আজ কিছু লোক সেই নবীর সম্মানকে অবমাননা করছে। হৃদয় ভেঙ্গে যায়। আমাদের ক্ষমা করুন, হে নবী! তিনি তার অবিস্মরণীয় ক্ষমা, উদারতা, সততা, নম্রতা প্রভৃতির বিরল মুগ্ধতা দিয়ে বর্বর আরব জাতির আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এজন্য তারা তাকে ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তারা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকার করেছিল যে তিনি নম্র এবং গুণী ছিলেন। টাকা দিয়ে নয়, ভালো ব্যবহার দিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে জয় করেছেন। আল্লাহ তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মহৎ চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা আল কালাম, আয়াত ৪)। তিনি কখনো মানুষকে তুচ্ছ করেননি। আত্মসম্মানবোধে তিনি কাউকে তুচ্ছ মনে করেননি। তিনি বিশ্বের হৃদয়ে উচ্চতর চরিত্রের একটি অনুপম মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। নম্রতা তার চরিত্রে সর্বদা উপস্থিত ছিল। পৃথিবীর মানবতার কল্যাণে তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল শ্রেষ্ঠ আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে আমার উত্তম চরিত্র পূর্ণ করার জন্য প্রেরিত করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত) ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বিনয়ী এবং আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয়ী। দুর্বল ব্যক্তিকে কড়া কথায় আঘাত করবেন না। তিনি কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে অসাধ্য সাধন করতে বাধ্য করেননি। গরিব-অসহায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। তিনি লোকদেরকে তাদের আচরণে অপ্রয়োজনীয় রাগ ও রাগ থেকে সর্বদা বিরত থাকার উপদেশ দিতেন এবং মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উঁচু করে দেন এবং যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করেন।” (মিশকাত) কাফেররাও তার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে সদয় ও নম্র আচরণ পেয়েছিল। তার অনুসারীরা তাকে উচ্চ সম্মানের সাথে ধরেছিল কারণ তিনি খুব নমনীয় এবং নম্র ছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) তার ভদ্র আচার-আচরণ সম্পর্কে বলেন, ‘নবী (সা.) রূঢ় বক্তা ছিলেন না, প্রয়োজনের সময়ও তিনি কঠোর ভাষা ব্যবহার করতেন না। প্রতিহিংসা তার সাথে ছিল না মোটেও। মন্দের বিনিময়ে ভালোই করেছেন। সব ক্ষেত্রেই তিনি ক্ষমা পছন্দ করতেন। তিনি লোকদেরকে উপদেশ দিয়েছিলেন, “আল্লাহর ইবাদত কর, করুণাময় প্রভু, ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, সালাম দাও এবং এসব কাজের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি উত্তর দিলেন, "ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং অপরিচিত সকলকে সালাম করা।" (বুখারী ও মুসলিম)। মহানবী (সা.)-এর মর্যাদাকে সম্মান করা মুসলমানদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের মৌলিক অংশ।
নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আপনার জিজ্ঞাসার ২৯২৯তম পর্বে ই-মেইলের মাধ্যমে কানিজ নাহার দিপা জানতে চেয়েছেন, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? অনুলিখন করেছেন মোহাম্মদ সাইফ আহমেদ। প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-মাহফিল করা জায়েজ কি? উত্তর : না দোয়ার জন্য আলাদা কোনো মাহফিল নেই। এটা আসবে কেন? আমরা একটা জায়গা থেকে বাঁচার জন্য আরেকটি কাজ করছি। কিন্তু সেই কাজটি ভুল করে আরও বড় ভুলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আমাদের সমাজে একটি প্রথা একেবারে ছেয়ে গেছে। যেমন—একজন মারা গেলে তার জন্য মিলাদ-মাহফিল করা কিংবা কূলখানি করা। কিন্তু এগুলো সবই বেদআতি কাজ। এগুলো সঠিক কাজ নয়। অনেকে মনে করছে, দোয়া-মাহফিল করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা একদমই নয়। এসব ইসলামে অনুমোদন দেয়নি। এইগুলো পুরোটাই বেদআত। মানুষ চাইলে যে কোনো সময় কিংবা যে কোনো জায়গা থেকে দোয়া করতে পারবেন। দোয়ার সঙ্গে মাহফিল কিংবা আলাদা কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ঘোষণা করা জায়েজ নেই। আশা করি, আপনি বুঝতে পেরেছেন।
র্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি ও চীনের ডিপসিকের মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতার নয়, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চ্যাটজিপিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্লগ লেখা, গবেষণা, প্রোগ্রামিংসহ নানান কাজে অপরিহার্য টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি চীনের তৈরি ডিপসিক এআই জগতে নতুন আলোড়ন তুলেছে। তারা দাবি করছে, তুলনামূলক কম চিপ ব্যবহার করেই অত্যাধুনিক এআই সেবা দেওয়া সম্ভব, যেখানে ওপেনএআই-এর বিশাল মডেলগুলোর জন্য ১৬,০০০ বা তারও বেশি চিপ প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ২০০০ চিপ দিয়ে ডিপসিক কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম। দুই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। ✅ চ্যাটজিপিটি: বিস্তৃত বিশ্লেষণ ও গভীর গবেষণা উপস্থাপন করতে পারে, যা একাডেমিক ও জটিল সমস্যার সমাধানে সহায়ক। ✅ ডিপসিক: দ্রুত এবং সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে পারে, যা তাৎক্ষণিক ফলাফল প্রত্যাশী ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী। লেখালেখির ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি কেবল ধারণা ও প্লটের কাঠামো গড়ে তোলে, যেখানে ডিপসিক প্রায় পুরো গল্প তৈরি করে দিতে পারে। একইভাবে, কোডিংয়ের ক্ষেত্রেও ডিপসিক কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত সমাধান দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ডিপসিকের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা সংরক্ষণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের সরকার ইতোমধ্যেই ডিপসিকের ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওপেনএআই নিজেও অতীতে অনুমতি ছাড়া মানুষের লেখা ডেটা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারের অভিযোগের মুখে পড়েছিল, যা এখন ডিপসিকের বিরুদ্ধে উঠছে। ডিপসিকের সাফল্যের ফলে এআই চিপের বাজারেও বড় প্রভাব পড়েছে। এনভিডিয়া, যারা উন্নত চিপ তৈরিতে বিশ্বব্যাপী অগ্রগণ্য, তাদের শেয়ারের মূল্য একদিনে প্রায় ১৭% কমে গেছে। কারণ, কম শক্তিশালী হার্ডওয়্যারেও কার্যকর এআই সম্ভব হলে উচ্চমূল্যের উন্নত চিপের বাজার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়, তবে ডিপসিকের উদ্ভাবন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই চীনে উন্নত চিপ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম খরচে ভালো এআই তৈরি হলে মার্কিন প্রযুক্তি খাতেরও লাভ হতে পারে। এই প্রতিযোগিতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎকে আরও উন্নত ও বহুমাত্রিক করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে দ্রুত এবং সাশ্রয়ী সমাধান দরকার, সেখানে হয়তো ডিপসিক এগিয়ে থাকবে, আর যেখানে গবেষণা ও জটিল বিশ্লেষণের প্রয়োজন, সেখানে চ্যাটজিপিটির মতো বৃহৎ মডেলগুলো প্রাধান্য পাবে। শেষ পর্যন্ত, এই প্রতিযোগিতাই হয়তো এআই প্রযুক্তিকে আরও দক্ষ, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী করবে।