১৭ কোটি টাকার দুর্নীতি! কুমিল্লা অন্ধকল্যাণ সমিতির তদন্ত রিপোর্ট গায়েব

বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতি ও চক্ষু হাসপাতাল, কুমিল্লার বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ২২ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকার দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট গোপনে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্ত কাজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে আনা হয়নি।
২০২৫ সালের ২৪ জুন, কুমিল্লা জেলা সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ফারহানা আমিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সারা দিনব্যাপী তদন্ত কার্যক্রম চালানো হয়।
প্রধান অভিযোগসমূহের তালিকা:
১. চক্ষু হাসপাতালে নিয়োগ বাণিজ্য এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে আত্মীয়দের চাকরিতে নিয়োগ।
২. সরকারি খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থের ব্যবহার না করে আত্মসাৎ।
৩. চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ ক্রয়ে দুর্নীতি।
৪. সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে ২.৫ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি।
৫. নিয়মবহির্ভূত চিকিৎসক নিয়োগ ও চিকিৎসায় অবহেলা।
৬. চোখের রোগীদের প্রাইভেট চেম্বারে পাঠিয়ে কমিশনভিত্তিক অপারেশন।
৭. স্বাধীন মতাদর্শের ছাত্রদের ওপর হামলা এবং হয়রানি।
৮. রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত রিপোর্ট আটকে রাখা।
৯. হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস ও অপব্যবহার।
আইন-অপরাধ রিলেটেড নিউজ
অভিযুক্তদের তালিকায় কারা আছেন?
তদন্ত ও অনুসন্ধান অনুযায়ী অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন:
-
সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার
-
তাঁর স্ত্রী মেহেরুন নেসা বাহার ও মেয়ে সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা
-
হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি এড. আ হ ম তাইফুর আলম
-
চিকিৎসক ডা. একেএম আব্দুল সেলিম, ডা. মাঈনুদ্দিন ইমন, ডা. ফারহানা আক্তার স্নিগ্ধা
-
এইচ আর এডমিন সাঈদুল ইসলাম ভূইয়া (যার বিরুদ্ধে কানাডায় পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে)
-
অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে আবুল হোসেন, আবুল কালাম, শাহজাহান, রিফ্রাকশনিস্ট দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
তদন্ত প্রতিবেদন হিমাগারে কেন?
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবেদন তৈরি হলেও রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের চাপে তা প্রকাশ করা হয়নি। স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ এবং তদন্ত কমিটির ওপর চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগও উঠেছে।
এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ভুক্তভোগীরা জোর দাবি করছেন, অবিলম্বে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
চূড়ান্ত প্রশ্ন: তদন্ত হবে, নাকি ধামাচাপা দেওয়া হবে?
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে পরিচালিত এই দুর্নীতির জালে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হলেও যদি বিচার না হয়, তাহলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গুলোতে সুশাসন ও সেবা আশা করা নিতান্তই অসম্ভব। জনগণের অর্থে পরিচালিত এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি রোধে রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন