মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। ইসরাইল ও মিশরের সীমান্তে সামরিক কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, মিশর সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক সেনা সমাবেশ করছে। এতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তবে কি আসন্ন সংঘর্ষের ইঙ্গিত দিচ্ছে এই ঘটনা?
ইসরাইলের দাবি, মিশর তাদের সীমান্তের কাছে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়ন করছে, যা সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে, মিশরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সেনা সমাবেশ শুধুমাত্র সিনাই অঞ্চলে সন্ত্রাস দমন অভিযানের অংশ। ১৯৭৯ সালের শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, ইসরাইল ও মিশরের সীমান্তে সেনা মোতায়নে বিধিনিষেধ রয়েছে এবং নতুন কোনো মোতায়ন করতে হলে ইসরাইলের অনুমতি নিতে হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, গাজা সংকটই এই উত্তেজনার অন্যতম কারণ। ইসরাইল দাবি করছে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মহল গাজার ফিলিস্তিনিদের জর্ডানে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। তবে এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করছে মিশর ও জর্ডান। মিশর চায় না গাজার শরণার্থীরা তাদের সীমান্তে প্রবেশ করুক, কারণ এতে তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ফিলাডেলফি করিডর, যা ইসরাইল ও মিশরের সীমান্তবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। গত বছর ইসরাইল এই করিডরের অধিকাংশ অংশ দখল করে নেয়, যা মিশরের জন্য বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিশর এখন কৌশলগতভাবে নিজেদের সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করছে এবং ইসরাইলকে বার্তা দিতে চাইছে যে তারা নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে প্রস্তুত।
বহু বিশ্লেষকের মতে, এটি কোনো যুদ্ধের প্রস্তুতি নয় বরং কৌশলগত অবস্থান মজবুত করার প্রচেষ্টা। চ্যাথাম হাউজের বিশেষজ্ঞ আহমেদ আবুদুহের মতে, এই উত্তেজনার উদ্দেশ্য মূলত কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা। উভয়পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে চায় এবং সরাসরি সংঘর্ষ এড়াতে আগ্রহী।
বর্তমানে মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও জর্ডান একটি সম্মেলনের আয়োজন করছে, যেখানে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিশর এই সামরিক তৎপরতার মাধ্যমে ইসরাইলের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে, যাতে ইসরাইল আলোচনায় আরও নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করে।